অকাল মৃত্যুর জন্য দায়ী ধূমপান

অলংকরণ: জুনায়েদ

আমি নাজিব। এমন এক পরিবারে আমার জন্ম, যেখানে সব পুরুষ সদস্যই ছিলেন ধূমপায়ী। তাঁদের দেখে মনে হতো ধূমপান যেন পৌরুষত্বের প্রতীক। সিগারেটের ধোঁয়ায় আমার শ্বাসকষ্ট হয় অথচ অবাক হয়ে দেখতাম, আমার দাদা, বাবা আর চাচা কী আয়েশ করেই না সিগারেট টানছেন। যেন সিগারেটের প্রতি টানে তাঁদের সব ক্লান্তি ও কষ্ট দূর হয়ে যাচ্ছে। মা খুব বিরক্ত হতেন। বলতেন, দেখো, তারা সিগারেট টানছে না বরং সিগারেটই তাদের টেনে গিলে ফেলছে। এই হলো নেশা, যা ইচ্ছাশক্তি আর স্বাধীনতা গিলে ফেলে। মায়ের কথাগুলো সত্যিই খাঁটি।

আমার খালু বছর তিনেক আগে মারা গেলেন ফুসফুস নষ্ট হয়ে। তার অকালমৃত্যুর জন্য দায়ী ধূমপান। অকালে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে তাঁকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। সুবাত ভাইয়া তার বাবাকে হারিয়ে, খালামণি তার স্বামীকে হারিয়ে আজ অসহায়। খালুর মৃত্যুর কয়েক বছর আগে ডাক্তার বলেছিলেন, উনি সিগারেট না ছাড়লে তাঁর ফুসফুস অকার্যকর হয়ে যাবে। শেষ দিকে খালু শুধু কাশতেন, শ্বাস নিতেও কষ্ট হতো। তারপরও লুকিয়ে সিগারেট খেতেন। তাঁকে মরণ নেশা ছোবল মারত। তিনি বাধ্য হতেন সিগারেট খেতে! তাঁর আদরের ছেলে, এত সুখের সংসার সব নেশার কাছে ফেলনা মনে হতো।

সেই থেকে পণ করেছি ধূমপান করব না। খালুর শেষ দিনগুলোর কথা মনে হলে গায়ে কাঁটা দেয়। এরপর ইন্টারনেটে ও পত্রপত্রিকায় ধূমপানের কুফল দেখলাম, পড়লাম। শিউরে উঠলাম আতঙ্কে। তাহলে এত মানুষ, কিশোর, যুবক কেন এই আত্মঘাতী হচ্ছে?

তখন থেকে আমার পরিবারে ধূমপান প্রতিরোধের এক দুর্গ হয়ে দাঁড়ালাম আমি। দাদা, চাচা, বাবাকে বোঝাতে শুরু করলাম। তাঁরা যে ধূমপানের এসব কুফল জানেন না তা নয়। কিন্তু নেশা ধূমপায়ীকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখে। সেখান থেকে বের হতে অনেক মানসিক জোর প্রয়োজন। আমি তাঁদের মানসিক জোর হয়ে দাঁড়ালাম। আমার ভালোবাসা, প্রচেষ্টা আর প্রতিরোধের তীব্রতার কাছে হার মানল তাঁদের ধূমপানের নেশা। আজ ধূমপান থেকে বাবা, চাচা, দাদা মুক্ত।

সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ কিনা সামান্য এক নেশার কাছে হার মানবে! কখনো নয়। অন্যরা যতই লোভ দেখাক, আমি তো জানি কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ। যদি নিজের প্রতি, পরিবার, সমাজ ও দেশের প্রতি সামান্য ভালোবাসাও থাকে তাহলে আমি কখনো ধূমপানের মতো বিষপান করতে পারি না। ধূমপান মাদকাসক্তির প্রথম ধাপ। তাই ধূমপান থেকে দূরে থাকতে কখনো অন্য মাদকের ওপরও আসক্ত হব না।