বিল গেটসের সন্তানেরা কে কোথায়

বিল গেটস, তাঁর সাবেক স্ত্রী মেলিন্ডা গেটস ও তাঁদের সন্তানেরাছবি: মেলিন্ডা গেটসের ইন্সটাগ্রাম

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ব্যক্তি বিল গেটস, যিনি মাইক্রোসফট করপোরেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১১ এপ্রিল পর্যন্ত তাঁর আনুমানিক সম্পদের পরিমাণ ১৫৬ বিলিয়ন ডলার বা ১৫ হাজার ৫৬০ কোটি ডলার। তিনি ১৯৯৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২২ বছরে ১৮ বার বিশ্বের সেরা ধনী নির্বাচিত হন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজনেস ম্যাগাজিন ফোর্বসের ২০২৫ সালের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় বিল গেটস ১৩ নাম্বারে। ৬৯ বছর বয়সী বিল গেটস আজও কিশোর-তরুণদের অনুপ্রেরণা।

বিল গেটস ও তাঁর সাবেক স্ত্রী মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটসের তিন সন্তান। ২৮ বছর বয়সী জেনিফার গেটস, ২২ বছর বয়সী ফিবি গেটস এবং ২৫ বছর বয়সী ছেলে ররি জন গেটস। তাঁদের তিনজনের প্রত্যেকেই নিজ নিজ আগ্রহের ও পছন্দের পথে এগিয়ে চলেছেন। অনেকে মনে করেন, বিল গেটসের সন্তানেরা মনে হয় তাঁদের বাবার এই বিপুল অর্থ দিয়ে আয়েশি জীবনযাপন করেন। তবে বাস্তব চিত্র কিছুটা ভিন্ন। সম্প্রতি ‘ফিগারিং আউট উইথ রাজ শর্মা’ পডকাস্টে বিল গেটস বলেন, ‘আমি আমার সম্পদের ১ শতাংশের কম অংশ আমার সন্তানদের দেওয়ার পরিকল্পনা করেছি। কেননা আমি মনে করি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পদের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার চেয়ে সন্তানদের নিজের প্রচেষ্টায় সফল হওয়া উচিত।’ বিল গেটসের সম্পদের ১ শতাংশ হচ্ছে ১৫৫ কোটি ডলার। এতে বিল গেটসের সন্তানদের মধ্যে তেমন প্রভাব পরবে না। এই সম্পদেও তাঁরা বিশ্বের ধনীদের কাতারেই থাকবে। চলো তাহলে জেনে নেওয়া যাক, এখন বিল গেটসের সন্তানেরা কে কোথায় আছেন, কী করেছেন।

জেনিফার গেটস

জেনিফার গেটস ও নায়েল নাসার
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

১৯৯৬ সালের ২৬শে এপ্রিল জন্ম জেনিফার গেটসের। তাঁকে সবাই জেন নামে ডাকে। ২৮ বছর বয়সী জেন গেটস পরিবারের বড় সন্তান। ছোটবেলা থেকেই ঘোড়ার প্রতি তাঁর বেশ আগ্রহ তৈরি হয়। মাত্র ছয় বছর বয়সে ঘোড়ায় চড়া শেখেন। তাঁর এই শখের জন্য তাঁর বাবা ক্যালিফোর্নিয়ায় ১৮ মিলিয়ন ডলার দিয়ে একটা ঘোড়ার খামার কিনেছিলেন।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনস্বাস্থ্যে স্নাতকোত্তর এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে মানব জীববিজ্ঞানে (হিউম্যান বায়োলজি) স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৬ সালে তাঁর বাবার ৬ মিলিয়ন ডলার অনুদানের পর বিশ্ববিদ্যালয়টির একটি কম্পিউটার বিজ্ঞান ভবনের নামকরণ তার নামে করে। ২০২৪ সালের মাউন্ট সিনাইয়ের আইকান স্কুল অফ মেডিসিন থেকে স্নাতক হওয়ার পর তিনি মাউন্ট সিনাইতেই তাঁর পেডিয়াট্রিক রেসিডেন্সি অর্থাৎ শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষণ শুরু করেন। তিনি সেখান কার শিশুদের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা, তাদের স্বাস্থ্য পরিচর্যা কাজ করছেন। ইনস্টাগ্রামে পাঁচ লাখের বেশি ফলোয়ার রয়েছে তাঁর। তিনি তাঁর ইনস্টা বায়োতে নিজেকে ‘অশ্বারোহী, নবদম্পতি, বইয়ের পোকা’ হিসেবে পরিচয় দেন। বারবার বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় জেনিফারের জনসমক্ষে আচরণ বিশেষভাবে আকর্ষণ করে সবাইকে।

আরও পড়ুন

২০২১ সালের অক্টোবরে তিনি মিশরীয় অশ্বারোহী নায়েল নাসেরকে বিয়ে করেন। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে জেনিফারের প্রথম সন্তান জন্ম দেন। এরপর থেকে বিল গেটস বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে নিজেকে একজন গর্বিত নানা হিসেবে উল্লেখ করেন। ২০২৪ সালের তাঁদের দ্বিতীয় কন্যার জন্ম হয়। সম্প্রতি তিনি কেনিয়া সফর নিয়ে পোস্ট করেছেন। যেখানে তিনি শিশুদের শৈশবকালীন স্বাস্থ্য এবং দেশটির উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছেন।

ররি জন গেটস

ররি জন গেটস (মাঝখানে)
ছবি: জেনিফার গেটস ইন্সটাগ্রাম

বিল গেটস ও মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চের একমাত্র পুত্র ররি জন গেটস। তিনি ১৯৯৯ সালের ২৩ মে জন্মগ্রহণ করেন। মেলিন্ডার প্রয়াত বন্ধু জন নিলসনের প্রতি সম্মান জানিয়ে তাঁর নামকরণ করেন, যিনি তাঁর ছেলের জন্মের পরপরই ক্যান্সারে মারা যান।

ররি ২০২২ সালের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক বা ব্যাচেলার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। যেখানে তিনি চার বছরে দুটি বিষয়ে স্নাতক এবং একটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি ইনস্টিটিউট অব ওয়ার্ল্ড পলিটিক্সে তাঁর পিএইচডি করছেন। লিঙ্কডইন অনুসারে আফগানিস্তান যুদ্ধ কমিশনের একজন বিশ্লেষক তিনি। ২০১৭ সালে, মেলিন্ডা টাইম ম্যাগাজিনের জন্য একটি প্রবন্ধে ররিকে ‘সহানুভূতিশীল, কৌতূহলী, বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, ররির যে বৈশিষ্ট্য নিয়ে তিনি সবচেয়ে বেশি গর্বিত, তা হলো তাঁর নারীবাদী চেতনা।

গেটস পরিবারের সন্তানদের মধ্যে সবচেয়ে ব্যক্তিগত জীবনযাপন করে ররি। এমনকি তিনি সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্টও তেমন ব্যবহার করেন না।

আরও পড়ুন

ফিবি গেটস

ফিবি গেটস
ছবি: গেটি ইমেজেস

গেটস সন্তানদের মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ঠ ২২ বছর বয়সী ফিবি গেটস। জন্ম ২০০২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। ২০২১ সালে হাই স্কুল থেকে স্নাতক হওয়ার পর, তিনি তাঁর বোনের কে অনুসরণ করে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিন বছর পর জুনে তিনি মানব জীববিজ্ঞানে স্নাতক বিজ্ঞান ডিগ্রি অর্জন করেন।

তাঁর বেশ কয়েকটি বিষয়ে বেশ আগ্রহ রয়েছে। ফিবিও বই পড়তে বেশ ভালোবাসেন। দীর্ঘদিন ধরে ফ্যাশনের প্রতি তাঁর আগ্রহ দেখা গেছে। তিনি ব্রিটিশ ফ্যাশন প্রতিষ্ঠান ভোগে ইন্টার্নশিপ করেছেন। তিনি মাঝে মধ্যেই তার সোশ্যাল মিডিয়াতে টেকসই ফ্যাশনের বিষয়টি তুলে ধরেন। যেখানে ভিনটেজ ও সেকেন্ডহ্যান্ড স্টোর এবং যেসব ডিজাইনার আসল চামড়া ও পশম ব্যবহার করে না, সেগুলোর প্রচারণা করেন। এই আগ্রহ থেকেই তিনি ‘ফিয়া’ (Phia) নামের একটি টেকসই ফ্যাশন প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মের সহ-প্রতিষ্ঠা করেছেন। এটা অপচয় কমাতে বিভিন্ন সেকেন্ডহ্যান্ড মার্কেটপ্লেস থেকে নির্দিষ্ট পোশাক খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে গ্রাহককে। সম্ভবত গেটস সন্তানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত মুখ তিনি। কেননা ইনস্টাগ্রামে তাঁর সাড়ে চার লাখের বেশি ফলোয়ার রয়েছে।

বিল গেটসের সন্তানদের সবাই নিজেদের আগ্রহের ক্ষেত্রকে বেছে নিয়েছেন এবং সেদিকেই এগিয়ে চলেছেন। বিল গেটসও তাঁর সন্তানরা যে যেদিকে যেতে চেয়েছে তাঁদেরকে সে পথেই অগ্রসর হতে সাহায্য করেছেন।

সূত্র: ইয়াহু নিউজ, পিপল ডটকম, বিজনেস ইনসাইডার, হ্যালো ম্যাগাজিন

আরও পড়ুন