আকাশ ছোঁয়ার গল্প

যখন ইনানি বিচ থেকে ফিরে আসছিলাম, তখন আমি প্রথমবার খেয়াল করলাম জিনিসটাকে। একজন মানুষ অনেক ওপর থেকে নিচে পড়ছে কিছু একটার সাহায্যে। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম ‘প্যারাশুটিং’ কিন্তু পরে আমি বুঝতে পারি ওটা ‘প্যারাসেইলিং’।

আম্মুকে অনেক কষ্ট করে রাজি করালাম। তারপর রওনা হলাম আমার জীবনের প্রথম অ্যাডভেঞ্চারের দিকে। কিছুক্ষণ হেঁটে যখন আমি জায়গামতো পৌঁছালাম, তখন দেখি আমার আগে আরও দুজন যাবে, এরপর আমি। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। জলদিই এসে পড়ল আমার পালা। কয়েকজন মিলে আমাকে লাইফ জ্যাকেটসহ আরও কিছু জিনিসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল, যেগুলোর নাম আমি জানি না। এরপর আমাকে কী যেন একটা রশি টান দিতে বলল, তখন বাঁশি বাজবে, আমি তখন এতই অস্থির হয়ে ছিলাম যে আমি স্থানীয় ভাষায় যা বলছিল তার একটা কথাও শুনলাম না। আর ওপরে ওঠানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলাম।

আস্তে আস্তে আমার পা মাটি থেকে ওপরে উঠতে শুরু করল। আমাকে অনেকে জিজ্ঞাসা করে যে আমার কি ওপরে উঠে ভয় লাগেনি? আমি বলি, ‘আমি ভয় পাওয়ার সময় পাইনি’। ওপরে উঠে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য দেখেছি। আকাশ, সমুদ্র, বালু ও কুয়াশার সুন্দর সম্পর্ক দেখেছি। তখন ছিল বিকেলের শেষের দিক এবং শীতকাল। আকাশভরা ছিল কুয়াশা, তার ভেতরে ছিল উজ্জ্বল সূর্য এবং নিচে ছিল বিশাল সমুদ্র, যা একপর্যায়ে গিয়ে আকাশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ফেলেছে। এ রকম সুন্দর দৃশ্যের কথা আমি আগে খালি কল্পনায় ভেবেছি। জানি না কতক্ষণ ছিলাম আমি ওপরে, কিন্তু দেখলাম আমাকে আস্তে আস্তে নিচে নামানো হচ্ছে আর মাটি থেকে আমি যখন প্রায় সত্তর-পঁচাত্তর ফুট ওপরে, তখন কে যেন বাঁশি বাজাল।

আর তখন মনে আসে, বাঁশি বাজালে আমার কিছু একটা করতে হবে। আর কিছু না বুঝেই আমি সেই ‘কিছু একটা’ খুঁজতে থাকি এদিক-সেদিক। ঠিক তখনই কেউ একজন মাইক্রোফোন দিয়ে বলে, ‘তোমার বাঁ পাশের হলুদ রশিটা টান দাও’, কিন্তু আমি আমার বাঁ পাশে কোনো হলুদ রশি খুঁজে পাই না। আমি এভাবেই আন্দাজে একটা রশি টান দিই এবং পুরো প্যারাসেল উইংটি হালকা একটু বাঁকা হয়ে যায়। সেই মুহূর্তে আমার একটু ভয় লাগে, হ্যাঁ, কিন্তু অবশেষে আমি হলুদ রশিটা পেয়েই যাই। তারপর আমাকে আস্তে আস্তে নিচে নামানো হয়। যখন নিচে নামায়, তখন আমার মোটেও নামতে ইচ্ছে হচ্ছিল না। কিন্তু যখন আবার মাটিতে পা পড়ে, তখন একটু শান্তিই লাগে।