আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণের পূর্বাভাস দেবে গাছের পাতা
কোনো আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরিত হতে যাচ্ছে কি না, তা জানা যায় আশেপাশের গাছপালার পাতার রঙ দেখে। আর এটি সম্ভব হচ্ছে আকাশ থেকে তোলা স্যাটেলাইটের ছবির মাধ্যমে। গবেষকেরা এমন এক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, যার মাধ্যমে আগ্নেয়গিরির কাছাকাছি থাকা গাছের সবুজ রং বিশ্লেষণ করে বোঝা যাবে এলাকাটি কতটা বিপজ্জনক অবস্থায় আছে।
এই যুগান্তকারী উদ্যোগের পেছনে রয়েছে নাসা এবং স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউট। এই দুই প্রতিষ্ঠানের যৌথ গবেষণা অনুযায়ী, আগ্নেয়গিরি যখন বিস্ফোরণের দিকে এগিয়ে যায়, তখন আশেপাশে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস নিঃসরণ করতে শুরু করে। এই গ্যাস গাছের বৃদ্ধি দ্রুতগতির করে ও পাতার উজ্জ্বল সবুজ রং সৃষ্টি করে। ফলে পাতাগুলো আকাশ থেকে আরও সবুজ ও ঘন দেখায়।
বর্তমানে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পূর্বাভাস দিতে গবেষকরা ভূকম্পন, মাটির উচ্চতার পরিবর্তন, এবং সালফার ডাইঅক্সাইড গ্যাসের নিঃসরণ পর্যবেক্ষণ করেন। স্যাটেলাইট থেকে চিহ্নিত করা সহজ হলেও কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বোঝা বেশ চ্যালেঞ্জিং। কারণ স্বাভাবিকভাবেই বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাইঅক্সাইড থাকে।
কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরাল ছাত্র এবং আগ্নেয়গিরি বিজ্ঞানী রবার্ট বগ বলেন, ‘একটি আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত সামান্য পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড উপগ্রহ থেকে তোলা ছবিতে ধরা পড়ে না। কিন্তু এই সামান্য গ্যাস নিঃসরণই আগ্নেয়গিরির প্রথম বিস্ফোরণ সতর্কতা হতে পারে।’
তাই বিজ্ঞানীরা এখন এমন একটি উপায় খুঁজছেন, যার মাধ্যমে কার্বন ডাইঅক্সাইড সরাসরি না মাপলেও এর প্রভাব বোঝা যাবে। এই প্রেক্ষাপটে গাছপালার পাতার রং একটি কার্যকর বিকল্প সূচক হয়ে উঠছে।
নাসা এমস রিসার্চ সেন্টারের প্রধান আগ্নেয়গিরি বিজ্ঞানী ফ্লোরিয়ান শোয়ান্ডনার বলেন, ‘আমরা চাই আগ্নেয়গিরি-সতর্কতামূলক ব্যবস্থা আরও নিখুঁত হোক।’ ২০২৪ সালে প্রকাশিত রিমোট সেনসিং অব এনভায়রনমেন্ট জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, ইতালির মাউন্ট এটনা আগ্নেয়গিরির আশেপাশের গাছের রং এবং কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণের মধ্যে স্পষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত উপগ্রহ ল্যানডস্যাট ৮ এবং অন্যান্য পৃথিবী পর্যবেক্ষণকারী উপগ্রহের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৬টি ক্ষেত্রে গাছের সবুজভাব ও CO₂ নিঃসরণ একসঙ্গে বেড়েছে, যা ছিল ভূগর্ভস্থ ম্যাগমার ওপরের দিকে আসার ইঙ্গিত।
এই গবেষণার প্রধান লেখক ও হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরাল ছাত্র নিকোল গুইন বলেন, ‘গাছের এই প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া নির্ভরযোগ্যভাবে আগ্নেয়গিরির অবস্থান বোঝাতে পারে।’
তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, এই পদ্ধতি সব আগ্নেয়গিরির ক্ষেত্রে কার্যকর নয়। অনেক আগ্নেয়গিরির আশপাশে গাছপালা থাকে না কিংবা যথেষ্টসংখ্যক গাছ নেই যা স্যাটেলাইটে পরিষ্কার দেখা যাবে। এছাড়া আগুন, রোগ কিংবা আবহাওয়ার কারণে গাছের রঙ স্বাভাবিক নিয়মে পরিবর্তিত হলেও বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে।
এই পদ্ধতির কার্যকারিতা আরও ভালোভাবে যাচাই করার জন্য নাসা এবং স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিনের নেতৃত্বে একটি নতুন প্রকল্প শুরু হয়েছে। যার নাম এয়ারবর্ন ভ্যালিডেশন ইউনিফাইড এক্সপেরিমেন্ট: ল্যান্ড টু ওশান(AVUELO)। এর লক্ষ্য হলো স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে মাটিতে পাওয়া পর্যবেক্ষণ মিলিয়ে দেখা এবং স্যাটেলাইট যন্ত্রগুলোর ক্যালিব্রেশন বা মেপে নেওয়া আরও নিখুঁত করা।
আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণের আগাম সতর্কতা নিশ্চিত করার জন্য এই নতুন উপায় সবকিছু বদলে দিতে পারে। যদিও এটি কোনও সেরা বা একমাত্র সমাধান না। তবে এটি বিজ্ঞানীদের হাতে আরও একটি শক্তিশালী টুল তুলে দিচ্ছে। গাছের পাতার রং পর্যবেক্ষণ করে আগ্নেয়গিরির গতিবিধি আগেভাগে বুঝে নেওয়া গেলে হাজারও মানুষের জীবন রক্ষা পেতে পারে।