এক কিশোরের যুদ্ধযাত্রা
কিছুদিন ধরেই ঠিক এ রকম একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল ছেলেটা। ভাইবোন কেউ ঘরে নেই। মা গেছেন পুকুরঘাটে গোসল করতে। ঘরে ও একা। চটপট বিছানার তোশক উল্টে বড় আলমারির চাবি তুলে নিল ও। আলমারির ড্রয়ারে রাখা ছোট্ট একটা ব্যাগে মায়ের টাকা। সে টাকায় হাত দিতেই ওর বুকটা হু হু করে উঠল। কত কষ্ট করে মা টাকাগুলো জমিয়েছেন!
কিন্তু না নিয়েও তো উপায় নেই। কে জানত দেশটা হঠাৎ বর্বর হায়েনায় ভরে যাবে। ও তো সাধারণ এক স্কুলগামী ছাত্রই ছিল। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। বাবা শুল্ক বিভাগে চাকরি করেন। সে কারণে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ সরকারি আবাসিক এলাকায় থাকত ওরা। মার্চের ১২ তারিখ বড় ভাইয়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়ি বরিশালের গৌরনদীতে বেড়াতে এসেছিল। ফিরে যাওয়ার কথা ছিল ২৬ মার্চ। কিন্তু ২৫ মার্চ মাঝরাত থেকে পাকিস্তানি সৈন্যরা ঢাকা ও চট্টগ্রামে গণহত্যা শুরু করল। দেশে শুরু হয়ে গেল স্বাধীনতাযুদ্ধ। চারদিক থেকে ভেসে আসছিল গুলির শব্দ। বাতাসে বারুদের গন্ধ। স্বজনহারা মানুষের হাহাকার।
এপ্রিলে বাবা চাকরি ছেড়ে দিলেন। নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে চলে এলেন গ্রামের বাড়িতে। কিন্তু কোথায় নিরাপত্তা? নিরীহ গ্রামবাসীর সঙ্গে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে গ্রাম থেকে গ্রামে ছুটে বেড়িয়েছে পরিবারের সবাই। দেশের কোথাও নিরাপদ আশ্রয় বলে কিছু নেই। শেষে আবার নিজেদের গ্রামেই ফিরে এসেছে সবাই। এখানে–ওখানে লাশের স্তূপ, আকাশে শয়ে শয়ে শকুনের উল্লাস দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেল ছয়টি মাস। ওদের গ্রামের পরিচিত অনেকেই আর ঘরে নেই। সবাই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কিন্তু বয়স কম বলে ওকে কেউ নেয়নি। এই সুযোগে গ্রামের বাড়িতে থেকে সাঁতার শিখে ফেলল ও। কিন্তু ছয় মাস পরে আর যুদ্ধে যাওয়ার অদম্য ইচ্ছাটাকে চাপা দিয়ে রাখতে পারল না। গ্রামের আরও দশজন যুবকের সঙ্গে যুদ্ধে যাওয়ার পরিকল্পনা করে ফেলল। সেই যুদ্ধে যাওয়ার জন্য টাকাগুলো খুবই দরকার। মায়ের প্রতি আবেগটাকে দমিয়ে নিল ও। চটপট ষোলোটি জিন্নাহ মার্কা পাঁচ টাকার নোট সরিয়ে লুকিয়ে ফেলল।
এর মধ্যেই গোসল সেরে মা চলে এসেছেন। মায়ের কাছে গিয়ে বলল, ‘মা, খিদে পেয়েছে। ভাত খাব।’
যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে মা ওকে শেষবারের মতো ভাত খেতে দিলেন পরম মমতায়। কিন্তু মায়ের চোখের দিকে তাকানোর সাহস ওর হলো না। যদি মা ওর চোখের দিকে তাকিয়ে সবকিছু বুঝে যান! ও তো ঘর থেকে পালিয়ে যুদ্ধে যাওয়ার সব প্রস্তুতি শেষ করে ফেলেছে।
মা একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আচ্ছা মেজ (ও ছিল মায়ের মেজ ছেলে), সবাই কী আনন্দ করে মাছ ধরছে, আর তুই সারাটা দিন ঘরের মধ্যে বসে কী এত ভাবিস বল তো!’
যুদ্ধে যাওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে মায়ের স্নেহভরা অভিযোগটুকু শুনতে খুব ভালো লাগল ওর। মনে একটা আশঙ্কাও জন্মাল, মায়ের সঙ্গে কি আর কখনো দেখা হবে? এটাই কি তাহলে মায়ের সঙ্গে শেষ দেখা? পুরো দেশ যখন হায়েনাদের আগুনে জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে, তখন কি ও ঘরে বসে থাকতে পারে? শত্রুর ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে পারে? মনে মনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয় ও, বিজয় ছিনিয়ে না আনা পর্যন্ত আর এই ঘরমুখী হবে না।
একটা লাল গামছার মধ্যে একটা শার্ট, একটা লুঙ্গি, কিছু টুকটাক জিনিসপত্রের সঙ্গে একটা ডায়েরি (এক বন্ধুর দেওয়া উপহার), একটি কলম এবং কাজী নজরুল ইসলামের সঞ্চিতা কাব্যগ্রন্থটি শক্ত করে বেঁধে নিল ও। তারপর সবার অগোচরে বাড়ির পেছনে ঘন জঙ্গল পেরিয়ে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ পাড়ি দিয়ে মাইলখানেক হেঁটে নদীর ঘাটে এল। এটা নদ। নাম আড়িয়াল খাঁ। এখানে দলের বাকি সবাই নৌকায় বসে ওর জন্য অপেক্ষা করছিল। দলের সর্বকনিষ্ঠ এই কিশোর। ডাকনাম কিসলু। পুরো নাম জিয়াউল হাসান কিসলু।
সেদিন ছিল ১৯৭১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর। বেলা এগারোটা। আড়িয়াল খাঁ নদের বুক চিরে এগিয়ে চলল তাদের নৌকা। টানা পাঁচ দিন, চার রাত দাঁড় টেনে নৌকা এসে পৌঁছাল যশোরে। ২৭ সেপ্টেম্বর মাঝরাতে যশোরের কালাবাগা বিলে এসে থেমে গেল তাদের ছইঅলা নৌকাটা। কালাবাগা বিল থেকে সংযোগ খাল দিয়ে আরেকটা বিল পাড়ি দিতে হবে। খালের সরু মুখের সামনে চেকপোস্ট। দলের সবাই ক্ষুধায় কাতর। যদিও নৌকার ভেতর ভাঙা উনুনে চাল-ডাল মিশিয়ে জাউভাত রান্না হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। রান্নার পর সবাই কেবল খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তখনই কেউ একজন ফিসফিস করে সতর্ক করলেন, ‘সাবধান!’
চটের পর্দা দিয়ে ছইয়ের দুপাশ ঢাকা। একপাশের পর্দা সামান্য একটু ফাঁকা করে বাইরে তাকাল কিসলু। আশপাশে শতাধিক নৌকা। সব কটি নৌকা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে কেউ সামনে এগোচ্ছে না। চেকপোস্ট বসিয়ে প্রতিটি নৌকায় লুটপাট চালাচ্ছিল রাজাকাররা। লুটপাট শেষে সন্দেহ হলেই কিশোর-তরুণদের তুলে নিয়ে যাচ্ছিল। পরে ওদের তুলে দেবে পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে। পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে পড়লে কী হবে, সেটা সবাই জানে। নিশ্চিত মৃত্যু। তবে সেই মৃত্যু বিভীষিকার মতো। নির্যাতন সইতে না পারার কারণে মৃত্যু। এমন মৃত্যু কেউই চায় না।
সবার মধ্যে অধীর উত্কণ্ঠা। নৌকার এই জট কখন যে শেষ হবে, কে জানে। এভাবে আর কতক্ষণ উত্কণ্ঠা নিয়ে চুপচাপ বসে থাকা যায়? পেটে প্রচণ্ড খিদে। কিন্তু আতঙ্কে কারোরই খেতে ইচ্ছা করছে না। রান্না করা জাউভাত যেমন ছিল, তেমনই পড়ে রইল হাঁড়িতে। ওদিকে রাত বাড়ছে। ঘণ্টা দুয়েক পর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল সবার। সবাই নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে নিল। তারপর ঝুঁকি নিয়ে এগোতে শুরু করল নৌকা। একটা নৌকাকে এগোতে দেখে আরও কয়েকটা নৌকা নড়ে উঠল। বিনা অস্ত্রে আসন্ন বিপদকে জয় করার জন্য তখন সাহসই ছিল তাদের একমাত্র ভরসা।
কিছুদূর এগোতেই টর্চের তীব্র আলো এসে পড়ল নৌকার গায়ে। খেঁকিয়ে উঠল এক রাজাকার, ‘অ্যাই, নৌকা ভেড়াও!’
সবাই এখন রাজাকারদের নাগালের মধ্যে। রাজাকারদের হাতে অস্ত্রও আছে। কিন্তু রাজাকারদের পাত্তাই দিল না নৌকার মাঝি। দাঁড় টেনেই চলেছে। আর নৌকার ভেতরে সবাই বাতি নিভিয়ে পাথরের মতো বসে আছে চুপচাপ।
আবারও জোরালো শব্দে চিত্কার ভেসে এল, ‘অ্যাই নৌকা, এদিকে ভেড়াও!’
দলের সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি ফিসফিস করে মাঝিকে বললেন, ‘দ্রুত দাঁড় টানো, মাঝি।’
নৌকার গতি বেড়ে গেল। এবার শিয়ালের মতো একসঙ্গে খেঁকিয়ে উঠল সব রাজাকার, ‘অ্যাই, নৌকা ভেড়াও বলছি!’
কিন্তু নৌকা না ভিড়িয়ে দলের কয়েকজন গিয়ে মাঝির সঙ্গে দাঁড় টানায় হাত লাগাল। নৌকার গতি বেড়ে যাওয়ায় এবার গুলি করল এক রাজাকার। গুলির শব্দে ভেঙে খান খান হয়ে গেল রাতের নিস্তব্ধতা। মুহূর্তের মধ্যে চাপা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল চারপাশে। আতঙ্কে শিউরে উঠল কিসলু। গায়ের শার্ট ও গেঞ্জি খুলে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিল সে।
আবারও গুলির শব্দ। এবার পরপর বেশ কয়েকটা গুলি করল রাজাকাররা। অবস্থা বেগতিক দেখে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ল নৌকার মাঝি। শরীরে গুলি লাগার আশঙ্কায় আর দেরি না করে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ল কিসলু। তারপর পানি থেকে মাথা তুলে তাকাল। কোথায় নৌকা? তাকে অন্ধকারে পানিতে হাবুডুবু অবস্থায় রেখে কোথায় যে মিলিয়ে গেল, নৌকার কোনো চিহ্নই দেখতে পেল না আর।
পানি বেশ গভীর। ঠাঁই নেই। সাঁতার কাটায় তখনো পটু হয়ে ওঠেনি কিসলু। মাত্র কিছুদিন আগে তার সাঁতারের হাতেখড়ি হয়েছে। হাত-পা চালিয়ে তীরের সন্ধান করতে লাগল। একে তো হিমশীতল পানি, তার ওপর হাত-পা নাড়াতে গিয়ে আরেক বিপদের মধ্যে পড়ল। বিলের পানিতে লম্বা লম্বা ধারালো ঘাস। হাত-পা নেড়ে যতই সাঁতার কাটার চেষ্টা করছে, ততই ধারালো ঘাসের আঁচড়ে তার বুক-হাত-পা ছলে যাচ্ছে। ঠান্ডায়ও বেশ কাবু হয়ে পড়েছে। শরীর নিস্তেজ হয়ে আসছে। নিজেকে আর পানির ওপর ধরে রাখতে পারছিল না। তলিয়ে যাচ্ছিল বারবার। আর বিলের পানি তার নাক–মুখ দিয়ে শরীরে ঢুকে যাচ্ছিল।
কিন্তু ডাঙায় উঠলেও তো রেহাই নেই। ওখানে রাজাকাররা ওত পেতে আছে। নাগালে পেলেই চালান করে দেবে পাকিস্তানি হায়েনাদের কাছে। শ্রান্ত-ক্লান্ত কিসলু তবু পানির ওপরে মাথা তুলে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। মৃত্যুর আতঙ্কে হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। মুক্তিযুদ্ধ করার আশায় ঘর ছেড়েছিল। এখন যুদ্ধ না করেই পানিতে ডুবে অপমৃত্যু ঘটবে?
একসময় আর শরীরটাকে পানির ওপর ধরে রাখতে পারল না। তলিয়ে গেল বিলের পানিতে। নিশ্বাসও আটকে গেল। এবার নিশ্চিত মৃত্যু। তবে মৃত্যুর আগে শেষবারের মতো পানির ওপর মাথা তুলল। আর দেখল, অন্ধকার ছায়ার মতো ধীরগতিতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে একটি নৌকা। সামান্য দূরে। শরীরের সমস্ত শক্তি একত্র করে চিত্কার করতে চাইল। কিন্তু গলা দিয়ে বেরিয়ে এল অস্ফুট আর্তনাদ, ‘বাঁচাও!’
নিস্তব্ধ রাতের নীরবতার কারণে সেই আর্তনাদে সাড়া মিলল। নৌকাটি এগিয়ে এল তার দিকে। টেনে নৌকায় তোলা হলো তাকে। বেশ বড় নৌকা। টিমটিম করে জ্বলা কেরোসিন কুপির আলোয় নৌকার ভেতরটা দেখে নিল কিসলু। অনেক বৃদ্ধ, বৃদ্ধা, তরুণ নারী-পুরুষ ও শিশু। তিলধারণের জায়গা নেই। সবাই হিন্দু শরণার্থী। বর্বর পাকিস্তানি সৈন্য আর স্থানীয় রাজাকারদের অত্যাচারে টিকতে না পেরে ভিটেমাটি ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন অন্য দেশে। তাকে পরতে দেওয়ার মতো বাড়তি কাপড়ও ছিল না কারও কাছে। কোনোরকমে প্রাণ নিয়ে পালিয়েছেন সবাই। ভেজা কাপড়েই নৌকার এক কোনায় গুটিসুটি মেরে পড়ে রইল কিসলু। প্রবল বাতাসে বেড়ে যাওয়া শীতে কাঁপতে লাগল ঠক ঠক করে। একসময় প্রবল ক্লান্তির কাছে হার মানল শীত। ঘুমে দুচোখ বুজে এল। তার আগে শুনতে পেল ফজরের আজান।
ঘুম ভাঙল হঠাৎ করেই। রাজাকারের একটা দল নৌকা থামিয়েছে। কিন্তু লুটপাট করার মতো কিছু পায়নি। শেষে কিছু টাকা দিয়ে ওদের কাছ থেকে ছাড়া পেল নৌকাটা। তারপর সকালবেলা নৌকা এসে একটা ঘাটে ভিড়ল।
ওই পথে যাতায়াত করা সব নৌকা এসে এই ঘাটে ভেড়ে। ডাঙায় উঠেই সে তার সঙ্গীদের দেখা পেল। রাতেই তাঁরা পৌঁছে গিয়েছিলেন। তাঁরা ভেবেছিলেন, কিসলু আর বেঁচে নেই। তবু পাকা খবরের জন্য অপেক্ষা করছিলেন এবং কিসলু জীবিত ফিরলে তার জন্য একটা ছাগল মানত করে রেখেছিলেন।
এবার হাঁটাপথ। কিছুদূর গিয়েই একটা মসজিদ দেখা গেল। মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছে সবাই মিলে কিছু টাকা দিলেন, যাতে ইমাম সাহেব মানতের জন্য ছাগল কিনে জবাই করে গরিবদের মধ্যে মাংস বিতরণ করতে পারেন।
আবার শুরু হলো হাঁটা। প্রচণ্ড বৃষ্টি ছিল সেদিন। পথঘাট পিচ্ছিল। বৃষ্টির জন্য কোথাও আশ্রয় নেওয়ারও উপায় নেই। কারণ, পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে ধরা পড়ার ভয় তাঁদের তাড়া করছিল। হাঁটতে হাঁটতে বাগদা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পৌঁছালেন সন্ধ্যার সময়। ভারতে পৌঁছেই একটা দোকানে ঢুকলেন কিছু খাওয়ার জন্য। বৃষ্টিতে কিসলুর সঞ্চিতা বইটা ভিজে ঢাউস হয়ে গিয়েছিল। নানরুটি বানানোর চুলার পাশে রেখে যতটা সম্ভব সেটাকে শুকানো হলো। তারপর তাঁরা চলে গেলেন চব্বিশ পরগনার কল্যাণী ক্যাম্পে।
এটা ছিল প্রাথমিক ক্যাম্প। এখানে কেবল শরীরচর্চা করানো হতো। কিন্তু এই ক্যাম্পে এসেই জ্বরে পড়ে গেল কিসলু। টানা বিশ–বাইশ দিন জ্বরে ভুগল। জ্বর থেকে সেরে ওঠার পর তাকে পাঠানো হলো বিহারের চাকুলিয়া প্রশিক্ষণকেন্দ্রে। ওখানে একুশ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে নভেম্বরে চলে এল যুদ্ধক্ষেত্রে। নয় নম্বর সেক্টরের অধীন বরিশালের গৌরনদী থানার হোসনাবাদ গ্রামে যুদ্ধ করল পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে। তার স্থানীয় কমান্ডার ছিলেন নিজাম উদ্দিন আকন।
তারপর এল ১৬ ডিসেম্বর। পাকিস্তানি সৈন্যরা আত্মসর্মপণ করল। কিসলু তখন নিজের বাড়িতেই ছিল। খবরটা পেল সেদিনই সন্ধ্যার পর। তারপর শুরু হলো বিজয়ের উল্লাস।
মাসখানেক পর পরিবারের সবাইসহ ফিরে গেল চট্টগ্রামে। যুদ্ধ তো শেষ। নতুন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব এখন রাজনীতিবিদদের। তার দায়িত্ব লেখাপড়া করা। সে আবার স্কুলে যাওয়া শুরু করল এবং মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করতে লাগল। কারণ দু–তিন মাস পরই যে এসএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে হবে না!