নাসার স্যাটেলাইট আছড়ে পড়েছে পৃথিবীতে

৩৮ বছর বয়সী আর্থ রেডিয়েশন বাজেট স্যাটেলাইটটির ভর ছিল প্রায় ২ হাজার ৪৫০ কেজি। স্যাটেলাইটটি পড়েছে বেরিং উপসাগরে।

সম্প্রতি মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার পাঠানো পুরোনো একটি স্যাটেলাইট পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়েছে। স্যাটেলাইটটির নাম আর্থ রেডিয়েশন বাজেট স্যাটেলাইট। ৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায় স্যাটেলাইটটি পৃথিবীতে আছড়ে পড়ে। এটি প্রশান্ত মহাসাগরের বেরিং সাগর ও এর আশপাশের অঞ্চলে পড়েছে।

১০ জানুয়ারি নাসার ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করা হয়। নাসা নিশ্চিত করেছে, ২ হাজার ৪৫০ কেজি ভরের স্যাটেলাইটটি পৃথিবীতে ফিরে এসেছে। নাসার বিজ্ঞানীরা আশা করেছিলেন, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ভেদ করে পৃথিবীতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে স্যাটেলাইটটির বেশির ভাগ অংশই পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। হয়তো স্যাটেলাইটের সামান্য কিছু অংশ অবশিষ্ট থাকতে পারে। এর আগে জানানো হয়েছিল, পৃথিবীতে স্যাটেলাইটটি আছড়ে পড়লে প্রতি ৯ হাজার ৪০০ জনের মধ্যে ১ জনের ক্ষতি হতে পারে। ৮০০ কোটির পৃথিবীতে সংখ্যাটা মোটেও কম ছিল না। চাইলে তোমরা নিজেরাও খুঁজে বের করতে পারো, সংখ্যাটা ঠিক কত। যেহেতু স্যাটেলাইটটি পড়েছে বেরিং সাগর ও এর আশপাশের অঞ্চলে, তাই কারও কোনো ক্ষতি হয়নি।

আচ্ছা, তোমরা কি জানো, স্যাটেলাইটটির বেশির ভাগ অংশ কেন পুড়ে গেছে? মূলত পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কোনো বস্তু ঢুকলে তার বেগ বেড়ে যায়। অর্থাৎ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার আগে বেগ যা ছিল, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢোকার পর ওই বস্তুর বেগ আরও বাড়তে থাকবে। পৃথিবীর যত কাছাকাছি চলে আসবে বস্তুটি, ততই বাড়বে বেগ। বেগ ঠিক কতটা বাড়বে, সেটাও হিসাব করে বের করা যায়। প্রতি সেকেন্ডে ৯ দশমিক ৮ মিটার করে বাড়বে বেগ। এ ব্যাপারে অন্য কোনো লেখায় বিস্তারিত জানা যাবে। তো, বেগ বাড়ার কারণে বাতাসের সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে যেকোনো বস্তুতে আগুন লেগে যায়। একই কারণে আগুন লেগে পুড়ে গেছে নাসার স্যাটেলাইটটিও।

১৯৮৪ সালে স্পেস শাটল চ্যালেঞ্জারের মাধ্যমে স্যাটেলাইটি উৎক্ষেপণ করেছিল নাসা। স্যাটেলাইটটির কাজ ছিল, সূর্যের শক্তি কীভাবে শোষিত হয় এবং বিকিরিত হয়, তা নিয়ে গবেষণা করা। তবে স্যাটেলাইটটি পৃথিবীর স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার এবং অন্যান্য বায়ুমণ্ডলীয় উপাদান, যেমন জলীয় বাষ্প, অ্যারোসল ও নাইট্রোজেন অক্সাইড নিয়েও গবেষণা করেছে।

আর্থ রেডিয়েশন বাজেট এক্সপেরিমেন্ট প্রোগ্রামের তিনটি স্যাটেলাইটের মধ্যে এটি একটি। মাত্র দুই বছরের জন্য স্যাটেলাইটটি ডিজাইন করা হয়েছিল। মহাকাশে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ১৯৮৬ সালে। কিন্তু স্যাটেলাইটি ২০০৫ সাল পর্যন্ত চালু ছিল। শেষ পর্যন্ত নাসা স্যাটেলাইটটিকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এরপর এটি পরিণত হয় আড়াই টনের একটি স্পেস জাংকে। যা ১০ জানুয়ারি পৃথিবীতে এসে পড়েছে। স্পেস জাংক ভবিষ্যতে মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে এখনো স্পেস জাংকের কারণে মানুষের কোনো ক্ষতি হয়নি। কিন্তু ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ২০২২ সালে মার্কিন ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশন নতুন নিয়ম করেছে। কোনো স্যাটেলাইট অকার্যকর হওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে সেটাকে কক্ষপথ থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। সব দেশ এই নিয়ম মেনে চললে কমে যাবে মহাকাশের স্পেস জাংক।

সূত্র: স্পেস ডটকম ও নাসা