‘এখন পর্যন্ত আমার চিন্তাধারা কেউ বুঝতে পারেনি’ — মাসফিয়া আফরীন

বাবা চাকরি করেন বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশনে। তাই একদিন এমনি মেয়েকে হাত ধরে ঘোরাতে নিয়ে যান সেখানে। সাড়ে চার বছরের মেয়েটা যে র‌্যাকেট হাতে টেনিসে এত বাজিমাত করবে, সেটা তখন কে জানত? ২০১০ সালে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ছোট্ট মাসফিয়া বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশন আয়োজিত ইঞ্জিনিয়ার জব্বার মেমোরিয়াল খুদে টেনিস টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে। তখন মেয়ের ইচ্ছাশক্তিটা ধরে ফেলেন তার বাবা। পাকাপোক্ত করে ফেলেন টেনিস প্রশিক্ষণ। এরপর তো কেবল বিজয়ের গল্প। ২০১০ সালে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক টেনিস টুর্নামেন্টে সেরা আটে জায়গা করে নেওয়া, পরের বছর রানার জাতীয় টেনিস টুর্নামেন্টে সবাইকে ছাড়িয়ে প্রথম হওয়া। সে বছরই সনি টেনিস টুর্নামেন্টে হলো তৃতীয়। পরের বছরগুলোয় তার অর্জন বেড়েই চলে। ২০১২ থেকে ২০১৫ সালের আন্তস্কুল জাতীয় টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে দ্বৈত ও একক ক্যাটাগরিতে চারটি চ্যাম্পিয়নশিপ এবং একটি রানারআপ পুরস্কার জিতে নেয় সে। ২০১৬ সালে রানার গ্রুপ আয়োজিত টুর্নামেন্টে হয় চ্যাম্পিয়ন। এটিএন বাংলা কিডস টেনিস টুর্নামেন্টে যথাক্রমে চ্যাম্পিয়ন, স্বাধীনতা দিবস জাতীয় টেনিস টুর্নামেন্টে প্রথম রানারআপ হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করে সে। এরপর নিজের আগের সব রেকর্ড ভেঙে ওয়াল্টন ফার্স্ট ওপেন টেনিস টুর্নামেন্ট এবং ইউরো গ্রুপ টেনিস টুর্নামেন্টে পরপর দুবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতে নেয় মাসফিয়া। তার ২০১৭ সালটা শুরু হয় এআইইউবি ন্যাশনাল টেনিস টুর্নামেন্ট আর একুশে ফেব্রুয়ারি টেনিস টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়ে। এত সব পুরস্কার ছাড়াও স্কুল ও বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশনের টেনিস প্রতিযোগিতাগুলোয় আছে তার নানা অর্জন। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১২ জাতীয় টেনিস দলের সদস্য সে। স্কুলে টেনিস ছাড়াও আবৃত্তি আর উপস্থিত বক্তৃতায় পারদর্শী সে। অবসরে টুকটাক প্রোগ্রামিং করা মাসফিয়া পড়ালেখাতেও কম যায় না। স্কুলে বরাবরই ভালো ফল করে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সপ্তম শ্রেণির এই ছাত্র। র‌্যাকেট হাতে সে একদিন অলিম্পিকের মতো আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে পুরস্কার জিতে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনার স্বপ্ন দেখে।

মাসফিয়ার সাক্ষাৎকার

প্রশ্ন :

রেগে যাই—

অযৌক্তিক কথা শুনলে

প্রশ্ন :

প্রিয় উৎসব—

কিআনন্দ

প্রশ্ন :

যে তিন শব্দে নিজেকে বিশ্লেষণ করি—

বাস্তববাদী, স্বাধীনচেতা আর সাহসী

প্রশ্ন :

জীবনে কি কোনো আফসোস আছে?

একটাই। এখন পর্যন্ত আমার চিন্তাধারা কেউ বুঝতে পারেনি।

প্রশ্ন :

টাইম মেশিন থাকলে যে সময়ে যেতে চাই—

মুক্তিযুদ্ধের সময়। গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করব।

প্রশ্ন :

জীবনের তিন চমক—

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় এ+ পাওয়া, আন্তস্কুল টেনিস প্রতিযোগিতায় পঞ্চমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন এবং কিআনন্দ ২০১৬তে স্বেচ্ছাসেবক হওয়া।

প্রশ্ন :

১০ বছর পর নিজেকে যেভাবে দেখতে চাই—

সফল আন্তর্জাতিক টেনিস খেলোয়াড়, প্রোগ্রামার ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ

প্রশ্ন :

আলাদিনের চেরাগ পেলে যা চাইতাম—

অন্যায়, অশিক্ষা আর নারী-পুরুষের বৈষম্যমুক্ত পৃথিবী।

প্রশ্ন :

জীবন থেকে পাওয়া সবচেয়ে বড় শিক্ষা—

যে আমার মূল্য বোঝে না তার সঙ্গে থেকে লাভ নেই। সে শুধু বন্ধুত্বের নামে আমাকে ব্যবহার করবে।

(কিশোর আলোর মে ২০১৭ সংখ্যায় প্রকাশিত)