টাকা জমানোর ‘মুশকিলে আসান’ পদ্ধতি

সানজানা প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার আগে মায়ের কাছ থেকে ১০০ টাকা চেয়ে নেয়। ৬০ টাকা রিকশা ভাড়ার জন্য আর বাকিটা টিফিনের। তবে অধিকাংশ সময় এখান থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে সানজানা। নিজের একটা সাইকেল কেনার জন্য ‘টাকা জমানো প্রকল্প’ হাতে নিয়েছে সে। কখনো অল্প খরচে টিফিনটা সেরে নেয় সে, কখনো আবার রিকশার বদলে স্কুল থেকে ফেরে হেঁটে হেঁটে। প্রতিদিনের বাঁচানো এই টাকাটা সানজানা তার প্রিয় মাটি ব্যাংকটায় জমা করে। অল্প অল্প করে অনেকগুলো টাকা জমেছে তার। কিন্তু ঠিক কত টাকা জমেছে আর সাইকেলের টাকা জমতে কত টাকা বাকি, সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না সানজানা। আবার নিজের প্রিয় ব্যাংকটাও ভাঙতে চায় না সে। মাঝেমধ্যে অতি জরুরি সময়ে কিছু টাকা যে ব্যাংক থেকে বের করবে, সেই উপায়ও নেই।

বাবার মতো একটা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকলে এত সমস্যায় পড়তে হতো না সানজানাকে। কয়েক দিন ধরে এ চিন্তা বারবার মাথায় ঘুরছে তার। এর মধ্যেই একদিন ‘স্কুল ব্যাংকিং’ ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে সানজানার স্কুল বিএএফ শাহীন কলেজে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড। শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্কুল ব্যাংকিংয়ের নানা দিক তুলে ধরা ছিল এ আয়োজনের মূল লক্ষ্য।

এ আয়োজনে অংশ নেয় সানজানা। জানতে পারে ছোটদের জন্যও আছে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ। অনুষ্ঠানে ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হক জানান, স্কুল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ছোটবেলা থেকে নিজ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সঞ্চয় করতে পারবে, তাদের স্বপ্ন সফল করতে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে উঠবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এসেছিলেন কিশোর আলো সম্পাদক আনিসুল হক। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আড্ডায় তিনি সঞ্চয়ের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। শোনান অর্থনীতির গল্প। অনুষ্ঠান শেষে স্কুলে একটি স্টুডেন্ট বুথ ও ক্রেডিট কার্ড বুথ স্থাপন করে ঢাকা ব্যাংক। নিজের অ্যাকাউন্ট খুলে সানজানার মতো শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই স্টুডেন্ট বুথে স্কুল ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।

বিএএফ শাহীন কলেজের অনুষ্ঠানে অতিথিরা

সানজানা ভাবতেই পারেনি তার সমস্যা সমাধান যে এত সহজে হয়ে যাবে। বাড়ি ফিরেই বাবার কাঁধে ঝুলে ঝুলে স্কুলের সব ঘটনা খুলে বলল সে। বাবা আশ্বাস দিল খুব দ্রুতই সানজানার একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হবে। আনন্দে লাফাতে লাফাতে মায়ের মোবাইল থেকে সানজানা তার চাচাতো বোন ইসরাতকে কল করল। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যাপারটা তো ইসরাতকে জানানো দরকার। ওপাশ থেকে ইসরাত কল রিসিভ করতেই গড়গড় করে সব বলল সানজানা। বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়াতে নাড়াতে ইসরাত জবাব দিল, ‘আমাদের রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে তো আরও আগেই এসেছিল ঢাকা ব্যাংক। এরপর আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি আমাদের জন্য আরও অনেক অনেক সুবিধা আছে ‘স্কুল ব্যাংকিং’–এ। যদিও ব্যাংক অ্যাকাউন্টটা এখনো খোলা হয়নি। বাবা বলেছে পরশু আমাকে নিয়ে যাবে ব্যাংকে।’

স্কুল ব্যাংকিং নিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ

দুই বান্ধবী মিলে এখন পরিকল্পনা করছে একই দিনে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার। ওদের বাকি গল্প থাকুক। তুমি কী ভাবছ, সেটা শুনি। তোমার স্কুলেও কি এসেছিল ঢাকা ব্যাংক? না এলে শিগগিরই হয়তো তোমার স্কুলে হাজির হবে তারা। আর সানজানার মতো তোমারও যদি টাকা জমানোর কোনো পরিকল্পনা থাকে, ঢাকা ব্যাংকের মাধ্যমে আজই খুলে ফেলো তোমার স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট।