হাতে মেহেদি দিলে রং হয় কেন
আবার এসেছে ঈদ। আনন্দের এই দিনে সবার হাতেই দেখা মেলে মনমাতানো লালচে-কমলা মেহেদির রঙ। ঈদের খুশিকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে তোলে মেহেদির এই বর্ণিল ছোঁয়া। ছোট-বড় সবার কাছেই মেহেদি দেওয়া ঈদ উদ্যাপনের একটি প্রথা। কিন্তু মেহেদির এই চমৎকার রঙের রহস্যটা আসলে কী? কীভাবে মেহেদি আমাদের ত্বকে এমন সুন্দর আর স্থায়ী রঙ তৈরি করে?
মেহেদি বা মেন্দি হেনা বা মেহেদিগাছের পাতা থেকে তৈরি এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ। ভালো করে বেটে ত্বকে লাগালে কিছু সময়ের মধ্যে ত্বক লালচে–কমলা হয়ে ওঠে। মেহেদি দিয়ে ত্বকে করা সুন্দর নকশা ও বডি আর্ট বিশ্বজুড়ে ‘মেহেন্দি’ নামেই পরিচিত। আরও ভালোভাবে মেহেদির রং পেতে হলে প্রথমে মেহেদিগাছের পাতাগুলোকে ভালোভাবে গুঁড়া করে নিতে হয়। এরপর এর সঙ্গে সামান্য তেল বা অম্লীয় দ্রবণ, যেমন লেবুর রস মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করতে হয়। এই পেস্টই ত্বক ও চুলে ব্যবহার করলে আসল মেহেদির রং পাওয়া যায়। ইংরেজিতে একে বলা হয় রেড হেনা।
মেহেদির উৎপত্তি কোথায়, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন। তবে ১৮৯৪ থেকে ৫৩৯ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যে প্রাচীন ব্যাবিলনীয় সভ্যতায় মেহেদি ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। একই রকম প্রমাণ মেলে প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতায়, ৩১০০ থেকে ৩৯৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যে।
মেহেদির রঙের পেছনে রয়েছে এর পাতার মধ্যে থাকা রঞ্জক অণু। এর নাম লসোন (lawsone)। লসোন যখন ত্বকের কোষের সংস্পর্শে আসে, তখন এটি কেরাটিন নামে এক ধরনের প্রোটিনের সঙ্গে রাসায়নিক বন্ধনে যুক্ত হয়। ত্বকের ওই কোষগুলো স্বাভাবিক নিয়মে ঝরে যাওয়ার আগপর্যন্ত এই বন্ধন টিকে থাকে। মেহেদি লাগানোর পর কমপক্ষে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা না করলে ত্বকে গাঢ় রং হয় না। কারণ, লসোন ত্বকের গভীরে প্রবেশ করতে কিছুটা সময় লাগে। এ কারণেই মেহেদি লাগানোর পর কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। এই সময়টুকু লসোনকে ত্বকের গভীরে প্রবেশ করতে সাহায্য করে, যাতে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত মেহেদির রং গাঢ় ও স্থায়ী হয়।
মেহেদির উৎপত্তি কোথায়, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন। তবে ১৮৯৪ থেকে ৫৩৯ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যে প্রাচীন ব্যাবিলনীয় সভ্যতায় মেহেদি ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। একই রকম প্রমাণ মেলে প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতায়, ৩১০০ থেকে ৩৯৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যে। প্রাচীনকালে মেহেদি মৃতদেহ সাজানো এবং কিছু ক্ষেত্রে মমি তৈরির সময় লিনেন কাপড় রাঙাতে ব্যবহার করা হতো। চুল ও নখে পাওয়া কেরাটিনের মতোই, মেহেদির লসোন ক্ষয় প্রতিরোধী, মৃত্যুর পরও দেহে থেকে যায়। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা যখন মিসরের ফারাও দ্বিতীয় রামেসিসের, যিনি রামেসিস দ্য গ্রেট নামে পরিচিত—মমি পরীক্ষা করেন, তখন তাঁরা আবিষ্কার করেন যে মমির চুল মৃত্যুর সময় সাদা হওয়ায় মেহেদি দিয়ে উজ্জ্বল কমলা রঙে রঞ্জিত করা হয়।