বেবি শার্ক গানটি এল কোথা থেকে

ইউটিউবে বেবি শার্ক ‘সবচেয়ে বেশিবার দেখা ভিডিও’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেছবি: কবির হোসেন

তুমি যদি বাড়ির কচিকাঁচাদের সঙ্গে একটু সময় কাটাও, দেখবে—তাদের হাতেও পৌঁছে গেছে ইউটিউবের ভার্চুয়াল জগৎ। কিন্তু পাঁচ-ছয় বছরের এই ছোট্ট শিশুরা ইউটিউবে কী দেখে? তাদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকে রঙিন অ্যানিমেশন আর ক্যাচি গানের ভিডিও। শিশুদের এমন পছন্দ মাথায় রেখেই তৈরি হয়েছে এক অদ্ভুত জনপ্রিয় গান—‘বেবি শার্ক’। গানটির ধরন একটু ভিন্ন। এটিকে পূর্ণাঙ্গ গান বলা না গেলেও এর ছন্দ আর নাচের ভিডিও শিশুমনে সহজেই গেঁথে যায়। শিশুরা ভিডিওটি এতটাই উপভোগ করে যে তারা এটি একবার শুনে থেমে থাকে না—বারবার চালাতে চায়। ধীরে ধীরে এটি বাবা-মায়েদের কাছে একরকম ধৈর্যের পরীক্ষা হয়ে ওঠে। কিন্তু শিশুদের এই তুমুল আগ্রহের কারণেই ইউটিউবে ‘বেবি শার্ক ড্যান্স’ ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ১৫ বিলিয়ন বার! ভাবা যায়? তাই প্রশ্ন থেকেই যায়—মাত্র ২-৩ মিনিটের একটি ভিডিওতে এমন কী আছে, যা বিশ্বজুড়ে শিশুদের মনে এমন জায়গা করে নিয়েছে? আর এখন এই ভিডিও নিয়ে আদালতে কীসের মামলা চলছে?

বেবি শার্কের জন্ম

‘হাট্টিমাটিম টিম

তারা মাঠে পারে ডিম

তাদের খাড়া দুটো শিং

তারা হাট্টিমাটিম টিম।’

ছোটবেলায় এই ছড়াটা তোমারও নিশ্চয়ই মুখস্থ ছিল। এমন ছন্দময় ছড়াগুলো আমাদের মাথায় গেঁথে থাকে বহুদিন। বেবি শার্ক তেমনই এক ছন্দময় গান, যা শিশুদের মনে গেঁথে যাওয়ার মতো। বলা হয়, বেবি শার্কের বিভিন্ন ভার্সন রূপকথার গল্পের মতো মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। আমেরিকার স্কুলের বাচ্চারা গানটি শিখত বনভোজন বা গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পে গিয়ে। তখনকার বেবি শার্ক গানের কথাগুলো ছিল এখন আমাদের পরিচিত বেবি শার্ক গানের থেকে বেশ আলাদা। প্রায় ২০ বছর আগের ভার্সনগুলোর মধ্যে এমন গল্পও ছিল যেখানে এক শার্ক নিজেকেই আক্রমণ করছে। শুনলে মনে হয়—এটা তো একদমই শিশুদের উপযোগী নয়! অনেকেই ভাবতেন, এমন কাহিনি ছোটদের ভয় পাইয়ে দিতে পারে। তবুও, গানটি তখনও প্রচলিত ছিল। বিশ্বজুড়ে না হলেও, নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় বনভোজন আর ক্যাম্পের নিয়মিত অংশ ছিল এই গান। এমনকি, বেবি শার্ক গানটি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ওঠার আগেই এর একটি জার্মান ভার্সনও তৈরি করা হয়েছিল।

শার্ক পরিবারের সঙ্গে পরিচয়

বেবি শার্ক গানের আজকের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভার্সনটিতে রয়েছে মূলত এক শার্ক পরিবারের গল্প। বেবি শার্ক, মাম্মি শার্ক, ড্যাডি শার্ক, গ্র্যান্ডমা শার্ক আর গ্র্যান্ডপা শার্ক—এদের নিয়েই গানটি সাজানো।

গানের প্রতিটি অংশে ছন্দে ছন্দে একেকটি চরিত্রের পরিচয় তুলে ধরা হয়, যেমন:

“বেবি শার্ক, ডু ডু ডু ডু ডু …”

“মামি শার্ক, ডু ডু ডু ডু ডু …”

একই ছন্দের পুনরাবৃত্তি আর সহজ ভাষা মিলিয়ে তৈরি বেবি শার্ক গানটি বাচ্চাদের মাথায় আটকে যায়। শিশুরা এই গানের একেকটি চরিত্রের মাধ্যমে নিজেদের পরিবার সম্পর্কে জানে, নতুন শব্দ আর ছড়া কাটা শেখে। গানটি শিশুদের এতটাই মুগ্ধ করে যে ২০১৯ সালে ‘বেবি শার্ক’ ভিডিওটি যুক্তরাষ্ট্রের বিলবোর্ড টপ ১০০ চার্টে উঠে আসে ৩২ নম্বরে। বাচ্চাদের গানের ক্ষেত্রে এটি ছিল এক বিরল মাইলফলক।

আদালতে ভাইরাল বেবি শার্ক

বেবি শার্ক গানটি সর্বজনীন জনপ্রিয়তা পায় ২০১৬ সালে, যখন দক্ষিণ কোরিয়ার পিঙ্কফং (Pinkfong) ব্যান্ড ইউটিউবে তাদের চ্যানেলে গানটি ভিডিও আকারে প্রকাশ করে। এখন এটি ইউটিউবে সবচেয়ে বেশি ভিউ পাওয়া ভিডিও। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, বেবি শার্কের এমন শিশু-উপযোগী ভার্সন প্রথম পিঙ্কফং বানায়নি। তার পাঁচ বছর আগেই, ২০১১ সালে, মার্কিন গায়ক জনি অনলি (Johnny Only) গানটি শিশুদের উপযোগী করে রেকর্ড করে প্রকাশ করেন। যদিও তার ভিডিওটি তেমন আলোড়ন তুলতে পারেনি। তার ভিডিওতে ভিউ সংখ্যা মাত্র ২.৫ লাখের কাছাকাছি।

২০১৬ সালে পিঙ্কফং-এর বেবি শার্ক গানটি ভাইরাল হয়ে উঠলে, জনি অনলি অভিযোগ তোলেন—গানটির শিশুদের উপযোগী ভার্সন প্রথম তিনিই বানিয়েছেন, আর পিঙ্কফং-এর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান স্মার্টস্টাডি (SmartStudy) তার ওই ভার্সন হুবহু কপি করেছে। তাই তিনি কপিরাইট দাবি করে আদালতে মামলা ঠুকে দেন। স্মার্টস্টাডি ওই মামলার জবাবে জানায়, বেবি শার্ক একটি লোকগীতি, যার কোনো নির্দিষ্ট মালিক নেই। তবে তারা তাদের তৈরি করা বেবি শার্কের সংস্করণের ওপর পূর্ণ কপিরাইট দাবি করে। এমনকি স্মার্টস্টাডি ঘোষণা দেয়, তারা ভবিষ্যতে বেবি শার্ক নিয়ে একটি মুভি বানানোর পরিকল্পনাও করছে। বেবি শার্ক নিয়ে দুই পক্ষের টানাপোড়েন এখনো আদালতে চলমান।

যদি তুমি এখনো বেবি শার্ক গানটা না শুনে থাকো, তাহলে তুমি সত্যিই নেট দুনিয়ার বিরল কিছু মানুষের একজন! তাহলে আর দেরি করছ কেন? সহজেই ‘ইয়ারওয়ার্ম‘ হয়ে যেতে পারা এই গানটি শুনে আসতে পারো একবার। দেখো তোমার মন কতটুকু কাড়তে পারে বেবি শার্ক ডু ডু ডু ডু…

আরও পড়ুন