‘নো ফাইন্ড, নো ফি’ চুক্তিতে মালয়শিয়ার হারিয়ে যাওয়া বিমানের খোঁজ শুরু হচ্ছে

ভারত মহাসাগরের আরও উত্তর পূর্বে নতুন জায়গায় মালয়শিয়ার নিখোঁজ বিমান এমএইচ৩৭০ এর তল্লাশি চলছে। ছবি: রয়টার্স

এক দশকেরও বেশি সময় আগে আকাশ থেকে হঠাৎ হারিয়ে গিয়েছিল মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এমএইচ৩৭০। ফ্লাইটের নামটি আজও বহু পরিবারের বুকে অমীমাংসিত প্রশ্ন হয়ে বিঁধে আছে। ২৩৯ জন যাত্রী ও ক্রু নিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিংয়ের পথে যাত্রা করা বিমানটি ২০১৪ সালের ৮ মার্চ হঠাৎ রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। আধুনিক উড়োজাহাজ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রহস্যগুলোর একটি ঘটনা হয়ে ওঠা সেই বিমানের খোঁজ আবার শুরু হতে যাচ্ছে।

মালয়েশিয়ার পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৩০ ডিসেম্বর থেকে নতুন করে সমুদ্রতলে অনুসন্ধান শুরু হবে। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সামুদ্রিক রোবটিক্স প্রতিষ্ঠান ওশান ইনফিনিটি এই অনুসন্ধান পরিচালনা করবে। এর আগে চলতি বছরের শুরুতে তারা অনুসন্ধান শুরু করলেও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এপ্রিল মাসে কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। এবার পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৩০ ডিসেম্বর থেকে মোট ৫৫ দিনের মধ্যে ধাপে ধাপে অনুসন্ধান চালানো হবে।

আরও পড়ুন

এই নতুন অনুসন্ধান চুক্তির একটি ব্যতিক্রমী দিক আছে। ‘নো ফাইন্ড, নো ফি’ ভিত্তিতে করা চুক্তি অনুযায়ী, ওশান ইনফিনিটি কোনো ধ্বংসাবশেষ খুঁজে না পেলে পারশ্রমিক পাবে না। যদি পায়, তবেই শুধু ৭ কোটি ডলার পারিশ্রমিক পাবে। সমুদ্রের প্রায় ৫ হাজার ৮০০ বর্গমাইল বা ১৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে অনুসন্ধান চালানো হবে। ঠিক কোন স্থানে এই অভিযান চলবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি। মালয়েশিয়ার পরিবহন মন্ত্রণালয় শুধু বলেছে, এটি এমন একটি এলাকা, যেখানে বিমানটির সন্ধান পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

ফ্লাইট এমএইচ৩৭০–এ ছিলেন ১২ জন মালয়েশিয়ান ক্রু ও ২২৭ জন যাত্রী। যাত্রীদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন চীনের নাগরিক। এছাড়া মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, ইরান, ইউক্রেন, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, রাশিয়া ও তাইওয়ানের নাগরিকরাও ছিলেন বিমানে। ওড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে স্বাভাবিক একটি ফ্লাইট যে ইতিহাসের সবচেয়ে বেদনাদায়ক রহস্যে পরিণত হবে, তা কেউ কল্পনাও করেনি।

আরও পড়ুন

বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার পর দক্ষিণ ভারত মহাসাগরের দুর্গম এলাকায় শুরু হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় পানির নিচের অনুসন্ধান অভিযানগুলোর একটি। অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্বে মালয়েশিয়া ও চীনের অংশগ্রহণে প্রায় ৪৬ হাজার বর্গমাইল সমুদ্রতল তন্নতন্ন করে খোঁজা হয়। দীর্ঘ তিন বছর পর, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে সেই অভিযান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে অস্ট্রেলীয় তদন্তকারীরা বলেন, আধুনিক যুগে দাঁড়িয়ে এত বড় একটি ঘটনার কোনো সমাধান না পাওয়া ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর জন্য এক গভীর ট্র্যাজেডি। প্রায় অকল্পনীয়।

২০১৮ সালে আবারও ওশান ইনফিনিটি তিন মাসব্যাপী একটি অনুসন্ধান চালায়। উন্নত প্রযুক্তি ও স্বয়ংক্রিয় ডুবযান ব্যবহার করেও সেবার কোনো নিশ্চিত সাফল্য আসেনি। তবে বছরের পর বছর ধরে আফ্রিকার উপকূল ও ভারত মহাসাগরের বিভিন্ন দ্বীপে ভেসে আসে কিছু ধ্বংসাবশেষ। যেগুলোর কয়েকটি নিশ্চিতভাবে এমএইচ৩৭০–এর অংশ বলে চিহ্নিত করা হয়। এটি গবেষকদের হাতে তুলে দেয় নতুন সূত্র। এসব ধ্বংসাবশেষের ভেসে যাওয়ার পথ বিশ্লেষণ করে বিমানটির সম্ভাব্য অবস্থান সম্পর্কে নতুন ধারণা তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুন

মালয়েশিয়ার ২০১৮ সালের সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিমানটি সম্ভবত মাঝআকাশে ম্যানুয়ালি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অটোপাইলটের স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণে ছিল না। প্রতিবেদনে ‘তৃতীয় পক্ষের অবৈধ হস্তক্ষেপ’ করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি। তবে পাইলট বা কো–পাইলটের আত্মঘাতী মিশন করেছেন এমন সম্ভাবনা নাকচ করা হয়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটির সম্ভাবনাও নাকচ করা হয়। ফলে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়। উত্তরগুলো থেকে যায় অধরা।

আরও পড়ুন