সেমিফাইনালের চারটি দেশের নাম এল কোথা থেকে

আর্জেন্টিনা

আর্জেন্টিনা বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম পরাশক্তি। দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। ইংরেজরা সারা বিশ্বে আর্জেন্টিনা নামটি ছড়িয়ে দিয়েছে। যদিও নামটি স্প্যানিশ, আর এই ভাষায় এর উচ্চারণ আরহেনতিনা। তবে আর্জেন্টিনা একটি ইতালিয়ান শব্দ। যার মানে রুপালি রং বা রুপার তৈরি। কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের পরে ইতালির ভেনিস বা জেনোয়ার নাবিকেরা এ অঞ্চলের এই নামকরণ করেন। ভৌগোলিক চেহারার কারণে তাঁরা এই অঞ্চলকে আর্জেন্টিনা নামে ডাকা শুরু করেন। পর্তুগিজ অভিযাত্রী গনসালো কোয়েলহো ও ইতালীয় নাবি আমেরিগো ভেসপুচির সঙ্গে আসা কিছু নাবিক এখানে প্রথম বসতি গড়েন।

ধীরে ধীরে এই অঞ্চলে স্প্যানিশরা এসে বসতি গড়া শুরু করেন। তাঁরা কিন্তু এ অঞ্চলকে আর্জেন্টিনা নামে নয়, বরং রিও দে লা প্লাটা নামে ডাকতেন। আর এই অঞ্চল সে সময় শাসন করতেন পেরুর স্প্যানিশ ভাইসরয়। ১৭৭৬ সালে স্প্যানিশরা এই অঞ্চলকে পেরু থেকে আলাদা করে ফেলেন। তখন এর নাম হয় ভাইসরয়লেতে রিও দে লা প্লাটা। স্প্যানিশ ভাষায় রিও মানে নদী; প্লাটা মানে হচ্ছে রুপালি

১৮১০ সালে আর্জেন্টিনা বিপ্লব দেশটির স্বাধীনতাযুদ্ধে রূপ নেয়। ছয় বছর পর দেশটির স্বাধীন কংগ্রেস এর নাম রাখে প্রভিন্সিয়া ইউনিদাস দেল রিও দে লা প্লাটা। আর ১৮২৬ সালে দেশটির সংবিধানে এর নাম রাখা হয় আর্জেন্টিনা রিপাবলিক।

আনুষ্ঠানিকভাবে ১৮২৬ সালে দেশটির নাম আর্জেন্টিনা হলেও আর্জেন্টিনা নামটি প্রথম উল্লেখ করেন স্প্যানিশ অভিযাত্রী, পাদরি ও কবি মার্টিন ডেল বারকো সেনতেনারো তাঁর কবিতা ‘লা আর্জেন্টিনা’য়।

আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন গঠিত হয় ১৮৯৩ সালে। ১৯১২ সালে দেশটি ফিফার সদস্যপদ লাভ করে।

ক্রোয়েশিয়া

পূর্ব ইউরোপের রাষ্ট্র ক্রোয়েশিয়ার ইতিহাস অনেক প্রাচীন হলেও দেশটি বিভিন্ন সময় অন্য রাষ্ট্রের অধীনে শাসিত হয়েছে। ৭ জুন ৮৭৯ সালে স্বাধীন ক্রোয়েশিয়া নামে একটি দেশ পৃথিবীর মানচিত্রে আবির্ভূত হয়। তবে ১১০২ সালে দেশটি হাঙ্গেরির সঙ্গে মিশে যায়। এরপর দেশটির স্বাধীনতা তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্যের মুখোমুখি হয়। ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অস্ট্রো-হাঙ্গেরির পরাজয়ের পর দেশটি কিছু সময়ের জন্য স্বাধীন হয়। কিন্তু এরপর দেশটি যুগোস্লাভ ফেডারেশনের অংশে পরিণত হয়। ১৯৪১ সালে জার্মানরা এ দেশ দখল করে নেন। সে সময় আনতে পাভেলিচের অধীনে স্বাধীন ক্রোয়াট রাষ্ট্র নামে একটি রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে, যদিও সে রাষ্ট্র ছিল নাৎসি জার্মানির অধীন। তবে ১৯৯১ সালের ২৫ জুন যুগোস্লাভ ফেডারেশন ভেঙে ক্রোয়াটরা স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ফলে পুরো যুগোস্লাভিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৯৫ সালে যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার ফলে ক্রোয়াটদের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন থাকে। দেশটির সরকারি নাম রিপাব্লিকা হারভাৎসকা। হারভাৎ অর্থ যিনি পাহারা দেন, অন্য অর্থে রক্ষাকর্তা।

ক্রোয়াট ফুটবল ফেডারেশন গঠিত হয় ১৯১২ সালে। দেশটি ১৯৯২ সালে ফিফার সদস্যপদ লাভ করে।

মরক্কো

আল মামলাকাহ আল মাঘরিবিয়াহ নামটি যে কাউকে ধাঁধায় ফেলে দিতে পারে। এটা আবার কোন দেশ! যদি বলি, এবারই দেশটি প্রথম আরব ও আফ্রিকান দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলেছে, তাহলে সবাই সহজে বুঝে নেবে, ও! এ তো মরক্কো।

হ্যাঁ, আল মামলাকাহ আল মাঘরিবিয়াহ দেশটির রাষ্ট্রীয় নাম। এটি একটি আরবি শব্দ। যার মানে পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্যটি। তবে দেশটি একই সঙ্গে মারাকাশ, ও ফেস বা ফেজ নামে পরিচিত। মরক্কো নামটিকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করেছে স্পেন। মূলত মারাকেশ মাউরোকেশ শব্দটি স্প্যানিশ ভাষায় মরক্কোতে পরিণত হয়।

দেশটির ফুটবল ফেডারেশন গঠিত হয় ১৯৫৫ সালে। আর ১৯৬০ সালে দেশটি ফিফার সদস্যপদ লাভ করে।

ফ্রান্স

ইতিহাসের প্রাচীন সময়ে ফ্রান্স বলে কোনো দেশ ছিল না। সে সময় এই এলাকাটি গল নামে পরিচিত ছিল। রোমানরা সে সময় এই এলাকা দখল করে নেন। এরপর ফ্রাঙ্ক নামের এক জাতি এসে গলে প্রবেশ করা শুরু করে। একসময় মুর নামে পরিচিত আরবেরা পশ্চিম ইউরোপে বিশেষ করে ফ্রান্সে হামলা চালান। তবে ফ্রাঙ্ক এক সেনাপতি চার্লস মর্টেল টুরসের যুদ্ধে তাঁদের পরাস্ত করেন। এরপর ফ্রান্স তার স্বাধীনতার জন্য ইংল্যান্ডের সঙ্গে দীর্ঘ সময় লড়াই করে জোয়ান অব অর্ক নামের এক বীর নারীর বীরত্বে ফ্রান্স স্বাধীন হয়।

ফ্রান্স শব্দটি এসেছে লাতিন ফ্রান্সিয়া থেকে, যার মানে ফ্রাঙ্ক সাম্রাজ্য। মূল ফ্রাঙ্ক  শব্দটি এসেছে জার্মান ভাষা থেকে, যার চার রকমের অর্থ হয়। তবে এর মূল অর্থ হলো স্বাধীন বা মুক্ত। ৮০০ সালের পূর্ব থেকে ফ্রান্সের নাম শোনা যায়, যে নামটি এখনো প্রচলিত। তবে দেশটি হিব্রু ভাষায় তাজারাত, মাউরি ভাষায় উই উই (মানে হ্যাঁ, হ্যাঁ) এবং আধুনিক গ্রিক ভাষায় গালিয়া নামে পরিচিত। প্রশ্ন জাগতে পারে, গালিয়া নামটি কোথা থেকে এসেছে? সেই পুরোনো গল শব্দটি থেকে প্রাচীন সময়ে দেশটি যে নামে পরিচিত।

ফ্রান্স হচ্ছে বিশ্বের একমাত্র দেশ, যে দেশটির ফুটবল ফেডারেশন গঠিত হওয়ার আগেই সে ফিফার সদস্য হয়েছিল। ২১ মে ১৯০৪-এ ফিফা গঠিত হওয়ার সময় ফ্রান্স এর সদস্য হয়। সেই অর্থে ফ্রান্স জন্মলগ্ন থেকে ফিফার সদস্য। তবে সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, সে সময় ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশনের জন্মও হয়নি। ফ্রেঞ্চ ফুটবল ফেডারেশনের জন্ম হয় ১৯১৯ সালে।