বৃহস্পতির ১২টি নতুন চাঁদ

সম্প্রতি বৃহস্পতি গ্রহের আরও ১২টি নতুন উপগ্রহ আবিষ্কার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিজ্ঞানী। গত ৩১ ডিসেম্বর, শনিবার স্মিথসোনিয়ান অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল অবজারভেটরি পরিচালিত মাইনর প্ল্যানেট সেন্টারে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হয়।

সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ বৃহস্পতি। একে গ্রহরাজও বলা হয়। সূর্যের চারপাশে ঘোরে এমন বস্তুকে বলা হয় গ্রহ। অবশ্য কোনো বস্তুকে গ্রহ হওয়ার জন্য সূর্যের চারপাশে ঘোরার পাশাপাশি আরও কিছু নিয়ম মানতে হয়। যেমন ওই বস্তুর নির্দিষ্ট ভর থাকতে হবে যাতে মধ্যাকর্ষণের টানে সেটি গোলাকার হয়। অন্য গ্রহের কক্ষপথ থেকে ওই বস্তুর কক্ষপথ হতে হবে আলাদা। এসব শর্ত মেনে কোনো বস্তু সূর্যের চারপাশে ঘুরলে তাকে গ্রহ বলা যাবে। আর উপগ্রহ বলতে বোঝায়, যেসব বস্তু গ্রহকে কেন্দ্র করে ঘোরে। যেমন পৃথিবীকে কেন্দ্র করে চাঁদ ঘোরে। তাই চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ।

বৃহস্পতির উপগ্রহের কক্ষপথ। সবচেয়ে বড় প্রোগ্রেড চাঁদগুলোকে বেগুনি রং দিয়ে বোঝানো হয়েছে। হিমালিয়া গ্রুপের উপগ্রহগুলো নীল এবং কার্পো গ্রুপের উপগ্রহকে বোঝানো হয়েছে নীলাভ সবুজ রং দিয়ে

আমাদের সৌরজগতে চাঁদের মতো এ রকম উপগ্রহ আছে ২০০টির বেশি। এত দিন সবচেয়ে বেশি উপগ্রহ ছিল শনি গ্রহের ৮৩টি, বৃহস্পতির ছিল ৮০টি। এখন বৃহস্পতির আরও ১২টি উপগ্রহ খুঁজে পাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ৯২টি উপগ্রহ হয়েছে গ্রহরাজের। অবশ্য বৃহস্পতি ও শনির চারপাশে এমন আরও অনেক উপগ্রহ আছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজ্ঞানবিষয়ক ম্যাগাজিন স্কাই অ্যান্ড টেলিস্কোপের মতে, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বৃহস্পতি গ্রহের তিন কিলোমিটারের মধ্যে এমন আরও কয়েক টন পাথুরে বস্তু খোঁজ পেয়েছেন। তবে সেগুলো সম্পর্কে এখনো তেমন কোনো তথ্য উদ্ধার করা যায়নি। আসলে এগুলো শনাক্ত করা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং। ভবিষ্যতে হয়তো আরও উন্নত টেলিস্কোপের সাহায্যে সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাওয়া যাবে। ২০২৪ সালে জুসি ও ক্লিপার নামে দুটি মহাকাশ অভিযান পরিচালনার কথা আছে। এই অভিযান সফলভাবে পরিচালিত হলে ওই পাথুরে বস্তু সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়া যাবে।

নতুন পাওয়া উপগ্রহগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটি বৃহস্পতির চারপাশে একবার ঘুরে আসতে প্রায় ৩৪০ দিন (পৃথিবীর দিন অনুসারে) লাগে। তবে এর মধ্যে ৯টি উপগ্রহের গ্রহরাজের চারপাশে একবার ঘুরে আসতে সময় লাগে প্রায় ৫৫০ দিন। প্রায় সব কটি উপগ্রহই আকারে ছোট। ৯টির মধ্যে মাত্র ৫টি উপগ্রহের ব্যাস ৮ কিলোমিটারের বেশি। বাকিগুলো আরও ছোট।

এবার উপগ্রহগুলোকে নিয়ে একটা মজার তথ্য দেই। ১২টি উপগ্রহের মধ্যে ৯টি ঘোরে বৃহস্পতির বিপরীত দিকে, মানে বৃহস্পতি ডানদিকে ঘুরলে ওই উপগ্রহগুলো ঘোরে বামদিকে। একে বলা হয় ‘রেট্রোগ্রেড’ ঘূর্ণন। বাকি তিনটি উপগ্রহ ঘোরে বৃহস্পতির দিকেই। একে বলে ‘প্রোগ্রেড’ ঘূর্ণন। এই তিন উপগ্রহের মধ্যে দুটির অবস্থান হিমালিয়া গ্রুপে। ১ দশমিক ১ ও ১ দশমিক ২ কোটি কিলোমিটার দূর থেকে যে উপগ্রহগুলো বৃহস্পতিকে প্রদক্ষিণ করে, সেগুলোর অবস্থান হিমালিয়া গ্রুপে। অন্য উপগ্রহের অবস্থান কার্পো গ্রুপে। ১ দশমিক ৭ কোটি কিলোমিটার দূর থেকে এই গ্রুপের উপগ্রহগুলো বৃহস্পতিকে কেন্দ্র করে ঘোরে।

সূত্র: স্পেস ডটকম ও আইএফএলসায়েন্স