গ্লোবাল ওয়ার্মিং আর জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যে পার্থক্য কী

গরমে প্রাণ যায় যায় অবস্থা, আবার শীতে কাঁপুনি ধরানো ঠান্ডা! টিভিতে প্রায়ই শোনা যায়, আবহাওয়া কেমন যেন বদলে যাচ্ছে। কখনো পৃথিবী গরম হয়ে যাচ্ছে, আবার কখনো জলবায়ু। এই পৃথিবীর গরম হওয়া মানে গ্লোবাল ওয়ার্মিং আর জলবায়ু বদলে যাওয়া কি একই কথা? না। এদের মধ্যে পার্থক্য আছে? কী সেই পার্থক্য, তা–ই জানব এই লেখায়।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং কী

প্রথমে আসা যাক গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কথায়। শব্দটার মধ্যেই এর মানে লুকিয়ে আছে। ‘গ্লোবাল’ মানে পুরো পৃথিবী, আর ‘ওয়ার্মিং’ মানে গরম হওয়া। অর্থাৎ গ্লোবাল ওয়ার্মিং মানে পুরো পৃথিবীর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বেড়ে যাওয়া। আর পৃথিবী পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে পৃথিবী তো গরম হবেই!

গ্লোবাল ওয়ার্মিং ব্যাপারটাকে আমাদের জ্বরের সঙ্গে তুলনা করতে পারো। আমাদের যখন জ্বর আসে, তখন কিন্তু শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। ঠিক সেভাবেই পৃথিবীরও তাপমাত্রা বাড়ে। দেড় শ বছর ধরে, বিশেষ করে ১৯৭০ সালের পর থেকে পৃথিবীর তাপমাত্রা একটানা বেড়েই চলেছে।

এখন জিজ্ঞেস করতে পারো, কেন পৃথিবীর এই জ্বর এল? মানে তাপমাত্রা একটানা বেড়ে যাচ্ছে কেন? এর কারণ হলো কিছু দুষ্টু গ্যাস। এদেরকে গ্রিনহাউস গ্যাস বলে। আমরা যখন গাড়ি চালাই, কারখানায় জিনিস বানাই বা কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করি, তখন এই গ্যাসগুলো বাতাসে মিশে যায়। এই গ্যাসগুলো পৃথিবীর চারপাশে একটা অদৃশ্য কম্বলের মতো আস্তরণ তৈরি করে রাখে। সেই কম্বলের কারণে সূর্যের তাপ আর মহাকাশে ফিরে যেতে পারে না।

আরও পড়ুন

আরও একটু ভেঙে বলি। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীপৃষ্ঠ গরম হতে থাকে। তারপর সন্ধ্যার দিকে যখন সূর্য অস্ত যায়, তখন তাপ মহাকাশে চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু ওই দুষ্টু গ্যাসগুলো তাপকে আর মহাকাশে যেতে দেয় না। সূর্য থেকে তাপ পৃথিবীতে আসতে পারে ঠিকই, কিন্তু যেতে আর পারে না। এভাবে দিন দিন পৃথিবী গরম হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ গ্লোবাল ওয়ার্মিং মানে শুধু পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া।

জলবায়ু পরিবর্তন কী

এবার আসি জলবায়ু পরিবর্তন বা ক্লাইমেট চেঞ্জের কথায়। গ্লোবাল ওয়ার্মিং হলো একটা নির্দিষ্ট সমস্যা, মানে শুধু তাপমাত্রা বাড়ে; কিন্তু ক্লাইমেট চেঞ্জ হলো এর ফলে তৈরি হওয়া আরও অনেক সমস্যার সমষ্টি। জ্বর এলে যেমন আমাদের মাথা ব্যথা করে, খেতে ইচ্ছা করে না বা শরীর দুর্বল লাগার মতো আরও অনেক কিছু হয়, ঠিক সেভাবেই পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ার কারণে আরও অনেক কিছু বদলে যায়। এসব বড় ও ছোট পরিবর্তনকে একসঙ্গে বলে জলবায়ু পরিবর্তন।

ধরো, গ্রীষ্মকালে এমন গরম পড়ছে, যা আগে কখনো পড়েনি। আবার শীতকালে হয়তো হঠাৎ করে খুব বেশি ঠান্ডা পড়ছে। অসময়ে বন্যা হতে পারে, আবার কোথাও হয়তো মোটেই বৃষ্টি হবে না। অনেক অঞ্চলে খরা দেখা দেবে। ঝড়ও হঠাৎ করে বেড়ে যায়। আবার পৃথিবীর দুই মেরুতে জমে থাকা বিশাল বিশাল বরফের চাঁইও গলে যেতে পারে। ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সাগরের পানির উচ্চতা বেড়ে যাবে। এতে বাংলাদেশের মতো নিচু দেশগুলোর উপকূলীয় এলাকা ডুবে যেতে পারে।

আরও পড়ুন

তাহলে মূল পার্থক্যটা কী

জলবায়ু পরিবর্তন হলো তাপমাত্রা বাড়ার কারণ
এআই দিয়ে তৈরি

পার্থক্যটা খুব সহজ! গ্লোবাল ওয়ার্মিং হলো একটা নির্দিষ্ট কারণ। অর্থাৎ এর প্রভাবে শুধু পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ে। আর জলবায়ু পরিবর্তন হলো তাপমাত্রা বাড়ার কারণ। অর্থাৎ পৃথিবীর গরম হয়ে যাওয়ার কারণে ঝড়, বৃষ্টি, বন্যার মতো আবহাওয়ার যে নানা রকম পরিবর্তন হয়, সেই সবকিছু।

সূত্র: বিবিসি ওয়াইল্ড লাইফ ম্যাগাজিন