কিশোর আলোর মাসিক সভায় যা পেলাম
আমি কিশোর আলো পড়ি ২০১৭ সাল থেকে, তখন আমি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তাম। কিশোর আলোর পাতায় ‘কিআড্ডা’র আয়োজন দেখে আমার মনটা উসখুস করত। ভাবতাম, আমিও একদিন কিআড্ডায় যাব! কিন্তু তখন আমাকে নিয়ে যাওয়ার মতো কেউ ছিল না। তবু আমি কিআর পাতায় নিয়মিত কিআড্ডার খবর রাখতাম। জলের গান, চিরকুটের মতো ব্যান্ড কিআড্ডায় এসেছে—এসব খবর পেতাম কিশোর আলোর পাতায়। এর মধ্যে করোনাকালে কিআড্ডা বন্ধ ছিল। ২০২২ সালে, করোনা-পরবর্তী সময়ে কিআড্ডা আবার শুরু করা হয়। তখন আমি এসএসসি পরীক্ষার্থী। তখন নিজেকে বেশ বড় মনে করছিলাম। তাই ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে আমি নিজেই প্রথমবারের মতো কিআড্ডায় যাই। সশরীর ঢাকার কারওয়ান বাজারের প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবনে যাওয়াটা ছিল আমার জন্য নতুন একটি অভিজ্ঞতা।
আমি বরাবরই ঘরকুনো। শুধু স্কুলে যেতাম-আসতাম—ওটাই ছিল আমার জগৎ। তাই আমার জন্য কিআড্ডায় যাওয়া ছিল একটি বিশাল ব্যাপার। প্রথমবার কিআড্ডায় গিয়ে আমার দারুণ কিছু মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। বেশ কয়েকজন সহপাঠী, সিনিয়র-জুনিয়রের সঙ্গে আমার পরিচয় হয় কিআড্ডায়। সবার আন্তরিকতা আমার জড়তা কাটিয়ে দিয়েছিল। কিআড্ডার বাইরে এমন দারুণ মানুষদের সঙ্গে আমার পরিচিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম ছিল। সেদিনের সভার সঞ্চালক, পাভেল মহিতুল আলম প্রশ্ন করেছিলেন, ‘কে কে আজকের মিটিং মিনিটস লিখবে?’ আমি সঙ্গে সঙ্গেই হাত তুলেছিলাম। কিশোর আলোয় এসে শিখেছি, ভালো লিখতে হলে ভালো পাঠক হতে হয়। আমি দুটোর একটাও হতে পেরেছি কি না জানি না, তবে কিআড্ডার ‘মিটিং মিনিটস’ লেখার মাধ্যমেই আমি লেখালেখির চেষ্টাটা শুরু করেছিলাম।
এরপর কয়েক বছর কেটে গেছে। আমার এসএসসি শেষ, এইচএসসিও। এ মাসেই আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হব। এই লম্বা সময় যত কিআড্ডা হয়েছে, প্রায় সব কটিতেই আমি উপস্থিত ছিলাম। কিআড্ডায় এসে আমি নতুন বন্ধু পেয়েছি, শুভাকাঙ্ক্ষী পেয়েছি। এখানে আমার লেখালেখির হাতেখড়ি হয়েছে। অসাধারণ গুণী মানুষদের সামনে থেকে দেখেছি, তাঁদের কথা শুনেছি। কিশোর আলোর সম্পাদক আনিসুল হক, জনপ্রিয় কার্টুনিস্ট মেহেদী হক—তালিকাটা লম্বা। এই অসাধারণ অভিজ্ঞতাগুলো জমা করতেই আমার মতো ‘কুয়োর ব্যাঙ’ তার ‘কুয়ো’ ছেড়ে বেরিয়ে আসে। কিআড্ডা যেমন আমার জন্য আনন্দের, তেমনি আমাদের শহরে বন্দী অনেক কিশোর-কিশোরীর জন্যও একটি দারুণ আয়োজন।