প্রয়োজন হলে সাহায্য চাইতে ভয় পেয়ো না: বারাক ওবামা

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাএএফপি

‘সাহায্য চাওয়া দুর্বলতার লক্ষণ না, শক্তির লক্ষণ। এটি দেখায় যে তুমি যখন কিছু জানো না, তখন স্বীকার করার সাহস তোমার আছে। এর মাধ্যমে তুমি নতুন কিছু শিখতে পারবে।’ ২০০৯ সালে স্কুলের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দেওয়া এক বক্তৃতায় বলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।

তিনি বলেন, তোমাদের ওপর নির্ভর করে দেশের ভবিষ্যৎ। তোমাদের প্রত্যেকের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য নিজের দায়িত্ব নিজেকে নিতে হবে। আমাদের নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক, সবচেয়ে দায়িত্ববান বাবা-মা, বিশ্বের সেরা স্কুলে তুমি পড়তে পারো। কিন্তু যতক্ষণ না তুমি নিজের কাজটি শেষ করবে, এর কোনোটিই কাজে লাগবে না।

ওবামা ব্যাখ্যা করেন, সফল হওয়ার জন্য তোমার লক্ষ্য থেকে কখনো সরে আসা যাবে না। তুমি হয়তো একজন বড় লেখক হতে পারবে। কোনো পত্রিকায় তোমার লেখা ছাপা হবে, তুমি বই লিখবে। কিন্তু যত দিন তুমি ইংরেজি সাহিত্যের ক্লাসওয়ার্ক ঠিকভাবে না করবে, এই সম্ভাবনা তোমার সামনে তত দিন স্পষ্ট হবে না। হয়তো তুমি একজন উদ্ভাবক হতে পারবে। এমনকি পরবর্তী আইফোন বা নতুন কোনো ওষুধ বা ভ্যাকসিন আসবে তোমার হাত ধরে। তুমি আবিষ্কার করবে, এই বিষয়গুলোতে তুমি যথেষ্ট ভালো। কিন্তু বিজ্ঞান ক্লাসে তোমার বিজ্ঞান প্রজেক্ট না করা পর্যন্ত তোমার এই সম্ভাবনার কথা তুমি জানতেই পারবে না। হতে পারে তুমি মেয়র বা সিনেটর হবে, অথবা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হবে। তুমি যদি ছাত্র সংসদ বা বিতর্ক দলে যোগ না দাও, এই সম্ভাবনার কথা তুমি জানতেই পারবে না।

আরও পড়ুন

নিজের ছেলেবেলার কথা বলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী এই রাজনীতিবিদ। তিনি জানান, আমার বাবা আমার দুই বছর বয়সে আমাদের থেকে আলাদা হয়ে যান। আমি অনেক সময় বাবার প্রয়োজন অনুভব করতাম। একজন সিঙ্গেল মাদার হিসেবে আমাকে জীবনভর আগলে রেখেছেন আমার মা। মা চাকরি করতেন। সময় পেতেন না। আমাকে পড়ানোর জন্য মা এক বুদ্ধি করলেন। সোম থেকে শুক্রবার প্রতিদিন ভোররাত ৪টা ৪০ মিনিটে আমাকে পড়তে বসাতেন। আমি তখন ছোট্ট। আমার ঘুম পেত। এত সকালে উঠতে ইচ্ছা করত না। অনেক দিন পড়তে বসে আমি কিচেন টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছি। আমি পড়তে না চাইলে মা কড়া চোখে তাকিয়ে বলতেন, তোমাকে পড়তে বসানো আমার জন্য কোনো পিকনিক না।

আমিও অনেক ভুল করেছি। তোমাদের অনেকের জীবনে এখন অনেক সমস্যা চলছে। আমি যদি পড়া চালিয়ে না যেতাম, ল-স্কুল পর্যন্ত যেতে পারতাম না। আমি ভাগ্যজোরে এখানে এসেছি। খুব সহজেই পথ হারিয়ে ফেলতে পারতাম। আমাদের ফার্স্ট লেডি, আমার স্ত্রী মিশেল ওবামারও গল্পটা একই। তাঁর বাবা–মায়ের কেউই উচ্চশিক্ষা পায়নি। তাদের সম্পদও তেমন ছিল না। কিন্তু মিশেল লড়াই করে পড়াশোনায় সেরা হয়েছে। দেশসেরা স্কুলে পড়তে পেরেছে লক্ষ্যে অটুট থাকার কারণে।

তিনি শিক্ষার্থীদের নতুন কিছু করতে পরামর্শ দিয়েছেন ২০০৯ সালে দেওয়া এই বক্তৃতায়। এর মাধ্যমে নিজের পেশায় সফল হওয়া যাবে। তিনি বলেছেন, স্কুল ছেড়ে ভালো চাকরিতে যোগ দিলে উন্নতি করা যায় না। স্কুলে আগে বিষয়টি ভালোভাবে শিখে নিতে হয়। তারপর কাজে যোগ দিলে সেই কাজ ভালোভাবে করা যায়, কাজে দক্ষ হওয়া যায়।

বক্তৃতা শেষ করেন এভাবে, তোমরা প্রশ্ন করতে ভয় পাবে না। তোমার প্রয়োজনে সাহায্য চাইতে ভয় পাবে না। আমি প্রতিদিন এটা করি। বক্তৃতার শেষে এই লেখার শুরুর কথাটি বলেন তিনি। ‘সাহায্য চাওয়া দুর্বলতার লক্ষণ না, শক্তির লক্ষণ। কারণ এটি দেখায় যে তুমি যখন কিছু জানো না, তখন স্বীকার করার সাহস তোমার আছে। এর মাধ্যমে তুমি নতুন কিছু শিখতে পারবে।’