ডাইনোসরদের কথা

দারুণ বৈচিত্র্যময় ও সফল সরীসৃপের দল বলা যায় ডাইনোসরদের। হ্যাঁ, আসলেই তারা ছিল একধরনের সরীসৃপ। প্রায় ১৪ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে দাপিয়ে বেড়িয়েছে, রাজত্ব করেছে একচ্ছত্রভাবে। এই সময়কাল যে কত দীর্ঘ, তা শুধু সংখ্যা শুনে হয়তো বোঝা যাচ্ছে না। তুলনা করে বলা যায়, পৃথিবীতে মানুষের বয়স মাত্র ১০ লাখ বছরের মতো। আকারে এদের কোনো কোনো প্রজাতি ছিল কবুতরের চেয়ে ছোট, কোনোটি আবার ছিল দৈত্যাকার ট্রাকের চেয়ে বড়। সরীসৃপ ছিল বটে, তবে আজকের আধুনিক সরীসৃপ থেকে অনেক আলাদা। সব ডাইনোসরকে চাইলে দুই দলে ভাগ করা যায়। একদল ছিল টিকটিকি গোত্রের; এদের কোমর ও দেহের গঠনের সঙ্গে আজকের টিকটিকির অনেক মিল। ইংরেজিতে এদের বলা হয় সরিশিয়ান। আরেক দল ছিল পাখি গোত্রের (অরনিথিশিয়ান)। এদের চাইলে আরও বেশ কিছু ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলো দেখানো হলো নিচে।

আদি ডাইনোসর

প্রথম দিকের ডাইনোসররা ছিল ছোট। চটপটে এসব প্রাণী দৌড়ে বেড়াত দুপায়ে। এরা দেখতে ছিল অনেকটা মারাসুকাস নামে একধরনের প্রাণীর মতো। মারাসুকাস একধরনের আর্কোসর (এরা বর্তমান পাখি ও কুমিরের পূর্বসুরি)। ট্রায়াসিক যুগের শেষ দিকে ডাইনোসররা নানাভাবে বিবর্তিত হতে থাকে। বেশির ভাগ ডাইনোসরই গাছপালা খেতে শুরু করে। তবে কোনো কোনো ডাইনোসর প্রজাতি হয়ে ওঠে পাকা শিকারি।

সরিশিয়ান

‘সরিশিয়ান’ কথাটির অর্থ, ‘কোমরের গঠন টিকটিকির মতো’। বাস্তবেও এরা ঠিক তা-ই ছিল। এই দলের মধ্যে ছিল তৃণভোজী সরোপোডোমর্ফ ডাইনোসর। মাংসাশী থেরোপডদেরও অনেকে এ দলের অন্তর্গত মনে করেন। তবে অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, এরা অরনিথিশিয়ানদের নিকটাত্মীয়।

অরনিথিশিয়ান

এসব ডাইনোসরের ঘাড় ছিল তুলনামূলক ছোট, ঠোঁটও ছিল ছোট। তৃণভোজী। কোমরের হাড়ের গঠন ছিল পাখির মতো। তবে আজকের পাখিরা কিন্তু অরনিথিশিয়ানদের নিকটাত্মীয় নয়, সরিশিয়ানদের নিকটাত্মীয়।

সরোপোডোমর্ফ

সরোপোডোমর্ফ নামটি এসেছে ‘সরোপডস’ থেকে। এর অর্থ দৈত্য। লম্বা ঘাড়, প্রায় ঠোঁটহীন, চারপেয়ে এসব প্রাণী ছিল তৃণভোজী।

থেরোপড

দুপেয়ে এসব থেরোপডের বেশির ভাগই ছিল মাংসাশী। কোনো কোনোটি ছিল আকারে বিশাল, দক্ষ শিকারি। তবে থেরোপডদের কোনো কোনোটি উড়তেও পারত। অর্থাৎ, পাখিও ছিল এদের মধ্যে।

স্টেগোসর

লম্বা ঠোঁটের চারপেয়ে তৃণভোজী প্রাণী। পিঠ ও লেজজুড়ে ছিল হাড়ের গজাল!

সেরাটোপসিয়ান

বেশির ভাগ সেরাটোপসিয়ানের মাথায় ছিল শিং। খুলির ঠিক পেছনেই ছিল ঝালরের মতো বিস্তৃত হাড়ের গঠন, হাড়ের ঝালর! আর তৃণভোজী এসব প্রাণীর ঠোঁট ছিল ঠিক টিয়া পাখির মতো!

প্যাচিসেফালোসর

এসব ডাইনোসরের মাথার খুলি ছিল বেশ মোটা। দুপেয়ে, নানা ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণিজ খাবার খেয়ে জীবন কাটাত এরা।

অরনিথোপড

অরনিথোপডদের ঠোঁট বা চঞ্চু ছিল। এরা ছিল তৃণভোজী, বেশির ভাগই ছিল দুপেয়ে। তবে বিশাল দেহের দৈত্যাকার অরনিথোপডরা দেহের ভারসাম্য রাখতে হাতেও ভর দিত প্রয়োজনে।

অ্যাঙ্কিলোসর

অনেকে এদের বলেন ‘ট্যাংক ডাইনোসর’। তৃণভোজী ও ভারী এসব প্রাণীর দেহে ছিল পুরু হাড়ের বর্ম! বড় থেরোপডদের হাত থেকে বাঁচতে এই বর্ম ছিল দারুণ কাজের।