আতশবাজি ও লেজার শোর রঙিন জগৎ

যেকোনো বড় অনুষ্ঠান ও উৎসবে নিয়মিতভাবে এখন আতশবাজি বা ফায়ারওয়ার্কসের রঙিন খেলা দেখা যায়। বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে তৈরি এই আতশবাজিগুলো মন কেড়ে নেয় সবার। এখন বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে আতশবাজিকে কেন্দ্র করেই আয়োজন করা হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতা। কিন্তু আতশবাজি ও লেজার কীভাবে কাজ করে?

আতশবাজি

আতশবাজি থেকে সাধারণত চার ধরনের এফেক্ট তৈরি করা হয়। এগুলো হলো শব্দ, আলো, ধোঁয়া ও ক্ষুদ্র ভাসমান কণা। আতশবাজিগুলো বিস্ফোরণের পর বিভিন্ন অংশে বিভক্ত হয়ে যায় এবং লাল, কমলা, হলুদ, সবুজ, নীল, রুপালি ইত্যাদি রঙের আলোর বিচ্ছুরণ সৃষ্টি করে। বিস্ফোরণের পর আলোক বিচ্ছুরণ কেমন হবে, সেটি নির্ভর করে কী ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে, তার ওপর। যেমন: কপার ব্যবহার করে নীল রং, ক্যালসিয়াম ব্যবহার করে কমলা রং ও লিথিয়াম ব্যবহার করে লাল রঙের আলো তৈরি করা হয়। আবার রুপালি ও সাদা রঙের আলোক স্ফুলিঙ্গ তৈরির জন্য অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া আরও বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থের সংমিশ্রণে বিভিন্ন ধরনের প্যাটার্ন তৈরি করা যায়।

আতশবাজি সর্বপ্রথম ব্যবহারের কথা জানা যায় সপ্তম শতকে, চীন দেশে। সেই সময় চীনের বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক উৎসবেএটি নিয়মিতভাবে ব্যবহার করা হতো। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য উত্সব হলো চীনের নববর্ষ, মধ্য শরৎ উৎসব ইত্যাদি। ধীরে ধীরে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এর ব্যবহার শুরু হয়। তবে এখন পর্যন্ত চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় আতশবাজি উৎপাদনকারী দেশ এবং সবচেয়ে বেশি আতশবাজি রপ্তানিও হয়ে থাকে এই চীন থেকেই।

আতশবাজি যে শুধু আনন্দ-উত্সবের জন্যই ব্যবহার করা হচ্ছে এমন নয়, একে কেন্দ্র করে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এখন নিয়মিতভাবে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে। যেমন: কানাডার মন্ট্রিলে অনুষ্ঠিত বার্ষিক আতশবাজি উত্সব অন্যতম শুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতা। আতশবাজি নিয়ে বেশ কিছু বিশ্বরেকর্ড রয়েছে। যেমন ২০১২ সালে কুয়েতের সংবিধানের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আতশবাজির প্রদর্শন করা হয়। এই সময় ৭৭ হাজার ২৮২টি আতশবাজি ব্যবহার করা হয়।

বিভিন্ন ধরনের আতশবাজির মধ্যে একটি হলো ‘ওয়াটারফল’। এটি সাধারণত উঁচু স্থান থেকে দেখানো হয়ে থাকে এবং এটি দেখতে অনেকটা ঝরনার মতো। সেই থেকেই এর নামকরণ। আর ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আতশবাজি প্রদর্শন করা হয়েছিল ২০১০ সালে ফিলিপাইনে। পাইরকস ইন্টারন্যাশনালের আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ৩০ সেকেন্ডে এক লাখ ২৫ হাজার ৮০১টি আতশবাজি ব্যবহার করা হয়েছিল।

প্রচলিত সাংস্কৃতিক উৎসব ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের বার্ষিক উৎসবে বিশ্বের বহু দেশে আতশবাজি ব্যবহার করা হয়। যেমন: ইংরেজি নববর্ষ, হ্যালোইন ইত্যাদি। এ ছাড়া সব সময়ই অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের একটি বিশেষ আকর্ষণ হলো আতশবাজি প্রদর্শন।

যদিও আতশবাজি একধরনের বিস্ফোরক, কিন্তু এখানে ধ্বংসাত্মক বা মানুষের জন্য ক্ষতিকর কোনো পদার্থ ব্যবহার করা হয় না। তার পরও আতশবাজি ব্যবহারের সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

লেজার লাইট

লেজার লাইট শো বা প্রদর্শনীগুলোতে বিশেষ ধরনের লেজার লাইট ব্যবহার করে দর্শকদের আনন্দ দেওয়া হয়। সাধারণত কনসার্টগুলোতে এর নিয়মিত ব্যবহার দেখা যায়। এগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়, যার ফলে এটি একটি সরু আলোক রশ্মি সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন প্যাটার্ন ও এফেক্ট তৈরি করে। এই প্যাটার্ন তৈরির জন্য কখনো কখনো কৃত্রিম ধোঁয়া বা কুয়াশা তৈরি করা হয়।

অত্যুচ্চ শক্তিসম্পন্ন লেজার সরাসরি চোখে ঢুকলে চোখের ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু সাধারণভাবে বিভিন্ন উত্সবে যে ধরনের লেজার ব্যবহার করা হয়, সেগুলো চোখের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়। যুক্তরাষ্ট্রে লেজার শো পরিচালনা করার জন্য বিশেষ অনুমতি ও লাইলেন্স প্রয়োজন হয়।

১৯৭০ সাল থেকে লেজার শোর ব্যবহার দেখা যায়। সেই সময় লাইভ মিউজিক পারফরম্যান্সের সঙ্গে লেজার লাইট ব্যবহার করা হতো। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময় পিংক ফ্লয়েড, লেড জেপলিনের মতো জনপ্রিয় রক ব্যান্ড তাদের কনসার্টগুলোয় নিয়মিত লেজার ব্যবহার করত।