বিশ শতকের শুরু থেকেই উপমহাদেশে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ক্রমে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বিশেষ করে তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। তাঁদের চিন্তাচেতনার অনেকটা জুড়ে স্বাধীনতা। ব্রিটিশ সরকারও তাই নিজেদের সাম্রাজ্য রক্ষার্থে নানা কৌশলে উৎপীড়ন আর নির্যাতন বাড়িয়ে দেয়। ব্রিটিশ রাজত্বের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের কর্মকাণ্ড করে ধরা পড়লে হয় ফাঁসি, নয় জেল বা দ্বীপান্তর। বাঙালি ননী গোপাল বসুরও তাই এই তিন পরিণতির একটা কপালে ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এই স্বাধীনতাসংগ্রামী চলে গেলেন জেলে। যুদ্ধের ডামাডোলে অবশ্য তাঁর দ্বীপান্তর হলো না। এমনকি সৌভাগ্যবশত, ১৯২০ সালে তিনি জেল থেকে ছাড়াও পেয়ে গেলেন। পরিবার আর বন্ধুদের চাপে, জীবনের স্রোত এড়াতে ননী গোপাল চলে গেলেন একেবারেই আমেরিকায়।
পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়া শহরে গিয়ে শুরু করলেন নতুন জীবন। সেখানে তিনি জীবিকার জন্য ভারত থেকে নারকেলের ছোবড়া আমদানির ব্যবসায় মন দিলেন। সেখানে পরিচয় হলো স্কুলশিক্ষিকা শার্লোট্রির সঙ্গে। পরিচয় প্রণয় হয়ে রূপ নিল বিবাহে। ১৯২৬ সালের নভেম্বরের ২ তারিখে ননী শার্লোট্রির ঘরে জন্ম নিলেন অমর।
ছোটবেলা থেকেই অমর খুব কৌতূহলী এবং যেকোনো বিষয়ের গভীরে ঢোকার একটা সহজাত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। ১৩ বছর বয়সে এবিংটন সিনিয়র হাইস্কুলে পড়ার সময় অমর আর কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে একটি ‘হোম সার্ভিস’ দল গঠন করেন। তাঁদের কাজ ছিল বাসায় বাসায় গিয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়া রেডিও ও খেলনা ট্রেন ঠিক করা। তবে বিনা মূল্যে নয়। টাকা নিয়েই। আর এ করতে করতে অমর ইলেকট্রনিকস নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসেন।
এর কিছুদিন পরই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে অমরের বাবার ব্যবসা একটি বড় ধরনের ধাক্কা খায়। কারণ, বিশ্বব্যাপী জাহাজে করে বেসামরিক পণ্যের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অমরদের পরিবার কঠিন অর্থাভাবে পড়ে যায়।
তখন অমর তাঁর বাবাকে পরামর্শ দেন তিনি যেন বিভিন্ন দোকানে ‘এখানে নষ্ট রেডিও মেরামত করা হয়’ এই রকম একটি কাগজ ঝুলিয়ে দিয়ে আসেন। ননী গোপাল ছেলের ইলেকট্রনিকসের ক্যারিশমা জানতেন। দিনভর বাবা ননী গোপাল দোকান থেকে দোকানে ঘুরে নষ্ট রেডিও জোগাড় করে আনতেন। স্কুল থেকে এসে বাসার বেসমেন্টে বসে সেগুলো সারাই করতেন অমর বসু।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রায় অনেকটা সময় অমরের এই আয় তাঁদের পারিবারিক পতন রোধ করতে সহায়তা করে। যুদ্ধের পর পর অমর রেডার টিউপ আর একটি ট্রান্সফরমার দিয়ে একটি টেলিভিশনও বানিয়ে ফেলেন।
ছেলের এসব প্রকৌশল-ব্যু্ৎপত্তি দেখে ননী গোপাল বসু অমরকে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে উন্নত প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য মনস্থির করেন। ১৯৪৭ সালে অমর বসু ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) ছেলেকে ভর্তি করানোর জন্য ১০ হাজার ডলার ঋণ করেন।
এমআইটির ছাত্রজীবন
এমআইটিতে পড়তে এসে অমর কয়েকটি বিষয় লক্ষ করেন। প্রথমত হাতে-কলমে ইলেকট্রনিকসের অন্ধিসন্ধি জানলেও তিনি ‘ক্যালকুলাসে’ খুবই কাঁচা আর ক্যালকুলাস ছাড়া প্রকৌশলবিদ্যা পড়াটা খুবই কঠিন। কাজেই নিজের গণিতজ্ঞানকে উন্নত করার জন্য তাঁকে অনেক কসরত করতে হবে। দ্বিতীয়ত এমআইটির পড়াশোনা জানি ‘কেমন’, এখানে সবাই গবেষণা, পেপার লেখা এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। প্রফেসররা ক্লাসে যা-ই পড়ান না কেন, গল্পে, আড্ডায়, আলাপচারিতায় নিজেদের ধ্যানধারণা কাজের বিষয়কে তুলে ধরতে পছন্দ করেন। ফলে জ্ঞানপিপাসু, কর্মপাগল এই বাঙালি বংশোদ্ভূত আমেরিকান যুবক অচিরেই এমআইটিতে ভালো ছাত্র হয়ে ওঠেন। এমআইটি থেকে তড়িৎ প্রকৌশলে ব্যাচেলর ডিগ্রি করে অমর পাড়ি জমান নেদারল্যান্ডসে, ফিলিপস ইলেকট্রনিকসে কাজ করার জন্য। তারপর সেখান থেকে কিছুদিন পর ভারতের নয়াদিল্লিতে যান। ফুলব্রাইট বৃত্তি নিয়ে এই ঘোরাঘুরির সময় অমরের পরিচয় হয় ভারতীয় মেয়ে প্রিমা বসুর সঙ্গে। পরে অমর প্রিমাকে বিয়ে করেন। ফুলব্রাইট বৃত্তির কাজ শেষে অমর আবার এমআইটিতে ফেরত যান। এবারের লক্ষ্য পিএইচডি। বিখ্যাত বিজ্ঞানী নরবার্ট ওয়েনার এবং ওয়াইকে উং লির তত্ত্বাবধানে অমর কাজ করেন নন-লিনিয়ার সিস্টেম নিয়ে। সে যাত্রায় অমর নয় বছর পর এমআইটিতে তাঁর পড়ালেখার পাট চুকান।
মাস্টারি, সে আমার কাজ নয়
২০০৪ সালে জনপ্রিয় পত্রিকা পপুলার সায়েন্স-এ এক সাক্ষাৎকারে অমর বসু বলেছিলেন, শিক্ষকতা করার বিন্দুমাত্র অভিপ্রায়ও তাঁর মনে ছিল না। কিন্তু পিএইচডি শেষে এমআইটি যখন তাঁকে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিতে বলে, তখন তিনি সঙ্গে সঙ্গে সেটি গ্রহণ করেন। কারণ, তত দিনে তিনি জেনে গেছেন ‘এমআইটির শিক্ষকতা অন্য জায়গার মতো নয়।’
২০০১ সাল পর্যন্ত অমর বসু এমআইটিতে অধ্যাপনা করেছেন। এই দীর্ঘ সময়ে পড়ানোর একটা নতুন পদ্ধতিই তিনি বের করে ফেলেছিলেন। ‘আমি শিক্ষার্থীদের ফর্মুলা শেখাতে চাইনি’ সাক্ষাৎকারে অমর বলেন, ‘বরং শেখাতে চেয়েছি কেমন করে চিন্তা করতে হয়।’ তিনি তাঁর জন্য নির্ধারিত সিলেবাস অনুসরণ করতেন না। বরং তাঁর ক্লাসগুলো হয়ে উঠত সমস্যা-সমাধানের অনন্য আয়োজন। তিনি প্রায়ই তাঁর ক্লাসরুমে আট-নয়টা ব্ল্যাকবোর্ড নিয়ে আসতেন। সঙ্গে থাকত একদল শিক্ষক এবং একদল শিক্ষা-সহকারী। নানা দিক থেকে তিনি শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের বুদ্ধি এবং বুদ্ধি বের করার চিন্তার ব্যাপারটা ধরিয়ে দিতেন। তিনি মনে করতেন, আগামী দিনগুলোতে জানা বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার চেয়ে ভবিষ্যতের সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি বের করাটা হবে জরুরি।
কিছুদিনের মধ্যে তাঁর ক্লাসে প্রকৌশলের শিক্ষার্থী ছাড়াও অন্যান্য বিভাগ থেকে শিক্ষার্থী, গবেষক, এমনকি শিক্ষকেরাও যোগ দিতে শুরু করেন। বর্তমানে জন হপকিনস ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম আর ব্রডি ১৯৬২ সালে এমআইটিতে অমর বসুর ক্লাস করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘স্যার কমপক্ষে ৩৫০ জনের একটি ক্লাসে হেঁটে হেঁটে পড়াতেন এবং কী আশ্চর্য পুরো ক্লাসে থাকত পিনপতন নীরবতা। অমর বোসের কাছ থেকে আমি শিখেছি কীভাবে চিন্তা করতে হয়।’
প্রচলিত পরীক্ষাপদ্ধতিও পাল্টে ফেলেছেন তিনি। তাঁর কোর্সের পরীক্ষাগুলো শুরু হতো সন্ধ্যা সাতটায়। তারপর শিক্ষার্থীরা যতক্ষণ খুশি পরীক্ষা দিতে পারতেন। কোনো কোনো দিন ভোর পাঁচটার দিকেও শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে দেখা যেত। অমর বসু মাঝখানে এসে শিক্ষার্থীদের আইসক্রিম খাইয়ে যেতেন।
শব্দকল্পদ্রুম
ছোটবেলা থেকে ধ্রুপদিসংগীত শোনার প্রতি আকর্ষণ ছিল অমরের। ছাত্রাবস্থায় প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে দুই ঘণ্টা ধ্রুপদিসংগীত শোনা হতো। শিক্ষক হওয়ার পর একদিন এক ছাত্র তাঁকে বাজারের সবচেয়ে ভালো স্পিকারটি উপহার দেন। কিন্তু শুনতে গিয়ে তিনি টের পান সামনাসামনি গান শোনার যে আনন্দ, তা মোটেই পাওয়া যাচ্ছে না। ভাবলেন ব্যাপারটা তলিয়ে দেখা যাক। ডুব দিলেন শব্দবিজ্ঞানে। বিশেষ করে শব্দের প্রতিলিপি তৈরি করতে।
এই কাজ করতে গিয়ে তিনি দেখলেন শব্দের পুনরুৎপাদনে কেবল প্রযুক্তিই একমাত্র সমাধান নয়। বরং এখানে শব্দ নিয়ে শ্রোতার ধারণাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। সেই থেকে শব্দবিজ্ঞানের নতুন একটি শাখা মনো-শব্দবিজ্ঞান (Pshyco-accurtics) চালু হয়ে যায়। অমর বসু খেয়াল করলেন বড় বড় হলঘরে একজন শ্রোতা মঞ্চের যে শব্দটি শুনতে পান তার ২০ শতাংশ মাত্র তিনি সরাসরি শোনেন। বাকি ৮০ শতাংশই বিভিন্ন স্থানে ধাক্কা-ধুক্কা খেয়ে শ্রোতার কানে পৌঁছে। এ কারণে যখন কোনো স্পিকার সরাসরি শব্দ শ্রোতার কানে পৌঁছে দেয়, তখন সেটি হলঘরের আবেদন শ্রোতার কানে পৌঁছাতে পারে না। অমর বসু ভাবলেন, তিনি নিজেই স্পিকার বানাবেন।
সে সময় ১৯৬২ সালে, তাঁর পিএইচডি গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক উং লি তাঁকে একটি কোম্পানি গঠন করার পরামর্শ দেন। লি বলেন, তুমি শব্দ নিয়ে যে কাজ করেছ, সেটির বাণিজ্যিক মূল্য অনেক। তুমি সেটা কাজে লাগাও।
১৯৬৪ সালে অমর বসু প্রতিষ্ঠা করেন বোস করপোরেশন (Bose Corporation)। উদ্দেশ্য নিজের মনমতো স্পিকার বানানো।
বাজারের সবচেয়ে দামি স্পিকারের ওপর রাগ করার ১২ বছর পর তিনি একটি নতুন স্পিকার বানালেন। স্পিকারটি আসলে অনেকগুলো ছোট ছোট স্পিকারের সমষ্টি। ফলে শেষ পর্যন্ত শব্দ বের হয়ে আসার আগে অনেক ধাক্কা-গুঁতো খেতে পারে। উফারস আর টুইটারস ছাড়াও দিয়ে দিলেন একটি সক্রিয় ইকোয়ালাইজার। ফল হলো ঘরের দুই কোনায় দুটি স্পিকার বসিয়ে দিলে কনসার্ট হলের মতোই আমেজ পাওয়া গেল।
তাঁর এ উদ্ভাবন রাতারাতি বোস করপোরেশনকে বড়লোক বানিয়ে দিল। সেই থেকে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরতম ও শ্রেষ্ঠ স্পিকার সিস্টেমগুলো তাঁর প্রতিষ্ঠানই তৈরি করে।
এ সময় অনেকের পরামর্শ ছিল বসু যেন তাঁর কোম্পানিকে পাবলিক কোম্পানি করে। কিন্তু তিনি তা করেননি। কারণ, কেবল টাকা বানানোটা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না। তিনি চেয়েছেন তাঁর প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মজাদার কিছু করবেন।
বোস করপোরেশনের স্লোগান হচ্ছে ‘গবেষণার মাধ্যমে উন্নত শব্দ।’ কোনো কোনো গবেষণায় প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ সময় ও বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে।
১৯৮৩ সালে তাঁর একজন ছাত্র কেন জ্যাকব একটি অভিনব ধারণা নিয়ে তাঁর কাছে আসেন। জ্যাকব এমন একটি সফটওয়্যার তৈরি করার ইচ্ছা পোষণ করেন, যা দিয়ে শ্রোতা কোনো হলঘরের সারি-কলামের শব্দ কেমন শুনতে পাবেন, তা সিমুলেট করা যাবে। ১৩ বছর পর বোস করপোরেশন সেই সফটওয়্যার টুলটি বাজারজাত করে বোস অডিশনার প্রোগ্রাম নামে। এই সফটওয়্যার দিয়ে এখন বিশ্বের বড় বড় পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমগুলো ডিজাইন করা হচ্ছে। এরই কয়েকটি হচ্ছে আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের স্টেপলস সেন্টার, ভ্যাটিকান সিটির সিসটিন চ্যাপেল এবং সৌদি আরবের মক্কা নগরের মসজিদ-আল-হারাম।
তবে কেবল কনসার্ট বা বড় বড় অনুষ্ঠানস্থল নয়। অমর বসু খুবই ছোট এবং একক ব্যক্তিও যেন শব্দ-সুধা পান করতে পারে সে ব্যাপারেও সক্রিয় ছিলেন। বিমানের যাত্রীরা যে হেডফোন ব্যবহার করতেন, সেটি বিমানের নিজস্ব শব্দকে (ইঞ্জিন, এসির ইত্যাদি) নাকচ করতে পারত না। ফলে বিমানযাত্রীদের একধরনের হতাশা ছিল। বোস করপোরেশনের বানানো বিশেষ ধরনের হেডফোন উৎস-শব্দ ছাড়া বাকি সব শব্দকে নাকচ করে ফেলে। কাজেই বিমানের ভেতরে গান শোনা বা সিনেমা দেখা হয়ে উঠেছে আকর্ষণীয়।
১৯৮০ সালের আগে গাড়িতে গান শোনা আর কানের কাছে চিৎকার শোনার মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল না। সেই বছরে জেনারেল মোটরের সঙ্গে চুক্তি করেন অমর বসু এবং তার পর থেকে গাড়িতে গান শোনার ব্যাপারটিও ক্রমাগত বদলে গেছে।
কেবল শব্দ নয়
অমর বসুর মতো একজন প্রকৌশলী-বিজ্ঞানী কেবল একটি বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন, তা কখনো হয় না। ১৯৮০ সালে তিনি খেয়াল করলেন গাড়ি যখন হঠাৎ করে ব্রেক করে, তখনই একটা ঝাঁকুনি লাগে। গাড়ির শক এবজরভার মোলায়েম নয় বলে সেটা হয়। সেই ১৯৮০ সাল থেকে তিনি একটি মোটর ডিজাইনের কাজ করেছেন, যা মেকানিক্যাল শক এবজরভারকে প্রতিস্থাপন করবে। পরবর্তী ২৪ বছরে এই গবেষণায় বোস করপোরেশন ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন (১৭০ কোটি) ডলার খরচ করেছে। এখন চালু হয়েছে ‘বোস শক এবজরভার সিস্টেম’।
অমর বসুর ছেলে ভানু বসু এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তাঁর বাবা যেকোনো বিষয়ের গভীরে চলে যেতেন। একদিন বাপ-ব্যাটা গাড়ি করে যাওয়ার সময় গাড়ির ওয়াইপার ঠিকমতো কাজ করছিল না। কয়েক দিন পর বাবার টেবিলে ভানু নতুন ধরনের ওয়াইপারের ডিজাইন দেখতে পান।
অমর গোপাল বসু ব্যাডমিন্টন খেলতে ভালোবাসতেন। আর বাজাতেন বেহালা। বোস করপোরেশনকে একটি প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে রেখে দেন, কারণ তাতে অনেক স্বাধীনতা পাওয়া যায়। মৃত্যুর কয়েক বছর আগে তাঁর মালিকানা অংশের একটি অংশ তিনি এমআইটিকে দিয়ে দেন। তবে শর্ত থাকে, এমআইটি কেবল মুনাফা পাবে কিন্তু প্রশাসনিক বা কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
সারা বিশ্বেই এখন বোস করপোরেশনের অফিস ও বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। প্রায় সাড়ে নয় হাজার কর্মী সেখানে কাজ করেন।
আমৃত্যু নিজের প্রতিষ্ঠানের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তার কাজ করেছেন এই অতুল সম্পদের অধিকারী। ২০১১ সালে তাঁর সম্পদের পরিমাণ ছিল ১০০ কোটি ডলারের বেশি।
৮৩ বছর বয়সে গেল বছরের ১২ জুলাই শব্দ পুনরুৎপাদনের এই জাদুকর মারা যান। ভানু বসু ছাড়াও তাঁর মায়া বসু নামে একজন কন্যাসন্তান রয়েছে।