অনবদ্য এক বেকারের গল্প

তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলছে। চারদিকে খাবারের সংকট, সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক মন্দা তো আছেই। সে সময় একধরনের কেক বানাতে শুরু করল লোকে। দুধ, ডিম বা ঘি ছাড়াই অল্প কিছু উপাদান দিয়ে বানানো যায়। কম পয়সায় বানানো জিনিস, কিন্তু খেতে ভালো, আবার পেটও ভরে। সেই বিখ্যাত কেকের নাম হলো ‘ডিপ্রেশন কেক’ বা ‘ওয়্যার কেক’। মানুষ কখনো কখনো প্রয়োজনে আবিষ্কার করে, কখনো আবার ভুল করে। এই যেমন ধরো, ‘চকলেট চিপ কুকিজ’। খেতে খেতে নিশ্চয় অনেকেরই মনে হয়, এমন সুস্বাদু জিনিস যিনি আবিষ্কার করেছেন, তাঁকে বাংলায় একবার ‘ধন্যবাদ’ এবং ইংরেজিতে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ বলা দরকার। এর আবিষ্কারের গল্পটাও মজার। রুথ ওয়েকফিল্ড আর তাঁর বরের একটা সরাইখানা ছিল। অতিথিদের মজার মজার খাবার নিজেই তৈরি করে দিতেন রুথ। একবার চকলেট কুকি বানাবেন, চকলেট কুচি করে দিলেন ময়দার ডোতে। বেক করার পর দেখলেন, কুকিতে চকলেট গলে যায়নি, রয়ে গেছে আস্তই। আর সেটাই তিনি পরবর্তী সময়ে চকলেট চিপ কুকিজ হিসেবে বিক্রি করতে শুরু করেন এবং তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।

বেকিং নিয়ে এত কথা বলছি, আমালের গল্পটা বলার জন্য। আমাল হলো ১৫ বছর বয়সী ব্রিটিশ বাংলাদেশি, যে থাকে সুদূর ইংল্যান্ডে। ২০১৯ সালে সে অংশ নেয় ‘জুনিয়র বেক অব’ নামের এক প্রতিযোগিতায়। চার হাজার বেকারের অংশ নেওয়া এই প্রতিযোগিতায় আমাল চলে আসে শীর্ষ চারে। কঠিন কঠিন সব ধাপ পার হয়ে তাকে আসতে হয়েছিল এখানে। একটি ধাপের কথাই বলি, বিখ্যাত কোনো জায়গা নিয়ে বিস্কুট বানাতে হবে। আমাল বেছে নিল আইফেল টাওয়ারকে। কিন্তু সময় শেষ হওয়ার আগেই ভেঙে পড়ল সেটি। আমাল কিন্তু ঘাবড়ে গেল না, ওই কম সময়ের মধ্যেই সে আবার তৈরি করে ফেলল টাওয়ারটি। কারণ, আমাল মনে করে, বড়রা অনেক কিছুকেই অসম্ভব ভাবে। কিন্তু ছোটরা জানে, বিশ্বাস থাকলে সবই সম্ভব।

আমাল হলো ১৫ বছর বয়সী ব্রিটিশ বাংলাদেশি, যে থাকে সুদূর ইংল্যান্ডে। ২০১৯ সালে সে অংশ নেয় ‘জুনিয়র বেক অব’ নামের এক প্রতিযোগিতায়। চার হাজার বেকারের অংশ নেওয়া এই প্রতিযোগিতায় আমাল চলে আসে শীর্ষ চারে।

একটু আগেই বলছিলাম, মানুষ নানান কারণে নিত্যনতুন আবিষ্কার করে। আমালের বেকিংয়ের প্রতি আগ্রহটা সে আবিষ্কার করে খুব ছোটবেলা থেকেই। রান্নার অনুষ্ঠানগুলো ছিল তার সবচেয়ে প্রিয়। সেটা দেখতে দেখতেই তার মনে হয়, নিজের কল্পনাশক্তি কাজে লাগিয়ে অনেক রকম কেক বানানো যায়। যেই ভাবা সেই কাজ। বেকিং করতে করতেই একসময় সে কেক বানানোতে অনন্য হয়ে ওঠে। কেক বানিয়ে দিয়ে উপার্জনও করে এই বেকার। অতি সম্প্রতি আমাল বিদেশের একটি বেকিং কোম্পানির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরও নির্বাচিত হয়েছে।

রান্না নিয়ে সৈয়দ মুজতবা আলীর একটা সরস পরামর্শের কথা বলি। ‘রান্না না জানলে বেশি করে ঝাল দিয়ে দিন। যিনি খাবেন “একটু ঝাল বেশি হয়েছে” ছাড়া আর কোনো বদনাম করতে পারবেন না।’ কিন্তু কেকের ক্ষেত্রে তো আর ঝাল দেওয়া সম্ভব নয়। তাই আমালের ইউটিউব চ্যানেল থেকে কেক বানানো এবং বেকিং শিখে নিতে পারো চাইলে। আমাল চায়, ওর বয়সীরা রান্না ও বেকিংয়ের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ হোক। নতুন কিছু শেখার পাশাপাশি প্রিয় মানুষদের নিজ হাতে বানিয়ে খাওয়ালে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তার জুড়ি নেই, এমনটাই মনে করে আমাল।