প্রয়োজন নেই, এমন জিনিস কেন কিনি?

ঘরে কফি বানিয়ে খেলে যে খরচ হয়, বাইরে থেকে কিনে খেলে খরচ হয় বহুগুণ

ধরে নিচ্ছি, তোমার একটি ইন্টারনেট সংযোগসহ ফোন আছে। তোমার না থাকলেও তোমার পরিবারের কারও আছে, যেটি তুমি ব্যবহার করো। এখন সবার হাতেই ফোন থাকে বলে বলছি। ফোন ব্যবহার করা মানে এখন মোটামুটি সারাক্ষণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে অ্যাকটিভ থাকা। কারও কারও অভ্যাস থাকে, সারাক্ষণ স্ক্রলিং করা। কেউ শর্ট ভিডিও দেখে। কেউ রান্না ও খাবারের ভিডিও দেখে। কেউ দেখে ভ্রমণ ব্লগ। আমার ছোট্ট বন্ধু ইয়াশ সারাক্ষণ অন্যদের ভিডিও গেমস খেলা দেখে! তাদের সবার মধ্যে কমন বিষয় হলো, সবাই মাঝেমধ্যে বিভিন্ন কেনাকাটার অনলাইন দোকানে চলে যায়—ইচ্ছা বা অনিচ্ছায়।

ধরো, তুমি রামেনের ভিডিও দেখছিলে। তোমার পেটে একটু ক্ষুধা লেগেছে। বাসার কিছু একটা খেয়ে নিলেই হয়ে যায়। তা না করে তুমি একটু ফুডপ্যান্ডা থেকে ঘুরে এলে, কোথায় ভালো রামেন পাওয়া যায়? এর দাম কত? আবার একটা সুন্দর জামা দেখলে কোনো ইনফ্লুয়েন্সারের গায়ে। জামাটা কোনো শপে আছে কি না, তা একটু খুঁজে দেখলে। ধরে নিচ্ছি, মাঝেমধ্যে এমন করো তুমি। তুমি না করলে অসুবিধা নেই, বরং ভালো। যে করে তার কথা বলছি। অনলাইন হোক বা মার্কেটে হোক, এ রকম উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরির মধ্যে তুমি হঠাৎ কিছু জিনিস নিশ্চয়ই কিনে ফেলো, যা তোমার একদমই প্রয়োজন নেই। কিছু জিনিস কিনতে চাও। তোমার মনে হতে পারে, এটি আমার এখন দরকার না হলেও খুব ‘সুন্দর’, পরে কাজে লাগবে। সুন্দর মানছি, কাজেও লাগবে জানা কথা। তবে ঠিক করে ভেবে দেখো, সত্যিই কি তোমার এই জামা প্রয়োজন ছিল?

ছাড়ের বিজ্ঞাপন দেখলেই প্রয়োজন ছাড়াই কেনাকাটা করতে ঝাপিয়ে পড়ে অনেকেই

এবার এমন তিনটি জিনিসের কথা ভাবো, যেগুলো তুমি গত তিন মাসের মধ্যে কিনেছ। যেগুলোর আসলে একদমই প্রয়োজন ছিল না। প্রথমে তোমার ভাবতে কষ্ট হতে পারে। কারণ, আমরা কেনাকাটার আগে নিজেদের বোঝাই মনে মনে। স্বীকার করতে চাই না যে এটি আমার দরকার নেই। নিজের কাছে যেহেতু উত্তর দিতে হবে, তাই সত্যি সত্যি অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার কথা ভাবতে অসুবিধা নেই। হতে পারে তুমি একটা ইয়ারবাড কিনেছ। আগে তোমার ইয়ারফোন ছিল, যেটায় তার আছে। ইয়ারবাডে তার নেই। আবার হতে পারে স্মার্টওয়াচ। তোমার স্মার্টফোনে এর সব ফিচারই আছে, তবু কিনেছ।

আরও পড়ুন

এবার প্রশ্ন করো নিজেকে, কেন আমরা এমন করি? কেন আমাদের প্রয়োজন নেই, এমন জিনিস দিয়ে ঘর ভরিয়ে ফেলি? জিনিস বা বস্তু ভালোমন্দ যা–ই হোক, কেন কিনি? এই যেমন আমি গত তিন মাসে অনেকগুলো বই কিনেছি, যেগুলো এখনো পড়িনি। সামনে পড়ব বলে মনে করি। কিন্তু আমার এখন এই বই কেনার দরকার ছিল না। এখনই না কিনলে এই বইগুলো শেষ হয়ে যাবে, ব্যাপারটা এমনও না। তবু আমি কিনলাম। আমরা এ রকম হামেশাই করি।

আমাদের অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা পরিবেশের ক্ষতি করছে

প্রয়োজন নেই, এমন জিনিস কেনার জন্য আমাদের উসকে দেয় চোখের সামনে সব সময় ঘুরতে থাকা ক্রমাগত বিজ্ঞাপন। টিভিতে চলছে, স্কুলের বন্ধু বা চারপাশের মানুষ কিনছে। এসব দেখে আমাদের মনে হয়, আরে, আমার একটা ইয়ারবাড নেই! আমি এখনো ইয়ারফোন নিয়ে ঘুরি! লোকে কী বলবে? এসব সামাজিক চাপ আমাদের ওপর বোঝা হয়ে চেপে বসে বলেই আমরা অপ্রয়োজনীয় বস্তু কিনি। কেনাকাটার জন্য আমাদের আকাঙ্ক্ষা বেড়ে যায়। একটু চিন্তা করলে বুঝতে পারবে, এর পেছনে আছে মনোবিজ্ঞান। এই বিদ্যা বলতে পারে, কেন কিছু মানুষ প্রয়োজন নেই, এমন জিনিস কেনার জন্য চাপ অনুভব করে।

বিজ্ঞাপন ছাড়া অন্যভাবেও বিক্রেতারা পণ্যের প্রচার করেন। রাস্তায় তুমি কমলা বিক্রি হতে দেখেছ। কিছু কমলা বিক্রি হয় ভ্যানে। কমলার স্তূপ থাকে। আবার কিছু চায়নিজ কমলা বাজারে পাওয়া যায়, যেগুলো লাল জালি ব্যাগে করে বিক্রি হয়। কমলা এভাবে বিক্রির সঙ্গে রং তত্ত্বের সম্পর্ক আছে। লাল ব্যাগে কমলাকে দেখতে আরও কমলা রঙের মনে হয়। কমলা বা মাল্টা যত উজ্জ্বল দেখায়, আমরা এটিকে ততই পরিপক্ব বলে মনে করি। লাল ব্যাগের পেছনে তত্ত্ব হলো, কমলার ওপরে লাল জালের পাতলা সুতাগুলো ওভারল্যাপিং বা একটা আরেকটার ওপর থাকে। তাই লালের প্রভাবে কমলা রঙের গাঢ়ত্বও বেড়ে গেছে বলে মনে হয়। ক্রেতার কাছে তখন কমলাকে খুব ভালো মানের মনে হয়। এভাবে কমলার পুরো ব্যাগটাই কেনার সম্ভাবনা থাকে (আমাদের দেশে ব্যাগ ধরেই কিনতে হয়, প্রয়োজন অনুযায়ী কেনা যায় না!)। কমলাকে স্তূপ করে রাখলে অল্প কিছু কমলা উজ্জ্বল থাকে, বাকিগুলো তেমন উজ্জ্বল দেখায় না। মাত্র কয়েকটিকে উজ্জ্বল বলে মনে হয়। পুরো কমলার স্তূপের রং তখন মার খেয়ে যায়।

আরও পড়ুন

তাই লাল জালের ব্যাগভর্তি কমলা দেখলে আমাদের দরকারমতো কমলা না কিনে পুরো ব্যাগ কিনে নিই। তুমি সবুজ জালের ব্যাগে কিছু সবুজ লেবু রেখে নিজেই পরীক্ষা করে দেখতে পারো। নিশ্চিত সবুজ লেবুকে আরও সবুজ মনে হবে।

দেশের বাইরে অনেকেই এখন মিনিমালিস্টিক জীবন যাপনের দিকে ঝুঁকেছে

আধুনিক যুগে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই। খাবার, থাকার জায়গা, জরুরি পোশাক—এসব থাকলেই বেঁচে থাকা যায়। অসুস্থ হলে চিকিৎসা করা অন্য আলাপ। এর বাইরে আমরা যা কিনি, তার অনেক কিছুই বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় নয়। ধরো, রেস্তোরাঁর দামি কফি, দশ জোড়া জুতা, কম্পিউটার থাকার পরও ল্যাপটপ ও আইপ্যাডের প্রয়োজন নেই। স্কুলশিক্ষার্থীর জন্য ব্যক্তিগত গাড়ির প্রয়োজন নেই। ইয়ারফোন থাকার পর ইয়ারবাডের প্রয়োজন নেই।

আরও পড়ুন

কিছু জিনিস কেনার ক্ষেত্রে আমরা ঘোরে পড়ে যাই। এটি কিনলে আমাদের সামাজিক অবস্থান উন্নত হবে, এমন ইলিউশন বা ঘোর তৈরি করে কিছু ব্র্যান্ড। যেমন অ্যাপল কোম্পানি। তারা আইফোনকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে, নতুন মডেল বাজারে এলেই সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে কেনার জন্য। এটি সাধারণ স্মার্টফোনের চেয়ে দামি। যারা সামাজিক স্বীকৃতি চায়, তারা এসব বিলাসবহুল পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়। একটা আইফোন হাতে থাকলে অন্যরা তাকে সম্পদশালী মনে করবে এবং তার প্রতি আকৃষ্ট হবে। একটা দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি থাকলে বড়াই করার একটা সুবিধা পাওয়া যায়। কোনো ব্যক্তি কোন বাড়িতে থাকে, কোন গাড়িতে চলাফেরা করে, কী পোশাক পরে বা কোথায় খাওয়াদাওয়া করে বা কোথায় ঘুরতে যায়—এগুলো দিয়ে মানুষকে অন্যরা মাপার চেষ্টা করে । এগুলো দিয়ে ব্যক্তি নিজের পরিচয় প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পায়। এসব স্ট্যাটাস অর্জনের জন্য অনেকেই অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনে।

অকারণে জিনিসপত্র কেনার আরেক কারণ কর্তৃত্ব। বস্তুর মালিকানার সঙ্গে মানুষের কাছে ক্ষমতা আসে। পৃথিবীতে যা কিছু ঘটে, তার বেশির ভাগই আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তবে নির্দিষ্ট জিনিস আমাদের দখলে থাকলে আমাদের কিছু দায়িত্ব আছে বলে মনে হয়। তখন আমরা মহাবিশ্বের একটি ক্ষুদ্র অংশের কর্তা হয়ে উঠি।

মানুষের কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে গেছে।

এবার ধরো আমি একটি নীল জামা কিনলাম। এরপর আমার মনে হতে পারে, এর সঙ্গে মিলিয়ে একটা প্যান্টও দরকার। আগের প্যান্টটা ঠিক ম্যাচিং হচ্ছে না। নতুন প্যান্ট দরকার। এই পোশাকের সঙ্গে দরকার একটা মানানসই ব্যাগ। নাহ, জুতাটাও ম্যাচ করছে না। নতুন জুতা দরকার। এভাবে কিনে ফেলব অনেক কিছুই। অথচ এর সব কটিই আমার যথেষ্টই আছে। নতুন কেনার প্রয়োজন ছিল না। তবু আমরা একটা তাগিদ অনুভব করব এগুলো কেনার। মনে হবে, এগুলো না ম্যাচ করলে আমাকে একেবারেই ভালো দেখাবে না। ইনস্টাগ্রামের ছবিতে সবাই একই জামা দেখবে। এটা কোনো কথা? অথচ আমাকে এত দিন কিন্তু ভালোই দেখা গেছে। যখন ম্যাচ করে এগুলো ব্যবহার করব, তখন আবার মনে হবে, আমার তো একটা লাল জামাও দরকার। শুরুতে ভালো লাগবে। তারপর এগুলো আর তেমন কোনো অনুভূতি দেবে না। তখন আবারও নতুন জামা কিনতে ইচ্ছা করবে। এটা অপ্রয়োজনীয় খরচের ফাঁদ এবং চক্র। এই চক্রের কথা বলেছেন ফরাসি দার্শনিক ডেনিস ডিডেরটের। পুরো ব্যাপারটাকে তাঁর নামের সঙ্গে মিলিয়ে বলা হয় ‘ডিডেরট ইফেক্ট’। এটি ভাঙতে সচেতন পদক্ষেপ লাগবে। তোমাকে এই চক্র নিয়ে সচেতন থাকতে হবে।

আরও পড়ুন

ঈদের সময় আমাদের দেশে বিচিত্র একটি জিনিস দেখা যায়। পাশের দেশের কোনো টিভি সিরিয়ালে কোনো চরিত্র যে জামা পরে অভিনয় করেছে, সেই জামার একটা নাম থাকে। আমাদের বাজার ভরে যায় সেই জামা দিয়ে। কেউ টিভি সিরিয়াল দেখে প্রভাবিত হয়। কেউ সিনেমার নায়কের স্টাইল দেখে প্রভাবিত হয়। অথবা ইনস্টাগ্রামের রিলসে কোনো ফ্যাশনের প্রবণতা দেখেও তোমার কিছু কিনতে ইচ্ছা করতে পারে।

আলমারিভর্তি জামা কাপড়, কিন্তু পরার কোনো কাপড় নেই—এমন মনে হয় অনেকেরই

ইউটিউবে তারকাদের গ্যাজেট আমাদের প্রভাবিত করে। তাঁরা যা কিছুর প্রচারণা চালান, আমরা সেগুলো পেলে সুখ ও সাফল্য অনুভব করি। ট্রেন্ড বা সাম্প্রতিক প্রবণতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে, এমন চাপ অনুভব করি। তবে চিন্তা করলে বুঝবে, এগুলো থেকে আমাদের সুখ আসে না। সর্বশেষ স্মার্টফোন বা নতুন ডিজাইনের পোশাক কিনলে যে আনন্দ হয়, তা খুবই সাময়িক। কদিন পর আরও নতুন কিছু কিনতে ইচ্ছা করে। সাধারণভাবে বলা যায়, আমাদের অভিজ্ঞতা, অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক ও নিজের আত্মোন্নতি থেকে তৈরি হয় সুখ। আনন্দের উৎস এগুলোই।

কেনাকাটার পর মানুষ মনে করে, এতে আমার স্যাটিসফেকশন বা সুখ তৈরি হবে। এ জন্য অন্যকে কিছু কিনে দিলে সে খুশি হয়। এভাবে বেশি জিনিস কেনাকাটা করলে টাকা বেশি বেশি হাতবদল হয়। অর্থনীতির জন্য বিষয়টি অবশ্যই ভালো। এতে সাময়িকভাবে আমাদের সুখানুভূতি হয়।

জীবনকে সমৃদ্ধ করার জন্য কিছু মানুষ শুধু অতি প্রয়োজনীয় বস্তুই ব্যবহার করেন। যা কাজে লাগে না, তা তাদের কাছে অতিরিক্ত। এদের বলে মিনিমালিস্ট। শুধু এমন বস্তুগুলো রাখেন, যা তাঁদের জীবনের একটি উদ্দেশ্য পূরণ করে। জীবনে তাঁরা সময় আর পরিশ্রম ও অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্ব দেন। যেকোনো বস্তুকে কর্মক্ষমতা দিয়ে মূল্যায়ন করেন এবং ভোগবাদকে প্রত্যাখ্যান করেন।

আবার কিশোর বয়সে আমরা আত্মপরিচয় খুঁজি। নিজেদের সামাজিক অবস্থান তৈরি করতে চাই। আমাদের বন্ধুরা আমাদের পছন্দ করবে কি না, তাচ্ছিল্যের মুখে পড়ব কি না, এমন ভয়ও আমাদের থাকে। একটা দামি ফোন বা ঘড়ি নিয়ে ক্লাসে গেলে বন্ধুরা ঘিরে ধরবে—অবচেতন মনে আমরা এগুলো ভাবি। ট্রেন্ডি জামাকাপড় বা গ্যাজেট কেনা মানে শুধু চমৎকার জিনিসের মালিক হওয়া নয়, আমরা যাদের নিজের সমান মনে করি, তাদের সমান হওয়া, তাদের ছাড়িয়ে যাওয়া কিংবা অন্যদের কাছ থেকে ভ্যালিডেশন বা বৈধতা চাওয়ার মতো বিষয়ও থাকে। আসলে আমরা কে, তা ঠিক করার জন্য বস্তুগত সম্পদের প্রয়োজন নেই। আমাদের মূল্য পোশাকের ব্র্যান্ড বা ফোনের মডেল দিয়ে সত্যিকার অর্থে পরিমাপ করা হয় না। আমাদের ভেতরের অনুভূতি, আবেগ আর নিজের প্রতি সৎ থাকাই আসল বিষয়। আবার পাশের বাসায় কিংবা বন্ধুর কাছে অমুক জিনিস আছে, আমারও সেটা লাগবে। তা না হলে আমি ওর থেকে পিছিয়ে যাব—এমন সামাজিক চাপ এড়ানোও জরুরি।

অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা থেকে বাঁচতে কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারো। ভেবে দেখো, তোমার কাছে কোনটা গুরুত্বপূর্ণ। কিসে তোমার আগ্রহ, তোমার লক্ষ্য কী? এগুলো ভাবলে তোমার মূল্যবোধ তৈরি হবে। সঠিক ব্যয় করার অভ্যাস হবে। কোথায় টাকা খরচ করবে, সেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তোমাকে অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে। সত্যিই নতুন স্মার্টফোন বা জুতা দরকার, নাকি একটা অনলাইন কোর্স? নাকি তুমি কিছু টাকা জমাবে? অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে সেগুলোর সঙ্গে লেগে থাকলে তুমি চাপ সামলাতে পারবে। বিজ্ঞাপন দেখে কেনাকাটা বা ট্রেন্ড দেখে ঝাঁপিয়ে পড়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবে।

আরও পড়ুন

জিনিস বা বস্তুর চেয়ে জীবনে গুরুত্ব দেওয়ার অনেক কিছু আছে। অভিজ্ঞতা অর্জন, শখ পূরণ আর অন্যদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে সময় আর শক্তি বিনিয়োগ করলে আনন্দ পাবে। তোমার পরিপূর্ণতার অনুভূতি হবে। বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, ভ্রমণ বা সৃজনশীল কিছু আয়ত্তের চেষ্টা চালালে মন ভালো থাকবে। তোমার জীবন সমৃদ্ধ হবে।

প্রয়োজন হলে জামা তো কিনতেই হবে কিন্তু অপ্রয়োজনে কেনাকাটা কতটা যৌক্তিক, ভেবে দেখা দরকার

জীবনকে সমৃদ্ধ করার জন্য কিছু মানুষ শুধু অতি প্রয়োজনীয় বস্তুই ব্যবহার করেন। যা কাজে লাগে না, তা তাদের কাছে অতিরিক্ত। এদের বলে মিনিমালিস্ট। শুধু এমন বস্তুগুলো রাখেন, যা তাঁদের জীবনের একটি উদ্দেশ্য পূরণ করে। জীবনে তাঁরা সময় আর পরিশ্রম ও অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্ব দেন। যেকোনো বস্তুকে কর্মক্ষমতা দিয়ে মূল্যায়ন করেন এবং ভোগবাদকে প্রত্যাখ্যান করেন। জীবনের সৌন্দর্য তাঁরা খুঁজে পান বস্তুর আসল উদ্দেশ্যকে তুলে ধরে। তুমি তাদের কথা জেনে নিজের জীবনে মিনিমালিজমের প্রতিফলন ঘটাতে পারো।

অপর দিকে তোমরা জানো, পৃথিবী এখন জলবায়ু পরিবর্তনের মুখোমুখি। এই প্রচণ্ড গরম তো এই বন্যা। প্রচুর বৃষ্টি। বিভিন্ন দেশে অস্বাভাবিক আবহাওয়া দেখা যাচ্ছে। আমাদের মতো জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ভুগছে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মানুষের ভোগবাদী সংস্কৃতি অনেকখানি দায়ী। ফসিল ফুয়েল যত পোড়ানো হবে, পৃথিবীর তাপমাত্রা তত বাড়বে। এভাবে জগৎ বড় পরিবর্তনের মুখোমুখি হবে। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তাই জগৎকে বাঁচাতে তোমারও কিছু করার আছে। দরকার নেই, এমন জিনিস কেনা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারো। এভাবে তুমিও পৃথিবীকে রক্ষায় অবদান রাখতে পারবে।

ছবি: প্রথম আলো

আরও পড়ুন