গান মনে থাকে কেন?

অলংকরণ : জাহিন যাঈমাহ্‌ কবির
অলংকরণ : জাহিন যাঈমাহ্‌ কবির

আরেকটু হলেই মিলে যাবে অঙ্কটা। শুধু শেষ একটা সূত্র কাজে লাগালেই হলো। কিন্তু কিছুতেই মনে পড়ছে না সূত্রটা। কী বিপদ! অথচ হুট করে এখন যদি প্রিয় গানের কয়েকটা চরণ লিখতে বলা হতো, কে ঠেকাত তখন?

প্রায়ই হয় এমন। মা   আঙুল তুলে মুখস্থ করিয়ে বাজারে পাঠান ঋভুকে। কী কী লাগবে, তা বলে দেন ভালোমতো। অল্প কয়েকটা  জিনিসই তো, তার জন্য আবার লিস্ট লেখা লাগে? বাড়াবাড়ি মনে হয় ঋভুর। কিন্তু কিছুক্ষণ পর ঠিকই আলুর বদলে পেঁয়াজ নিয়ে বাড়ি ফেরে সে। মা দরজা খোলার আগ পর্যন্ত তার মুখে বাজতে থাকে প্রিয় গান। দরজা খোলার পর তো ইতিহাস!

কত কিছু ভুলে যাই। কিন্তু গানের চরণ ভুলি না কেন? স্তব্ধ পরীক্ষার হলে হঠাত্ই কেন মাথার ভেতর বেজে ওঠে প্রিয় গান? অনেকের কাছে হয়তো অহেতুক একটা প্রশ্ন মনে হতে পারে এটা। কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বহু বছর কাজ করে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের কাছেও এটি এখনো রহস্য। 

তবে একদল বিজ্ঞানীর মতে, গানের কথা সংরক্ষণের জন্য আমাদের মস্তিষ্কে পুরোপুরি আলাদা একটা জায়গা আছে। আর জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউটের গবেষকদের মতে, মস্তিষ্কে গানের সুর আর কথা আলাদাভাবে সংরক্ষিত হয়। 

‘গান’ কিন্তু আমাদের চারপাশকে রীতিমতো বশ করে রেখেছে। না চাইতেও এখন আশপাশ থেকে ঢেউ হয়ে ভেসে আসে গান। আর একটা গান পছন্দ হলেই বারবার তা শোনে অনেকেই। এভাবে বারবার একই শব্দ-সুরের আনাগোনা চলতে চলতে শব্দগুলো স্থায়ী হয় আমাদের স্মৃতিতে। আবার আমাদের অনুভূতির অনেকাংশই দখল করে রেখেছে গানের কথা ও সুর। একেকটা গান একেকটা সময়ের সাক্ষী। ছোটবেলা নিয়ে, মা-বাবাকে নিয়ে, দেশকে নিয়ে গাওয়া গানগুলো সবার মনেই চিরন্তন খুঁটি গেড়ে বসে। বয়স বাড়লে হঠাত্ ওই নির্দিষ্ট গান শুনলে আমাদের পুরোনো স্মৃতির ঝাঁপি যেন খুলে যায়। বয়স বাড়লে সাধারণ যে রোগের ঝুঁকিতে পড়তে হয় তার একটা ডিমেনসিয়া। রোগীর স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায় ডিমেনসিয়ায়। কিন্তু অনুভূতির জায়গায় গানের চরণগুলো জীবিত থাকে ঠিকই। দেখা গেছে, পিয়ানো বা হারমোনিয়ামবাদক কেউ ডিমেনসিয়ায় অনেক স্মৃতি ভুলে গেলেও তাকে ওই বাদ্যযন্ত্রের সামনে বসিয়ে দিলে সে নিজের অজান্তেই কোনো প্রিয় গানের সুর বাজাতে পারছে।

আরেকটি কারণ হচ্ছে গানের কথা আমাদের মস্তিষ্কের মটর মেমোরিতে সংরক্ষিত হয়। আসলে মটর মেমোরির স্মৃতিগুলো আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয় এবং অবচেতনভাবেই সেই স্মৃতি অনুযায়ী কাজ করতে পারি (যেমন: আমরা সচেতনভাবে চিন্তা না করেই হাঁটতে কিংবা সাঁতার কাটতে পারি)। সে কারণেই এই স্মৃতিগুলো আমাদের সহজেই মনে থাকে এবং প্রয়োজনে যখন-তখন কাজে লাগাতে পারি। 

আবার পরীক্ষার পড়া মনে না থাকলেও গান মনে থাকে আমাদের। কারণ, প্রতিনিয়ত অনুশীলন। এই অনুশীলন সাতসকালে উঠে রেওয়াজ করা নয়, উঠতে, বসতে, খাবার টেবিল থেকে শুরু করে বাথরুমে চলা গুনগুন গান। বারবার অনুশীলন করলে যেকোনো কাজে পটু হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। একই কারণে গানের কথা আমাদের মনে থাকে অনেক দিন।