এ কেমন সাইকেল!

‘আহা ভূত, বাহা ভূত, কিবা ভূত, কিম্ভূত, বাবা ভূত, ছানা ভূত, খোঁড়া ভূত, কানা ভূত’—কত রকম ভূত! সত্যজিৎ রায়ের গুপী গাইন বাঘা বাইন সিনেমার এক গানে এই অদ্ভুত সব ভূতের নাম শোনা যায়। সাইকেলের মধ্যেও আছে অদ্ভুত সব সাইকেল। মাউন্টেন বাইক, রেসিং বাইক, রোড বাইক থেকে শুরু করে ট্রাই সাইকেলসহ আরও কত কী! তবে যেসব সাইকেল সম্পর্কে আমরা জানি, তার বাইরেও আছে অদ্ভুত সব সাইকেল।

হাফবাইক

হাফবাইকের আক্ষরিক বাংলা করলে দাঁড়ায়, অর্ধদ্বিচক্রযান। নামের সঙ্গে পুরোপুরি মিল আছে অদ্ভুত এই সাইকেলের। হাফবাইককে অবশ্য পুরোপুরি সাইকেল বলা যায় না। সাইকেল ও স্কেটবোর্ডের মিশ্রণে হাফবাইক তৈরি করেছেন বুলগেরিয়ার দুজন স্থপতি। তিন চাকার এই সাইকেলের সামনের চাকাটি বড় এবং পেছনের চাকা দুটি ছোট ছোট। তবে সাধারণ সাইকেলের তুলনায় সব কটি চাকাই বেশ ছোট। হাফবাইক চালাতে হলে তোমাকে আবার প্রায় নতুন করে সাইকেল চালানো শিখতে হতে পারে। স্কেটবোর্ডের মতো এই সাইকেলের হ্যান্ডেল সাধারণ সাইকেলের হ্যান্ডেলের মতো কাজ করে না। হাফবাইক চালানোর সময় বাঁয়ে বা ডানে যেতে হলে তোমাকে হ্যান্ডেল ঘোরানোর সঙ্গে সঙ্গে শরীরটাও সেদিকে ঝোঁকাতে হবে। হাফবাইকে নেই কোনো সিট। স্কেটবোর্ডের মতো সব সময় দাঁড়িয়ে চালাতে হবে এই সাইকেল। তুমি যদি হও আরামপ্রিয় সাইক্লিস্ট, তবে হাফবাইক তোমার জন্য নয়!

কুইগল

তোমরা অনেকেই হয়তো ফোল্ডিং বাইকের সঙ্গে পরিচিত। আস্ত এক সাইকেলকে ভাঁজ করে ফেলা যায় ফোল্ডিং বাইকে। কুইগল একধরনের ফোল্ডিং বাইক। তবে এই সাইকেল ভাঁজ করার পর এর আকার হয় সাধারণ ফোল্ডিং বাইকেরও অর্ধেক। কুইগল পৃথিবীর সবচেয়ে আঁটসাঁট ফোল্ডিং বাইক হিসেবে পরিচিত। ভাঁজ করার পর এর সাইজ এতটাই ছোট হয় যে এটিকে স্যুটকেসে ভরে ফেলা যাবে। ছোট দুটি চাকা ও লম্বা এক হ্যান্ডেল থাকা এই কুইগল দেখতে সাধারণ সাইকেলের চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন রকম। দুটি চাকা ছাড়া কুইগলের নিচে আছে একদম ছোট ছোট আরও দুটি চাকা। ভাঁজ করার পর এই চাকার সাহায্যে ট্রলি ব্যাগের মতো টেনে নেওয়া যাবে এই সাইকেল। ছোট্ট সিটে হেলান দিয়ে আরাম করেই চালানো যায় এই ফোল্ডিং বাইক। তুমি সাইক্লিং করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেলে কুইগল হাতে নিয়ে চড়তে পারবে বাস কিংবা ট্রেনে!

বেড বাইক

নাম শুনে যেমনটা ভাবছ, অনেকটা তেমনই এই সাইকেল। জার্মানির এই সাইকেলের সঙ্গে আছে লাল-কালো এক বিছানা। বার্লিন শহরে পর্যটকেরা এই সাইকেলে চড়ে (শুয়ে আরকি) শহর ঘুরে দেখতে পারেন। তবে বেড বাইকে করে পর্যটকেরা যতটা না শহর দেখতে পাবেন, তার থেকে বেশি শহরবাসী তাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকবে। সাইকেলটির মূল অংশের পেছনেই লাগানো হয়েছে বিছানা। সামনে দুটি চাকা ও বিছানার নিচে দুটি চাকা, মোট চারটি চাকা এই অদ্ভুত সাইকেলে। স্বস্তির বিষয় এই যে তুমি যদি এই বিছানা–সাইকেলে শুয়ে ঘুরতে চাও, তবে সাইকেলটি চালাতে হবে অন্য কাউকে। তা না হলে সাইকেল চালাতে চালাতেই হয়তো ঘুমিয়ে পড়ত কেউ কেউ!

লপিফিট

হাঁটা, নাকি সাইক্লিং? কোনটি তোমার পছন্দ? দুটোই যদি হয় তোমার প্রিয়, তবে প্যাডেল ছাড়া সাইকেল লপিফিট তোমার জন্য যথার্থ। লপিফিট না হয়ে এ সাইকেলের নাম হওয়া উচিত ছিল ট্রেডমিল বাইক। ট্রেডমিলের ওপর হাঁটতে হাঁটতে চালাতে হয় এই সাইকেল। চাইলে ট্রেডমিলে দৌড়াতে দৌড়াতেও চালানো যায়। তবে শুধু হাঁটা বা দৌড়ানোর শক্তি দিয়ে তো আর সাইকেল চালানো সম্ভব নয়, তাই লপিফিটে আছে ছোট্ট একটি ইলেকট্রিক মোটর। সাইকেলের ট্রেডমিল থেকে পাওয়া শক্তিকে আরও বাড়িয়ে দেয় মোটর, ফলে দ্রুতগতিতে চলতে পারে এ সাইকেল। সাধারণ সাইকেলের মতোই হ্যান্ডেলে ব্রেক করলে থেমে যাবে লপিফিট। হাঁটা থামিয়ে দিলেও ধীরে ধীরে কমে যাবে লপিফিটের গতি। দুই চাকার মাঝখানে ট্রেডমিল থাকায় সাধারণ সাইকেলের তুলনায় কিছুটা লম্বা এই সাইকেল। লপিফিট ডাচদের আবিষ্কার হলেও এটি এখন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। জনপ্রিয় এই সাইকেল এখন উৎপাদিত হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। স্বাস্থ্যসচেতন সাইক্লিস্টদের জন্য লপিফিট সেরা পছন্দ।

রানিং শু বাইক

সাধারণত ছোট–বড় সব সাইকেলের চাকাতেই রাবারের টায়ার থাকে। তবে রানিং শু বাইকের চাকা দুটিতে রাবারের টায়ারের জায়গায় দেখা যায় কমলা রঙের জুতা। প্রতি চাকায় ৬টি ও একটি সাইকেলে থাকে ১২টি জুতা। চাকার স্পোকগুলোও সাধারণ চাকার স্পোকের তুলনায় মোটা ও শক্ত হয়, স্পোকগুলো দেখতেও হয় অন্য রকম। রানিং শু বাইকের অন্য সবকিছু সাধারণ সাইকেলের মতোই। জার্মানির আবিষ্কার এ সাইকেল খুব সহজেই মানুষের দৃষ্টি কেড়ে নিতে পারে। তবে জুতার চাকা দিয়ে তৈরি এই সাইকেল খুব বেশি গতিতে চালানো যায় না।

এমন আরও অদ্ভুত সব সাইকেল আছে পৃথিবীজুড়ে। তুমিও চাইলে নতুন কোনো সাইকেলের ডিজাইন করে ফেলতে পারো। আজব সব সাইকেলের গল্প পড়তে গিয়ে তোমার মাথায় যদি নতুন কোনো সাইকেলের আইডিয়া আসে, তবে ঝটপট সেটি লিখে পাঠিয়ে দাও কিআর ঠিকানায়।