পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জীবিত বস্তু

গ্রেট ব্যারিয়ার রিফফাইল ছবি

পানির নিচে থাকা প্রবাল প্রাচীর দেখতে খুব সুন্দর। প্রাকৃতিক বিস্ময় বলা চলে। দেখতে গাছের মতো। অনেকসময় মনে হয় প্রবাল বুঝি পাথর। আবার কখনো পানির স্রোতের দুলুনিতে মনে হবে প্রবাল আস্ত একটা প্রাণী। আমরা তো জানি, প্রবাল আসলে প্রাণী। এর পাথুরে বৈশিষ্ট্য আছে। তুমি যা অনুমান করছো, ঠিক তাই। প্রবাল প্রাচীর পৃথিবীর বৃহত্তম জীবিত বস্তু বা কাঠামো। পানির নিচে জীবন কাটানো প্রবাল প্রাচীর মূলত প্রবাল পলিপ নামের ছোট্ট প্রাণীদের সমন্বয়ে গঠিত। পলিপকে ঘিরে থাকে ক্যালসিয়াম কার্বনেটের কঙ্কাল। সময়ের সাথে এই কার্বনেট জমে জমে পাথুরে আকৃতি ধারণ করে। এই কাঠামো বেশ জটিল এক বস্তু।জীবন আছে বলে আমরা একে বলছি প্রাণী। সবাই বলে প্রবাল প্রাচীর।

প্রবাল প্রাচীর অবিশ্বাস্যরকম বৈচিত্র্যময়। সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেক প্রজাতির মাছ ও প্রানীর আবাস এই প্রবাল। অনেক প্রাণীর প্রজননের জায়গা। অনেক মাছ নিরাপদে প্রবালে লুকিয়ে থাকে। প্রবাল এদেরকে সুরক্ষা দেয়। প্রবালকে বলতে পারো একটি প্রাকৃতিক বাধা। সমুদ্রের ঝড় থেকে উপকূলকে রক্ষা করে। আবার উপকূলকে ঢেউয়ের ধাক্কায় ক্ষয়ে যাওয়া থেকেও রক্ষা করে প্রবাল।

আরও পড়ুন

চিন্তার ব্যাপার হলো, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের পানি ক্রমেই অম্ল (অ্যাসিডিক) হচ্ছে, বাড়ছে তাপমাত্রা। বৈশ্বিক উষ্ণতার মতো ঘটনা ঘটে চলায় প্রবাল প্রাচীর হুমকির মুখে পড়েছে। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখিয়েছেন, কীভাবে সমুদ্রের পানি গত তিন দশকে আরও অম্লীয় হয়ে উঠেছে এবং কীভাবে সামুদ্রিক জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। সমুদ্রের পানির রঙ, তাপমাত্রা এবং লবণাক্ততা পরিমাপের জন্য স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা সমুদ্রের রসায়নের পরিবর্তন অনুসরণ করতে পারেন। যে অঞ্চলে অম্লকরণ ঘটছে সেগুলো সনাক্ত করতে পারেন।

আরও পড়ুন

বাড়তে থাকা তাপমাত্রা প্রবাল প্রাচীরের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। তাপমাত্রা বাড়লে প্রবাল আক্রান্ত হয়। একে বলে ব্লিচিং। এরকম হলে প্রবালের সঙ্গে বাস করা শৈবালকে বের করে দেয়। এই শৈবাল প্রবালের জন্য খাদ্য সংগ্রহ করে। একে বলে মিউচুয়ালিজম। এরকম হলে প্রবালের খাদ্য সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়। কোরাল ব্লিচিংয়ের ফলে প্রবালের মৃত্যুও হতে পারে। এভাবে পুরো ইকোসিস্টেম হুমকির মুখে পড়ে।

একসঙ্গে অনেক অনেক প্রবাল পলিপ কলোনি হিসেবে বাস করে। পলিপগুলো মিলেমিশে প্রাচীর গড়ে তোলে। তাই বলা যায়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জীবিত কাঠামো প্রবাল প্রাচীর।