আলো কী?

পল্টু কখন যে কী নিয়ে মেতে ওঠে তা বোঝা দায়। সকালবেলা ঝুম বৃষ্টি হচ্ছিল, কাঁথা মুড়ি দিয়ে তাই একটু ঘুমিয়ে নিচ্ছিলাম। পল্টু তা আর হতে দিল না। পল্টু ওর গ্যালিলিওস্কোপটা নিয়ে আমার ঘরে হাজির। এইটা কীভাবে কাজ করে তা বোঝাতে হবে। তোমরাই বলো, গ্যালিলিওর মতো বড় বিজ্ঞানী যার আবিষ্কারক, তা বোঝানোর ক্ষমতা কি আমার আছে? আর পল্টুই বা তা বুঝবে কেন? তবে পল্টু নাছোড়বান্দা। ও নাকি অনেক বুদ্ধিমান, ঠিকই বুঝতে পারবে।

পল্টু যখন বুঝতে পারল, তোমাদের তো না বোঝার কোনো কারণ নেই। তাই সেদিনকার গল্পগুলো না হয় তোমাদেরও বলে দিই। এই ফাঁকে পল্টুর বুদ্ধির সঙ্গে তোমার বুদ্ধিরও একটু পাল্লা হয়ে যাক। না হয় তার গর্বে আজকাল মাটিতে পা-ই পড়ছে না, সব সময় জুতা পরে ঘুরছে।

যাহোক, টেলিস্কোপ বুঝতে প্রথমে বুঝতে হবে আলো। তাই পল্টুর কাছে জানতে চাইলাম, আলো কী?

পল্টুর উত্তর, আলো হলো একধরনের শক্তি। তরঙ্গাকারে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

কথাটা পুরোপুরি ঠিক হলো না। তরঙ্গাকারেই যে ছড়িয়ে পড়ে শুধু তা না। আলোর আছে দ্বৈত ধর্ম। এ যেমন তরঙ্গ, তেমনি কণাও। তবে আমাদের কাজে লাগবে মূলত এর তরঙ্গধর্মই। তাই সে ঝামেলায় না গিয়ে আমি তরঙ্গের খুঁটিনাটি বোঝাতে শুরু করলাম।

একটা তরঙ্গের মূল অঙ্গ দুটি। তরঙ্গদৈর্ঘ্য আর কম্পাঙ্ক। কোনটা কী বোঝার জন্য একটা ঢেউয়ের কথা চিন্তা করতে পারো। ঢেউ হলো তরঙ্গের চমৎকার এক উদাহরণ। ঢেউ কীভাবে চলে? পানি উঁচু হয় আবার নিচু হয়। আর ঢেউটা চলতে থাকে।

ধরা যাক, পল্টু পুকুরে একটা ঢিল ছুড়ে মারল। পানিতে ঢিল পড়ায় একটা ঢেউ তৈরি হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে লাগল। ঢিলটা ঠিক যখন পানি ছুঁয়েছে, তখন ঢেউ ছিল শূন্যটা। অল্প একটু পর পানি একবার ওপর-নিচ করায় ঢেউটা চারদিকে কিছুটা ছড়িয়ে গেল। একবার ওঠা-নামায় ঢিল পড়ার বিন্দু থেকে কোনো একদিকে যতটুকু ঢেউটা গেল, সেটাই ওই ঢেউয়ের তরঙ্গদৈর্ঘ্য।

এবার বলা যাক কম্পাঙ্কের কথা। পল্টুর মতো তোমরাও নিশ্চয় বুঝতে পারছ, একবার ওঠা-নামায় একটা পূর্ণ তরঙ্গ হয়। এক সেকেন্ডে যতবার ওঠা-নামা হয়, অর্থাৎ যতগুলো পূর্ণ তরঙ্গ হয়, তাকেই বলে কম্পাঙ্ক।

এবার পল্টুর একটু পরীক্ষা নেওয়া যাক, ‘পল্টু, কোনো কিছুর বেগ কী?’

‘এক সেকেন্ডে কোনো কিছু যে দূরত্বে যায়, তাই তার বেগ।’

‘তাহলে তরঙ্গের বেগ কী হবে?’

‘এক সেকেন্ডে তরঙ্গ যতটুকু যাবে, তাই হবে তরঙ্গের বেগ।’

‘কীভাবে বের করা যাবে তরঙ্গবেগ?’ আমি জানতাম পল্টু এই প্রশ্নের উত্তর পারবে না। তবু ওকে একটু ভাবতে সময় দিলাম। অনেকক্ষণ ভেবে ও যে উত্তর দিল তাতে আমি চমকে গেলাম। ঠিক যে কথাটা আমি বলব ভেবেছিলাম, সেটাই ও বলে দিল।

‘তরঙ্গ একবারে যে দূরত্বে যায় তা হলো তরঙ্গদৈর্ঘ্য। আর এক সেকেন্ডে যতগুলো তরঙ্গ হয়, তা হলো কম্পাঙ্ক। এক সেকেন্ডে মোট কতটুকু গেছে, তা বের করা যাবে একবারের দূরত্বকে কম্পাঙ্কের সঙ্গে গুণ দিয়ে।’

গাণিতিকভাবে ব্যাপারটা হলো তরঙ্গবেগ = তরঙ্গদৈর্ঘ্য X কম্পাঙ্ক। তরঙ্গ নিয়ে যেকোনো হিসাব করার জন্য এটা একটা মোক্ষম সূত্র। কী সহজেই না বের করে ফেলা যায় এত সুন্দর একটা সূত্র! মজার ব্যাপার হলো, যেকোনো তরঙ্গের জন্যই এই সূত্রটা কাজে লাগে। তোমরা চাইলে পরীক্ষা করে দেখতে পারো।

সবচেয়ে পরিচিত তরঙ্গের মধ্যে আরেকটা আছে শব্দ। শব্দতরঙ্গের জন্যও কিন্তু আমাদের ওই সূত্র বেশ খাটবে। তুমি কি গান গাইতে শিখেছ? সারেগামাপাধানি করেছ? এই যে সারেগামাপাধানি, এগুলো কী? এগুলো একেক কম্পাঙ্কের শব্দতরঙ্গ। শব্দ যখন বাতাসের মধ্য দিয়ে যায়, এর বেগ থাকে মোটামুটি প্রতি সেকেন্ডে ৩৫০ মিটার। কোনো শব্দের কম্পাঙ্ক যদি হয় ৩৫০ হার্জ, তবে বলো তো ওই শব্দের তরঙ্গদৈর্ঘ্য কত? ওহো, একটা জিনিস তো বলা হয়নি, কম্পাঙ্কের একক হলো হার্জ।

পল্টুকে এতটুকু শেখানোর পর একটা পরীক্ষা দিতে দিলাম। কাগজ-কলম নিয়ে। শব্দের বেগ তো বলে দিয়েছি। তারপর সারেগামাপাধানির প্রতিটার কম্পাঙ্ক লিখে দিলাম।

পল্টু ঠিক ঠিক অঙ্ক কষে সবগুলো শব্দের তরঙ্গদৈর্ঘ্য বের করে ফেলল। তুমিও চেষ্টা করে দেখতে পারো তরঙ্গবেগের সূত্র ব্যবহার করে।

পল্টু আর শব্দ নিয়ে ঘাঁটতে চাইল না। তার আজ জানা চাই আলোর কথা। আমিও আলোর গল্পেই ফিরলাম। শব্দ-গানের গল্প বলব আরেক দিন।

‘আলোর বেগ কত?’ প্রশ্নটা করতেই পল্টুর ঝটপট উত্তর, ‘সেকেন্ডে তিন লাখ কিলোমিটার।’

তিন লাখ কিলোমিটার কিন্তু যে-সে কথা নয়। অনেক অনেক বেশি। পল্টু ব্যাপারটা বোঝে কি না, জানতে জিজ্ঞেস করলাম, তিন লাখ কিলোমিটার আসলে কত দূর? দেখা গেল পল্টু জানে, পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব।

এবার একটু চিন্তা করে দেখো, পৃথিবী থেকে চাঁদ কত দূরে, এতটা পথ যেতে আলোর সময় লাগে মাত্র এক সেকেন্ড। মহাকাশযানে করে যেখানে যেতে নিল আর্মস্ট্রংদের লেগেছিল চার দিন। আমি যখন এগুলো বলছি, পল্টু একটা চিত্কার দিয়ে ফেলল, ‘আকাশে তাকালে আমরা এক সেকেন্ড আগের চাঁদ দেখি!’

ব্যাপারটা সত্যি, তুমি যখন আকাশে তাকাও, এক সেকেন্ড আগের চাঁদ দেখো। অবাক করা কাণ্ড হলো, যখন সূর্যের দিকে তাকাও, তখন দেখো প্রায় আট মিনিট আগের সূর্য। আকাশের যে তারাদের দেখো, তার কোনোটা আছে ১০ আলোকবর্ষ দূরে, কোনোটা হাজার আলোকবর্ষ দূরে। এর মানে ওই তারা থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে সময় লাগছে ১০ বছর বা ১০ হাজার বছর!

পল্টু গালে হাত দিয়ে বসে ভাবতে লাগল। কী কাণ্ড! আজ রাতে আমি একটা তারা দেখব, যেটা এক হাজার বছর আগের। যখন বিজ্ঞানী আল হাইথাম বেঁচে ছিলেন।

তোমরা একটা কাজ করো, আজ সন্ধ্যার খানিকটা পরে আকাশের দিকে তাকাও। ঠিক পশ্চিম-উত্তর দিকে কিছুটা ওপরে দেখবে একটা তারা জ্বলজ্বল করছে। এটার নাম ভেগা, বাংলায় অভিজিৎ। সূর্যকে বাদ দিলে ভেগা আকাশের দ্বিতীয় উজ্জ্বল তারা। এই তারাটা পৃথিবী থেকে প্রায় ২৫ আলোকবর্ষ দূরে। অর্থাৎ এই তারা থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে সময় লাগে ২৫ বছর। আজ সন্ধ্যায় তুমি যে অভিজিৎ দেখছ, তা আসলে ২৫ বছরের পুরোনো। আশপাশের তারাগুলোও দেখো, এর কোনোটা হয়তো তোমার দাদুর ছোটবেলার তারা, কোনোটা দাদুর দাদুর ছোটবেলা, একটা নিশ্চয় আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটবেলা।

অনেকক্ষণ এদিক-সেদিক গল্প বলে আমি আবার আগের জায়গায় ফিরলাম। আলোর বেগ কি সব সময় তিন লাখ কিলোমিটার? তা তো হওয়ার কথা নয়। যেমন তুমি মাঠের মধ্যে দৌড়ানোর সময় যত দ্রুত যেতে পারো, পানির মধ্যে দৌড়ালে কি তত দ্রুত যেতে পারবে? পারবে না। আলোও তেমনি, শূন্যস্থান পেলে তিন লাখ কিলোমিটার যায়, কিন্তু পানির মধ্য দিয়ে বা কাচের মধ্য দিয়ে যায় কম বেগে। বিজ্ঞানীরা এমন এক সিস্টেম বানিয়েছিলেন, যার মধ্যে আলো এত আস্তে চলে যে তুমি চাইলে দৌড় দিয়ে আলোর আগে চলে যেতে পারবে।

কিন্তু মজার ব্যাপার কি জানো, শূন্য মাধ্যমে যেখানে কিছু নেই, এমনকি বাতাসও নেই, সেখানে আলো সব সময় তিন লাখ কিলোমিটার বেগেই চলে। কমও না, বেশিও না। এবার একটা প্রশ্ন, আলো তো আছে নানা রঙের, সাদা আলো, নীল আলো, সবুজ আলো। কোন আলো কত বেগে চলবে? মজার ব্যাপার হলো সব রঙের আলোই শূন্য মাধ্যমে ওই তিন লাখ কিলোমিটার বেগেই চলে!

লাল আর নীল আলো যদি একই বেগে চলে তাহলে তাদের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়? দেখা গেল এই প্রশ্নের উত্তর পল্টু জানে, কম্পাঙ্কে। লাল আলোর কম্পাঙ্ক কম, সবুজ আলোর কম্পাঙ্ক বেশি।

রংধনুর সাত রঙের কথা মনে আছে? বেনীআসহকলা। বেগুনি, নীল, আসমানি, সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল। এই সাতটা রং কিন্তু কম্পাঙ্কের হিসেবেই সাজানো। বেগুনির কম্পাঙ্ক সবচেয়ে বেশি, নীলের কম্পাঙ্ক আরেকটু কম, এভাবে লাল রঙের আলোর কম্পাঙ্ক সবচেয়ে কম।

আবারও একটা পরীক্ষার সুযোগ পাওয়া গেল। তাই পল্টুকে পরীক্ষা দিতে বসিয়ে দিলাম। সব রঙের আলোর কম্পাঙ্ক দিয়ে বললাম তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বের করতে পল্টুর বের করা তরঙ্গদৈর্ঘ্যের লিস্টটা একটু মনোযোগ দিয়ে দেখো। বিজ্ঞানের এই এক মজা। কতগুলো তথ্যের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে নতুন সব তথ্য তোমার চোখে ধরা পড়বে। পল্টুর প্রথম যেটা চোখে পড়েছিল সেটা বলি, বেগুনি থেকে লাল পর্যন্ত কম্পাঙ্ক যত কমেছে, তরঙ্গদৈর্ঘ্য তত বেড়েছে। উল্টোভাবেও বলা যায়, তরঙ্গদৈর্ঘ্য কমলে কম্পাঙ্ক বাড়ে। ব্যাপারটা গাণিতিকভাবেও বোঝা যায়, তরঙ্গদৈর্ঘ্য আর কম্পাঙ্কের গুণফল হলো তরঙ্গবেগ। তরঙ্গবেগে আমরা কোনো নড়চড় করছি না। সব সময় ৩০ কোটি কিলোমিটার/সেকেন্ড রাখছি। গুণফল একই রাখতে হলে একটা বাড়ালে আরেকটা তো কমাতে হবেই। তাই কম্পাঙ্ক বাড়লে তরঙ্গদৈর্ঘ্য কমে।

পল্টু আর কোনো তথ্য খুঁজল না, করল একটা প্রশ্ন। ‘আচ্ছা, বেগুনি আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য তো সবচেয়ে কম। কিন্তু আমি তো চাইলে আরও ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্য বসিয়ে অঙ্ক কষে আরেকটা তরঙ্গ বের করতে পারি। তবে সেই তরঙ্গের আলোর রং কী হবে? নাকি এমন কোনো আলোই বাস্তবে নাই?’

বাস্তবে অবশ্যই আছে। আসলে যেকোনো তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোই বাস্তবে পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা দেখতে পাই শুধু ৪০০ থেকে ৭০০ ন্যানোমিটারের আলো। এই আলোই শুধু আমাদের চোখে ধরা পড়ে। তাই এই তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর একটা গালভরা নামও আছে, দৃশ্যমান আলো। দৃশ্যমান আলোর চেয়ে ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো যেমন আছে, তেমনি আছে বড় তরঙ্গের আলোও। একটা জিনিস মনে রাখতে পারো, তরঙ্গদৈর্ঘ্য যত বাড়বে, শক্তি তত কমবে। অর্থাৎ কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর শক্তি বেশি।

পল্টু জানতে চাইল, দৃশ্যমান আলো ছাড়া অন্য আলো কোনগুলো?

তোমরা নিশ্চয় অতিবেগুনি রশ্মির নাম শুনেছ। অতিবেগুনি রশ্মি মূলত বেগুনি আলোর চেয়ে কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো। এর চেয়ে কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোও তোমরা নিশ্চয় চেনো। এক্স-রের কথা তো অবশ্যই জানো। এই এক্স-রেও আসলে আলোই। পার্থক্য শুধু এর তরঙ্গদৈর্ঘ্যে। তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনেক কম বলে আমরা দেখতে পাই না। তবে এর শক্তি যে অনেক বেশি তা তো বুঝতেই পারছ, আমাদের শরীর ভেদ করে চলে যেতে পারে।

এক্স-রের চেয়ে শক্তিশালী আলোও কিন্তু আছে। গামা রশ্মির কথা শুনেছ না? এটাও আলো। এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য এক্স-রের চেয়েও কম। একেও আমরা দেখতে পাই না। এ-ও দিব্যি ভেদ করে যেতে পারে আমাদের শরীর, এমনকি পুরু দেয়াল। এই যে এক্স-রে, অতিবেগুনি রশ্মি বা গামা রশ্মি, এগুলো কিন্তু আমাদের শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকর।

এতক্ষণ শুধু দৃশ্যমান আলোর চেয়ে শক্তিশালী আলোর কথাই বললাম। এবার বলা যাক কম শক্তিশালী আলোর কথাও। লাল আলোর চেয়ে বেশি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোই মূলত কম শক্তিশালী।

উদাহরণ? সবচেয়ে কমন উদাহরণ তাপ। এমনিতে তাপ কিন্তু কোনো আলো না। তবে যখন তাপ কোনো বস্তু থেকে আরেক বস্তুতে যায় তখন শূন্যস্থানে তাপ যায় আলো হিসেবেই। এই আলোর নাম অবলোহিত রশ্মি। অবলোহিত কথাটা না শুনলেও তোমরা নিশ্চয় ইনফ্রারেড রে-এর কথা শুনেছ। অবলোহিতর ইংরেজিই হলো ইনফ্রারেড, সংক্ষেপে আইআর।

রোদের মধ্যে গিয়ে দাঁড়ালে গরম লাগে। মনে হয় সূর্য থেকে তাপ এসে পড়ছে তোমার শরীরে। এই তাপটা আর কিছু না, সূর্য থেকে আসা অবলোহিত রশ্মি।

কোথাও আলো জ্বাললে সেখান থেকে দৃশ্যমান আলোর সঙ্গে খানিকটা অবলোহিত রশ্মিও বের হয়। অবলোহিত রশ্মি পাঠিয়ে তারহীন যোগাযোগও করা যায়। যেমন তোমার বাসার টিভি রিমোট। রিমোটের সামনে দেখবে এলইডি লাইটের মতো দেখতে একটা লাইট আছে। তবে তা জ্বলতে দেখা যায় না। কারণ যখন তুমি রিমোট দিয়ে চ্যানেল পাল্টাও, এই লাইট থেকে যে আলোটা বের হয়, তা অবলোহিত আলো, তাই আমাদের চোখে ধরা পড়ে না। তবে ক্যামেরার সেন্সরে কিছুটা ধরা পড়ে ঠিকই। তুমি যদি একটা মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে ওই লাইটের ছবি তোলো, দেখবে তা ঠিকই ধরা পড়ছে।

অবলোহিত রশ্মির চেয়েও বড় তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো আছে। যেমন রেডিও তরঙ্গ বা মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ। এসব তরঙ্গ মূলত যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করা হয়। তুমি যখন তোমার এফএম রেডিওটা চালাও, তখন রেডিও স্টেশন থেকে একটা আলোকতরঙ্গই ভেসে আসে তোমার রেডিও সেটে।

এই যে নানা তরঙ্গদৈর্ঘ্যের নানা তরঙ্গ, এগুলোর কম্পাঙ্কের সঙ্গে তুলনা করে একটা চমৎকার তালিকা আছে। যে তালিকায় এক ধারে থাকে তরঙ্গদৈর্ঘ্য, আরেক ধারে থাকে কম্পাঙ্ক। এই তালিকার নাম বর্ণালি। একটা আলোকবর্ণালি এই লেখার সঙ্গে যুক্ত করে দিলাম। দৃশ্যমান আলো যেহেতু আমাদের জন্য বেশি দরকারি, তাই এই অংশ করে দিলাম।

শেষ একটা তথ্য আর একটা পরামর্শ।

তথ্যটা হলো আলোকতরঙ্গের আসল নাম তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ বা ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ। পরামর্শটা হলো আলোকবর্ণালিটার দিকে তাকিয়ে থাকো, চমৎকার সব জিনিস একটু পরে তোমার চোখে ধরা দেবে।

আজকের মতো এখানে ক্ষান্ত দিয়ে পল্টুকে বিদায় দিলাম। ওরও স্কুলের সময় হয়ে যাওয়ায় কিছু বলল না। পরে যখন ওকে বলব বাকিটা, তখন তোমাদেরও জানিয়ে দেব।