অ্যাকুয়াডগ

নিমো আর লিলার বেশ ভালোই বন্ধুত্ব। শুরুতে অবশ্য টম অ্যান্ড জেরির মতো দা-কুমড়ার সম্পর্ক ছিল। কিন্তু এখন ওরাই সবচেয়ে ভালো বন্ধু। প্রতিদিন একসঙ্গে সময় কাটাতে কাটাতে গল্প করে। তবে সবচেয়ে বেশি হাসি পায় নিজেদের পরিচয়ের ঘটনা মনে পড়লে। তোমাদের বলেই ফেলি তাহলে।

প্রতিদিনের মতো সেদিন সকালেও নিমো সমুদ্রে ঘুরছিল। ঘুরতে ঘুরতে একসময় হঠাৎ হারিয়ে গেল সে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও বাড়ি ফেরার রাস্তা চিনতে পারল না ঠিক এবং এরই কিছুক্ষণ পর সে নিজেকে আবিষ্কার করল একটা গোলাকার বস্তুর মধ্যে। ধারালো দাঁতের কালো রঙের কোনো প্রাণী তার দিকে এগিয়ে আসছে। আর কয়েক সেকেন্ড, এরপরই কামড় বসাবে।

কিন্তু না, তার গায়ে কোনো কামড় লাগল না। গোলাকার বস্তুটির মধ্যে লাফালাফি করতেই প্রাণীটি ছেড়ে দিল বস্তুটি। নিমো ভোঁ দৌড় দিয়ে পালাল। এরপর আর ভুলেও সে ওই দিকে যায়নি। তবে অতিরিক্ত কৌতূহল তাকে বেশি দিন আটকে রাখতে পারল না। সেই একই জায়গায় ফিরে গেল। পরিচয় হলো লিলার সঙ্গে, যাকে ভয়ংকর কোনো প্রাণী ভেবেছিল। গল্পের শুরুটা এখানেই।

ধীরে ধীরে লিলার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর নিমো জেনেছে এই বিশাল পৃথিবী সম্পর্কে। কুকুর যে মানুষের অনেক বড় বন্ধু, সেটাও সে শুনেছে লিলার মুখেই। লিলার মালিকের নাম অ্যালেক্স সুলজা (Alex Schulze); যে কিনা অ্যান্ড্রিউ কুপার নামের একজনের সঙ্গে মিলে ফোর ওশান (4ocean) নামে এক কোম্পানি চালায়। যারা সমুদ্র থেকে প্লাস্টিক সংগ্রহ করে। নিমো জানত না কোম্পানি কী। লিলা বুঝিয়ে দেয়।

নিমো এটাও জানত না এসব অদ্ভুত জিনিসকে প্লাস্টিক বলে। এগুলো যে ওদের কত সমস্যার সৃষ্টি করে! খাবারের সঙ্গে ভুলে খেয়ে ফেলে অনেক মাছ। আবার অনেকে তো জড়িয়ে যায় এগুলোতে। কেউ ছাড়াতে পারে না নিজেদের। কারণ ওদের তো হাত নেই। সাঁতার কাটার পাখা দিয়ে কি প্লাস্টিক থেকে নিজেকে ছাড়ানো সম্ভব! ও হ্যাঁ, লিলা সেদিন আসলে নিমোকে কামড় বসায়নি, প্লাস্টিকের বোতলে কামড় দিয়েছিল।

তোমাদের মনে হতেই পারে কোনো কুকুর পানির মধ্যে প্লাস্টিকের বোতল নিয়ে কী করছিল? লিলা আসলে প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করছিল। ব্যাপারটা নিমোর নিজেরও বিশ্বাস হয়নি প্রথমে। একটা কুকুর কীভাবে এ কাজ করবে! পুরো ব্যাপারটা লিলা যখন বুঝিয়ে বলেছে, তখন বেশ ভালোই লেগেছে ওর।

নির্দেশনা পেয়েই সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাজ শুরু করে দেয় লিলা

ফোর ওশানের কাজের পাশাপাশি লিলার মালিক অ্যালেক্সের মাথায় চলে আসে এক আইডিয়া। বাসার সুইমিং পুলে তৈরি করে ট্রেইনিং সেন্টার। পুলের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ময়লা, পুতুল বা প্লাস্টিক ফেলে লিলাকে দিতে থাকে নির্দেশনা। কীভাবে সমুদ্র থেকে প্লাস্টিক কুড়াতে হবে সেটা আরকি। বুদ্ধিমান কুকুরও তা শিখতে থাকে। নীল রঙের একটি জ্যাকেট জড়িয়ে লিলা প্রতিদিন প্লাস্টিক সংগ্রহ করে। বোট থেকে উঁচু উঁচু লাফ দিয়ে পানির ১৫ ফুট বা তারও গভীর পর্যন্ত গিয়ে মুখে করে নিয়ে আসে বিভিন্ন বোতল, পলিথিন বা প্লাস্টিকজাতীয় ময়লা। আর তারই পাশে পাশে ঘুরে বেড়ায় নিমো। লিলাকে সাহায্য করতে না পারলেও যথেষ্ট উৎসাহ দেয় সে।

এ রকম আরও অনেক গল্প করে ওরা। ফোর ওশান নাকি এখন পর্যন্ত তিন মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি বর্জ্য অপসারণ করেছে। নিমো তিন মিলিয়ন পাউন্ড কী বোঝে না। লিলা তাকে বুঝিয়ে বলে।

নিমো পৃথিবীর বোকা মানুষগুলোর কথা ভাবে। যারা দিনের পর দিন সমুদ্রকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নিমোদের বাঁচা, অবাধে চলাফেরাকে হুমকিস্বরূপ করে তুলেছে। কত সুন্দর সমুদ্রটাকে কত জঘন্য রূপ দিয়েছে। যারা এই কাজ করছে, তাদের তেমন চিন্তা নেই। কিন্তু একটা কুকুর কাজ করে যাচ্ছে নিজের সাধ্যমতো।

নিমোর মনে প্রশ্ন আসে, লিলার মতো প্রকৃতির বন্ধু মানুষও হবে না কেন?

সূত্র: ইনসাইডার