অ্যাডভেঞ্চারের সুইডেন

গ্রীষ্মের ছুটি কিংবা শীতকালীন ছুটির জন্য সবাই তীর্থের কাকের মতো চেয়ে থাকে। অপেক্ষায় থাকে কখন নোটিশ নিয়ে আসবেন স্কুল কর্মচারী। ছুটি পেলেই যেন মুক্তি। নানাবাড়ি, দাদাবাড়ি যাওয়ার হুল্লোড় পড়ে যায়। কিন্তু সেই ছুটিতে আসলে কী করো তোমরা?

সুইডেনের শিক্ষার্থীদের জন্যও এ ধরনের ছুটির ব্যবস্থা আছে। কিন্তু একটু ভিন্নভাবে। বার্ষিক এই ছুটির নাম ‘স্পর্টলভ’। শিক্ষার্থীদের ঐতিহ্যবাহী এই ছুটি দেওয়ার একমাত্র কারণ, তারা যেন বাসার বাইরে ঘুরতে পারে ও শীতকালীন খেলাধুলা সম্পর্কে জানতে পারে। শুধু যে তোমাদের বয়সী ছেলেমেয়েরা, তা নয়। পুরো বছর মিলিয়ে সুইডেনে পাঁচ সপ্তাহের ছুটি বরাদ্দ থাকে। অনেক মা–বাবা ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যোগ দেন, এমনকি মধ্যবয়সী নারী-পুরুষও অংশ নেন ঘরের বাইরের বিভিন্ন কার্যক্রমে।

স্পর্টলভ শুরুর গল্পটা কিন্তু বেশ মজার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সুইডেনের স্কুলগুলো বন্ধ রাখা হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের ব্যস্ত রাখার জন্য সুইডিশ সরকার বাড়ির বাইরে খেলাধুলাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালু করে। কিন্তু সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার পরও, অর্থাৎ যুদ্ধ শেষ হলেও তা চালু রাখা হয়। এটি আয়োজন করে সুইডেনের সবচেয়ে বড় অলাভজনক ক্রীড়া সংস্থা ‘সুইডিশ আউটডোর অ্যাসোসিয়েশন’।

১৮৯২ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে সংস্থাটি। আউটডোর অ্যাকটিভিটির জন্য সুইডেনের প্রাকৃতিক পরিবেশ বিখ্যাত। ঘন বন, পাহাড়-পর্বত, সাগর—কী নেই সুইডেনে! দেশের দুই–তৃতীয়াংশই বনভূমি, ৩০টি ন্যাশনাল পার্ক ও ৪ হাজারের বেশি প্রাকৃতিক পর্যটনকেন্দ্র আছে। এ ছাড়া ২ লাখ ৭০ হাজার দ্বীপ ও হাজার কিলোমিটারের মতো ‘বাইক পাথ’ রয়েছে।

সুইডেনের সংবিধানে অ্যালেম্যান্সর‌্যাটেন (Allemansrätten) বা সবার অধিকার নামক একটি বিষয় আছে। এর অধীন জনসাধারণের বিচরণের অধিকার বা রাইট অব পাবলিক অ্যাকসেস দ্বারা সুইডেনের প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষিত। সংবিধান অনুযায়ী, যেকোনো ব্যক্তির সরকারি বা বেসরকারি যেকোনো জায়গায় যাওয়ার অনুমতি আছে, যতক্ষণ না সে কাউকে বিরক্ত করে বা কোনো কিছু নষ্ট করে।

৩১৬টি স্থানীয় ক্লাব নিয়ে সুইডিশ আউটডোর অ্যাসোসিয়েশন গঠিত। প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকেরা সেখানে নানা রকম কার্যক্রম আয়োজন করে। প্রতিবছর সাত হাজার গাইড নিরাপদ, মজার ও শিক্ষণীয় অ্যাডভেঞ্চারের আয়োজন করে থাকে; প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের স্বাদ নিতে যেগুলোর জুড়ি নেই।

গণস্বাস্থ্য ও সামাজিক উন্নয়নই সুইডিশ আউটডোর অ্যাসোসিয়েশনের মূল লক্ষ্য। যেকোনো বয়সের মানুষই অংশ নিতে পারেন এসব অ্যাডভেঞ্চারে। প্রতিযোগিতা নয়, বরং ঘুরে ঘুরে এসব আয়োজন দেখাটাই অংশগ্রহণকারীদের মূল উদ্দেশ্য। হাইক, বাইক, ওয়াক, ক্লাইম্ব, স্কি আর স্কেট—সব ধরনের আয়োজন করা হয়ে থাকে এসবে। বলতে পারো, বংশপরম্পরায় চালু হয়ে আছে সুইডেনের অ্যাডভেঞ্চার যাত্রা!

তথ্যসূত্র ও ছবি: friluftsframjandet.se