পলাশীর যুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী কে এই রাজা নবকৃষ্ণ

পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের বিজয়ের পর অভিবাদন জানাচ্ছেন বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর। ১৭৬২ সালে আঁকা এ ছবির শিল্পী ফ্রান্সিস হেম্যান

রাজা নবকৃষ্ণ দেব। যার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে পরাজিত হয়েছিলেন সিরাজুদ্দৌলা। আমরা এখনো মূল ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে মীর জাফরকে মনে রাখলেও, নবকৃষ্ণ ছিলেন সেই ষড়যন্ত্রের মূল প্রতিনিধি। কীভাবে তিনি ষড়যন্ত্র করলেন, সেটাই সংক্ষেপে বলছি।

নবকৃষ্ণ শৈশবে পড়ালেখায় ভালো ছিলেন। অল্প বয়সে বাবা মারা যান। মায়ের কাছে ইংরেজি ও ফারসি ভাষা শেখেন। পরে রপ্ত করেন আরবি ভাষা। এই গুনের কারণে ইংরেজদের নজরে পড়লেন। চাকরি পেলেনে ইংরেজদের দপ্তরে। দায়িত্ব, লর্ড হেস্টিংসকে ফারসি শেখাতে হবে। হেস্টিংস তখন সামান্য কেরানি মাত্র। নবকৃষ্ণ চাকরি শুরু করলেন। কিন্তু ইংরেজদের সঙ্গে তখন নবাব সিরাজের দ্বন্দ। তাই মাঝেমধ্যে হেস্টিংসকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে হয়। সঙ্গী হিসেবে সঙ্গে সঙ্গে যান নবকৃষ্ণ। 

একদিন মীরজাফরদের থেকে চিঠি এলো। চিঠিতে সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে লেখা থাকতে পারে। কিন্তু চিঠির ভাষা তো সাহেবরা বোঝেন না। তবে রাজদরবারে এ চিঠির পড়ার মতো একজন মুন্সি আছেন। কিন্তু তাঁকে দিয়ে চিঠি পড়ানো হলো না। কারণ তাঁকে অন্যরা বিশ্বাস করে না। তাহলে চিঠি পড়ে দেবে কে?

ডাক পড়লো নবকৃষ্ণের। তিনি গেলেন এবং চিঠি পড়লেন। সহজেই ক্লাইভের নজরে পড়লেন তিনি। পরের দিন থেকে ৬০ টাকা বেতনে মুন্সির চাকরি পাকা হলো। সিরাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পরিকল্পনা করছে ক্লাইভ। সাহায্য করবে নবকৃষ্ণ। 

শুরু হলো পলাশির যুদ্ধ। পরাজিত হলেন সিরাজ। সবাই গেল সিরাজের ভান্ডার লুট করতে। কিন্তু সেখানে তেমন কিছু পাওয়া গেল না। মোটে কোটি দুই টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে ইংরেজরা ফিরে গেল। কিন্তু আসল রাজকোষের খবর জানা আছে মীর জাফরের। তিন সঙ্গীকে নিয়ে সেই রাজকোষ লুট করলেন। পেলেন ৮ কোটি টাকা। ভাগ করে নিলেন চারজন। সেই ভাগিদারদের একজন নবকৃষ্ণ। 

টাকা নিয়ে ফিরে এলেন নিজ গ্রামে। এতদিনে সংসারের অভাব ঘুচেছে। লুটের টাকা দিয়ে কলকাতার শোভাবাজারে গড়লেন বিশাল রাজপ্রাসাদ। শুরু করলেন বিশাল কলেবরে দূর্গা পূজো। টানা ১৫ দিনের সেই আয়োজনে খরচ হলো লাখ লাখ টাকা। সেই প্রথম কলকাতাবাসী এরকম দূর্গা পূজা দেখল।  সয়ং লর্ড ক্লাইভ দলবল নিয়ে রাজবাড়িতে গিয়েছিলেন পূজো দেখতে। 

সিরাজকে পরাজিত করে নিজ দেশে ফিরে গিয়েছেল ক্লাইভ। ৫ বছর পরে তিনি আবার ফিরে এলেন। তার সঙ্গে আবার যোগ দিলেন নবকৃষ্ণ। একটু একটু করে নিজের কাঁধে দায়িত্ব নিতে শুরু করলো নবকৃষ্ণ। একসময় রাজা হলেন। রাজা থেকে মহারাজা। তারপর রাজা রায়বাহাদুর। কত্ত কী! 

পদোন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক উন্নতিও বাড়তে থাকে। মৃত্যু হয় নবকৃষ্ণের মায়ের। ইতিমধ্যে ধনীদের কাতারে নাম লিখিয়েছেন নবকৃষ্ণ। যাই হোক, মায়ের মৃত্যুতে খরচ করেছিলেন নয় লাখ টাকা। এলাকার সব দোকানের চাল ডাল শেষ হয়ে গিয়েছিল। তখন ৯ লাখ টাকার মূল্য অনেক। কারণ তার শুরুর বেতন ছিল মাত্র ৬০ টাকা। সুতরাং তখনকার ৯ লাখ টাকার মূল্য এবার নিজেই বুঝে নাও।

সূত্র: পূর্ণেন্দু পত্রী, কলকাতার রাজকাহিনী