প্রতিদিন একটু করে বাদাম খেলে কমতে পারে অ্যালার্জি
কিছু মানুষের বাদামে অ্যালার্জি থাকে। তাঁরা ভুল করে একটুখানি বাদাম খেলেও ভয়ংকর অবস্থা তৈরি হতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে চোখ-মুখ ফুলে ওঠে, চুলকানি, বমি এমনকি মাঝেমধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। হতে পারে মৃত্যুও।
এই অ্যালার্জির পেছনে দায়ী আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, মানে ইমিউন সিস্টেম। এটা হয় কারণ তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভুল করে বাদামের প্রোটিনকে ক্ষতিকর মনে করে এবং ওই প্রোটিনের বিরুদ্ধে লড়তে শুরু করে। তখন দেহে আইজিই (IgE) নামে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। এই অ্যান্টিবডি স্বাভাবিকভাবে আমাদের রক্ষা করে, কিন্তু অ্যালার্জির ক্ষেত্রে ওটাই ডেকে আনতে পারে বিপদ।
তবে খুশির খবর হলো, এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বিজ্ঞানীরা একটা দারুণ উপায় বের করেছেন! বড়দের মধ্যে যাদের বাদামের প্রতি অ্যালার্জি আছে, তাঁরা যদি প্রতিদিন একটু একটু করে বাদাম খায়, তাহলে কমতে পারে বাদামের প্রতি অ্যালার্জি। মানে অনেকটা ট্রেনিং দেওয়ার মতো ব্যাপার। একটুখানি বাদাম খেতে থাকলে দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধীরে ধীরে বুঝতে শিখবে যে বাদাম শরীরের জন্য খারাপ না। এর বিরুদ্ধে আর লড়াই করার প্রয়োজন নেই।
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদের জন্য এই নতুন পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। এর নাম ওরাল ইমিউনোথেরাপি। মানে অল্প অল্প করে বাদামের প্রোটিন খাওয়াতে হবে যাতে শরীর ধীরে ধীরে তা সহ্য করতে শেখে। তবে বড়দের ওপর এই পদ্ধতি কাজ করবে কি না, তা এতদিন জানা ছিল না বিজ্ঞানীদের। কিন্তু এবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনের কিংস কলেজের গবেষক স্টিফেন টিল ও তাঁর দল একটা পরীক্ষা চালান।
এই গবেষণা করা হয়েছে মাত্র ২১ জনের ওপর। তারমধ্যে আবার ৬ জন শেষ পর্যন্ত গবেষণায় ছিলেন না। ৩ জনের অ্যালার্জির সমস্যা দেখা গেছে।
তাঁরা মোট ২১ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ওপর চালান পরীক্ষা। এতে অংশ নেওয়া প্রত্যেকের বাদামে অ্যালার্জি ছিল। পরীক্ষার শুরুর দিকে অংশগ্রহণকারীরা একটা বাদামের ৮ ভাগের মাত্র ১ ভাগ খেতে পারতেন। এর চেয়ে বেশি খেলে সহ্য করতে পারতেন না। তবে তাঁদের এত বেশি বাদাম খেতে দেওয়া হতো না। একটা বাদামে যতটা প্রোটিন থাকে, তার ৪০ ভাগের মাত্র ১ ভাগ দেওয়া হতো। তবে ধীরে ধীরে মাত্রা বাড়ানো হতো। ওষুধের মতো নিয়মিত তাঁরা খুব সামান্য পরিমাণে বাদাম খেতেন। কয়েক মাসের মধ্যে তাঁরা প্রত্যেকে চারটা বড় চিনাবাদামের সমান প্রোটিন খেয়ে ফেলতে পারছিলেন। এতে তাঁদের কোনো সমস্যাই হয়নি।
যদিও ২১ জনের মধ্যে ৬ জন অংশগ্রহণকারী মাঝপথে থেমে যান। ৩ জন অ্যালার্জির কারণে, আর তিনজন অন্য কোনো কারণে। কিন্তু বাকি ১৫ জনের মধ্যে ১৪ জনই পরে একসঙ্গে পাঁচটা চিনাবাদামের সমান প্রোটিন খেয়ে ফেলেছে অনায়াসে।
রক্ত পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এই থেরাপির ফলে তাঁদের দেহে আইজিজি (IgG) নামে আরেকধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। এই অ্যান্টিবডি আইজিজি অ্যান্টিবডির ক্ষতির প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। মানে নিয়মিত একটু একটু বাদাম খাওয়ার ফলে তাঁদের দেহে অ্যালার্জির জন্য দায়ী অ্যান্টিবডির প্রভাব কমে।
সুইস ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড অ্যাজমা রিসার্চ সেন্টারের গবেষক সেজমি আকদিস বলছেন, ‘এই ফলাফল দারুণ আশাব্যঞ্জক। চিনাবাদামের অ্যালার্জি যাদের আছে, তাঁরা যদি প্রতিদিন সামান্য পরিমাণে এটা খেতে পারে, তাহলে ভয় বা দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমে যাবে।’
তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটা এখনও প্রাথমিক গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে। এই পদ্ধতি পুরোপুরি কাজ করে কি না, তা বুঝতে আরও বড় পরিসরে গবেষণা দরকার। পাশাপাশি এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কতদিন স্থায়ী হয়, তাও বুঝতে হবে। হয়তো প্রতিদিন একটুখানি বাদাম খেয়েও প্রতিকার পাওয়া যাবে বাদামের অ্যালার্জির। এ যেন কাটা দিয়ে কাটা তোলার মতো ব্যবস্থা।
যাদের বাদামে অ্যালার্জি আছে, তাঁদের এখনই বাদাম খাওয়ার চেষ্টা করা ঠিক হবে না। কারণ, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো যথেষ্ট গবেষণা এখনো হয়নি। তাছাড়া এই গবেষণা করা হয়েছে মাত্র ২১ জনের ওপর। তারমধ্যে আবার ৬ জন শেষ পর্যন্ত গবেষণায় ছিলেন না। ৩ জনের অ্যালার্জির সমস্যা দেখা গেছে। তাই পর্যাপ্ত গবেষণা না হওয়া পর্যন্ত বাদাম থেকে দূরে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তবে আশার কথা হলো, যাদের বাদামে অ্যালার্জি আছে, তারাও হয়তো ভবিষ্যতে নিতে পারবে বাদামের স্বাদ!
সূত্র: নিউ সায়েন্টিস্ট