শুধু লাইট বা ফ্যান নয়, বিদ্যুৎ খরচ কমাতে এখন এআই চ্যাটবট সাবধানে ব্যবহার করতে হবে

সাবধানে ব্যবহার করতে হবে এআই চ্যাটবটএআই দিয়ে তৈরি

চ্যাটজিপিটির জনপ্রিয়তা এখন আকাশছোঁয়া। গত দুই বছরে এটির ব্যবহার বেড়েছে হু হু করে। প্রায় ২০ কোটি ব্যবহারকারী প্রতিদিন চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেন। ২০ কোটি মানুষ প্রশ্ন করেন বিলিয়নের বেশি। সাধারণ প্রশ্ন থেকে শুরু করে জটিল সব প্রম্পট দেন চ্যাটজিপিটিকে। প্রশ্ন করলেই চ্যাটজিপিটি বিস্তারিত উত্তর বলে দেয়। উত্তর দেখে মনে হতে পারে আপনা-আপনি বুঝি সব উত্তর তৈরি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পর্দার আড়ালে আছে ভিন্ন কিছু ঘটনা। এআই চ্যাটবটগুলো উত্তর দিতে গিয়ে ব্যবহার করছে বিপুল পরিমাণ শক্তি। নির্দিষ্ট করে বললে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ।

একটি সাধারণ গুগল সার্চের তুলনায় একটি লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলকে (এলএলএম) প্রশ্ন করতে প্রায় ১০ গুণ বেশি বিদ্যুৎ লাগে। ২০২৩ সালে এআই-কে প্রশিক্ষণ দিতে এবং তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করতে যে বিদ্যুৎ লেগেছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের মোট বিদ্যুতের ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। ডেটা সেন্টারগুলো এই বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছে। বিশ্বজুড়ে মোট বিদ্যুতের প্রায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ খরচ করে এলএলএম। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এআইয়ের চাহিদা বাড়ার ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা অন্তত দ্বিগুণ হবে।

মাত্র তিন বছর আগেও আমাদের কাছে চ্যাটজিপিটি ছিল না। এই অল্প সময়ের মধ্যে একটি প্রযুক্তিই বিশ্বব্যাপী ডেটা সেন্টারগুলোর প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে।

আরও পড়ুন

এআই কেন এত বিদ্যুৎ খরচ করে?

ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের কম্পিউটার বিজ্ঞানী মোশারফ চৌধুরী এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এআই চ্যাটবটগুলোর এত বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহারের কারণ হলো এর বিশাল স্কেল বা বড় আকারের কার্যক্রম। এআই সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ খরচ করে প্রশিক্ষণ নিতে। পাশাপাশি ইনফারেন্স বা উত্তর তৈরি করতে প্রচুর বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়।

প্রশিক্ষণের জন্য এআই চ্যাটবটগুলোকে বিশাল ডেটাসেট দেওয়া হয়। এই ডেটা দিয়ে এআই শেখে, প্যাটার্ন চেনে এবং উত্তর তৈরি করে। এআই প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে মনে করা হয়, ডেটা সেট যত বড় হবে, এআই তত ভালো উত্তর দেবে।

প্রশিক্ষণ মডেলগুলো অনেক বড় হয়। মডেলগুলো এত বড় যে একটি সার্ভারে জায়গা হয় না। ২০২৩ সালের একটি গবেষণা থেকে অনুমান করা হয়, একটি এনভিডিয়া ডিজিএক্স এ১০০ সার্ভারের জন্য ৬ দশমিক ৫ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। একটি এলএলএমকে প্রশিক্ষণ দিতে একাধিক সার্ভারের প্রয়োজন হয়। প্রতিটি সার্ভারে গড়ে আটটি গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) থাকে।

আরও পড়ুন
প্রশিক্ষণের তুলনায় এআই ব্যবহারকারীকে উত্তর দিতে কম শক্তি খরচ হয়

ধারণা করা হয়, ওপেনএআইয়ের জিটিপি-৪–কে প্রশিক্ষণ দিতে ৫০ গিগাওয়াট প্রতি ঘণ্টা বিদ্যুৎ লেগেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো তিন দিন ধরে যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, এটি তার সমান।

প্রশিক্ষণের তুলনায় এআই ব্যবহারকারীকে উত্তর দিতে কম শক্তি খরচ হয়। প্রতিদিন বিলিয়ন প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে বেশি বিদ্যুৎ খরচ না হয়ে উপায় নেই। জুলাই ২০২৫-এর হিসাব অনুযায়ী, চ্যাটজিপিটির ব্যবহারকারীরা প্রতিদিন আড়াই বিলিয়নের বেশি প্রম্পট পাঠান। ফলে দ্রুত উত্তর তৈরি করতে একাধিক সার্ভার ব্যবহার করতে হয়। এই হিসাবের মধ্যে গুগলের জেমিনি বা অন্যান্য জনপ্রিয় এআই চ্যাটবটগুলোকে ধরা হয়নি।

আরও পড়ুন

কীভাবে বিদ্যুতের পরিমাণ কমানো যাবে

গবেষকেরা এখন এই বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ আরও সঠিকভাবে পরিমাপ করার চেষ্টা করছেন। এর উদ্দেশ্য হলো, যেন বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ কমানো যায়। তবে বড় কোম্পানিগুলো, যেমন গুগল, মাইক্রোসফট এবং মেটা নিজেদের এআই প্ল্যাটফর্মগুলোর বিদ্যুৎ ব্যবহারের তথ্য গোপন রাখে। তাই গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন।

তাই এআইয়ের এই যুগে বিদ্যুৎ বাঁচাতে শুধু বাসার ফ্যান বা বাতি বন্ধ করলে চলবে না। এআই ব্যবহারেও সচেতন হতে হবে।

সূত্র: লাইভ সায়েন্স

আরও পড়ুন