শান্তিতে নোবেল নিয়ে যে ১০টি তথ্য জানা দরকার

২০২৩ সালে শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন ইরানের নারী অধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদি

১৮৯৫ সালের ২৭ নভেম্বর। আলফ্রেড নোবেল তাঁর শেষ ইচ্ছা জানালেন নিজস্ব উকিলকে। নিজের পাহাড়সম সম্পত্তির বেশির ভাগ অংশ দিয়ে একটি ফান্ড তৈরি করতে চান তিনি। সেই ফান্ডের টাকা দিয়ে প্রতিবছর শান্তিতে এমন ব্যক্তিকে পুরস্কার দেওয়া হবে, যিনি বিশ্বের শান্তির জন্য কাজ করবেন। ১৯০১ সাল থেকে এ পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়। বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এ পুরস্কারের নাম নোবেল। চলো, শান্তিতে নোবেল সম্পর্কে পাঁচটি তথ্য জেনে নিই।

১. ১৯০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১০৪ বার শান্তিতে নোবেল দেওয়া হয়েছে। মাঝখানে ১৯ বছর শান্তিতে নোবেল ঘোষণা করা হয়নি। ১৯১৪ থেকে ১৬, ১৯১৮, ১৯২৩, ১৯২৪, ১৯২৮, ১৯৩২, ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৩, ১৯৪৮, ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৬, ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৭ ও ১৯৭২ সালে দেওয়া হয়নি নোবেল। কেন এই ১৯ বছর নোবেল দেওয়া হলো না শান্তিতে? কারণ, ওসব বছরে বিশ্ববাসীর জন্য সেভাবে কেউ কাজ করেননি। মানে নোবেল পাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ কেউ করেননি।

২. এখন পর্যন্ত ৭০ ব্যক্তি এককভাবে নোবেল পেয়েছেন। দুজন ভাগাভাগি করে নিয়েছেন ৩১ বার। আর তিনজন ভাগাভাগি করে নোবেল পেয়েছেন দুইবার। ১৯৯৪ সালে ফিলিস্তিনের ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে নোবেল ভাগাভাগি করেছেন ইসরায়েলের শিমন পেরেজ ও আইজ্যাক রবিন। আর ২০১১ সালে নারীদের অধিকার রক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নোবেল পেয়েছিলেন ইয়েমেনের তাওয়াকেল কারমানের সঙ্গে লাইবেরিয়ার এলেন জনসন সারলিফ ও লেমাহ বোয়ি। এ ছাড়া ২০২২ সালে বেলারুশের মানবাধিকারকর্মী অ্যালেস বিয়ালিয়াৎস্কির সঙ্গে নোবেল পুরস্কার পায় আরও দুটি প্রতিষ্ঠান। একটি রাশিয়ার মেমোরিয়াল এবং অন্যটি ইউক্রেনের সেন্টার ফর সিভিল লিবারিটিস।

৩. এখন পর্যন্ত শান্তিতে ১৪১টি নোবেল ঘোষণা হয়েছে। এরমধ্যে ১১১ ব্যক্তি ও ৩০টি প্রতিষ্ঠানকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। ৩০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেডক্রস (আইসিআরসি) ৩ বার এবং অফিস অব দ্য ইউনাইটেড নেশনস হাইকমিশনার ফর রিফিউজি (ইউএনএইচসিআর) ২ বার শান্তিতে নোবেল পেয়েছে। অর্থাৎ ১১১ জন ভিন্ন মানুষের সঙ্গে ২৭টি আলাদা প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত নোবেল পেয়েছে।

সবচেয়ে কমবয়সী শান্তিতে বেলজয়ী পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই

৪. সবচেয়ে কমবয়সী নোবেলজয়ী পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই। ২০১৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে ভারতের কৈলাশ সত্যার্থীর সঙ্গে ভাগাভাগি করে নোবেল পান তিনি।

৫. সবচেয়ে বেশি বয়সে শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জোসেফ রটব্লাট। ১৯৯৫ সালে ৮৭ বছর বয়সে তিনি এ পুরস্কার পেয়েছিলেন।

৬. ১১১ ব্যক্তির মধ্যে এখন পর্যন্ত শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন ১৯ নারী। ১৯০৫ সালে প্রথম নারী হিসেবে শান্তিতে নোবেল পেয়েছিলেন হাঙ্গেরির বের্থা ফন সুটনার।

৭. রেডক্রস সর্বোচ্চ তিনবার নোবেল পেয়েছে। আর এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সুইজারল্যান্ডের হেনরি ডুনান্ট ১৯০১ সালে নোবেল পেয়েছিলেন শান্তিতে। তিনিই জেনেভা কনভেনশনের সূচনা করেছিলেন। এ ছাড়া ১৯৬২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লিনাস পাউলিং শান্তিতে নোবেল পাওয়ার আগে ১৯৫৪ সালে রসায়নে নোবেল পেয়েছিলেন।

১৯৬২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লিনাস পাউলিং শান্তিতে নোবেল পাওয়ার আগে ১৯৫৪ সালে রসায়নে নোবেল পেয়েছিলেন

৮. শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করা একমাত্র ব্যক্তি উত্তর ভিয়েতনামের রাজনীতিবিদ লি ডাক থো। ১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হেনরি কিসিঞ্জারের সঙ্গে যৌথভাবে তাঁকে নোবেল দেওয়া হয়েছিল। ভিয়েতনাম ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শান্তি চুক্তির কারণে তাঁদের এ পুরস্কার দেওয়া হয়। কিন্তু লি ডাক থো মনে করেছিলেন, শান্তি চুক্তি সম্পন্ন হয়নি। তাই তিনি নোবেল প্রত্যাখ্যান করেন।

৯. এখন পর্যন্ত এমন পাঁচ ব্যক্তিকে নোবেল দেওয়া হয়েছে, যাঁরা নোবেল ঘোষণার সময় কারাগারে ছিলেন। তাঁরা হলেন জার্মানের সাংবাদিক কার্ল ফন আসিয়েৎস্কি, মিয়ানমারের অং সান সুচি, চীনের মানবাধিকারকর্মী লিউ জিয়াওবো, বেলারুশের মানবাধিকারকর্মী অ্যালেস বিয়ালিয়াৎস্কি ও ২০২৩ সালে নোবেল পাওয়া ইরানের নারগিস মোহাম্মদি।

১০. শান্তিতে মনোনয়ন পেয়েও নোবেল পাননি, এমন মানুষের সংখ্যা অনেক। সেখান থেকে বিখ্যাত কয়েকজন হলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের জোসেফ স্তালিন, ভারতের মহাত্মা গান্ধী ও জওহরলাল নেহরু, জার্মানির অ্যাডলফ হিটলার, গ্রেট ব্রিটেনের উইনস্টন চার্চিল, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট ও হ্যারি ট্রুম্যান, ইতালির বেনিটো মুসোলিনি এবং রাশিয়ার লিও তলস্তয়।

সূত্র: নোবেল ডট ওআরজি