বিমানবন্দর বানাতে কেন জলাশয়ের পাশের জায়গা বেছে নেওয়া হয়
বিমানে চড়ে যারা দেশের বাইরে গিয়েছ, তারা কি কখনো খেয়াল করেছ, বেশির ভাগ বিমানবন্দরে নামার সময়ই নদী বা সাগরের সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়। বিমানবন্দর থেকে বের হয়েই প্রথমে যেটা চোখে পড়ে, সেটি হলো বিশাল একটি জলাশয়। পৃথিবীর বেশির ভাগ বিমানবন্দরই তৈরি করা হয় বিশাল কোনো জলাশয়ের পাশে। কোন কোন বিমানবন্দর তো একদম সমুদ্রের মাঝখানে কৃত্রিম দ্বীপ বানিয়ে তৈরি করা হয়েছে! এর পেছনের কারণটা কী জানো?
জাপানের কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম শুনেছ কখনো? জাপানের ওসাকায় অবস্থিত এই বিমানবন্দর পুরোটাই তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম একটি দ্বীপের ওপর। ওসাকা শহরের জন্য যখন বিমানবন্দর তৈরির কথা উঠল, তখন শহরের ভেতর জায়গা খোঁজা শুরু হলো; কিন্তু শহর তো দূরে থাক, আশপাশেও কোনো বিশাল জায়গা খালি ছিল না বিমানবন্দরের জন্য। তখনই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন বিমানবন্দর তৈরি করবেন ওসাকা উপসাগরের ওপর।
ওসাকা বিমানবন্দর তৈরির আগে তৈরি করতে হয়েছে ওসাকা দ্বীপ। দ্বীপ থেকে মূল ভূখণ্ডের দূরত্ব প্রায় চার কিলোমিটার। তাই তো বিমানবন্দরে আসতে–যেতে বিশাল ওসাকা ব্রিজ পাড়ি দিতে হয় সবাইকে। প্রায় সাত বছর ধরে নিরলস কাজ করার পর অবশেষে তৈরি হয় কানসাই বিমানবন্দর। যদিও জাপানের নিয়মিত ভূমিকম্প আর সুনামির কারণে কানসাই বিমানবন্দর নিয়ে রয়েছে অনেক শঙ্কা। আশঙ্কা করা হয় কয়েক বছরের মধ্যে বিমানবন্দর সমুদ্রের নিচে ডুবেও যেতে পারে।
কানসাই বিমানবন্দরের দেখাদেখি আরও অনেকগুলো বিমানবন্দর তৈরি হয়েছে দ্বীপের ওপর। কেউ কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করেছে, কেউ আবার পুরোনো দ্বীপকে নতুন করে সাজিয়ে; কিন্তু প্রশ্ন করতে পারো, বিমানবন্দর কেন শহর থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া হয়? এর পেছনে কারণটা কী? আর ঢাকার বিমানবন্দরই–বা শহরের কাছাকাছি কেন?
কোলাহল কমাতে
বিমান নামা–ওঠার সময় যে বিশাল শব্দ হয়, তা কানে হেডফোন ছাড়া শুনলে কানে তালা লেগে যেতে পারে। ভাবো তো, প্রতিদিন তোমার বাসার কাছে এমন বিকট আওয়াজে বিমান উঠছে–নামছে, কেমন লাগবে তোমার? রাতবিরাতে ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দেবে শব্দ। নদী বা সমুদ্রের ধারে বিমানবন্দর তৈরি করলে সেই শব্দটা অনেকটা পানির দিকে বা ফাঁকা জায়গায় চলে যায়। এতে মানুষের সমস্যা তৈরি হয় না। একেবারে প্রাকৃতিকভাবে সাউন্ডপ্রুফিং!
নিরাপত্তার জন্য
বিমানের রানওয়ে তৈরির জন্য দরকার হয় বিশাল জায়গার। আর বিমানে যদি কোনো কারণে সমস্যা হয়, জরুরি অবস্থায় বিমানকে নিরাপদে নামানোর দরকার হয়, তখন যত বেশি ফাঁকা জায়গা থাকে, তত ভালো। নদী বা সমুদ্রের ধারে সেই ফাঁকা জায়গাটা সহজেই পাওয়া যায়, যেখানে বাড়িঘর বা অন্য কোনো বাধা থাকে না। নিরাপত্তার জন্য এই পানির কাছাকাছি জায়গা 'সেফটি জোন'-এর মতো কাজ করে।
জায়গার অভাব
পৃথিবীর বেশির ভাগ বিমানবন্দরই তৈরি করা হয় শহর থেকে একটু দূরে জলাশয়ের কাছাকাছি। শহরের ভেতর যেমন জায়গা পাওয়া যায় না, তেমনই লোকজনেরও সমস্যা হয়; কিন্তু জাপান বা হংকংয়ের মতো দেশে বিশাল জায়গা পাওয়া বেশ দুষ্কর। তাই তো তারা ভিন্ন পথ হিসেবে বেছে নিয়েছে সমুদ্রের মাঝখানের দ্বীপ। বিশাল খরচ করে সমুদ্রকে মাটি দিয়ে ভরাট করে বা কৃত্রিম দ্বীপ বানিয়ে যেমন জনগণকে শব্দ থেকে দূরে রেখেছে, তেমনই দুর্দান্ত এক বিমানবন্দর বানিয়ে নাম কামিয়েছে বিশ্বের কাছে।
প্রশ্ন করতে পারো, বাংলাদেশে তো এমন নয়। বাংলাদেশের বিমানবন্দরের আশপাশে তো তেমন নদী নেই। সত্যি বলতে একসময় ছিল। আগারগাঁও পুরোনো বিমানবন্দর, বর্তমানের হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আশেপাশে ছিল বিশাল জলাশয়। এখন যে জায়গা উত্তরা নামে পরিচিত, সেই জায়গাজুড়ে ছিল বিশাল জলাশয়। শহরের বৃদ্ধির জন্য আস্তে আস্তে সেই জায়গাতেও গড়ে উঠেছে জনবসতি। নইলে বাংলাদেশেও হয়তো এমন বিমানবন্দরের দেখা মিলত; কিন্তু আশার কথা, কক্সবাজারে সমুদ্রের পাড়জুড়ে রয়েছে বিমানবন্দর। এই মাসেই সেটি পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। রানওয়ে বাড়ানোর যে কাজ চলছে, সেটি শেষ হলে মনে হবে পানির ভেতরেই বিমান নিয়ে নামছ তুমি।