অদ্ভুত জুতাচোর!

অনেকে নিজের প্রিয় জুতার শোকে শহরজুড়ে লাগিয়েছেন হারানো বিজ্ঞপ্তি।
অনেকে নিজের প্রিয় জুতার শোকে শহরজুড়ে লাগিয়েছেন হারানো বিজ্ঞপ্তি।
ছবি: ফেলিক্স হ্যাকেনব্রাখের টুইটার থেকে

কিছুদিন হলো শহরের বাসিন্দারা অদ্ভুত এক সমস্যায় পড়েছেন। নিয়মিত চুরি যাচ্ছে তাঁদের জুতা। কখনো এক পাটি, কখনো পুরো জোড়া। আবার অনেক ক্ষেত্রে এক পাটি চুরি যাওয়ার সাত দিন পর আরেক পাটি। চোর স্যান্ডেল, শু, কেডস, এমনকি, ছোটদের জুতাগুলোও ছাড়ছে না। শহরের মানুষের পায়ের জুতা রীতিমতো হুমকির মুখে। অনেকে নিজের প্রিয় জুতার শোকে শহরজুড়ে লাগিয়েছেন হারানো বিজ্ঞপ্তি। চারদিকে ফিসফিস করে সবাই শুধু এক প্রশ্নই করে যাচ্ছে, ‘কে করছে এই কাজ?’

কয়েক দিনের জন্য এই প্রশ্নের উত্তরটা জার্মানির জিলেনডর্ফ শহরের বাসিন্দাদের কাছে এক রহস্যই রয়ে গেল। কিন্তু হঠাৎ একদিন স্থানীয় বাসিন্দা ক্রিস্টিয়ান মায়ারের ক্যামেরায় হাতেনাতে ধরা পড়ল বহু আকাঙ্ক্ষিত সেই আসামি। সঙ্গে প্রমাণ হিসেবে তার মুখে ধরা ছিল এক পাটি জুতা। তবে সবচেয়ে বড় ধাক্কা এখনো বাকি, এত দিন ধরে ত্রাস ছড়িয়ে বেড়ানো রহস্যময় জুতাপ্রেমী সেই চোর কোনো মানুষ নয়, বরং মাঝবয়সী এক শিয়াল!

হাতেনাতে ধরা পড়লেন শিয়াল মশাই।
হাতেনাতে ধরা পড়লেন শিয়াল মশাই।
ছবি: ফেলিক্স হ্যাকেনব্রাখের টুইটার থেকে

ব্যস! আর যায় কোথায়। পিছু নেওয়া হলো শিয়াল মশাইয়ের এবং খোঁজ মিলল প্রায় ১০০ পাটি জুতার। একরকম জুতার খনিই বলা চলে।

শহরজুড়ে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়ে গেল। ধরা পড়ে কাঁচুমাচু মুখ করে দ্রুত সটকে পড়ল শিয়াল মশাই। আর বাসিন্দারা খুঁজতে শুরু করলেন তাঁদের জুতা। বেশির ভাগ পেয়েও গেলেন নিজের হারানো জোড়া বা পাটি। অনেকে তো জুতা পেয়ে আনন্দে দিশেহারা। ফিরে পাওয়া জুতা হাতে ছবিও তুললেন কেউ কেউ। তবে দুঃখের বিষয় হলো, জুতাচোরের আবিষ্কারক ক্রিস্টিয়ান মায়ার বহু পরিশ্রমের পরও নিজের জুতা জোড়া খুঁজে পাননি।

উদ্ধার হওয়া জুতার খনি।
উদ্ধার হওয়া জুতার খনি।
ছবি: ফেলিক্স হ্যাকেনব্রাখের টুইটার থেকে

তাও অবশ্য রাগ করা গেল না শিয়ালের ওপর। বর্তমান পৃথিবীর এই অস্থির সময়ে বিষয়টা রীতিমতো এক উৎসবের মতো ছিল বার্লিনের জিলেনডর্ফবাসীদের জন্য। তাই শিয়ালকে দোষ না দিয়ে ব্যাপারটা উপভোগ করছিল তারা। তা ছাড়া মুরগিচোর শিয়াল যে হুট করে জুতার দিকে ঝুঁকবে, তা কে জানত? হন্যে হয়ে চোর খুঁজতে থাকা পুলিশও এই কাণ্ড দেখে না হেসে পারল না। অদ্ভুত এক ইতিহাসই হয়ে গেল জার্মানির এই ছোট্ট শহরে।

প্রশ্ন আরেকটা কিন্তু রয়েই গেল, বিচিত্র এই কাণ্ডের রহস্য কী? মুরগি বাদ দিয়ে হঠাৎ জুতায় চোখ দিল কেন এই শিয়াল?

অদ্ভুত শোনালেও সত্যি, জুতা আর শিয়ালের মধ্যে অজানা এক সম্পর্ক আছে। ইদানীং জুতা সংগ্রহে রাখা শখ হয়ে দাঁড়িয়েছে শিয়ালদের জন্য। শুধু জার্মানি নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই দেখা গেছে, জুতা চুরি করে নিজের সংগ্রহে রাখছে তারা। এই রহস্যের বৈজ্ঞানিক উত্তর অবশ্য জানা নেই কারও। কে জানে হয়তো এটা শিয়ালদের নতুন কোনো ‘ট্রেন্ড’।

সব কথার শেষ কথা, আমাদের দেশের শিয়ালরা কবে এই কীর্তি শুরু করে বলা তো যায় না, তাই নিজের জুতা জোড়া সামলে রেখো নিজ দায়িত্বে।

তথ্যসূত্র: বোরডপান্ডা