কীভাবে কাজ করে জিপিএস?

কিছুদিন ধরে খুব বৃষ্টি। এ রকম দিনে খিচুড়ি খেতে খুব ইচ্ছা করে। ফেসবুকের একটা ফুড গ্রুপে সার্চ করলে খিচুড়ি লিখে পেয়েও গেলে। অবস্থান দেখাচ্ছে ধানমন্ডির একটা জায়গায়। কোথায়, তুমি ঠিক চিনতে পারছ না। কী করবে বলো তো? হ্যাঁ, জানি। তোমার মুঠোফোনের জিপিএসটা অন করে দেবে, তারপর ম্যাপ খুলে দেখে নেবে দিকনির্দেশনা। ম্যাপ তোমার অবস্থান থেকে খিচুড়িঘরের অবস্থান পর্যন্ত যাওয়ার পথ বাতলে দেবে নিখুঁতভাবে! কখনো কি ভেবেছ, কীভাবে এ কাজ করে আমাদের মুঠোফোন? নিশ্চয়ই ভাবছ, ‘কেন জিপিএস!’ তা তুমি ঠিকই ভেবেছ। কিন্তু জিপিএস জিনিসটা কাজ করে কীভাবে, বলো তো?

প্রাচীনকালের কথা যদি ভাবি, তখন কিন্তু অবস্থান নির্ণয় করা এত সহজ ছিল না। নাবিকেরা নিজেদের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য নক্ষত্রমণ্ডলের দিকে তাকাতেন। নক্ষত্রের অবস্থান দেখে হিসাব-নিকাশ করে বোঝার চেষ্টা করতেন, কোথায় আছেন ও কোন দিকে যাচ্ছেন। প্রযুক্তির কারিকুরিতে এখন আমাদের নিজেদের অবস্থান বোঝার জন্য নক্ষত্রের দিকে আর তাকাতে হয় না। মুঠোফোনের পর্দায় চোখ রেখে, জিপিএস ব্যবহার করে সেটা সহজেই বের করে নেওয়া যায়।

জিপিএসের পূর্ণাঙ্গ রূপ গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম। এর একটা সুন্দর বাংলা আছে। বিশ্বজনীন অবস্থান-নির্ণায়ক ব্যবস্থা। আমাদের মুঠোফোনে শুধু এর গ্রাহক অংশটি থাকে। কিন্তু এখনো দিকনির্দেশনার জন্য তাকে আকাশের দিকেই চোখ রাখতে হয়। না, নক্ষত্র খোঁজে না সে। জিপিএস–ব্যবস্থায় নক্ষত্রের জায়গা দখল করে নিয়েছে স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ। ৩০টির বেশি স্যাটেলাইট এই উদ্দেশ্য নিয়ে পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে।

ঘটনার শুরু সেই ১৯৭৩ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর ব্যবহারের জন্য গড়ে তোলা হয় জিপিএস–ব্যবস্থা। যুক্তরাষ্ট্রের নেভাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি, মানে নৌ গবেষণাগারে কর্মরত রজার এল ইস্টন, অ্যারোস্পেস করপোরেশনের আইভান এ গেটিং এবং অ্যাপ্লায়েড ফিজিকস ল্যাবরেটরি, মানে ফলিত পদার্থবিজ্ঞান গবেষণাগারে কর্মরত ব্র্যাডফোর্ড পার্কিনসন মিলে উদ্ভাবন করেন এই জিপিএস। আর অবস্থান নির্ণয়ের কাজটা নিখুঁত করার জন্য কম্পিউটেশনাল প্রযুক্তি ব্যবহারের উপায় উদ্ভাবন করেন গ্ল্যাডিস ওয়েস্ট। তাঁদের কাজের ওপর নির্ভর করে, ২৪টি কৃত্রিম উপগ্রহের সমন্বয়ে সৃষ্ট একটি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে গড়ে ওঠে স্বয়ংসম্পূর্ণ এই অবস্থান-নির্ণায়ক ব্যবস্থা। কিন্তু বেসামরিক কেউ এটি ব্যবহার করতে পারত না। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল এর ওপর।

পরিস্থিতির মোড় ঘোরে একটি দুঃখজনক ঘটনার মধ্য দিয়ে, ১৯৮৩ সালে। কোরিওয়ান এয়ারলাইনস ফ্লাইট ০০৭ (সংক্ষেপে কাল ০০৭) তাদের যাত্রাপথ হিসাব করতে গিয়ে ভুল করে চলে যায় রাশিয়ার আকাশসীমায়। যাত্রীবাহী এ বিমানে তখন ২৬৯ জন মানুষ ছিলেন। কিন্তু বিমানটি যে যাত্রীবাহী বা তারা যে ভুল করে এই এলাকায় চলে এসেছে, এটা জানার কোনো উপায় ছিল না রাশিয়ার। তারা দেখল, বিমানটি তাদের আকাশসীমা ছেড়ে যাচ্ছে না; বরং আরও ভেতরে চলে আসছে। মিসাইল দেগে বিমানটি ধ্বংস করে দেয় তারা। শুধু হিসাবের ভুলের জন্য মারা যান ২৬৯ জন মানুষ। এ ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ঘোষণা দেন, প্রকল্প সম্পূর্ণ হলে বেসামরিক মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে জিপিএস–ব্যবস্থা। ১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রকল্প সম্পূর্ণ হয়। ১৯৯৬ সালে বিল ক্লিনটন একটি আইন পাস করে সবার জন্য জিপিএস উন্মুক্ত করে দেন।

আগের সেই প্রশ্নে ফেরা যাক। কীভাবে কাজ করে জিপিএস? পুরো ব্যবস্থাটিতে মোট তিনটি অংশ থাকে। এক. গ্রাহক অংশ। আগেই বলেছি, এটা আমাদের মুঠোফোনে থাকে। দুই. কন্ট্রোল স্টেশন এবং তিন. স্যাটেলাইট।

ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার ওপরে, ৬টি কক্ষপথে (প্রতিটিতে ৪টি করে) অবস্থান করছে মোট ২৪টি স্যাটেলাইট। সেই সঙ্গে আরও তিনটি রিজার্ভড স্যাটেলাইট আছে। মহাকাশে কখন কী হয়, তার তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। কোনো স্যাটেলাইট নষ্ট হয়ে গেলে বা সমস্যা হলে পুরো জিপিএস–ব্যবস্থা যেন মুখ থুবড়ে না পড়ে, সে জন্য ব্যাকআপ হিসেবে রাখা হয়েছে এদের। পরবর্তী সময়ে আরও পাঁচটি স্যাটেলাইট পাঠানো হয়েছে। মোট ৩২টি স্যাটেলাইটের মধ্যে বর্তমানে ৩১টি সচল আছে। এই স্যাটেলাইটগুলো এমনভাবে অবস্থান করে যেন যেকোনো মুহূর্তে ভূপৃষ্ঠের একটি বিন্দু চারটি স্যাটেলাইটের আওতায় থাকে। কেন? সেটা বোঝার জন্য একটুখানি হিসাব কষতে হবে। সহজ হিসাব, তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই! চলো, একটা মজার উদাহরণের মাধ্যমে আমরা হিসাবটা কষে ফেলি। [চিত্র দ্রষ্টব্য]

ক. আগারগাঁও, ব্যাসার্ধ: ৫.৩ কিমি। খ. শাহবাগ, ব্যাসার্ধ: ৯০০ মি। গ. সায়েন্স ল্যাব, ব্যাসার্ধ: ২.৩ কিমি। আর বৃত্ত তিনটির ছেদবিন্দুটিই হলো তোমার অবস্থান, বাংলামোটর।

ধরো, তুমি কিশোর আলোর কার্যালয়ের দিকে হেঁটে আসছ। তোমার সঙ্গে কোনো মুঠোফোন নেই। যদি পথ হারিয়ে ফেল, সে জন্য তোমার আব্বু তোমাকে ঢাকা শহরের একটা মানচিত্র দিয়ে দিয়েছে। এখন হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করেই তুমি টের পেলে আসলেই পথ হারিয়ে ফেলেছ। বুঝতে পারছ না, কোথায় আছ বা কোন দিকে যাবে। ঠিক সেই মুহূর্তে ক, খ ও গ নামে তিনজন মানুষ আলাদা আলাদাভাবে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। তুমি তাদের ডেকে বললে, আমি কোথায় আছি, বলতে পারেন? ক বলল, সেটা তো বলতে পারব না, তবে তুমি আগারগাঁও থেকে ৫.৩ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের দূরত্বে আছ।

তুমি জানো, ব্যাসার্ধ মানে বৃত্তের কেন্দ্র থেকে পরিধি পর্যন্ত দূরত্ব। তার মানে আগারগাঁওকে কেন্দ্রে রেখে একটা বৃত্ত আঁকলে এর চারপাশের যেকোনো দিকে ৫.৩ কিলোমিটার দূরত্বে তোমার অবস্থান। চটপট তুমি মানচিত্রে আগারগাঁওকে কেন্দ্রে রেখে সেই বৃত্তটা এঁকে ফেললে। কিন্তু ঠিক কোন বিন্দুতে তোমার অবস্থান, সেটা বের করতে পারলে না। আরও তথ্য লাগবে।

খ এবার তোমাকে বলল, আমার হিসাবে তুমি শাহবাগ থেকে ০.৯ কিলোমিটার (মানে ৯০০ মিটার) ব্যাসার্ধের দূরত্বে আছ। তুমি এবার শাহবাগকে কেন্দ্রে রেখে ৯০০ মিটার ব্যাসার্ধের আরেকটা বৃত্ত এঁকে ফেললে। কিন্তু তোমার অবস্থান বের করার জন্য এটাও যথেষ্ট নয়।

তারপর গ জানাল, সায়েন্স ল্যাব থেকে ২.৩ কিলোমিটার ব্যসার্ধের দূরত্বে তোমার অবস্থান। এবার তুমি সায়েন্স ল্যাবকে কেন্দ্রে রেখে ২.৩ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের একটা বৃত্ত এঁকে ফেললে। বৃত্ত তিনটি যে বিন্দুতে ছেদ করেছে, সেটাই তোমার অবস্থান! মানচিত্রের দিকে একবার তাকালেই কিন্তু বুঝে যাবে, তুমি এখন বাংলামোটরে আছ!

হ্যাঁ, ঠিক এভাবেই কাজ করে জিপিএস স্যাটেলাইটগুলো! (সত্যি বলতে, বাস্তব হিসাবটা আরেকটু জটিল। তবে আমরা আপাতত সেই জটিলতায় আর যাব না।) স্যাটেলাইটের ক্ষেত্রে, প্রতিটি বৃত্তের কেন্দ্রে থাকে একটা স্যাটেলাইট। এই স্যাটেলাইট তার চারপাশের যেটুকু জায়গা কাভার করতে পারে, সেটাই তার ব্যাসার্ধ। আর চতুর্থ স্যাটেলাইটটা যোগ করলে হিসাবটা আরও নিখুঁত হয়, এই যা।

তার মানে প্রতিটি স্যাটেলাইট আমাদের মুঠোফোনের গ্রাহক যন্ত্রকে বলে, তাদের মধ্যকার দূরত্বের ব্যাসার্ধটা কত। এখন কথা হলো, এই দূরত্ব সে বলে কীভাবে? সহজ করে বললে, স্যাটেলাইট যে মুহূর্তে সিগন্যালটা পাঠাচ্ছে, সে মুহূর্তের সময়টা বলে দেয়। আমাদের গ্রাহক যন্ত্র সিগন্যাল গ্রহণের সময় থেকে পাঠানোর সময় বিয়োগ করে, সিগন্যাল আসতে কত সময় লেগেছে—তা বের করে নেয়। আর এই সিগন্যালগুলো আসে আলোর গতিতে। একটুখানি পদার্থবিজ্ঞান ব্যবহার করলেই আমরা বুঝতে পারব, সিগন্যালের পেরিয়ে আসা দূরত্ব = আলোর গতি X সময় (সিগন্যাল আসতে যতটুকু সময় লেগেছে)। আর সিগন্যালের পেরিয়ে আসা এই দূরত্বই যে স্যাটেলাইট কাভারেজের বৃত্তের ব্যাসার্ধ, তা তো আমরা আগেই দেখেছি।

এবার আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার বুঝতে হবে। আলবার্ট আইনস্টাইনের বিখ্যাত আপেক্ষিকতা তত্ত্বের কথা আমরা অনেক শুনি। মহাকর্ষ বা কৃষ্ণগহ্বরের মতো বড় বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে গেলে এই তত্ত্বের কথা আসে। শুনে হয়তো আমাদের মনে হতে পারে, বাস্তবে কি আদৌ এর কোনো ব্যবহার আছে? উত্তর, হ্যাঁ। আপেক্ষিকতা তত্ত্বের চমৎকার এক বাস্তব প্রয়োগ এই জিপিএস। আপেক্ষিকতা তত্ত্ব না থাকলে জিপিএস সত্যিকার অর্থে আমাদের কোনো কাজেই লাগত না। কারণ, সিগন্যাল আসতে কতটা সময় লাগছে, সেটা নিখুঁতভাবে হিসাব করতে না পারলে পুরো হিসাবই এলোমেলো হয়ে যাবে। আর সময়টা হিসাব করতে গেলেই দরকার পড়ে আপেক্ষিকতা তত্ত্বের।

স্যাটেলাইটে সময় হিসাব করার জন্য একটা পারমাণবিক ঘড়ি (Atomic Clock) থাকে। জিনিসটা কীভাবে কাজ করে, সেটা অন্য আলোচনা। আপাতত জেনে রাখো, এ ধরনের ঘড়িগুলো ১ ন্যানোসেকেন্ড (মানে এক সেকেন্ডের এক বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ) পর্যন্ত নিখুঁত হিসাব রাখতে পারে। এর ফলে কোনো কিছুর অবস্থান একদম শতভাগ নিখুঁতভাবে বলা যায় না। তবে ৫-১০ মিটার ব্যাসার্ধের একটা বৃত্ত ধরে বলা যায়, জিনিসটা এই সীমার মধ্যেই আছে। যদি হিসাবটা আরও নিখুঁত করতে চাই, তাহলে বুঝতেই পারছ, এই বৃত্তের ব্যাসার্থ কমিয়ে আনতে হবে। এভাবে বৃত্তের ব্যাসার্ধ কমাতে কমাতে শূন্য করে ফেললে পাওয়া যাবে একটা বিন্দু—লক্ষ্যবস্তুর নিখুঁত অবস্থান। এতটা নিখুঁত অবশ্য করা যায় না। তবে বৃত্তের ব্যাসার্ধ কমিয়ে সেন্টিমিটারে নিয়ে আসা যায়। সে জন্য ডিফারেনশিয়াল জিপিএস (DGPS) এবং রিয়েল টাইম কাইনেম্যাটিক মেথড (RTK) ব্যবহার করা হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত পারমাণবিক ঘড়িগুলো ২০-৩০ ন্যানোসেকেন্ড পর্যন্ত সময়ের নিখুঁত হিসাব রাখতে পারে। আর এখানেই এসে পড়ে আপেক্ষিকতা তত্ত্ব।

আমরা জানি, আপেক্ষিকতা তত্ত্বের দুটি প্রকার আছে। সাধারণ আপেক্ষিকতা ও বিশেষ আপেক্ষিকতা। (আপেক্ষিকতা তত্ত্ব আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়, তাই ওর ভেতরে আমরা যাব না।) বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুযায়ী বলা যায়, ভূপৃষ্ঠে দাঁড়িয়ে যারা স্যাটেলাইটের ঘড়ির দিকে তাকাবে, তাদের কাছে মনে হবে, স্যাটেলাইটের ঘড়িটা একটুখানি আস্তে চলছে। হিসাব করে দেখা যায়, আসলেই এই ঘড়ি প্রতিদিন ৭ মাইক্রোসেকেন্ড ধীরে চলে। এদিকে সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বমতে, স্যাটেলাইটগুলো যেহেতু ভূপৃষ্ঠ থেকে অনেকটা ওপরে, সে জন্য মহাকর্ষের টান ওখানে কম হবে। ফলে পৃথিবীর তুলনায় স্যাটেলাইটে ঘড়ির কাঁটা (পারমাণবিক ঘড়িতে আসলে কাঁটা থাকে না, এটা বোঝার জন্য বলা) একটু দ্রুত ঘুরবে। হিসাব করে দেখা যায়, সাধারণ আপেক্ষিকতার জন্য স্যাটেলাইটে ঘড়ি প্রতিদিন ৪৫ সেকেন্ড দ্রুত চলে। দুটো হিসাবকে এক করে বোঝা যায়, (৪৫-৭ = ৩৮) ভূপৃষ্ঠ থেকে স্যাটেলাইটের ঘড়ি দিনপ্রতি ৩৮ সেকেন্ড দ্রুতগামী হওয়ার কথা। বাস্তবে তা-ই হয়। এমনিতে ৩৮ মাইক্রোসেকেন্ড শুনতে ছোট মনে হতে পারে। কিন্তু ন্যানোসেকেন্ড হিসাব করলে ৩৮ মাইক্রোসেকেন্ড হয়ে যাবে ৩৮ হাজার ন্যানোসেকেন্ড! তার মানে, এই ছোট্ট ব্যাপারটা হিসাবে না নিলে জিপিএস–ব্যবস্থা চালু হওয়ার মাত্র দুই মিনিটের মাথায় এটা ভুল তথ্য দিতে থাকবে এবং প্রতিদিন এই ভুলের মান ১০ কিলোমিটার করে বাড়তে থাকবে! এ রকম ভুল হলে তুমি কিশোর আলোর কার্যালয় তো খুঁজে পাবেই না, বিমানও তার যাত্রাপথ ভুলে চলে যাবে নিষিদ্ধ এলাকায়। তাহলেই বোঝো, রকেট বা মিসাইলের কী অবস্থা হবে! এখান থেকে আপেক্ষিকতা তত্ত্বের গুরুত্বের খানিকটা (খুব সামান্য আসলে) বোঝা যায়।

এই ছোট্ট ব্যাপারটা হিসাবে না নিলে জিপিএস–ব্যবস্থা চালু হওয়ার মাত্র দুই মিনিটের মাথায় এটা ভুল তথ্য দিতে থাকবে এবং প্রতিদিন এই ভুলের মান ১০ কিলোমিটার করে বাড়তে থাকবে!

এ তো গেল স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের কথা। জিপিএসের দ্বিতীয় উপাদান ছিল কন্ট্রোল টাওয়ার, মনে আছে তো? সেই কন্ট্রোল টাওয়ারের কাজ হলো স্যাটেলাইটগুলোকে পর্যবেক্ষণ করা ও নিশ্চিত করা, এরা আসলেই ঠিক জায়গায় আছে কি না বা ঠিকভাবে সিগন্যাল পাঠাচ্ছে কি না। আর আমাদের মুঠোফোনের গ্রাহক যন্ত্রের কাজ কী, তা তো আগেই বলেছি। সে কোনো সিগন্যাল পাঠায় না। শুধু একাধিক স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া সিগন্যাল ব্যবহার করে তোমার অবস্থানটা নির্ণয় করে।

তুমি যখন খিচুড়িঘর খুঁজতে বের হওয়ার সময় জিপিএসটা অন করে মুহূর্তের মধ্যে নিজের অবস্থান ও কোন দিকে যেতে হবে, সেটা বের করে ফেলো; তখন কি তোমার মাথায় আপেক্ষিকতা তত্ত্ব, গোলীয় জ্যামিতি কিংবা পারমাণবিক ঘড়ির কথা কাজ করে বা এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয়? হয় না। এত সব জটিল তত্ত্ব, সূত্র ও কাজকর্ম হয়ে গিয়ে তোমার সামনে নিজের অবস্থানটা চলে আসে একমুহূর্তে। কী অদ্ভুত না?