জেসিন্ডা–ম্যানিয়া

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের পদত্যাগের ঘোষণা মোটামুটি পুরো বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো তাঁর প্রশংসা করেছে। বিভিন্ন দেশের নেতারা টুইট করেছেন জেসিন্ডাকে নিয়ে। নিউজিল্যান্ডের নেতারা তাঁর পদত্যাগে হতাশ হয়েছেন।

জেসিন্ডা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর একের পর এক কাজ করে যখন প্রশংসিত হতে শুরু করেন, তখন নতুন একটি শব্দ চালু হয়, ‘জেসিন্ডা–ম্যানিয়া’। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বারবার তাঁর প্রশংসা করে এই শব্দ ব্যবহার করেছে। তাঁর অসাধারণ নেতৃত্বের প্রশংসা করে শব্দটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

এই জেসিন্ডা যে এক দিনে এত বড় নেতা হয়ে উঠেছেন, তা তো নয়। ধীরে ধীরে, দিনে দিনে নিজেকে গড়ে তুলেছেন তিনি। হয়ে উঠেছিলেন নিউজিল্যান্ডের সবার নেতা।

জেসিন্ডা আরডার্নের পুরো নাম জেসিন্ডা কেট লরেল আরডার্ন। ১৯৮০ সালে ২৬ জুলাই এই নারীর জন্ম নিউজিল্যান্ডের হ্যামিলটনে।

নিউজিল্যান্ডের বে অব প্লেন্টি অঞ্চলের মুরুপারা নামের একটি ছোট্ট শহরে তাঁর শৈশব কেটেছে। এই শহরে নিউজিল্যান্ডের মাওরি জাতিগোষ্ঠীর মানুষের বসবাস বেশি। এ ছাড়া সেখানে দরিদ্র মানুষের সংখ্যাও ছিল বেশি। সেখানকার দারিদ্র্য দেখেই পরবর্তী সময়ে রাজনীতিতে এসেছিলেন তিনি।

জেসিন্ডার মূলত বেড়ে ওঠা অকল্যান্ডে। সেখানে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পড়েছেন। ১৯৯৯ সালে তিনি ভর্তি হন ইউনিভার্সিটি অব ওয়াইকাতোয়। ২০০১ সালে তিনি সেখান থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন কমিউনিকেশন স্টাডিজে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই লেবার পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। অর্থাৎ যখন তিনি রাজনীতিতে জড়িয়েছিলেন, তখন তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর।

এই যে রাজনীতিতে জড়িয়ে গেলেন, এরপর আর এ থেকে বের হতে পারেননি। এরপর জেসিন্ডা লেবার পার্টির এক আইনপ্রণেতার গবেষক হিসেবে নিযুক্ত হন। পরবর্তী সময়ে এই অভিজ্ঞতাই তাঁকে নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্কের কার্যালয়ে কাজ করতে সাহায্য করেছিল। মূলত হেলেন ক্লার্ক ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছেন জেসিন্ডা আরডার্নকে। নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের অন্যতম সফল নেতা হেলেন ক্লার্ককে নিজের হিরো মনে করেন জেসিন্ডা। এ ছাড়া হেলেন ক্লার্ক ছিলেন তাঁর গুরু।

তবে ২০০৫ সালে জেসিন্ডা পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। নিউজিল্যান্ডের মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের সন্তানদের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমানোটাকে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়ে থাকে। তবে সেখানে গিয়ে অন্য অনেকের মতো কোনো পানশালা বা ওয়্যারহাউসে তাঁকে কাজ করতে হয়নি। সেই সময় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের ক্যাবিনেট কার্যালয়ে কাজ করেছেন তিনি। ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক যুব সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব সোশ্যালিস্ট ইয়ুথের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। বামপন্থী তরুণদের সংগঠন এটি। ১০৬টি দেশের ১৪৫টি সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছে এ আন্তর্জাতিক সংগঠন।

যাহোক, এই সংগঠনের নেতা হওয়ার এক বছর পরই ২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ডের ওয়াইকাতোয় থেকে আইনপ্রণেতা হতে নির্বাচন করেন জেসিন্ডা। কিন্তু এই আসন থেকে কখনোই জিততে পারেনি তাঁর দল। জেসিন্ডাও হেরে যান। তবে এরপরও আইনপ্রণেতা হয়ে পার্লামেন্টে প্রবেশ করেন তিনি।

নিউজিল্যান্ডের পার্লামেন্টে দুই ধরনের আইনপ্রণেতা রয়েছেন। একদল সরাসরি ভোটারের ভোটে নির্বাচিত হন। আরেক দল আইনপ্রণেতা নির্বাচিত হন দলের পক্ষ থেকে। দেশটির ভোটের ব্যবস্থাটা এমন, ভোটাররা আইনপ্রণেতাদের সরাসরি যেমন একটি ভোট দেন, তেমনি আরেকটি ভোট দেন দলকে। যে দল যত ভোট পায়, সেই ভোটের অনুপাতে একটি নির্দিষ্টসংখ্যক আইনপ্রণেতা নির্বাচিত করার সুযোগ পায় দলটি। এমন দলীয় মনোনয়নে ২০০৮ সালে আইনপ্রণেতা বা এমপি নির্বাচিত হন আরডার্ন। সেবার আইনপ্রণেতা হয়ে রেকর্ড করেন জেসিন্ডা। কারণ, ওই সময় সবচেয়ে কম মাত্র ২৮ বছর বয়সে আইনপ্রণেতা হয়েছিলেন তিনি।

এই তো গেল আইনপ্রণেতা হওয়ার কথা। কিন্তু হয়েই পার্লামেন্টে গিয়ে হইচই ফেলে দেন জেসিন্ডা। পার্লামেন্টে প্রথম বক্তব্যেই তিনি আহ্বান জানান, নিউজিল্যান্ডের বিদ্যালয়ে মাওরি ভাষা পড়ানো শুরু হোক। একই সঙ্গে তখনকার সরকারের কঠোর সমালোচনাও করেন। কারণ, ওই সরকার জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তেমন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছিল না। এরপর লেবার পার্টি থেকে বেশ কিছু দায়িত্ব পান তিনি। ইয়ুথ অ্যাফেয়ার্স–বিষয়ক মুখপাত্র হন এবং পার্লামেন্টের কয়েকটি কমিটিতেও জায়গা হয় তাঁর।

কিন্তু ২০১১ সালের নির্বাচনে আবারও হেরে যান জেসিন্ডা। তবে দল তাঁকে আবারও আইনপ্রণেতা বানিয়ে পার্লামেন্টে পাঠায়। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও তিনি হেরে যান। কিন্তু দলের সমর্থনে আবারও আইনপ্রণেতা হন। এবার লেবার পার্টিতে কিছু বাড়তি দায়িত্ব পান। দলটির শিল্প, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, শিশু, বিচার ও ক্ষুদ্র ব্যবসাবিষয়ক মুখপাত্র হন তিনি। এসব নির্বাচনে হেরে যাওয়া, কিন্তু দলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করায় নিউজিল্যান্ডের পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন জেসিন্ডা আরডার্ন।

জেসিন্ডা আরডার্নের পদত্যাগের ঘোষণা মোটামুটি পুরো বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল

পরপর তিন নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর ২০১৭ সালে জেসিন্ডা ঘুরে দাঁড়ান। সেই বছর একটি আসনে উপনির্বাচনে বিশাল জয় পান তিনি। এরপর লেবার পার্টির উপনেতা পদত্যাগ করলে দলটির নেতাদের সবার সম্মতিতে উপনেতা নির্বাচিত হন তিনি।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ডে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দেশটিতে তখন ন্যাশনাল পার্টি ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু এই নির্বাচনের দুই মাস আগে মতামত জরিপে দেখা যায়, জেসিন্ডা আরডার্নদের দল লেবার পার্টির জনপ্রিয়তা কমছে। ফলে দলটির নেতা অ্যান্ড্রু লিটল পদত্যাগ করেন। এরপর দলের নেতা হতে প্রার্থী হন জেসিন্ডা। কিন্তু দলটি তাঁকে নেতা করতে চায়নি। দলের অভ্যন্তরীণ ভোটে সাতবার হেরেছিলেন তিনি। অবশেষে ২০১৭ সালের ১ আগস্টে তিনি নিউজিল্যান্ড লেবার পার্টির নেতা নির্বাচিত হন। এরপর আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। অক্টোবরে তিনি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ইংরেজি ভাষার এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার দেওয়া তথ্য অনুসারে, ৩৭ বছর বয়সে প্রধানমন্ত্রী হয়ে রেকর্ড করেন তিনি। দেড় শ বছরের বেশি সময় ধরে এত কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী পায়নি নিউজিল্যান্ড।

বলা হয়ে থাকে, জেসিন্ডা আরডার্নের আশাবাদী ভাবনা, শক্তি ও বাস্তবধর্মী নেতৃত্ব লেবার পার্টিকে ক্ষমতা আনে ২০১৭ সালে। ওই সময় নারী ও তরুণ ভোটারদের ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিলেন তিনি। তরুণদের আকৃষ্ট করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন জেসিন্ডা। নিউজিল্যান্ডের তরুণদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা মূল্যে পড়ার সুযোগ, অভিবাসী কমিয়ে আনা, গর্ভপাতের সুযোগ করে দেওয়া, দরিদ্র শিশুদের জন্য সুবিধা বাড়িয়ে তাঁদের দারিদ্র্য দূর করতে পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন জেসিন্ডা।

জেসিন্ডা আরডার্ন ঘোষণা দিয়েছিলেন, প্রান্তিক মানুষের নাগরিক সুবিধা বাড়াবেন। এই ঘোষণা তাঁকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। সেই সময় তাঁর নেতৃত্বের প্রশংসা করেছিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও বারাক ওবামা। তাঁদের কাছ থেকে রাজনীতির ‘রক স্টার’ খেতাব পেয়েছিলেন জেসিন্ডা।

ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হচ্ছে, কিন্তু ক্ষমতা নেওয়ার প্রায় দেড় বছরের মাথায় নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন জেসিন্ডা। ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে। ওই দিন ব্রেন্টন টারান্ট নামের এক শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী সেখানকার দুটি মসজিদে হামলা চালান। সেই হামলায় ৫১ জন নিহত ও ৪০ জন আহত হন। এই হামলার পর ধারণা করা হচ্ছিল, হামলার কারণ হিসেবে অভিবাসীদের বাড়াবাড়ির ওপর দায় চাপানো হবে। প্রকারান্তরে সেই দায় মুসলমানদের ওপর যাবে। কিন্তু তা ঘটেনি। জেসিন্ডা যা ঘটিয়েছেন, তা আসলেই অবিশ্বাস্য।

হামলার পরদিন জেসিন্ডা ক্রাইস্টচার্চে যান। সেখানে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি গিয়েছিলেন কালো পোশাক পরে। মাথা ঢেকে সেখানে গিয়েছিলেন। সেখানে হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। নিজের কান্না ধরে রাখতে পারেননি। সেখানে তিনি বলেছিলেন, এই বেদনায় পুরো জাতি একতাবদ্ধ হয়েছে। এরপর ব্রেন্টন টারান্টকে সাজার আওতায় আনতে জেসিন্ডা একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েছেন। আর যাতে এমন হামলার ঘটনা না ঘটে, সে জন্য অস্ত্র আইন সংশোধন করেছেন।

ওই সময়ে ইরানের বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক নেগার মরতাজাভি বলেছিলেন, জেসিন্ডার এই হিজাব পরাটা ছিল মুসলমানদের প্রতি তাঁর সম্মানের প্রতীক।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের আমিরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আবদুল খালেক আবদুল্লা বলেছিলেন, সেই সময় জেসিন্ডা ছিলেন স্থির এবং দৃঢ়।

এমন পদক্ষেপ নিয়ে সারা বিশ্বে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন জেসিন্ডা। নানান দেশের নেতারা সেই সময় তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন।

ক্রাইস্টচার্চের ঘটনার কিছুদিন পর দেশটিতে হোয়াইট আইল্যান্ড নামের আগ্নেয়গিরি থেকে হঠাৎ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়। বেশ কয়েকজন প্রাণ হারান। সেই পরিস্থিতিও ঠিকঠাকমতো সামলে নিয়েছিলেন জেসিন্ডা।

জেসিন্ডা যে দৃঢ়তার পরিচয় একবার দিয়েছেন, এমনটা নয়। করোনাভাইরাসের মহামারি শুরু হলে যে দেশগুলো কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতি ঠিকঠাক সামাল দিয়েছিল, নিউজিল্যান্ড তার মধ্যে অন্যতম। করোনা মোকাবিলা করতে গিয়ে জেসিন্ডা দেশের সীমান্ত বন্ধ করেছিলেন, একচুল ছাড় দেননি। এমনকি বিক্ষোভ হয়েছে। তবে এরপরও পাত্তা দেননি তিনি।

করোনায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করায় যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন জেসিন্ডা। ট্রাম্পের সমালোচনার জবাবও দিয়েছেন। তখন যুক্তরাষ্ট্রের সংক্রমণ ছিল ৪০ হাজারের বেশি আর নিউজিল্যান্ডে সংক্রমণ ছিল দশের ঘরে, সেটা বলে ট্রাম্পকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন জেসিন্ডা। করোনার কারণে নিজের বিয়ের অনুষ্ঠানও বাতিল করেছিলেন জনপ্রিয় এই নেতা।

জেসিন্ডার এমন পদক্ষেপ যে নিউজিল্যান্ডে মূল্যায়িত হয়নি, তা নয়। ২০২০ সালের নির্বাচনে বিশাল জয় পায় তাঁর দল। এটাও ছিল রেকর্ড। কারণ, ১৯৯৩ সালে নিউজিল্যান্ডে নতুন নির্বাচনব্যবস্থা চালুর পর ওই বছরই প্রথম কোনো দল এককভাবে ক্ষমতায় বসে। আর সেটা সম্ভব হয়েছিল এই জেসিন্ডার নেতৃত্বের কারণেই।

সন্তান জন্ম দিয়েও জেসিন্ডা আলোচনায় এসেছিলেন। ২০১৮ সালে বিশাল জয় পাওয়ার কিছুদিন পর তাঁর মেয়ে নিভের জন্ম হয়। নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, সরকারপ্রধান থাকা অবস্থায় সন্তান জন্ম দেওয়ার ঘটনা বেশ বিরল। এর আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় বেনজির ভুট্টো সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন। সেই সময় খবরটা গোপন রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল।

তবে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর নিজেই এ খবর জানিয়েছিলেন জেসিন্ডা। এ ছাড়া ছোট্ট সেই সন্তানকে নিয়ে পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘের অধিবেশনেও যোগ দিয়েছিলেন তিনি। তিনি একমাত্র নেতা, যিনি কিনা এত ছোট্ট বাচ্চা নিয়েই জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন। এ ছাড়া মেয়ের জন্ম দেওয়ার পর ছয় সপ্তাহের জন্য ছুটিও নিয়েছিলেন তিনি। এই সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন উপপ্রধানমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স।

কিন্তু রাজনীতিতে খারাপ সময় আসে, এটাও সত্য। সম্প্রতি এমন এক খারাপ সময়ের মধ্যে পড়েছেন জেসিন্ডা। নিউজিল্যান্ডে জীবনযাপনের বাড়তি খরচ ও অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় শঙ্কিত দেশটির মানুষ। এসবের জেরে তাঁর জনসমর্থনও কমেছে। ফলে সড়ে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন জেসিন্ডা।

আগামী অক্টোবরে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জরিপ বলছে, ওই নির্বাচনে জিততে হলে জেসিন্ডার দলকে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। ঠিক এই পরিস্থিতিতে অনেকটা দায় নিয়েই নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেন তিনি।

জেসিন্ডা আরডার্নের পদত্যাগের ঘোষণা আসার পর তাঁর প্রশংসা করে টুইট করেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ। নেতারাই যে শুধু তাঁর প্রশংসা করেছেন, এমনটা নয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল মানুষেরাও তাঁকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন।

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ড একটি টুইট করেছেন। এর অর্থ এমন, জেসিন্ডা যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষেত্রে যে দুটি বিশেষ দিককে প্রাধান্য দিয়েছেন, তার একটি উদারতা, আরেকটি সহমর্মিতা। এর মাধ্যমে বিশ্বকে নতুন এক নেতৃত্ব দেখিয়েছেন তিনি।

জেসিন্ডার এই পদত্যাগে তাঁর দেশের অনেক মানুষই হতাশ হয়েছেন। কিন্তু তিনি হতাশ নন। বলেছেন, নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়ার জন্য তাঁর কোনো অনুতাপ নেই। এই পদত্যাগের মধ্য দিয়ে জেসিন্ডা–ম্যানিয়া যুগের অবসান হলো।

জেসিন্ডা আরডার্নের পদত্যাগের পর নিউজিল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী ৪৪ বছর বয়সী ক্রিস হিপকিনস। জেসিন্ডার আমলে তিনি পুলিশ, শিক্ষা ও জনসেবামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া জেসিন্ডার কোভিড-১৯-বিষয়ক মন্ত্রীও ছিলেন তিনি।