৭ বছর পর ফিরে পাওয়া

ছোটবেলায় জঙ্গলে কিংবা মেলায় গান গাইতে গাইতে হঠাৎ দুই ভাই হারিয়ে গেল। অনেক খোঁজাখুঁজির পর দুজন চলে গেল দুই রাস্তায়। দীর্ঘদিন পর দুই ভাইয়ের আবার দেখা। বড় হয়েছে দুজনই, পাল্টে গেছে চেহারা। ঘটনা সূত্রে একজন আরেকজনকে চেনার পর জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি। গল্পটা চেনা চেনা লাগছে না? পুরোনো বাংলা সিনেমায় এমন গল্প খুব নিয়মিত দেখা যেত। তবে জ্যাজির হারিয়ে যাওয়ার গল্পটা কিন্তু সিনেমার গল্প নয়, একদম বাস্তব গল্প।

ঘটনাটা যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা ও টেক্সাস শহরের। সাত বছর আগে টেক্সাসের বাসিন্দা ক্যারির পোষা কুকুর জ্যাজি হঠাৎ হারিয়ে যায়। আতশবাজির শব্দে ভয় পেয়ে এদিক–ওদিক ছোটাছুটি করতে করতে রীতিমতো গায়েব হয়ে যায় জ্যাজি। ক্যারি ও তাঁর পরিবার হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটাকে। তবে কোনোভাবেই জ্যাজিকে আর খুঁজে পান না তাঁরা। তবে ক্যারি হাল ছাড়লেন না। বছরের পর বছর জ্যাজিকে নানাভাবে খুঁজে গেলেন।

বাকি গল্পটা সাত বছর পরের, ২০২২ সালের। টেক্সাস থেকে ৮০০ মাইল দূরে ফ্লোরিডা শহরের এক হোটেলের পেছনে জ্যাজিকে খুঁজে পায় ‘অরেঞ্জ কাউন্টি অ্যানিমেল সার্ভিস’ নামের একটি প্রাণী আশ্রয়কেন্দ্র। জ্যাজির অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে সে হাঁটতেই পারছিল না। জ্যাজিকে উদ্ধার করা সংস্থার কর্মীরা তার শরীরে খুঁজে পান একটি মাইক্রোচিপ। মাইক্রোচিপ স্ক্যান করে খুঁজে বের করে জ্যাজির মালিকের নাম-ঠিকানা।

দ্রুত যোগাযোগ করা হলো ক্যারির সঙ্গে। জ্যাজিকে খুঁজে পাওয়ার খবর শুনে ভীষণ অবাক ও বিস্মিত হন ক্যারি। জ্যাজিকে সত্যিই একদিন খুঁজে পাওয়া যাবে, সেটা ভাবতেই পারেননি তিনি। সাত বছর সময়টাও ছিল অনেক লম্বা। অনেক ক্ষেত্রে একটি কুকুরের সম্পূর্ণ জীবনকালই হয় সাত বছরের। ক্যারির বিস্ময় যেন কাটছিলই না।

জ্যাজিকে খুঁজে পাওয়ার খবর পেয়ে কয়েক দিনের মধ্যেই টেক্সাস থেকে ফ্লোরিডার বিমানে চড়ে বসেন ক্যারি। এত বছর পর নিজের পোষা কুকুরকে ছুঁয়ে দেখার জন্য আর অপেক্ষা করতে পারছিলেন না তিনি। ক্যারি যখন জ্যাজির সামনে উপস্থিত হলেন, পুরো ব্যাপারটাই ছিল দুজনের কাছে অবিশ্বাস্য। দুজনেরই বয়স বেড়ে গেছে সাত বছর। তবু একজন আরেকজনকে চিনে নিল খুব সহজেই। ক্যারির ছোঁয়া পেয়ে যেন অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠল জ্যাজি। বারবার ক্যারির হাত চেটে দিল কুকুরটা। যতটা পারা যায় ক্যারির শরীর ঘেঁষে থাকার চেষ্টা করল সে। জ্যাজি ও ক্যারির পুনর্মিলনের সময় আশপাশে ছিলেন আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষেরা। তাঁদের চোখে ততক্ষণে পানি টলমল করছে।

একটু সুস্থ হতেই জ্যাজিকে সঙ্গে করে টেক্সাস ফিরে গেছেন ক্যারি। ফ্লোরিডায় থাকা অবস্থা ঠিকমতো দাঁড়াতেই পারছিল না জ্যাজি। তবে সাত বছর পর বাড়ি ফিরেই ঘোরাঘুরি শুরু করে দিয়েছে সে। এমনকি ছোটাছুটিও করছে ১২ বছরের কুকুরটি।

এমন শুভ পরিণতির পরও কয়েকটা প্রশ্ন নিশ্চয়ই তোমার মাথায়ও ঘুরছে। মাঝখানের সাতটি বছর কোথায় ছিল জ্যাজি? এতগুলো বছর কীভাবে বেঁচে ছিল সে? আর ১ হাজার ২৮০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে টেক্সাস থেকে ফ্লোরিডায়ই–বা কী করে এল জ্যাজি? ক্যারি কিংবা অরেঞ্জ কাউন্টি অ্যানিমেল সার্ভিস, কেউই জানে না এর উত্তর।

তথ্যসূত্র: বিবিসি