দিল্লি কেন বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহর

পাকিস্তানের লাহোর, চীনের হোতান এবং ভারতের দিল্লি শহর ধারাবাহিকভাবে সব সময় দূষিত থাকে। তবে এই মূহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর কোনটি, তা শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব। কেননা প্রতি মূহূর্তে এটার পরিবর্তন হয়।

এয়ার সেন্সর কোম্পানি আইকিউএয়ারের রিয়েল টাইম ডেটা অনুযায়ী, দাবানলের মৌসুমে এক বা দুই দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, সান ফ্রান্সিসকো এবং সিয়াটলের মতো শহরগুলো বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তকমা পায়। এই দুই–এক দিন এসব শহরের বায়ু সবচেয়ে খারাপ থাকে। কিন্তু বছরের অন্যান্য সময় শহরের বায়ু আবার ঠিক হয়ে যায়। তাহলে কোন শহরের বায়ু ধারাবাহিকভাবে সব সময় দূষিত থাকে? কেনই-বা সেসব শহরের বায়ু দূষিত থাকে?

সাধারণত বায়ুদূষণ পরিমাপ করা হয় পার্টিকুলেট ম্যাটারের (পিএম) ঘনত্ব বিবেচনা করে। পিএম মানে বাতাসে কী পরিমাণ কঠিন ও তরল কণার মিশ্রণ আছে, সেটা। এটি পার্টিকুলেট পলিউশন নামেও পরিচিত। পিএম ২.৫ মানে হলো বাতাসে ২ দশমিক ৫ মাইক্রনের সমান পার্টিকেলের উপস্থিতি। মাইক্রন বা মাইক্রোমিটার হলো দৈর্ঘ্য পরিমাপের একটি ক্ষুদ্র একক যা ০ দশমিক ০০১ মিলিটারের সমান। এক মাইক্রন এতই ছোট যে খালি চোখে দেখা যায় না। এক মিটারের ১০ লাখ ভাগের এক ভাগ হলো ১ মাইক্রন।

এইকিউএয়ারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে পাকিস্তানের লাহোরের বাতাসের মান সবচেয়ে খারাপ ছিল। অর্থাৎ গত বছরের সবচেয়ে দূষিত শহর ছিল পাকিস্তানের লাহোর। দ্বিতীয় দূষিত শহর চীনের হোতান এবং তৃতীয় ভারতের দিল্লি শহর। ২০২১ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর ছিল ভারতের দিল্লি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা শহরটি তোমাদের বেশ পরিচিত। নাম শুনে হয়তো দুঃখই পাবে।

ঢাকায় বায়ু দূষণ
ফাইল ছবি

কারণ, শহরের নাম ঢাকা। আর তৃতীয় দূষিত শহরের নাম আনজামিনা। এই শহর যে দেশে অবস্থিত, তার নাম চ্যাড। বাংলায় একে চাদ বলেন অনেকে। এটি আফ্রিকার একটি রাষ্ট্র। এসব শহরের বায়ুর মান ছিল পিএম ২.৫–এর বেশি। তবে এই র‍্যাঙ্কিং দেখেও তুমি বুঝতে পারবে না, কোন শহরের বায়ু সবচেয়ে খারাপ। কারণ, সব দেশ প্রতিবেদন প্রকাশ করে না। যেমন, আফ্রিকার অনেক দেশের বায়ু দিল্লি বা ঢাকার চেয়ে বেশি দূষিত। কিন্তু তারা তথ্য প্রকাশ না করায়, সেসব শহর এই তালিকায় উঠে আসে না।

তবে অনেক শহর দূষিত হওয়ার জন্য কিছুটা হলেও প্রকৃতি দায়ী। যেমন চীনের হোতান শহর। বছরের বেশির ভাগ সময় এটি দূষিত থাকে। কারণ, শহরটি তাকলামাকান মরুভূমির কাছে অবস্থিত। প্রায়ই ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে হোতান। একইভাবে চাদের আনজামিনা শহর সাহারা মরুভূমির দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত। ফলে এই শহরে দূষিত বায়ু প্রবেশ করবেই। দূষিত বায়ু মানে বাতাসে ২.৫ মাইক্রনের চেয়ে বড় পার্টিকেল থাকা। এ ছাড়া পর্বতও বায়ুর গুণমানকে প্রভাবিত করতে পারে। কারণ, লাহোর, দিল্লি কিংবা ঢাকা শহর হিমালয়ের ঠিক দক্ষিণে অবস্থিত। বায়ুদূষণ মানুষ ও অন্যান্য জীবের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। শ্বাসনালির সংক্রমণ, হৃদ্‌রোগ, ফুসফুসের ব্যাধি, স্ট্রোক, ফুসফুসের ক্যানসারসহ নানা রোগ হতে পারে বায়ুদূষণের ফলে। তাই আমাদের যথাসম্ভব সচেতন থাকা উচিত।

এবার একনজরে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ১০ শহরের তালিকা দেখে নিই। তুমি যখন এই তালিকা পড়ছ, তখন হয়তো র‍্যাঙ্কিংয়ে আবার পরিবর্তন হয়ে গেছে। আসলেই পরিবর্তন হয়েছে কি না, তুমি নিজেই তা পরীক্ষা করে দেখতে পারো। দূষিত শহরের তালিকা লাইভ দেখতে প্রবেশ করো iqair.com লিংকে।

এখানকার তালিকায় শহরের র‍্যাঙ্কিং, শহর ও দেশের নাম রেখেছি। পাশাপাশি একিউআই (aqi) ও বাতাসের অবস্থা রয়েছে। একিউআই মানে হলো এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স। অর্থাৎ বাতাসের গুণগত মান। এই মান যে শহরে যত বেশি থাকবে, সেই শহর তত বেশি দূষিত। সে হিসাবে বাতাসের অবস্থাকে ৬ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বাতাসের গুণগত মান ০ থেকে ৫০–এর মধ্যে থাকলে সে শহরের বাতাসের অবস্থা ভালো। ৫১ থেকে ১০০ হলে মোটামুটি। ১০১ থেকে ১৫০ হলে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য সে বাতাস অস্বাস্থ্যকর। ১৫১ থেকে ২০০ মানে অস্বাস্থ্যকর। ২০১ থেকে ৩০০ হলে খুব অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০১-এর বেশি হলে সে বাতাস বিপজ্জনক। এবার প্রথম ১০ শহর কোন অবস্থায় আছে, তা দেখা যাক।