কেন বেলুন আকাশে ওড়ে?

ধরো তুমি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছ। হাতে সুতায় বাঁধা বেলুন। হুট করে সেই সুতা হাত থেকে ছুটে গেল। ব্যস! কাজ শেষ, সুন্দর বেলুনটা ভোঁ–দৌড় দিল আকাশের দিকে। এমন অভিজ্ঞতা কি তোমার হয়েছে?

হলেও কখনো ভেবে দেখছ, কেন এমন হয়? কেন আমাদের ফোলানো বেলুনগুলো না উড়লেও গ্যাসবেলুন উড়ে যায় আকাশে?

ঘটনাটার পেছনে কাজ করছে খুব সহজ কিন্তু চমকপ্রদ একটা বিজ্ঞান। বিজ্ঞানটা বোঝার জন্য আগে একটা জিনিস জেনে নিই। যখন তুমি একটা খালি গ্লাস হাতে নাও তখন কি আসলে গ্লাসটা খালি থাকে? মোটেও না, গ্লাসজুড়ে থাকে বায়ু। আবার সেই গ্লাসে পানি ঢাললে বায়ুর বদলে জায়গা দখল করে পানি। অর্থাৎ পুরো পৃথিবীর সব বস্তুই জায়গা দখল করে। তোমার খাটে থাকা বালিশ কিংবা পড়ার টেবিলের কলম সবাই কিন্তু নিজের জায়গা নিয়ে বসে আছে। আর যেসব জায়গা কারও দখলে নেই, সেই জায়গাজুড়ে আছে বায়ু। এবার আসো আমরা একটু পানিতে নামি। না না, চিন্তা নেই। বাতাস আমরা দেখতে পাই না বলে পানি দিয়ে যেকোনো জিনিস বুঝে নেওয়া আমাদের জন্য সহজ। তাই একটু পরই আমরা চলে আসছি বাতাসের কাছে। পুকুরে কিংবা সুইমিংপুলে যখনই কেউ নামে, তখন সে আসলে জায়গা দখল করে। আবার পানি ছেড়ে ওপরে চলে এলে সেই জায়গাটুকু চলে যায় পানির দখলে। তার মানে একটা জিনিস পরিষ্কার, পানি কিংবা বায়ু দুটো জিনিসেই আমরা আমাদের সমান জায়গা দখল করি আর সেই জায়গায় থাকা পানি কিংবা বায়ুকে সরিয়ে দিই। খালি গ্লাসে ঢালা পানি বাতাসকে সরায় আবার পানিতে নেমে সাঁতারু পানিকে সরায়। এতটুকু যদি বুঝে থাকো, তাহলেই কেল্লাফতে। পুরো জিনিসটাই তোমার জন্য সোজা।

পানিতে কোনো কিছুর ভেসে বেড়ানো আর বাতাসে উড়ে বেড়ানো—দুটোই কিন্তু একই রকম ঘটনা। শুধু পার্থক্য হলো বাতাসের চেয়ে পানি অনেক ভারী, তাই পানিতে সাঁতার কাটলেও বাতাসে তা পারি না আমরা। সুতরাং, যদি কোনোভাবে পানিতে কোনো কিছুর ভেসে বেড়ানোকে ব্যাখ্যা করতে পারি, তাহলে বাতাসের কাজও হয়ে যায়।

ধরো, পুকুরে তুমি একটা বল ছুড়ে মারলে। যদি হালকা একটা প্লাস্টিকের বল কিংবা ফুটবল হয়, তাহলে দেখা যাবে সেটা পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে। আমরা একটু আগেই জেনেছি, পানিতে পড়ামাত্রই বলটা পানি সরিয়ে নিজের জন্য জায়গা দখল করে নিয়েছে। যতটুকু পানি বলটা সরিয়েছে, ততটুকু পানির ওজন বলের ওজনের চেয়ে কম। তাই বলটা ডুবছে না! মাথার ওপর দিয়ে গেল? বুঝিয়ে বলছি। তার আগে শেষ বাক্যটা আরেকবার পড়ে নাও, উত্তর কিন্তু এটাই।

আরেকটু ভেঙে বলি, যেকোনো জিনিস পানি সরিয়ে নিজের জায়গা করে নেয়। যতটুকু পানি সরে যায় তা যদি জিনিসটার ওজনের চেয়ে কম হয়, তাহলেই তা ভেসে থাকে। তাই মিলিয়ে দেখ, পুকুরে আমরা ডুবে যাই কারণ আমাদের ওজন পানির ওজনের চেয়ে অনেক বেশি। অন্যদিকে একটা বলের ওজন পানির চেয়ে অনেক কম।

কখনো ভেবে দেখছ, কেন এমন হয়? কেন আমাদের ফোলানো বেলুনগুলো না উড়লেও গ্যাসবেলুন উড়ে যায় আকাশে?

একই রকম ঘটনা ঘটে বাতাসে। কিন্তু আগেই বলেছি, পানির চেয়ে বাতাস অনেক অনেক হালকা। খুব সহজেই এটা বোঝা যায়। একটা গ্লাস হাতে নাও। পানি ঢালার আগে আর পরে ওজনটা অনুভব করার চেষ্টা করো। দেখবে পানিভর্তি গ্লাসের ওজনের চেয়ে বাতাসভর্তি (খালি!) গ্লাসের ওজন কম। তাই আমরা আসলে আমাদের আশপাশের জিনিসগুলো বাতাসে ভেসে বেড়াতে দেখি না। কারণ, এদের কারও দখল করা জায়গার বায়ুর ওজন এদের চেয়ে বেশি না। এবার একটা প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, আমরা মুখের বাতাসে যে বেলুন ফোলাই, সেটা তো বাতাসের সমান ওজন নিয়ে বাতাসের জায়গা দখল করে। তাহলে সেটা কেন ওড়ে না? কারণটা হলো, আমাদের মুখের বাতাস আর আশপাশে থাকা বাতাস এক না। ফুঁ দেওয়া বাতাসে থাকে কার্বন ডাই–অক্সাইড, যেটা খুব ভারী একটা গ্যাস। তার সঙ্গে যোগ হয় বেলুনের নিজের ওজন, যা একই জায়গা দখল করে থাকা বাতাসের চেয়ে বেশি। তাই বেলুনটা নিচের দিকে নামতে থাকে। আর সুতায় বাঁধা যে গ্যাসবেলুন আমরা কিনি, তাতে থাকে হিলিয়াম গ্যাস। এই গ্যাস অত্যন্ত হালকা। এতই হালকা যে এর ওজনের সঙ্গে বেলুনের ওজন যোগ হলেও তা একই জায়গায় থাকা বাতাসের চেয়ে বেশি হয় না। ফলে হাত থেকে ছুটলেই গ্যাসবেলুন দৌড় দেয় আকাশে।

যদি পুরো বিষয়টা পরিষ্কার বুঝে থাকো তাহলে বলো তো, অসংখ্য গ্যাসবেলুন হাতে নিয়ে কোনো মানুষ কি আকাশে উড়ে যেতে পারবে? যদি পারেও তাহলে কেন পারবে?

ভাবার দায়িত্ব তোমাদের।