বাসযোগ্য নতুন গ্রহ আবিষ্কার

পৃথিবীর বাইরে কোনো প্রাণ আছে কি না, এটা একটা তর্কযোগ্য প্রশ্ন। উত্তর একসঙ্গে হ্যাঁ ও না দুটোই হতে পারে। তবে এখনো পৃথিবীর বাইরে কোনো প্রাণের সন্ধান পাওয়া যায়নি। ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে কি না সে কথা কেউ শতভাগ নিশ্চিতভাবে বলতে পারে না। তবে প্রতিনিয়ত খোঁজ চলছে এ ধরনের গ্রহের।

সম্প্রতি এমনই একটা বাসযোগ্য গ্রহের সন্ধান দিয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। ১২ জানুয়ারি ২০২৩ এই গ্রহ সম্পর্কে জানানো হয়েছে নাসার ওয়েবসাইটে। গ্রহটির নাম ‘টিআইও ৭০০ ই’। এটি খুঁজে পেয়েছে নাসার ট্রানজিটিং এক্সোপ্ল্যানেট সার্ভে স্যাটেলাইট। সংক্ষেপে এই স্যাটেলাইটকে বলা হয় টেস (TESS)। এই গ্রহের অবস্থান বাসযোগ্য অঞ্চলে। বাসযোগ্য অঞ্চল বলতে কী বোঝায়?

বাসযোগ্য অঞ্চল বলতে বোঝানো হয় গোল্ডিলকস জোন। অর্থাৎ এমন অবস্থান, যেখানে কোনো গ্রহের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা এমন থাকবে, যাতে পানি তরল অবস্থায় থাকতে পারে। তাপমাত্রা কম হলে পানি জমে বরফ হয়ে যাবে। বেশি হলে পানি হয়ে যাব বাষ্প। এই দুইয়ের মাঝামাঝি অনুকূল তাপমাত্রার অঞ্চলকে বলা হয় গোল্ডিলকস জোন। ইংরেজিতে একে হ্যাবিটেবল জোনও বলে। বাংলায় বলে বাসযোগ্য অঞ্চল।

নাসার তথ্যমতে, সদ্য খুঁজে পাওয়া গ্রহটির আকার পৃথিবীর আকারের ৯৫ শতাংশ। এই গ্রহ পৃথিবীর মতো পাথুরে। টিওআই ৭০০ নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘোরা চারটি গ্রহের মধ্যে একটি ‘টিওআই ৭০০ ই’। এটি ছাড়াও এর আগে খুঁজে পাওয়া গেছে ওই নক্ষত্রের আরও তিনটি গ্রহ। সবশেষটি পাওয়া গেছে ২০২০ সালে। নাম টিওআই ৭০০ ডি। তবে এই সৌরজগতের অন্য গ্রহ দুটি হয়তো নক্ষত্রের কাছাকাছি অবস্থিত। সে কারণে ওই গ্রহ দুটি পাথুরে হওয়ার সম্ভবনা কম। গ্রহ দুটি থাকতে পারে গ্যাসীয় অবস্থায়। তবে ‘টিওআই ৭০০ ই’ গ্রহে থাকতে পারে পানি। এ ছাড়া ওই গ্রহের বায়ুমণ্ডল থাকার সম্ভাবনাও রয়েছে। বায়ুমণ্ডল থাকলে ওই গ্রহের তাপমাত্রা হবে প্রায় মাইনাস ৪.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উদাহরণস্বরূপ, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১৩.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

টিওআই ৭০০ একটি শীতল লাল বামন নক্ষত্র। পৃথিবী থেকে ১০০ আলোকবর্ষ দূরে এর অবস্থান। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার নাসা জেট প্রপালেশন ল্যাবরেটরির (জেপিএল) গ্রহবিজ্ঞানী এমিলি গিলবার্ট বলেন, ‘বসবাসযোগ্য একাধিক ছোট গ্রহের মধ্যে এটি একটি। ‘টিওআই ৭০০’ নক্ষত্রের ই গ্রহটি ডি গ্রহের তুলনায় ১০ শতাংশ ছোট (ডি গ্রহটি ২০২০ সালে আবিষ্কার করা হয়)।

তবে টিওআই ৭০০ নক্ষত্রের গ্রহগুলোর কোনোটিরই আহ্নিক গতি নেই। অর্থাৎ গ্রহগুলো শুধু নিজস্ব নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘোরে। নিজ অক্ষের ওপরে ঘোরে না। ফলে গ্রহটিতে আমাদের চাঁদের মতো সব সময় একপাশে নক্ষত্রের আলো পড়ে। মানে এক পাশে সব সময় দিন ও অন্য পাশে সব সময় রাত থাকে।

নাসার ট্রানজিটিং এক্সোপ্ল্যানেট সার্ভে স্যাটেলাইট এখন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণযোগ্য আকাশের প্রায় ৭৫ শতাংশ ছবি তুলেছে এবং ৬৬টি দূরবর্তী গ্রহের সন্ধান পেয়েছে। এ ছাড়া সব মিলিয়ে বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি এক্সোপ্ল্যানেট খুঁজে পেয়েছে। তা ছাড়া গ্রহ হতে পারে এমন সম্ভাব্য প্রার্থী বা বস্তু আছে আরও ১০ হাজারের বেশি। এর কোনোটাতে থাকলেও থাকতে পারে প্রাণের অস্তিত্ব। আসলেই প্রাণ আছে কি না সেটা সময়ই বলে দেবে।

সূত্র: দ্য ল্যাচ ডটকম