১০ মিনিট আগে ঘুমালে কী উপকার

গবেষকেরা ৩ হাজারের বেশি কিশোর-কিশোরীর ওপর ঘুমের সময় নিয়ে গবেষণাটি চালিয়েছেন মডেল: অ্যাঞ্জেলাছবি: সুমন ইউসুফ

অন্যদের তুলনায় অল্প কিছু সময় আগে ঘুমাতে গেলে কিছু বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়। গবেষকেরা বলছেন, যে কিশোর-কিশোরীরা তাদের সমবয়সীদের তুলনায় আগে ঘুমাতে যায় এবং বেশি সময় ঘুমায়, তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও কাজ করার দক্ষতা তুলনামূলকভাবে ভালো। তারা পরীক্ষাতেও ভালো ফলাফল করে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও সাংহাইয়ের ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা কিশোরদের তাড়াতাড়ি ঘুমানো নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন। সেখানে দেখা গেছে, যারা সবচেয়ে কম ঘুমায়, তাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা তুলনামূলকভাবে দুর্বল। আর যারা পর্যাপ্ত ঘুমায়, তাদের স্মৃতিশক্তি ও হৃদস্পন্দন কার্যকারিতার দিক থেকে অনেকটাই উন্নত।

গবেষকেরা ৩ হাজারের বেশি কিশোর-কিশোরীর ওপর এই গবেষণা চালিয়েছেন। এতে দেখা গেছে, যারা দিনের কাজ শেষে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যায় ও বেশি সময় ঘুমায়, তাদের ঘুমের সময় হৃদস্পন্দন কম থাকে। তারা লেখাপড়ায় বেশি মনোযোগী হয়, নতুন বিষয় সহজে ধরে ফেলতে পারে, নতুন শব্দ শিখে মনে রাখতে পারে এবং গণিতের নতুন সমস্যা সমাধানে বেশি দক্ষতা দেখায়। সবচেয়ে বড় পার্থক্য দেখা গেছে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে।

গবেষণার জন্য কিশোরদের তিনটি দলে ভাগ করা হয়। প্রথম দলের প্রায় ৩৯ শতাংশ কিশোর সবচেয়ে দেরিতে ঘুমাত এবং সবচেয়ে তাড়াতাড়ি উঠত। তারা গড়ে ৭ ঘণ্টা ১০ মিনিট ঘুমাত। দ্বিতীয় দলের প্রায় ২৪ শতাংশ কিশোর গড়ে ৭ ঘণ্টা ২১ মিনিট ঘুমাত।

প্রথমে গবেষকেরা ধারণা করেছিলেন, যাদের ঘুমের অভ্যাস ভালো, তারা যাদের ঘুম কম হয়, তাদের থেকে অনেক এগিয়ে থাকবে। তবে দেখা গেছে, একই দলের শিক্ষার্থীদের ঘুমের সময়ের সামান্য তারতম্যেও মস্তিষ্কে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল নিউরোসাইকোলজির অধ্যাপক বারবারা সাহাকিয়ান এই গবেষণাটি পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, ঘুম ভালো হলে স্মৃতিশক্তি ভালোভাবে কাজ করে। কারণ, ঘুমের সময় আমাদের দৈনন্দিন স্মৃতি থেকে প্রয়োজনীয় স্মৃতিগুলো আলাদা হয়ে মস্তিষ্কে জমা হয়।’

এই গবেষণায় কেমব্রিজের গবেষকদের সঙ্গে কাজ করেছে ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরাও। তাঁরা ৩ হাজার ২২২ জন শিক্ষার্থীর তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। প্রত্যেকের মস্তিষ্ক স্ক্যান করা হয়েছে এবং মানসিক দক্ষতার নানা পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। ফিটবিট ব্যবহার করে গবেষকেরা সবার ঘুমের সময় হিসাব করেন। গবেষকেরা জানিয়েছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের এ যাবৎকালের অন্যতম দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা। এতে দেখা গেছে, যাদের ঘুমের অভ্যাস সবচেয়ে ভালো, তারাও আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব স্লিপ মেডিসিনের নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কম ঘুমায়। এই প্রতিষ্ঠানটি ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের প্রতি রাতে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুমের পরামর্শ দেয়।

ঘুমের সময়ের সামান্য পার্থক্য অনেক বড় প্রভাব ফেলে

গবেষণার জন্য কিশোরদের তিনটি দলে ভাগ করা হয়। প্রথম দলের প্রায় ৩৯ শতাংশ কিশোর সবচেয়ে দেরিতে ঘুমাত এবং সবচেয়ে তাড়াতাড়ি উঠত। তারা গড়ে ৭ ঘণ্টা ১০ মিনিট ঘুমাত। দ্বিতীয় দলের প্রায় ২৪ শতাংশ কিশোর গড়ে ৭ ঘণ্টা ২১ মিনিট ঘুমাত। তৃতীয় দলের প্রায় ৩৭ শতাংশ কিশোর সবচেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমাত এবং সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ঘুমাত। এই দলের কিশোরদের ঘুমের সময় হৃদস্পন্দন সবচেয়ে কম ছিল এবং তারা গড়ে প্রায় ৭ ঘণ্টা ২৫ মিনিট ঘুমাত।

তিনটি দলের শিক্ষাগত অর্জনে তেমন বড় কোনো পার্থক্য না থাকলেও, তৃতীয় দলের কিশোরেরা পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিল। এরপর ছিল দ্বিতীয় দল, আর সবচেয়ে খারাপ ফল করেছে প্রথম দল। ব্রেইন স্ক্যানে দেখা গেছে, তৃতীয় দলের কিশোরদের মস্তিষ্কের আকার সবচেয়ে বড় এবং তাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ছিল সবচেয়ে উন্নত।

অধ্যাপক বারবারা সাহাকিয়ান বলেন, ‘ঘুমের সময়ের সামান্য পার্থক্য যে এত বড় প্রভাব ফেলবে, তা আমরা কল্পনাও করিনি। পরিসংখ্যানগুলো আমাদের সত্যিই অবাক করেছে। ঘুমের সময়ের সামান্য ব্যবধান জীবনে বড় পার্থক্য তৈরি করতে পারে।’ তিনি কিশোর-কিশোরীদের মানসিক দক্ষতা বাড়াতে এবং ঘুমের মান উন্নত করতে নিয়মিত ব্যায়াম করার পাশাপাশি সন্ধ্যার পর মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার ব্যবহারে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান ও বিবিসি

আরও পড়ুন