নোবেল ২০২২-এর সাতকাহন

প্রতিবছর অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ঘোষিত হয় বিজ্ঞানে নোবেল। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং শারীরতত্ত্বে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। তারপর একে একে ঘোষণা করা হয় সাহিত্য, অর্থনীতি ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার। প্রতিবারের মতো এবারও অক্টোবর মাসে নোবেল পুরস্কারজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। নোবেল কমিটির বিবৃতিতে জানা গেছে, কেন এত সব গবেষণার মধ্যে এই গুটিকয়েক মানুষের কাজ পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানিত পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলো। জানা গেছে, তাঁদের গবেষণা মানবসভ্যতায় কী অবদান রাখবে। সেসব নিয়েই আলোচনা করব এ লেখায়। চলো, শুরুটা করা যাক বিজ্ঞানের নোবেল দিয়ে।

কোয়ান্টাম এনটেঙ্গেলমেন্ট গবেষণায় পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল

কোয়ান্টাম মেকানিকসের নাম শোনেনি, এমন কাউকে বোধ হয় এই ২০২২ সালের বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিষয়টা কী, কীভাবে কাজ করে, তা হয়তো সবাই জানে না। তবে নাম শুনেছে। সহজ করে বললে, পরমাণুর চেয়ে ক্ষুদ্র কণাদের বলে অতিপারমাণবিক কণা। (যদিও ইংরেজি Subatomic Particle–এর শুদ্ধ বাংলা ‘উপ’পারমাণবিক কণা, তবু ‘অতি’পারমাণবিক শব্দটাই প্রচলিত।) এসব অতিপারমাণবিক কণার আচরণ নিউটনীয় বলবিদ্যা বা আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা নীতি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। বরং এসব কণার আচরণ দেখে মনে হয়, এরা কোনো নিয়মকানুনই মানে না। আসলে, এরা কোয়ান্টাম বলবিদ্যার অদ্ভুত নীতি মেনে চলে। পৃথিবীশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন স্বয়ং কোয়ান্টাম বলবিদ্যার অদ্ভুতুড়ে ধারণাগুলো মানতে পারেননি। এ রকমই একটি অদ্ভুত ধারণার নাম কোয়ান্টাম এনটেঙ্গেলমেন্ট। বিষয়টা একটু বুঝে নিই।

ধরো, একই উৎস থেকে দুটো ইলেকট্রন উৎপন্ন হয়েছে। ইলেকট্রনের আবার ‘স্পিন’ নামে একধরনের বৈশিষ্ট্য আছে। ধরা যাক, একটি ইলেকট্রনের স্পিন কাজ করে ঘড়ির কাঁটার উল্টো দিকে। এটাকে আমরা গাণিতিকভাবে বলব +১/২। একই উৎস থেকে উৎপন্ন আরেকটি ইলেকট্রনের স্পিন তাহলে হবে উল্টো—ঘড়ির কাঁটার দিকে। এটাকে আমরা গাণিতিকভাবে বলব -১/২। এখন ধরে নিই, আমরা জানি না, কোন ইলেকট্রনটির স্পিন কোন দিকে কাজ করছে। দুটোর একটা ইলেকট্রনকে বাংলাদেশে রেখে আরেকটাকে আমি নিয়ে গেলাম পৃথিবীর উল্টো প্রান্তে—যুক্তরাষ্ট্রে। ওখানে বসে কেউ যদি সেই ইলেকট্রনটির স্পিন জেনে যায়, ধরা যাক ওটা হলো -১/২, তাহলে না দেখেও আমি জেনে যাব, বাংলাদেশে থাকা ইলেকট্রনটার স্পিন +১/২।

বাস্তব জগতের কোনো বস্তুর সঙ্গে ইলেকট্রনের তুলনা করা যায় না যদিও। তবু বোঝার জন্য বিষয়টাকে হাতমোজার সঙ্গে তুলনা করে বলি। ধরো, আমার কাছে একটা বাক্সে একজোড়া হাতমোজা আছে—একটা ডান হাতের, আরেকটা বাঁ হাতের। আমি চোখ বুজে এর একটা মোজা বাক্স থেকে বের করে কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দিলাম যুক্তরাষ্ট্রে। এখনো আমি জানি না, বাংলাদেশে কোনটা আছে, আর যুক্তরাষ্ট্রে কোনটা। যুক্তরাষ্ট্রে বসে কেউ যখন কুরিয়ারের প্যাকেট খুলে দেখবে ওটা কোন হাতের মোজা—ধরি সেটা বাঁ হাতের, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আমার কাছে থাকা মোজাটা ডান হাতের হয়ে যাবে।

এখানে ঝামেলা কোথায়? ঝামেলা হলো, কোয়ান্টাম বলবিদ্যা বলে, যতক্ষণ যুক্তরাষ্ট্রে বসে কেউ বাঁ হাতের মোজাটা না দেখছে (পড়ো, ইলেকট্রনের -১/২ স্পিনটা না দেখছে), ততক্ষণ আমার কাছে থাকা অদেখা মোজা (বা ইলেকট্রনটা) একই সঙ্গে ডান ও বাঁ হাতের—অর্থাৎ, দুটোর মিশ্র অবস্থা। যুগ্ম সম্ভাবনাময় একটা অবস্থা। নিশ্চিত করে কিছু বলার উপায় নেই। এ অবস্থাকেই বলা হয় শ্রোডিঙ্গারের বিড়াল পরীক্ষা।

বিজ্ঞানী আরউইন শ্রোডিঙ্গার একটা বাক্সবন্দী বিড়ালের কথা ভাবলেন। বাক্সের ভেতরে আছে একটি তেজস্ক্রিয়তার উৎস। পাশাপাশি তেজস্ক্রিয়তা শনাক্ত করার একটি যন্ত্রও আছে। সেই সঙ্গে ঝোলানো আছে একটি হাতুড়ি। হাতুড়ির নিচে আবার বিষে ভরা একটি কাচের পাত্র। তেজস্ক্রিয় উৎসের তেজস্ক্রিয় ক্ষয় হলে, ওপরে ঝোলানো হাতুড়িটি সবেগে নিচে নেমে আসবে। ফলে কাচের পাত্রটি ভেঙে বিষ ছড়িয়ে পড়বে।

কোয়ান্টাম বলবিদ্যাগত সম্ভাবনা অনুসারে, তেজস্ক্রিয় উৎসটির প্রতি ঘণ্টায় ৫০ শতাংশ ক্ষয় হতে পারে। অর্থাৎ এক ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পর এই উৎসটির ক্ষয়ে যাওয়া বা ক্ষয়ে না যাওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ। এই হিসাবে এক ঘণ্টা পরে বিড়ালটির বাঁচা বা মরে পড়ে থাকার সম্ভাবনা সমান সমান। ম্যাক্স বর্ন কোয়ান্টাম বলবিদ্যাকে যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, সেই হিসাবে বলা যায়, এই এক্সপেরিমেন্ট শুরু হওয়ার ঠিক এক ঘণ্টা পরে বাক্সে এমন একটি বিড়াল থাকবে, যেটি জীবিতও না, আবার মৃতও না। বরং দুটির সংমিশ্রণ!

এটা একটা মানস পরীক্ষা। বাস্তবে এমন কোনো পরীক্ষা সত্যি সত্যি করেননি শ্রোডিঙ্গার। আমাদের মানস পরীক্ষার ইলেকট্রনের স্পিন বা মোজার বিষয়টিও একই রকম। যুক্তরাষ্ট্রে বসে কেউ যখন বাঁ হাতের মোজাটা খুলে দেখল, তৎক্ষণাৎ আমার কাছে থাকা মোজাটা হয়ে গেল ডান হাতের। কিংবা ইলেকট্রনের স্পিন কেউ যখন -১/২ দেখল পরীক্ষা করে, তখন আমার ইলেকট্রনটির স্পিনও হয়ে গেল +১/২। অর্থাৎ একটি কণা থেকে কোয়ান্টামের জটাজালে আবদ্ধ বা এনটেঙ্গেলড আরেকটি কণা যত দূরেই থাকুক না কেন, একটি কণাকে দেখে আরেকটির বৈশিষ্ট্য বলে দেওয়া সম্ভব।

বুঝতেই পারছ, এখানে তথ্য স্থানান্তরিত হচ্ছে আলোর চেয়ে দ্রুত বেগে। কিন্তু আপেক্ষিকতা তত্ত্ব বলে, আলোর চেয়ে দ্রুত বেগে কোনো তথ্য পরিবাহিত হতে পারে না। অথচ কোয়ান্টাম মেকানিকসের জগতে, অর্থাৎ অতিক্ষুদ্র কণাদের জগতে এমনটাই ঘটে।

আইনস্টাইনের মৃত্যুর প্রায় এক দশক পরে তাঁর পক্ষে একজন বিজ্ঞানী একটা গবেষণাপত্র প্রকাশ করলেন। তাঁর নাম জন স্টুয়ার্ট বেল। ভদ্রলোক ঠিক আমাদের মতোই মোজার উদাহরণ টেনে দেখালেন, কোনটি ডান হাতের আর কোনটি বাঁ হাতের মোজা, তা আগে থেকেই ঠিক করা (আসলে বেল উদাহরণ দিয়েছিলেন দুই রঙের দুটি মোজা দিয়ে)। সে জন্যই কেউ একটার তথ্য জানলে আরেকটার বৈশিষ্ট্য জেনে যাচ্ছে। আসলে, এখানে তথ্য আগে থেকেই আছে, শুধু আমরা জানি না। অর্থাৎ আমাদের কাছে লুক্কায়িত। সমস্যা হলো, মোজার রং বা ডান-বাঁ হাতের বৈশিষ্ট্য যেমন, ইলেকট্রন বা আলোর কণা ফোটনের মতো অতিপারমাণবিক কণার স্পিন বা পোলারাইজেশন কিংবা এ ধরনের কোয়ান্টাম বৈশিষ্ট্য সে রকম আগে থেকে নির্ধারিত থাকে না। তাই বেল বললেন, এ রকম কোয়ান্টাম জটাজালে আবদ্ধ দুটো কণাকে আলাদা করে দূরে নিয়ে গেলে, তাদের একটির বৈশিষ্ট্য দেখে আরেকটির বৈশিষ্ট্য পুরোপুরি বলা যাবে না। দুটোর বৈশিষ্ট্য পুরোপুরি সমান রকম বিপরীত হবে না, কিছু পার্থক্য থাকবেই। এটাকে বলা হয় বেলের অসমনতার পরীক্ষা। ইংরেজিতে বলে, বেলস ইনইকুয়ালিটি।

এবার যে তিন বিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তাঁরা পরীক্ষাগারে একই উৎস থেকে এনটেঙ্গেলড ফোটনজোড় উৎপন্ন করে, তাদের পোলারাইজেশন বৈশিষ্ট্য থেকে দেখিয়েছেন, বেলের ধারণাটি ঠিক নয়। ইলেকট্রনের জন্য বললে, দুটো ইলেকট্রনের জন্য সব সময়ই একটিকে দেখে আরেকটির বৈশিষ্ট্য বলে দেওয়া যাচ্ছে, সে তারা যত দূরেই থাকুক। অর্থাৎ বেলের ইনইকুয়ালিটি খাটছে না। এর মাধ্যমে পরীক্ষাগারে প্রমাণিত হলো, কোয়ান্টাম এনটেঙ্গেলমেন্ট বাস্তব। তার মানে, আইনস্টাইনের মতো বড় বিজ্ঞানী মানতে না পারলেও কোয়ান্টাম মেকানিকস ঠিকই কাজ করে। আর অতিপারমাণবিক কণারা এই নিয়ম মেনেই পরিচালিত হয়।

মহাবিশ্বকে বোঝাই শুধু নয়, কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি থেকে ভবিষ্যতের উন্নতমানের প্রযুক্তি নির্মাণ—সবখানেই কাজে লাগবে অতিপারমাণবিক কণার এই বৈশিষ্ট্য। সত্যি বলতে, এই বৈশিষ্ট্য পরীক্ষাগারে প্রমাণিত না হলে কোয়ান্টাম কম্পিউটার বানানোর আশা আমাদের ছেড়েই দিতে হতো। অথচ বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদেরা এখন এ রকম কম্পিউটার বানানোর লক্ষ্যে পুরোদমে কাজ করছেন। অনেকটা এগিয়েও গেছেন।

এতই গুরুত্বপূর্ণ এই তিন বিজ্ঞানী—অ্যালান আসপেক্ট, জন ক্লাউসার এবং অ্যান্টন জেইলিঙ্গারের এই পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ। সে জন্যই তাঁদের কাজকে এবারে নোবেল পুরস্কার দিয়ে তাঁদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

ক্লিক রসায়নে নোবেল

নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, রসায়নের এ শাখার বিক্রিয়াগুলো ‘ক্লিক’ করে হয়ে যায়! আসলে বিষয়টা তা-ই। প্রতিদিনের জীবনে ওষুধপত্র থেকে শুরু করে মেকআপসহ গুরুত্বপূর্ণ বা অগুরুত্বপূর্ণ নানা ধরনের জটিল যৌগ আমরা ব্যবহার করি। এ ধরনের যৌগ বানানোর জন্য বিক্রিয়া করতে হয় ধাপে ধাপে। প্রতিটা ধাপে অযাচিত অনেক উৎপাদ তৈরি হয়, যেগুলোর কোনো কোনোটা আবার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তাই অনেক ঝামেলা করে এদের আলাদা করতে হয় ও বিশেষ ব্যবস্থায় ফেলতে হয় রাসায়নিক এসব বর্জ্য। আবার, এ রকম অযাচিত উৎপাদ উৎপন্ন হতে হতে মূল বিক্রিয়কের পরিমাণ কমে যেতে থাকে। শেষ ধাপে তাই দেখা যায়, মূল উৎপাদের পরিমাণ একদম কম। এতে খরচ বেড়ে যায়, আরও অনেক ঝামেলা তো আছেই! যেমন একটা ধাপে সামান্য ভুল হলেই হলো, ষোলো আনাই বৃথা।

এসব সমস্যা এড়িয়ে বিক্রিয়া করার ধারণা দেন ব্যারি শার্পলেস, ২০০১ সালে। তিনি বিশেষ করে বলেন, এ ধরনের বিক্রিয়া পানি এবং অক্সিজেনের উপস্থিতিতে করতে পারতে হবে। অর্থাৎ পানি বা অক্সিজেন বিক্রিয়ায় অংশ নেবে না বা প্রভাবিত করবে না। কারণ, এ দুটোর উপস্থিতিতে যেসব বিক্রিয়া করা যায় না, সেগুলো শিল্পকারখানায় করা অনেক কঠিন। কিন্তু শুধু ধারণা দিলেই তো হবে না, এ ধরনের বিক্রিয়া করতেও হবে পরীক্ষাগারে।

শার্পলেস নিজে জেনে-বুঝেই সেই চেষ্টা করছিলেন। এদিকে অজান্তেই একই কাজ করে ফেলেন বিজ্ঞানী মর্টান মেলডাল। পরীক্ষাগারে তিনি অ্যালকাইল হ্যালাইড ও অ্যালকাইল নিয়ে গবেষণা করছিলেন। মাধ্যমিক শ্রেণির রসায়ন বইতে বিষয়গুলো পড়ানো হয়। তবু সবার সুবিধার্থে একটু জেনে নিই।

পৃথিবীর সব প্রাণ মূলত কার্বন দিয়ে তৈরি। কার্বনের বিশেষত্ব হলো, সে একসঙ্গে চারটি বন্ধন তৈরি করতে পারে। বন্ধনকে বলা যায় হাতের মতো। এক হাতবিশিষ্ট চারটি মৌল বা মূলককে (একধরনের রাসায়নিক) সে ধরতে পারে। অর্থাৎ, বলা যায়, একটা কার্বনের চারটা হাত। চাইলে সে দুই হাতবিশিষ্ট দুটো মৌল বা মূলককেও ধরতে পারে। আবার কার্বন একসঙ্গে একাধিক কার্বনের সঙ্গেও যুক্ত হতে পারে। তখন পরিস্থিতি অনুযায়ী দুটো কার্বনের মধ্যে এক বন্ধন, দুই বন্ধন বা তিন বন্ধন তৈরি হয়। অর্থাৎ তারা একে অন্যকে চাইলে এক হাতে যেমন ধরে রাখতে পারে, তেমনি দুই বা তিন হাতেও ধরে রাখতে পারে। দুটো কার্বনের মধ্যে তিনটা বন্ধন থাকলে বিজ্ঞানীরা এই গঠন বা কাঠামোটাকে বলেন ‘অ্যালকাইন’। ওদিকে ক্লোরিন, ফ্লুরিন, ব্রোমিন—এ রকম কিছু মৌল আছে। এদের বলে হ্যালোজেন। অ্যালকাইন—অর্থাৎ তিন হাতে একে অন্যকে ধরে রাখা দুটো কার্বনের প্রতিটির একটি করে হাত খালি থাকে। এই খালি হাতে সে বিভিন্ন মৌলকে ধরতে পারে, এভাবে তৈরি হতে পারে বিশাল কার্বনের কাঠামো—জটিল জৈব যৌগ। এই কার্বন কাঠামোর কোথাও যদি কোনো হ্যালোজেন যুক্ত হয়, তখন যৌগটিকে বলে অ্যালকাইল হ্যালাইড। আমাদের মর্টান মেলডাল এই অ্যালকাইল হ্যালাইড আর অ্যালকাইল নিয়েই কাজ করছিলেন।

কিন্তু তিনি যে অ্যালকাইল হ্যালাইড নিয়ে গবেষণা করছিলেন, ওটার মাথায় ৩টি নাইট্রোজেন যুক্ত ‘অ্যাজাইড’ নামে একটি বিশেষ গ্রুপও ছিল। আর পাত্রে ছিল কিছুটা কপার বা তামার আয়ন। বিক্রিয়া করার কথা অ্যালকাইন আর অ্যালকাইল হ্যালাইডের। কিন্তু মেলডাল অবাক হয়ে দেখলেন, তামা আয়নের উপস্থিতিতে অ্যালকাইন আর কারও সঙ্গে বিক্রিয়া করতে চায় না, শুধু চট করে সেই অ্যাজাইডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়! পানি বা অক্সিজেনের উপস্থিতিতেও এতে কোনো পরিবর্তন হয় না।

বুঝতেই পারছ, এটাই সেই ক্লিক বিক্রিয়া! কিন্তু এর কাজটা কি বাস্তবে? শুধু এই একটা বিক্রিয়া হলে তো হবে না। বিজ্ঞানীরা তো অনেক বুদ্ধিমান। তারা এখন যে দুটো জৈব যৌগের মধ্যে বিক্রিয়া করাতে চান, এর একটার সঙ্গে অ্যালকাইন জুড়ে দেন, আরেকটার সঙ্গে জুড়ে দেন অ্যাজাইড। তারপর তামার আয়ন দিয়ে দিলেই হলো, ক্লিক করে পাজল মেলার মতো বিক্রিয়া ঘটে যায়!

ক্লিক রসায়নকে আরেক ধাপ এগিয়ে নেন ক্যারোলিন বারতোজ্জি। এই নারী বিজ্ঞানী জীবকোষে গ্লাইকেন নিয়ে কাজ করছিলেন। গ্লাইকেনের চলাফেরা, কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছিলেন। তিনি দেখলেন, ক্লিক বিক্রিয়া করে গ্লাইকেনের সঙ্গে যদি একটা ট্র্যাকার জুড়ে দেওয়া যায়, তাহলেই কেল্লা ফতে। কিন্তু ক্লিক বিক্রিয়ায় তামার আয়ন ব্যবহার করা হয়। আমাদের শরীরের জন্য এই তামা ক্ষতিকর। বারতোজ্জি হাল ছাড়েননি, তামা ছাড়াই জীবকোষের ভেতরে ক্লিক বিক্রিয়া করার উপায় বের করেছেন। তিনি এর নাম দিয়েছেন ‘বায়োঅর্থোগোনাল রসায়ন’। এর মাধ্যমে ক্যানসারের টিউমারে থাকা বিশেষ রাসায়নিক উপাদান বা কোনো ওষুধের রাসায়নিক উপাদান কিংবা যেকোনো জৈব অণুকে পর্যবেক্ষণ করা যায় সহজেই।

তাঁদের কাজের কারণে ওষুধপথ্য যেমন এখন সহজে বানানো যাচ্ছে, তেমনি রোগ শনাক্ত করাসহ নানা রকম কাজ করা যাচ্ছে আরও দ্রুত ও কার্যকর উপায়ে। এ জন্যই এ বছর রসায়নে ব্যারি শার্পলেস, মর্টান মেলডাল এবং ক্যারোলিন বারতোজ্জিকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

বিবর্তন গবেষণায় নোবেল

সোয়ান্তে প্যাবো কাজ করেছেন নিয়ানডার্থালদের ডিএনএ নিয়ে। তাঁর ইচ্ছে ছিল, এদের পুরো জিনোম—অর্থাৎ শরীরের সব বৈশিষ্ট্য যেসব জিনে বলা আছে, তার সব কয়টা পরীক্ষাগারে সিকোয়েন্স করে দেখবেন। কিন্তু গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে যেসব ফসিল পাওয়া যায়, সেগুলোতে লাভ হচ্ছিল না খুব একটা। তা ছাড়া আরেকটা বিষয়ও আছে, কোষের নিউক্লিয়াসে ডিএনএ থাকে মাত্র একজোড়া। এর অংশবিশেষ ক্ষয়ে গেলে গবেষণা করার উপায় কী! উপায় বের করার জন্য প্যাবো মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ নিয়ে কাজ শুরু করলেন। কোষে মাইটোকন্ড্রিয়া নামের একটি উপাদান আছে। এতে ছোট আকারের ডিএনএ থাকে। তবে সংখ্যায় এরা শত শত!

প্যাবো শীতপ্রধান অঞ্চল থেকে নিয়ানডার্থালদের মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএ সংগ্রহ করেন। তাদের পুরো জিনোম সিকোয়েন্স করেন। এ থেকে তিনি দেখান, আধুনিক মানুষের সঙ্গে নিয়ানডার্থালদের জিন বিনিময় হয়েছে। নিয়ানডার্থালরা আগে থেকেই আফ্রিকার বাইরে বসবাস করছিল। আধুনিক মানুষের বাস ছিল আফ্রিকায়। তারা আফ্রিকার বাইরে আসার পর এই জিন বিনিময় ঘটে। এই জিন এখনো রয়ে গেছে আধুনিক মানুষের দেহে। এটি আমাদের বিভিন্ন রোগের জীবাণু শনাক্ত করা ও রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

এ ছাড়া সাইবেরিয়ার ডেনিসোভা গুহায় ৪০ হাজার বছরের পুরোনো এক আঙুলের হাড় থেকে ‘ডেনিসোভা’ নামে নতুন এক হোমিনিন গণের অস্তিত্বও আবিষ্কার করেন তিনি। অর্থাৎ শুধু চিকিৎসাবিজ্ঞান-ই নয়, সভ্যতার ইতিহাসেও অবদান রেখেছে সোয়ান্তে প্যাবোর কাজ।

আপসহীন সাহিত্যকর্মে আনি এরনোর নোবেল জয়

আনি এরনো মূলত আত্মজীবনীমূলক উপন্যাসের জন্য বিখ্যাত। ফরাসি এই লেখক এবার নোবেল পেয়েছেন আপসহীন লেখার জন্য। নোবেল কমিটি জানিয়েছে, তিনি লিঙ্গ, শ্রেণি ও ভাষাবৈষম্যের শিকার জীবনের গল্প তুলে ধরেছেন। তাঁর লেখা সাহসী ও ক্ষুরধার। তাঁর সাহিত্যের শিকড় লুকিয়ে আছে ব্যক্তিগত স্মৃতির গভীরে। কোনো নির্দিষ্ট রচনা নয়, বরং ৪০ বছরের সাহিত্যচর্চার জন্য তিনি এ পুরস্কার পেয়েছেন।

তাঁর প্রথম উপন্যাস লে আখঁমখে ভিদ প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালে। এর ইংরেজি সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৯৯০ সালে, ক্লিনড আউট নামে। ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত তাঁর লা প্লাস উপন্যাসটি ইংরেজিতে অনূদিত হয় ১৯৯২ সালে, আ ম্যানস প্যালেস নামে। এটি তাঁকে জনপ্রিয় করে তোলে। তাঁরপর এরনো লিখে গেছেন ধারাবাহিকভাবে। নিজের জীবনের গল্প শুনিয়েছেন খোলা কলমে। তাঁর নিজের অনুভূতি তাঁর গল্পে হয়ে উঠেছে সব মানুষের। এখানেই তাঁর কারিশমা। সব মানুষের গল্প তুলে ধরার এই প্রচেষ্টাকেই স্বীকৃতি দিয়েছে নোবেল কমিটি তাঁকে এ বছর পুরস্কৃত করার মাধ্যমে।

মানবাধিকারে শান্তিতে নোবেল

এবারের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে বেলারুশের মানবাধিকারকর্মী অ্যালেস বিয়ালিয়াৎস্কি, রাশিয়ার মানবাধিকার সংগঠন মেমোরিয়াল ও ইউক্রেনের মানবাধিকার সংগঠন সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিসকে। একজন মানুষ এবং দুটি সংগঠন, তবে কাজ তাঁদের একই বিষয় নিয়ে। মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও শান্তির জন্য কাজ করেছেন তাঁরা। চেষ্টা করেছেন যুদ্ধাপরাধের নথিপত্র তৈরির। যাঁরা ক্ষমতার জোরে মানুষের অধিকার নষ্ট করেন, তাঁদের যেন শাস্তি হয়, তা–ও নিশ্চিত করতে চেয়েছেন তাঁরা।

বিয়ালিয়াৎস্কি ১৯৮০ দশকের মাঝামাঝি বেলারুশে একটি গণ-আন্দোলন শুরু করেন। তিনি সারা জীবন চেষ্টা করেছেন, তাঁর দেশ বেলারুশে যেন গণতন্ত্র ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকে। এ জন্য নানা রকম উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। এ রকম একটি উদ্যোগ তাঁর প্রতিষ্ঠিত একটি মানবাধিকার সংগঠন ‘ভিয়াসনা’, বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় ‘বসন্ত’। না, ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে বসন্ত চলে আসেনি বেলারুশে তৎক্ষণাৎ। তবে সাংবিধানিক ক্ষমতা ব্যবহার করে অসাংবিধানিক ও অমানিক কাজ করার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছেন বেলারুশের যেসব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, তাঁদের প্রতিহত করার লক্ষ্যে কাজ করে গেছে ভিয়াসনা নিরন্তর। এ ধরনের ক্ষমতার জাতাকলে পিষ্টদের দিয়েছে রাজনৈতিক নিরাপত্তা। নথিপত্র ও প্রমাণ সংগ্রহ করেছে ক্ষমতার অপব্যবহারের। এ জন্য বিয়ালিয়াৎস্কি ২০১১-২০১৪—এই তিন বছর জেল খেটেছেন। ২০২০ সালে সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য তাঁকে বিচারহীনভাবে আবারও গ্রেপ্তার করা হয়। এখনো তিনি সরকারের হাতে বন্দী।

মানবাধিকার সংগঠন মেমোরিয়াল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৭ সালে। সে সময় থেকেই তারা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে সরকার ও ক্ষমতাসীনেরা যাঁদের ওপর অত্যাচার চালিয়েছে, তাঁদের অধিকার রক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন এখন আর নেই। কিন্তু এখনো যাঁরা মানবাধিকারের বিরুদ্ধে ও একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে, তাঁদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে সংগঠনটি। রাশান কারাবন্দীদের কী ধরনের অত্যাচারের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, তার সবচেয়ে প্রামাণ্য তথ্যপ্রমাণের উৎস হিসেবেও কাজ করছে মেমোরিয়াল।

সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিস প্রতিষ্ঠিত হয় ইউক্রেনের কিয়েভে, ২০০৭ সালে। প্রথমে তারা কাজ করেছে ইউক্রেনের ভেতরে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পর সংগঠনটি রাশিয়ার যুদ্ধাপরাধের নথিপত্র তৈরির কাজ শুরু করেছে আন্তর্জাতিক সহসংগঠনদের নিয়ে।

যুদ্ধাপরাধবিরোধী ও মানবাধিকার নিয়ে তাদের কাজের স্বীকৃতি এবারের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার।

আর্থিক সংকট এড়ানোর পথ দেখিয়ে নোবেল

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সংকট নিয়ে গবেষণা করেছেন এ বছর অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী তিন গবেষক—যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান বেন এস বার্নানকে, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডগলাস ডব্লিউ ডায়মন্ড ও ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফিলিপ এইচ ডিবভিগ। ঠিক এ সময়ে তাঁদের নোবেল জয় ইঙ্গিত করছে, পৃথিবী বর্তমানে যে আর্থিক সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে, তাঁদের গবেষণা সে সংকট এড়াতে ভূমিকা রাখবে।

যেকোনো অর্থনৈতিক সংকটে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে সরকার ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা। দুটোই রাষ্ট্রের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সরকার যদি অর্থনৈতিক বিপদ এড়াতে না পারে বা ব্যাংক যদি কোনোভাবে দেউলিয়া হয়ে যায়, ঝুঁকিতে পড়বে সে দেশের লাখো নাগরিক। এবারের অর্থনীতিতে নোবেলজয়ীরা গবেষণা করে দেখিয়েছেন, সংকটের সময় ব্যাংকব্যবস্থা কীভাবে সুরক্ষিত রাখতে হয়। ১৯৮০–এর দশকে এ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন এবারের নোবেলজয়ী তিন অর্থনীতিবিদ।

অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হলে মানুষ ব্যাংকে যে টাকা সঞ্চয় করে, ব্যাংককে তা বিনিয়োগ করতে হবে। আবার হঠাৎ কোনো ঝামেলা হলে ব্যাংকে সঞ্চয়কারীরা চান তাৎক্ষণিক তাঁদের সব টাকা তুলে ফেলতে। এমনিতে বিষয়টা কোনো সমস্যা হতো না। কিন্তু এখানে ঝামেলাটা হলো, ব্যাংক থেকে যাঁরা ঋণ নেন, তাঁরা চান নির্দিষ্ট সময় বা মেয়াদ শেষ হওয়ার অনেক আগে যেন তাঁদের টাকা ফেরত দিতে না হয়। যেমন কেউ এক বছরের জন্য যদি ঋণ নেন, তিনি হয়তো সাড়ে এগারো মাস পরে ঋণ শোধ করবেন। অর্থাৎ মেয়াদের মধ্যে। কিন্তু হঠাৎ চার-পাঁচ মাস পর ব্যাংক তাঁর কাছে ঋণ ফেরত চেয়ে বসলে তিনি দেবেন কোত্থেকে? তাই ঋণগ্রহীতারা চান হঠাৎ টাকা ফেরত না দেওয়ার নিশ্চয়তা।

ডায়মন্ড ও ডিবভিগ দেখিয়েছেন, ব্যাংক কীভাবে এই সমস্যা সমাধান করতে পারে। ব্যাংক মূলত সঞ্চয়কারী ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ তারা সঞ্চয়কারীদের যেমন তাৎক্ষণিকভাবে সঞ্চয় ভাঙার সুযোগ দেবে, তেমনি ঋণগ্রহণকারীদের দীর্ঘমেয়াদি ঋণও দেবে। এখন বিষয় হলো, ব্যাংক যদি দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেয়, তবে তাকে নিশ্চিত করতে হবে ব্যাংক যেন ধসে না পড়ে বা অর্থনৈতিক কোনো ঝামেলায় জড়িয়ে না পড়ে। পাশাপাশি ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে, এ রকম গুজবও ছড়িয়ে পড়তে দেওয়া যাবে না। কারণ, গুজব ছড়িয়ে পড়লেই সব সঞ্চয়কারী টাকা ফেরত চাইবেন। ব্যাংক সেটা কোত্থেকে দেবে? আবার এ রকম পরিস্থিতি যদি হয়েই যায়, ব্যাংক যদি দেউলিয়া হয়েই পড়ে, তবে সাধারণ মানুষের সঞ্চয় ফেরত দেবে কে?

নোবেলজয়ী এবারের তিন অর্থনীতিবিদ বললেন, এই নিশ্চয়তা দেবে সরকার। সরকার ব্যাংকের জামিনদার হবে। ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেলে সরকার সব সঞ্চয়কারীর টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার নিশ্চয়তা দেবে। এখন এভাবেই সব দেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা কাজ করে। এ ক্ষেত্রে জামিনদার হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে কাজ করে রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশে যেমন বাংলাদেশ ব্যাংক এই দায়িত্ব পালন করে।

সাম্প্রতিক সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট দেখা গিয়েছিল ১৯৩০-এর দশকে। বেন বার্নানকে সেই সংকট নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, বিপুলসংখ্যক সঞ্চয়কারী একসঙ্গে ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নেওয়ার ফলে ১৯৩০ দশকে সেই অর্থনৈতিক সংকট আরও মারাত্মক রূপ নিয়েছিল। ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যায়। এ সময় হারিয়ে যায় ঋণগ্রহীতাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। ফলে তাদের থেকে দ্রুত ব্যাংক টাকা তুলতে পারেনি। এ রকম যেন না হয়, তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে জোর দেন বার্নানকে।

এই তিন গবেষকের কাজ বর্তমান সময়ের জন্য যে অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ, তা বোধ হয় আর আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই।