কেউ পড়ে গেলে কেন হাসি পায়

তোমার সামনে কেউ পড়ে গেলে কষ্ট পাওয়ার আগে তুমি দম ফাটিয়ে হেসে ওঠোঅলংকরণ: রাকিব রাজ্জাক

গণিত ক্লাস চলছে! বদরুল স্যার হাতে বেত নিয়ে ক্লাস করাচ্ছেন। গণিত করানোর চেয়ে জ্ঞান দিতে তাঁর বেশি ভালো লাগে। আজকের বিষয় হাঁটা। হতচ্ছাড়ার দল! প্রতিদিন স্কুলের পরে বের হয়ে হেলতে-দুলতে বাড়ি যাস। ঠিকমতো হাঁটতে পারিস না তোরা? সোজা হয়ে হাঁটবি। নয়তো হোঁচট খেয়ে পড়বি। এই বলে টেবিলের ওপর বেত দিয়ে মারলেন এক ঘা। নিউটনের তৃতীয় সূত্রের প্রভাবেই কি না কে জানে, তাঁর পা গেল পিছলে। এক পা মাটিতে ঠেকিয়ে আরেক পা আর দুই হাত শূন্যে ভাসিয়ে ভারসাম্য রাখতে যাবেন, এর মধ্যেই চিতপটাং! আর সঙ্গে সঙ্গে পুরো ক্লাস হো হো করে হেসে উঠল। খেয়াল করে দেখো, তোমার সামনে কেউ এভাবে পড়ে গেলে কষ্ট পাওয়ার আগে তুমি দম ফাটিয়ে হেসে ওঠো। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বেশির ভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই এমনটা হয়ে থাকে। কিন্তু কেন এটি ঘটে, চলো, সেটা জেনে নেওয়া যাক...

যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিদ ড. উইলিয়াম এফ ফ্রাই। তিনি মনে করেন, কোন প্রেক্ষাপটে ঘটনাটা ঘটছে, তা মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষেত্রে একটা বড় ভূমিকা পালন করে। তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপটে অমন করে কেউ পড়ে গেলে হাসি পায়। ঘুরিয়ে বললে, এ কারণেই কেউ পাঁচতলার ছাদ থেকে পড়লে আর হাসি পায় না। তখন মস্তিষ্ক বুঝতে পারে, এটা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। ভয়ংকর ঘটনা! সবচেয়ে বড় কথা এতে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যায়, যেটা কেউ রাস্তায় পড়ে গেলে হয় না।

কেউ পড়ে গেলে হাসি পাওয়ার পেছনে অনেক মনোবিদ একটা কাঠখোট্টা টার্মকেও দায়ী করেন, ‘ইনকনগ্রুইটি’ বা অনৈক্য। আমাদের আশপাশে কোনো কিছুর অসামঞ্জস্য থাকলে বা অযৌক্তিক কিছু ঘটলে হাসি পায়। তাই কারও ছোট মুখে ইয়া বড় একটা নাক দেখলে অথবা কেউ বিশাল বিশাল জুতা পরলে তুমি হেসে ফেলো।

নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে মিরর নিউরন আবিষ্কার হয়। তোমার সামনে যখন কেউ উল্টে পড়ে যায়, তখন তার মস্তিষ্কে নিউরনের গতি-প্রকৃতির একটা অবয়ব তোমার নিজের মস্তিষ্কে ফুটে ওঠে। তাতে মনে হয়, তুমি নিজেই হয়তো পড়ে যাচ্ছ। কিন্তু বাস্তবে পড়ছ না। এর ফলে তোমার মস্তিষ্কে সুড়সুড়িমতো লাগে। তাতে হাসি পায়।

কিন্তু কেবল হাসিই কেন? মস্তিষ্ক অন্য কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে হাসিকে কেন বেছে নেয়, সেটা বেশ মজার। খেয়াল করে দেখো, সারা দিনে তোমার মস্তিষ্ক কিন্তু প্রচুর কাজ করছে। প্রতি মুহূর্তে অজস্র ছোট-বড় হিসাব করতে করতে মস্তিষ্ক বেচারা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ক্রিকেট খেলার সময় কোন দিকে কী গতিতে ডাইভ দিলে তুমি ক্যাচটা ধরতে পারবে, তা থেকে শুরু করে এই যে মাত্র তুমি ক্যাচ ধরার ব্যাপারটা কল্পনা করলে, এটা পর্যন্ত সবই তোমার মস্তিষ্কের কাজ। হাসিকে বলা হয় মস্তিষ্কের চাপ কমানোর একটা মাধ্যম। তাই ভীষণ ব্যস্ত মস্তিষ্ক একটু জিরিয়ে নেওয়ার জন্য খানিকটা হেসে নেয়।

এরপর থেকে কাউকে পড়ে যেতে দেখে যদি গগনবিদারী হাসি দিয়েও ফেলো, তবে জেনো তাতে দোষের কিছু নেই। বরং তুমি এটা জেনে গেলে এমনটা কেন হয়। তবে হাসো আর না হাসো, কেউ পড়ে গেলে তাকে সাহায্য করার কথা ভুলে যেয়ো না কিন্তু। তারপর দুজনে মিলেই না হয় একটু হাসলে, মস্তিষ্কের বিশ্রাম হলো।