‘জায়গাটা বেশ নির্জন,’ মন্তব্য করল জিমি পারকার। গাড়ির সামনের সিটে বাবার পাশে বসে আছে সে।
‘হওয়ারই কথা,’ পেছনের সিটে বসা অয়ন হোসেন সায় দিল। ‘সামনের ৩০ মাইলের ভেতর উইলো ক্রিকই একমাত্র জনবসতি। পুরো রাস্তাটা আমরা ফাঁকাই পাব। কদাচিত্ দু-একটা পুরোনো গাড়ির দেখা মিলতে পারে। হয়তো কোনো কাজে শহরে যাচ্ছে। নাহলে দুই পাশে বিস্তীর্ণ মাঠ অথবা সারি সারি গাছ, এ ছাড়া কিচ্ছু দেখার নেই।’
‘খুব তো জ্ঞান দিয়ে দিলি!’ জিমি মুখ ভেঙচাল।
‘যা-ই বলো,’ গাড়ি চালাতে চালাতে বললেন জিমির বাবা ডা. গ্যারি পারকার, ‘অয়নের এই দিকটা কিন্তু আমার বেশ লাগে। সবকিছুতেই ওর ইন-ডেপথ নলেজ।’
‘নলেজ না ছাই!’ জিমি বিরক্ত কণ্ঠে বলল। ‘ও যে কোলের ওপর একটা গাইড বুক নিয়ে বসেছে, তা তো দেখতে পাচ্ছ না।’
‘তোমার তো তা-ও নেই,’ হেসে বললেন ডা. পারকার। ‘সে যাক, অয়ন, তোমার গাইড বুক উইলো ক্রিক সম্পর্কে কী বলছে?’
‘ডিটেইল কিছু নেই,’ বইয়ের পাতা ওল্টাল অয়ন। ‘জায়গাটা ছোট্ট। লোকসংখ্যা খুবই কম। মাত্র এক শ আটান্ন জন। শহর বলা যাবে না, আবার গ্রামও নয়। গ্রাম্য-শহর বলাই বোধ হয় যুক্তিসংগত হবে। জায়গাটার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি—মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই, ইন্টারনেটও নেই। আজও পুরোনো যুগে পড়ে আছে উইলো ক্রিক।’
‘বলিস কী!’ জিমির কণ্ঠে অবিশ্বাস।
‘অবাক হওয়ার কিছু নেই,’ বলল অয়ন। ‘আমেরিকার আনাচেকানাচে এমন বহু জায়গা রয়েছে, যেখানে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। সেখানকার মানুষেরাই আসলে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে চায়।’
‘তাহলে উইলো ক্রিক টিকে আছে কী করে?’
‘কাঠের ব্যবসা। অধিবাসীরা প্রায় সবাই কাঠব্যবসার সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত। লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির আঠারো শতাংশ কাঠ এখান থেকে সাপ্লাই হয়। এ ছাড়া আছে প্রসপেক্টিং। সোনার খোঁজে বহু লোক এই এলাকার বনজঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। উইলো ক্রিককে টিকিয়ে রেখেছে এরাই।’
‘আর শুনতে চাই না। তোর লেকচার থামা।’ একরাশ বিরক্তি ঝরল জিমির গলায়। ‘বকবক করে মাথা ধরিয়ে দিচ্ছিস। আমরা যাচ্ছি মাছ ধরতে, থাকব নদীর ধারে ক্যাম্প করে—শহর নিয়ে গবেষণা করার দরকারটা কী?’
‘তাহলে কি গোটা রাস্তা বোবার মতো বসে থাকব?’
‘কেন, তোর স্টকে লেকচার ছাড়া অন্য কিছু নেই?’
‘অন্য কিছু? বেশ, তাহলে মজাদার কিছু ট্রিভিয়া শোন...’
‘ওহ গড!’ কপাল চাপড়াল জিমি।
ঘনিষ্ঠ বন্ধু অয়ন আর জিমি। স্কুলে একই ক্লাসে পড়ে, থাকেও একই পাড়ায়, মুখোমুখি দুটো বাড়িতে। অয়নের বাবা শাহাদাত হোসেন বড় প্রকৌশলী, লস অ্যাঞ্জেলেসের একটা বিরাট ফার্মের চিফ ইঞ্জিনিয়ার তিনি। স্ত্রীসহ আমেরিকায় অভিবাসন করার পর প্রবাসজীবনের শুরুতেই পরিচয় হয়েছিল চিকিত্সক দম্পতি গ্যারি আর ক্যাথরিন পারকারের সঙ্গে। তখন থেকেই দুই পরিবারের মধ্যে বন্ধুত্ব। সেটা গড়িয়েছে সন্তানদের মধ্যেও।
মাছ ধরার ঝোঁক আছে শাহাদাত সাহেব ও ডা. পারকারের। বেশ কিছুদিন থেকেই দুজনে ফিশিংয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। উইলো ক্রিকের খবর পেয়েছেন ডা. পারকারের এক সহকর্মীর কাছ থেকে—জায়গাটা নাকি মাছ ধরার জন্য অসাধারণ। সঙ্গে সঙ্গে উইকেন্ডে মাছ ধরার প্রোগ্রাম করে ফেলেছিলেন তাঁরা। অয়ন আর জিমিও জুটেছে তাঁদের সঙ্গে। কিন্তু রওনা হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে একটা জরুরি কাজ পড়ে যাওয়ায় শাহাদাত সাহেব আসতে পারেননি। তাঁকে ফেলে ওরাও আসতে চায়নি। কিন্তু শাহাদাত সাহেব একরকম ঠেলেঠুলেই ওদের পাঠিয়ে দিয়েছেন। তাঁর জন্য বাকিদের প্ল্যান-প্রোগ্রাম বানচাল করতে চাননি।
উইলো ক্রিকে যখন পৌঁছাল ওরা, তখন আঁধার নামতে শুরু করেছে। পশ্চিম আকাশে ছড়িয়ে পড়েছে লাল আভা। শহরের ধুলোমলিন পথের এক পাশে গাড়ি থামালেন ডা. পারকার।
‘এহ হে, রাত হয়ে গেল!’ জিমি বলল। ‘বেলা থাকতেই পৌঁছাব ভেবেছিলাম। ক্যাম্প খাটিয়ে ছিপ ফেলা যেত।’
‘রাস্তা এত খারাপ হবে, বুঝতে পারিনি,’ ডা. পারকার বললেন। ‘স্পিডই তুলতে পারলাম না।’
‘থামলাম কেন, আঙ্কেল?’ অয়ন জিজ্ঞেস করল।
‘বড়শির জন্য টোপ কিনতে হবে, ভুলে গেছ? তা ছাড়া রাতটাও বোধ হয় এখানেই কাটাতে হবে। অন্ধকারে ক্যাম্পের জায়গা খোঁজা, তাঁবু খাটানো...অনেক ঝামেলা।’
‘কিন্তু এখানে থাকব কোথায়?’ জিমি প্রশ্ন করল।
‘কিছু একটা নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে—হোটেল বা কটেজ। চলো, খোঁজ নেওয়া যাক।’
জেনারেল স্টোরটা সহজেই পাওয়া গেল। কাউন্টারে দাঁড়ানো লোকটাকে প্রয়োজনের কথা জানাতেই বলল, ‘এই রাতের বেলা টোপ দিয়ে করবেন কী?’
‘এখনই লাগবে না অবশ্য,’ ডা. পারকার বললেন। ‘সকালে হলেই চলবে।’
‘ঠিক আছে, ব্যবস্থা করে রাখব। সকালে নিয়ে যাবেন। আপনার নামটা...’
‘গ্যারি পারকার।’
‘আমি জস ওয়াইন,’ এই প্রথম হাসলেন লোকটা। ‘ভালো কথা, রাতে থাকছেন কোথায়?’
‘ক্যাম্পিংয়ের সরঞ্জাম সবই ছিল, কিন্তু এখন তো সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ওগুলো খাটানো অনেক সমস্যা। এখানে হোটেল-জাতীয় কিছু নেই?’
‘কিসের হোটেল! ডেভের সরাইখানা আছে।’ এবার কানের কাছে মুখ এনে জস ফিসফিসিয়ে বলল, ‘কিন্তু ওখানে না গেলেই ভালো করবেন। জায়গাটায় ভূতের আসর আছে।’
কথাটা শুনে কনুই দিয়ে জিমিকে একটা গুঁতো দিল অয়ন।
‘ভূতের আসর!’ ডা. পারকার অবাক হলেন। ‘ভূত বলে কিছু আছে নাকি?’
‘এত কিছু তো জানি না। তবে ওখানে ভৌতিক ব্যাপারস্যাপার ঘটছে। লোকজন তো ভয়ে ওখানে পা মাড়ানোই ছেড়ে দিচ্ছে। আপনাদের যদি থাকার খুব বেশি সমস্যা হয় তো, আমার বাড়িতে একটা কামরা খালি আছে। রাতটা কাটিয়ে দিতে পারেন। ভাড়াটাড়া লাগবে না।’
‘যত্তসব আজগুবি কথাবার্তা...’ বিরক্ত হলেন ডা. পারকার, তবে কথা শেষ করতে পারলেন না। তার আগেই হুড়মুড় করে দরজা ঠেলে স্টোরের ভেতরে ঢুকল এক তরুণ। হাঁপাচ্ছে।
‘আরে, জনি যে!’ জস ব্যতিব্যস্ত কণ্ঠে বললেন। ‘কী হয়েছে?’
‘আর বলবেন না,’ তরুণ বলল। ‘সরাইখানায় গিয়েছিলাম।’
‘আবার?’
‘কী করব বলুন? দুধ ডেলিভারি দিতে হবে না?’
‘তারপর?’
‘তারপর আর কী? আবার সেই গায়েবি আওয়াজ! হলঘরের সবাই শুনেছে। যে যেভাবে পেরেছে, পড়িমরি করে ছুটেছে। মিসেস পিনম্যান তো ভয়ে অজ্ঞানই হয়ে গেলেন।’
‘সর্বনাশ!’
‘ভদ্রমহিলার অবস্থা বিশেষ ভালো না। এদিকে ডাক্তার স্টুয়ার্টও শহরে নেই। কী যে হবে!’
কথাটা শুনেই ডা. পারকার উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। বললেন, ‘আমি একজন ডাক্তার। সাহায্য করতে পারব। রোগী কোথায়?’
‘সরাইখানায়,’ ভুরু কুঁচকে বলল জনি। ‘কিন্তু জেনেশুনে ভূতের আড্ডাখানায় যাওয়াটা কি উচিত হবে?’
‘ননসেন্স! তুমি আমাকে নিয়ে যাবে কি না বলো!’
কী যেন ভাবল জনি। তারপর বলল, ‘চলুন। আমি কিন্তু ভেতরে ঢুকব না। দূর থেকে দেখিয়ে দিয়েই ভাগব।’
‘ঠিক আছে, চলো।’
ভেতরে ভেতরে কৌতূহলে মরে যাচ্ছিল অয়ন আর জিমি। এমন সুযোগ আসায় খুশিতে লাফিয়ে ওঠার অবস্থা। ডা. পারকারের সঙ্গে ছুটল ওরা।
দুই
সরাইখানার নাম ‘উইলো ক্রিক ইন’। মালিক ডেভিড পিনম্যান। বাইরে একটা সাইনবোর্ড ঝোলানো আছে। বোঝা গেল, সরাইয়ের মালিকের স্ত্রীই অজ্ঞান হয়ে গেছেন।
দরজায় টোকা দিতেই বয়স্ক একজন লোক উঁকি দিলেন। ডা. পারকার বললেন, ‘আমি একজন ডাক্তার। শুনলাম, কে নাকি এখানে অসুস্থ হয়ে পড়েছে...’
‘আসুন, আসুন,’ তাড়াতাড়ি সরে দাঁড়ালেন লোকটা। ‘আমি ডেভিড পিনম্যান, এই সরাইখানার মালিক। আমার স্ত্রী...হঠাত্ ভয় পেয়ে...’
‘ঘটনাটা আমি শুনেছি,’ ডা. পারকার বাধা দিলেন। ‘চলুন, রোগীকে দেখা যাক। কোথায় তিনি?’
‘বিছানায়, এখনো জ্ঞান ফেরেনি।’
ভেতরে ঢুকে পিনম্যানের সঙ্গে রোগীর ঘরে চলে গেলেন ডা. পারকার। অয়ন আর জিমি দাঁড়িয়ে রইল হলঘরে।
ঘরটা তেমন বড় নয়। অল্প কয়েকটা চেয়ার-টেবিল আছে। তবে সেগুলো এই মুহূর্তে খালি। আর আছে একটা বার। কাউন্টারটা মাঝারি আকৃতির। দেয়ালের সঙ্গে ঠেস দেওয়া র্যাকে সারি সারি কাচের বোতল। দেখলে অনেকটা ওয়েস্টার্ন ছবির স্যালুনের কথা মনে পড়ে যায়। গোটা কামরায় একজন মাত্র মানুষকে দেখা গেল। কাউন্টারের পেছনে ফ্যাকাশে মুখে দাঁড়িয়ে আছে একটা মেয়ে। সেদিকেই এগিয়ে গেল ওরা।
‘হ্যালো!’ একটু হেসে বলল অয়ন।
‘হ্যালো!’ প্রত্যুত্তর দিল মেয়েটাও, কিন্তু গলা কাঁপছে।
‘আমি অয়ন হোসেন, ও জিমি পারকার। ওই যে ডাক্তার এলেন—জিমির বাবা, গ্যারি পারকার।’
‘নতুন এসেছ বুঝি? বেড়াতে?’
‘উঁহু, মাছ ধরতে। এসেই তো শুনলাম কী সব নাকি ঘটছে এখানে। ব্যাপারটা কী?’
‘প্লিজ, ওসব আলোচনা কোরো না। এমনিতেই ভয় লাগছে।’ মেয়েটা দারুণ নার্ভাস। ‘তোমরা কিছু খাবে?’
পেটে হাত বোলাল জিমি, ছুঁচোর নাচানাচি শুরু হয়ে গেছে। বলল, ‘স্যান্ডউইচ হবে? খুব খিদে পেয়েছে।’
‘নিশ্চয়ই। দুই মিনিট লাগবে।’
দুই মিনিট নয়, পাঁচ মিনিট লাগল মেয়েটার ফিরতে। ততক্ষণে অয়ন আর জিমি একটা টেবিল দখল করে বসল। এর মধ্যে তিনজন লোক হলঘরে এল ভেতর থেকে। মেয়েটার খোঁজ করল—রাতের খাবারের জন্য। তাদের কথা থেকে জানা গেল, মেয়েটার নাম লিসা। একটু অবাকই হলো অয়ন। ওর ধারণা ছিল, ভূতের ভয়ে সবাই সরাইখানা ছেড়ে পালিয়েছে। এখন মনে হচ্ছে, সেটা ভুল।
লিসা ফিরতেই অয়ন বলল, ‘একটু বসুন না, কথা বলি।’
‘স্যরি, কাজ আছে। বোর্ডারদের খাবার দিতে হবে। তারপরই আমি বিদায় হচ্ছি। আর এ মুখো হব না।’
‘যাবেন কোথায়?’
‘আপাতত আমার খালার বাসায়। শহরের উত্তরে থাকেন তিনি। এরপর কী করব জানি না। অন্তত এখানে আর চাকরি করব না।’
কথা শেষ করে লিসা কিচেনে চলে গেল।
অয়নের কপালে ভ্রুকুটি। স্যান্ডউইচ ছুঁয়েও দেখল না। ব্যাপারটা লক্ষ করে জিমি বলল, ‘কী ভাবছিস?’
‘এখানে একটা গন্ডগোল আছে।’
‘গন্ডগোল! আছে তো ভূত!’
‘ধ্যাত্, ভূতফুত সব বোগাস! ঝামেলা অন্য কোথাও।’
‘শিয়োর হচ্ছিস কীভাবে? শেক্সপিয়ার কি বলেছেন, জানিস তো? ‘দেয়ার আর মেনি থিংস ইন হেভেন অ্যান্ড আর্থ...’
‘ফাজলামি করিস না, জিমি। বি সিরিয়াস। ভূত বলে কিছু নেই। এখানকার গলদটা আমাদেরই খুঁজে বের করতে হবে।’
‘আরেকটা রহস্য?’ জিমির চোখ চকচক করে উঠল।
শখের গোয়েন্দা ও আর অয়ন। ইতিমধ্যে বেশ কিছু রহস্যের সমাধানও করেছে। রহস্যের গন্ধ পেলে খুশি হওয়াই স্বাভাবিক।
‘হ্যাঁ, চমত্কার একটা রহস্য,’ সায় জানাল অয়ন। ‘এটার সমাধান করতে হবে আমাদের।’
‘কিন্তু শুরু করবি কোত্থেকে? কোনো সূত্রটুত্র তো চোখে পড়ছে না।’
‘প্রথমে মূল ঘটনাটা জানতে হবে আমাদের। এখনো তো কিছুই জানি না। চল, কিচেনে গিয়ে লিসাকে চেপে ধরি।’
‘রেগে গিয়ে যদি ঝাঁটাপেটা করে?’ জিমির কণ্ঠে সংশয়।
‘কপালে থাকলে খাবি ঝাঁটাপেটা!’ অয়ন হাসল।
‘তাহলে চল,’ জিমি উঠে দাঁড়াল। ‘কপালের লিখন পরখ করে আসি।’
দুই বন্ধুকে কিচেনে ঢুকতে দেখে চমকে গেল লিসা।
‘আরে! তোমরা এখানে কেন? কী চাই?’
‘স্যরি,’ ক্ষমা চাইল অয়ন। ‘আপনার সময় নেই দেখে ভাবলাম এখানে এসেই কথা বলি।’
‘তোমাদের মতলবটা কী বলো তো?’
‘আমরা আসলে এখানকার ভূতটা সম্পর্কে জানতে চাইছিলাম।’
‘আবার ওই প্রসঙ্গ? প্লিজ, বললাম তো এ নিয়ে কথা বলতে চাই না। এক্ষুনি হয়তো আবার গায়েবি আওয়াজ শোনা যাবে।’
‘তাই নাকি! আওয়াজটা কী রকম?’
‘হুবহু মি. রেকটারের গলার মতো।’
‘মি. রেকটারটা আবার কে?’ জিমি জিজ্ঞেস করল।
‘প্রসপেক্টর। একসময় এখানেই থাকতেন, নিচতলার কোনার কামরাটায়।’
‘তাঁর গলা শুনে ভয় পাওয়ার কী আছে?’
‘কারণ ভদ্রলোক মারা গেছেন দুই মাস আগে—ওই কামরাতেই।’
‘কীভাবে মারা গেলেন?’
‘অসুস্থতায়। সারাজীবন শরীরের ওপর তো কম অত্যাচার করেননি! হাজারটা রোগ ছিল।’
‘ভূতের উপদ্রব কি তখন থেকেই?’
‘না, সেটা শুরু হয়েছে এক সপ্তাহ ধরে।’
‘ইন্টারেস্টিং!’ অয়ন মন্তব্য করল।
সঙ্গে সঙ্গে চোখ বড় হয়ে গেল লিসার। বলল, ‘তোমাদের চালাকি আমি ধরে ফেলেছি, ছেলেরা। কৌশলে আমার পেট থেকে কথা বের করতে চাইছ। এই আমি মুখে কুলুপ আঁটলাম। আর কিচ্ছু বলব না। এখন যাও!’
‘প্লিজ, প্লিজ,’ হাতজোড় করে অনুনয় করল অয়ন, ‘এমন করবেন না। পুরো গল্পটা শেষ করুন, প্লিজ। নাকি পায়ে ধরব?’
‘খবরদার, আমাকে ছোঁবে না!’
‘তাহলে বলুন না!’
‘ভারি নাছোড়বান্দা দেখছি! ভীষণ জ্বালাতে পারো!’
‘জ্বালানোর আর দেখেছেন কী?’ একগাল হাসল অয়ন। ‘স্কুলে আমাদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে মাথার চুল ছিঁড়তে ছিঁড়তে এক স্যার তো টাকমাথাই হয়ে গেলেন। এখন ওনাকে সবাই ডাকে—টেকো স্যার!’
হেসে ফেললেন লিসা। বললেন, ‘থাক, আর চাপা মারতে হবে না। আসল কথা বলো—ভূত নিয়ে তোমাদের এত আগ্রহ কেন?’
সত্যি কথা বলে লাভ নেই। ওদের বয়সী গোয়েন্দার কথা শুনলে হেসেই উড়িয়ে দেবে লিসা। তাই বিশ্বাসযোগ্য আরেকটা গল্প সাজাল অয়ন। বলল, ‘সামনে আমাদের একটা প্রতিযোগিতা আছে। স্কুলের সবাই যে যার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা লিখে জমা দেবে। যে ফার্স্ট হবে, তার জন্য একগাদা পুরস্কার আছে। ভেবে দেখুন, এ রকম একটা গা-ছমছমে অভিজ্ঞতা যদি জমা দিতে পারি, ফার্স্ট হওয়া ঠেকায় কে? তাই বলছিলাম, যদি একটু সাহায্য করেন...’
মনে হলো গল্পটা লিসা বিশ্বাস করেছেন। একটু ভেবে বললেন, ‘ঠিক আছে, করব সাহায্য। বলো, কী জানতে চাও?’
‘এক সপ্তাহ আগে ঠিক কী ঘটেছিল?’
‘কী আবার ঘটবে? সন্ধ্যাবেলায় প্রতিদিনের মতো শহরের লোকজন আড্ডা দিচ্ছিল হলঘরে। হঠাত্ একটা প্যাঁচা ডেকে উঠল...’
‘প্যাঁচা! ঘরের ভেতর?’
‘হ্যাঁ। তারপর শুরু হলো কাশির শব্দ, ঠিক যেভাবে বুড়ো রেকটার কাশতেন। তারপর শোনা গেল তার গলা।’
‘কী বলল সে?’
‘পালাও, সবাই পালাও! মহাবিপদ নেমে আসছে, মহাবিপদ!’ এরপর কী যে হুড়োহুড়ি শুরু হলো, আমার আর হুঁশ ছিল না।’
‘কিন্তু ভূতটা হঠাত্ এ কথা বলল কেন? বিশেষ কোনো ঘটনা কি ঘটেছিল তার আগে?’
‘নাহ্, আমার তো মনে পড়ে না।’
‘হুঁ,’ একটু চিন্তিত হলো অয়ন। কবার ঘটেছে এমন?’
‘চার...না, আজকেরটা নিয়ে পাঁচবার। প্রতিবারই হলঘরে বেশ কয়েকজন করে লোক ছিল।’
‘লোক না থাকলে কিছু ঘটে না?’
‘না। মানে, এখন পর্যন্ত ঘটেনি।’
‘তার মানে আওয়াজগুলো হচ্ছে শুধু ভরা মজলিশে,’ আনমনে মাথা ঝাঁকাল অয়ন। ‘ইন্টারেস্টিং!’
‘মানে?’ লিসা ভুরু কোঁচকাল।
‘না, কিছু না। এবার বলুন, ভুতুড়ে কাণ্ডের ফলাফল কী দাঁড়িয়েছে?’
‘সেটাও বলে দিতে হবে? সরাইখানার নাম ডুবেছে। বোর্ডাররা সব ভেগেছে। লোকজন আসা বন্ধ হয়েছে। আজ কী ভেবে কয়েকজন এসেছিল, কাল থেকে আর কেউই আসবে না।’
‘বোর্ডার নেই বলছেন কেন?’ জিজ্ঞেস করল জিমি। ‘আমরা যে তিনজনকে দেখলাম!’
‘এরাই শুধু আছে। অন্যদের তুলনায় সাহস একটু বেশিই বোধ হয়। এখনো পালায়নি। তবে শিগগির পালাবে, কোনো সন্দেহ নেই।’
‘কবে থেকে এখানে আছে ওরা?’ জানতে চাইল অয়ন।
‘এক সপ্তাহের কিছু বেশি। প্রথম ঘটনার দুদিন আগে এসেছে এরা।’
‘একই সঙ্গে?’
‘নাহ্। একজন সকালে, বাকি দুজন সন্ধ্যায়—আলাদা আলাদা।’
‘বোর্ডারদের সম্পর্কে বলুন।’
‘বয়স্ক একজন আছেন, তিনি হলেন প্রফেসর হার্ডিন। জিয়োলজিস্ট। এখানকার বনভূমির ওপর গবেষণা করছেন। আত্মভোলা মানুষ, কোনো কিছুতেই তাঁর মনোযোগ নেই। বাকি দুজন কাঠব্যবসায়ী। একজন ড্যান কলসন, অন্যজন সেথ বেকার। তিনজনেই প্রথমবারের মতো এসেছেন উইলো ক্রিকে।’
‘ভূত সম্পর্কে এবার বলুন। মানে, মি. রেকটার সম্পর্কে।’
‘বলার মতো তেমন কিছু নেই। শান্তশিষ্ট মানুষ ছিলেন। কারও সঙ্গে ঝামেলায় জড়াতে দেখিনি কোনো দিন। সারাজীবন উইলো ক্রিকের আশপাশ চষে বেড়িয়েছেন সোনার খোঁজে। কিন্তু খনিটনি পাননি। সরাইখানার কামরাটা ভাড়া করেছিলেন জিনিসপত্র রাখার জন্য। নিজে বেশির ভাগ সময় বাইরেই থাকতেন।’
‘কামরাটার এখন কী অবস্থা?’
‘তালাবদ্ধ। মি. রেকটারের জিনিসপত্র এখনো ভেতরে পড়ে আছে। সেদিনও মি. পিনম্যান ভাবছিলেন, ওগুলো বিক্রি করে দেবেন।’
‘তাতেই ভূতটা খ্যাপেনি তো?’ জিমি আচমকা বলে উঠল।
‘কে জানে!’ ঠোঁট ওল্টালেন লিসা। ‘কিন্তু সেটাই যদি কারণ হয়, তো জিনিসপত্রের কথা বলে না কেন? কেন সবাইকে পালাতে বলে?’
‘এটাই জানতে হবে,’ বিড়বিড় করল অয়ন। তারপর বলল, ‘থ্যাঙ্ক ইউ, লিসা। অনেক তথ্য দিলেন। আমরা এবার যাই।’
কিচেন থেকে বেরিয়ে এল দুজনে। দেখল, হলঘরে দাঁড়িয়ে পিনম্যানের সঙ্গে কথা বলছেন ডা. পারকার। ওদের দেখে বললেন, ‘এই তো অয়ন-জিমি। ছেলেরা, এক দৌড়ে গাড়ি থেকে আমার ওষুধের ব্যাগটা নিয়ে এসো দেখি।’
‘কেমন দেখলে রোগী?’ জিমি জিজ্ঞেস করল।
‘তেমন সিরিয়াস কিছু না। হার্ট একটু দুর্বল। তাই ভয়ে কাহিল হয়ে গেছে।’
সরাইখানা থেকে দুজনে বেরিয়ে এল। হাঁটতে হাঁটতে অয়ন বলল, ‘কেউ একজন সরাইখানাটা খালি করতে চাইছে। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন?’
‘ভুতুড়ে আওয়াজটাই বা হচ্ছে কীভাবে?’ জিমি জিজ্ঞেস করল।
‘ওটা কোনো ব্যাপার নয়। লুকানো টেপ রেকর্ডার বা স্পিকার হয়তো ব্যবহার করা হচ্ছে।’
‘হুম। তাহলে আমাদের পরবর্তী চালটা কী হবে?’
‘বুঝতে পারছি না। রহস্যজনক তিন বোর্ডারের ঘর তল্লাশি করতে পারলে ভালো হতো। সেই সঙ্গে রেকটারের ঘরটাও। আমার ধারণা, রেকটারের মৃত্যুর সঙ্গে এই রহস্যটার যোগসূত্র আছে।’
‘কিন্তু ঘর তল্লাশি করবি কীভাবে?’
‘দেখি, উপায় একটা বেরিয়ে যাবে।’
ব্যাগ নিয়ে ফিরে এসে ওরা দেখল, হলঘরে বোর্ডাররা খেতে বসেছে। ডা. পারকারকে ব্যাগ দিতেই তিনি রোগীর ঘরে চলে গেলেন। একটানে জিমিকে ঘরের কোনায় নিয়ে এল অয়ন। ফিসফিস করে বলল, ‘এই-ই সুযোগ! সবাই খেতে বসেছে। ওদের রুমগুলো দেখে আসি।’
‘মাথা খারাপ! ধরা পড়ে যাবি তো!’
‘পড়ব না। কারণ তুই থাকছিস এখানে। কারও খাওয়া যদি আগেভাগেই শেষ হয়ে যায়, তাহলে সংকেত দিবি। পনেরো মিনিটের মধ্যেই ফিরব আমি।’
‘কীভাবে সংকেত দেব?’
‘দু-একটা কাচের গ্লাস ভাঙতে পারবি না?’
‘নিশ্চয়ই। কিন্তু তুই ঢুকবি কীভাবে? সবাই নিশ্চয়ই ঘরের দরজা বন্ধ করে খেতে এসেছে।’
‘জানালা খোলা পাব নির্ঘাত। তুই থাক এখানে। আমি গেলাম।’
শিস দিতে দিতে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল অয়ন। ওর অনুমান ভুল নয়। সব কটি রুমেরই জানালা খোলা পেল। দ্রুত তল্লাশি চালাল ও।
প্রফেসরের রুমটা একনজরেই চিনতে পারল। দারুণ অগোছালো। বই-খাতা আর জামাকাপড় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। অস্বাভাবিক কোনো কিছু পেল না ওখানে।
বাকি দুটো রুমের কোনটা কার, বোঝা গেল না। তবে এরা ভারি সচেতন। ব্যাগ, স্যুটকেসে তালা। কোনো কিছু বাইরেও পড়ে নেই। একটা ঘরের টেবিলের ড্রয়ারে এক বান্ডিল তাস পেল অয়ন। কেমন জানি সেগুলো অন্য রকম। অন্য ঘরের বিছানার তলায় হাত দিয়ে ও রীতিমতো থমকে গেল।
একটা পিস্তল।
বরাদ্দ পনেরো মিনিট পেরিয়ে যাচ্ছে। আঁতিপাঁতি করে আরও কিছু খোঁজার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু সেটা আর সম্ভব হলো না। হলঘরে ফিরে গেল ও।
বোর্ডারদের খাওয়া শেষ হয়ে গেছে। ডা. পারকারও রোগী দেখে ফিরে এসেছেন। জিমি জিজ্ঞেস করল, ‘কিছু পেলি?’
জবাব না দিয়ে মি. পিনম্যানের দিকে এগিয়ে গেল অয়ন। বলল, ‘আপনার সঙ্গে একটু কথা বলার ছিল, স্যার।’
ঠিক তক্ষুনি একটা প্যাঁচার ডাক শোনা গেল। সরাইয়ের মালিকের চেহারায় আতঙ্ক ফুটল। এরপর শুরু হলো কাশির শব্দ। ভয়ানক কাশি। শব্দ শুনে মনে হচ্ছে, কাশতে কাশতে কারও জান বেরিয়ে যাচ্ছে। তীক্ষ চোখে সবার ওপর নজর বোলাল অয়ন। সবাই স্থির হয়ে গেছে।
‘পালাও! পালাও!’ একজন বৃদ্ধের কাঁপা গলা শোনা গেল। ‘বাঁচতে চাইলে পালাও এক্ষুনি। বিপদ নেমে আসছে। মহাবিপদ!’
আরেকবার প্যাঁচার ডাক শোনা গেল। তারপর সব চুপচাপ। অনেকক্ষণ কেউ কথা বলল না। শেষে নীরবতা ভাঙল অয়ন।
‘সত্যিই ভূত আছে এখানে। আমরা কেউই নিরাপদ নই। মি. পিনম্যান, এরপরও সরাইয়ে লোকজন আসতে দেওয়া বা থাকতে দেওয়া ঠিক হচ্ছে না আপনার। এক্ষুনি সবাইকে বের করে তালা ঝুলিয়ে দিন।’
‘ছেলেটা ঠিকই বলেছে,’ প্রফেসর হার্ডিন বললেন। ‘ভালোমন্দ কিছু ঘটে গেলে শেষে তুমিই ফাঁসবে, ডেভ।’
পিনম্যানকে দেখে মনে হলো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। বললেন, ‘সরাইখানা বন্ধ করে দিলে আপনারা যাবেন কোথায়?’
‘আমার গাড়ি আছে,’ বলল এক বোর্ডার, পরে জানা গেল তার নাম ড্যান কলসন। ‘আমি এক্ষুনি ভাগছি শহর ছেড়ে। ভূতের হাতে জান খোয়ানোর কোনো শখ আমার নেই।’
‘শহরের লোকের সঙ্গে গত কদিনে পরিচয় হয়ে গেছে,’ বলল তৃতীয়জন। অর্থাত্ সেথ বেকার। ‘থাকার একটা ব্যবস্থা করতে পারব।’
‘আমিও,’ প্রফেসর বললেন।
‘আর আমরা তো গাড়িতেই রাত কাটিয়ে দিতে পারি,’ অয়ন বলল। ‘তাহলে দেরি কেন, সরাইখানা খালি করে দিন, মি. পিনম্যান। এক্ষুনি!’
সবাই তাড়াহুড়ো করে হলঘর থেকে বেরিয়ে গেল। কে কোন রুমে গেল লক্ষ রাখল অয়ন। অচিরেই বুঝল, পিস্তলের মালিক সেথ বেকার।
আধা ঘণ্টার মধ্যে সরাইখানা খালি হয়ে গেল। এই ফাঁকে বুড়ো রেকটারের ঘরটা দেখতে গেল অয়ন আর জিমি। কিন্তু লাভ হলো না। দরজায় মান্ধাতা আমলের একটা পুরোনো তালা ঝুলছে। কপাটের চারপাশে কিছু আঁচড়ের দাগ দেখা গেল, সম্প্রতি দাগগুলো পড়েছে। এই একটা কামরাতেই শুধু জানালা নেই। ভেতরটা দেখা গেল না। হতাশ হলো ওরা।
বোর্ডাররা চলে যাওয়ার পর সরাইখানা বন্ধ করে দিলেন পিনম্যান। সদর দরজায় তালা ঝুলিয়ে অসুস্থ স্ত্রীসহ এক প্রতিবেশীর বাড়িতে চলে গেলেন।
‘গাড়িটা সরাইখানার কাছাকাছি কোথাও পার্ক করুন, আঙ্কেল,’ গাড়িতে উঠে অয়ন বলল। ‘এমন কোথাও, যাতে ওখান থেকে দেখা না যায়।’
হঠাত্ হেসে উঠলেন ডা. পারকার। ‘তোমরা তাহলে এবার ভূতের পেছনে লেগেছ?’
নিঃশব্দে হাসল অয়নও।
‘তাই তো বলি, স্টোরকিপার তার বাড়িতে থাকার প্রস্তাব দেওয়ার পরও অয়ন হোসেন গাড়িতে রাত কাটাতে চায় কেন?’
‘আপনার কোনো অসুবিধে হবে না তো?’
‘উঁহু, তোমরা শুধু বিপদে না পড়লেই হয়। সরাইখানা থেকে সবাইকে বের করে দিলে কেন? তুমি অমনভাবে না বললে তো রাতটা ওখানেই কাটানো যেত।’
‘অয়ন আসলে ভূতটার নিয়মে খেলতে চাইছে,’ জিমি বলল। ‘ভূতের ইচ্ছেমতো জায়গাটা খালি করে দিল ও। এবার দেখবে, কী করে ভূতটা। ঠিক বলিনি?’
‘এগজ্যাক্টলি!’ অয়নের মুখে একচিলতে হাসি খেলা করে গেল।
তিন
সারারাত পালা করে পাহারা দিল অয়ন আর জিমি। মাঝেমধ্যে গাড়ি থেকে নেমে চক্করও দিল। তবে কোনো লাভ হলো না। রাত দুইটার দিকে জিমির অবশ্য একবার মনে হলো, সরাইখানার পেছনের ঝোপে কী যেন নড়াচড়া করছে। কিন্তু ওখানে গিয়ে দেখতে পেল না কিছু।
সকাল হলো। কাছের একটা বাড়ি থেকে হাত-মুখ ধুয়ে এসে শুকনো খাবার দিয়ে নাশতা সারল ওরা।
‘আজ সারা দিন মাছ ধরব,’ ডা. পারকার বললেন। ‘তোমরা তৈরি?’
ইতস্তত করল অয়ন আর জিমি। জবাব দিল না।
‘বুঝেছি,’ ডা. পারকার মুচকি হাসলেন। ‘এখনো মাথা থেকে ভূতের চিন্তা নামেনি। মাছ ধরার প্রোগ্রাম তাহলে বাদ দিতে হচ্ছে।’
‘তুমি রাগ করছ না তো?’ জিমি বলল।
‘নাহ্, আমার বরং আগ্রহ বাড়ছে। দেখি, তোমরা ভূতটাকে ধরতে পারো কি না। তবে যা করার তাড়াতাড়ি করবে। আজ সন্ধ্যায়ই আমরা চলে যাব। কাল আমার অফিস আছে, তোমাদেরও স্কুল খোলা।’
‘সময় বড্ড কম!’ জিমি মিনমিন করল।
‘ভুল বললি,’ অয়ন প্রতিবাদ করল। ‘বেশ কিছু সূত্র পেয়েছি। এখন শুধু সেগুলো পরীক্ষা করা বাকি।’
‘তাই নাকি! কই, আমাকে তো বলিসনি।’
‘সময় হয়নি।’
‘আমি মিসেস পিনম্যানকে দেখতে যাচ্ছি,’ বললেন ডা. পারকার। ‘তোমরা কী করবে?’
‘এখানেই থাকব, আঙ্কেল। সরাইখানার ওপর নজর রাখা দরকার।’
‘বেশ, আমি যাচ্ছি। তোমরা সাবধানে থেকো।’
চলে গেলেন ডা. পারকার।
‘ব্যাপারটা কী, অয়ন?’ জিমি বলল। ‘কী সূত্র পেয়েছিস তুই?’
‘পরে বলব,’ অয়ন গাড়ি থেকে নামল। ‘আমাকে এখন জানতে হবে, নিরীহ একজন কাঠব্যবসায়ী পিস্তল দিয়ে কী করে?’
অয়নের দৃষ্টি অনুসরণ করল জিমি। সেথ বেকার সরাইখানার সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।
‘ওকে সন্দেহ করছিস?’
‘লোকটার কাছে পিস্তল আছে।’
‘নিরাপত্তার জন্য রাখতে পারে।’
‘আসলেই কি তাই? জানা দরকার।’
‘আরে!’ হঠাত্ জিমি বলল। ‘মিস্টার পিনম্যান এদিকেই আসছেন। সঙ্গে যেন কে!’
চাপা দাড়ি-গোঁফঅলা এক লোকসহ সরাইয়ের মালিক সোজা সরাইখানার দরজায় চলে গেলেন। লোকটার হাতে স্যুটকেস, সম্ভবত নতুন এসেছে। পিনম্যানকে তালা খুলতে দেখা গেল।
‘আজব ব্যাপার!’ জিমি বিস্মিত হলো। ‘লোকটা কি আবার ভাড়াটে ঢোকাচ্ছে নাকি?’
‘জানা দরকার,’ বলে দ্রুত চিন্তা করল অয়ন। ‘জিমি, তুই বেকারকে ফলো কর। চোখে পড়িস না, সাবধান! কোথায় যায়, কী করে লক্ষ রাখবি। আমি এদিকটা দেখছি।’
‘ওকে!’
সেথ বেকার যেদিকে গেছে, সেদিকে চলে গেল জিমি। নবাগত লোকটাকে নিয়ে পিনম্যান ততক্ষণে সরাইখানায় ঢুকে পড়েছেন। অয়নও সেদিকে গেল।
আগন্তুককে হলঘরটা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখাচ্ছিলেন পিনম্যান। এমন সময় ভেতরে ঢুকল ও।
‘আরে! তুমি এখানে!’ পিনম্যানের কণ্ঠে স্পষ্ট বিস্ময়।
‘দরজা খোলা দেখে কৌতূহল হলো,’ অয়ন বলল। আগন্তুকের স্যুটকেসটা মেঝের ওপর, সেটার দিকে তাকাল একবার। ‘ওনাকে তো চিনলাম না?’
‘ইনি ড. সামারলি,’ আমেরিকান সাইকিক রিসার্চ সেন্টার থেকে এসেছেন,’ পিনম্যান পরিচয় করিয়ে দিলেন। ‘ভূতের ব্যাপারে তদন্ত করতে।’
‘আমি অয়ন হোসেন,’ হাত মেলাল অয়ন। ‘আপনি খবর পেলেন কীভাবে, ডক্টর?’
‘আমাদের অনেক সোর্স থাকে,’ ড. সামারলি হাসলেন। ‘কোথাও অস্বাভাবিক কিছু ঘটলে মুহূর্তেই ছুটে যেতে হয় কি না!’
‘ইন্টারেস্টিং! আপনি এসেছেন কখন?’
‘সকালেই। অ্যানিওয়ে, রেকটারের ঘরটা এবার দেখতে হয়, মি. পিনম্যান।’
‘নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই! আসুন।’ পিনম্যান বলল।
‘আমি সঙ্গে থাকতে পারি?’ অয়ন অনুরোধ করল।
‘থাকবে?’ একটু ইতস্তত করলেন ড. সামারলি। ‘বেশ!’
তালা খুলতে বেশ কিছুটা সময় লাগল পিনম্যানের, জং ধরে গেছে। দরজা খোলার পর ধুলোবালির একটা গন্ধ এসে লাগল নাকে। একটু অপেক্ষা করে ওরা ভেতরে ঢুকল। সুইচ টিপে বাতি জ্বালালেন পিনম্যান।
ঘরটা ছোট। একটা কাঠের বিছানা আর আলমারি রয়েছে ভেতরে। একপাশে স্তূপ করা আছে প্রসপেক্টিংয়ের জিনিসপত্র—গাঁইতি, কোদাল, চালুনি, আরও কত কিছু।
‘এটা আসলে স্টোররুম,’ সরাইয়ের মালিক বললেন। ‘রেকটার তার জিনিসপত্র রাখার জন্য ঘরটা নিয়েছিল। নিজে খুব কমই থাকত।’
‘ইন্টারেস্টিং!’ ঘুরেফিরে মন্তব্য করলেন ড. সামারলি। ‘মনে হচ্ছে এ ঘরটার মধ্যেই রহস্য লুকিয়ে আছে। অশুভ একটা কিছুর উপস্থিতিও যেন টের পাচ্ছি।’
‘বলেন কী!’
‘হ্যাঁ। যদি কিছু মনে না করেন, আমি এখানে সম্পূর্ণ একা থাকতে চাই, মি. পিনম্যান। কেউ যেন বিরক্ত না করে।’
‘একা! কেন?’
‘আত্মাটার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করব। সঙ্গে কেউ থাকলে সেটা সম্ভব হবে না। বুঝতেই পারছেন।’
‘কিন্তু বিপদ হতে পারে।’
‘এসব কাজে আমার অভিজ্ঞতা আছে। চিন্তা করবেন না।’
‘তাহলে আমরা চলে যাব?’
‘খুব ভালো হতো।’
‘বেশ,’ কাঁধ ঝাঁকাল অয়ন। ‘চলুন, মি. পিনম্যান।’
‘কেউ কোথাও যাচ্ছে না!’ হঠাত্ দরজা থেকে ভেসে এল একটা পরিচিত কণ্ঠ।
পাঁই করে ঘুরল অয়ন। পিস্তল হাতে ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে সেথ বেকার। বলল, ‘যথেষ্ট হয়েছে! ওই ভাঁড়টাকে আমি আর কোনো সুযোগ দিচ্ছি না। আমার জিনিস আমিই খুঁজে নেব।’
‘কার কথা বলছেন?’ পিনম্যান হতভম্ব।
‘ড. সামারলি ওরফে ড্যান কলসনের কথা,’ শীতল গলায় বলল অয়ন।
‘কী!’ চোয়াল ঝুলে পড়ল পিনম্যানের।
‘বিচ্ছু ছেলে,’ সেথ বেকার হাসল। ‘তুমিও ওকে চিনতে পেরেছ তাহলে?’
‘সহজ ব্যাপার,’ অয়ন বলল। ‘ড্যান কলসনের স্যুটকেস বয়ে বেড়ানো ড. সামারলির উচিত হয়নি।’
একটানে নকল গোঁফ-দাড়ি খুলে ফেলল কলসন। তার চেহারা হিংস্র দেখাচ্ছে। গর্জন করে বলল, ‘আমাকে কেউ ঠেকাতে পারবে না! সব সোনা আমার!’
মুঠো করা হাত থেকে কিছু একটা ছুড়ে দিল সে মেঝেতে। ‘দুম!’ করে একটা শব্দ হতেই ঘর সাদা ধোঁয়ায় ভরে গেল। ভয়ানক ধাক্কা খেয়ে দেয়ালে আছড়ে পড়ল অয়ন আর মি. পিনম্যান। পেটে একটা বেমক্কা গুঁতো খেয়ে ধরাশায়ী হলো সেথ বেকার, উড়ে গিয়ে পড়ল করিডরে। তাকে টপকে ছুটল কলসন। হলঘরে নিজের স্যুটকেসের কাছে পৌঁছাতে চাইছে। কিন্তু করিডর পেরোতেই দেয়ালের আড়াল থেকে কে জানি এক পা বাড়িয়ে তাকে ল্যাং মারল। হুমড়ি খেয়ে হলঘরের মেঝেতে পড়ে গেল সে। সামলে ওঠার আগেই আক্রমণকারী চোখেমুখে কী যেন ছিটিয়ে দিল। সঙ্গে সঙ্গে চোখে জ্বালাপোড়া শুরু হলো, সেই সঙ্গে হাঁচি! মরিচের গুঁড়ো ঢেলে দিয়েছে শয়তানটা! মুহূর্তেই কলসন ঘায়েল হলো।
মুচকি হেসে বয়ামের মুখ আটকাল জিমি পারকার। নাক-মুখ থেকে রুমাল সরিয়ে চেঁচিয়ে বলল, ‘অয়ন, তোরা ঠিক আছিস?’
মেঝে থেকে পিস্তলটা কুড়িয়ে নিয়ে বেকারের দিকে তাক করল অয়ন। বলল, ‘নড়াচড়া না করলেই ভালো করবেন।’
তারপর চেঁচাল, ‘আমরা ঠিক আছি, জিমি। একেবারে ঠিক!’
চার
ড্যান কলসন আর সেথ বেকারকে শেরিফের হাতে তুলে দেওয়া হলো। কয়েক ঘণ্টা পরেই রেকটারের ঘরের মেঝের তক্তা সরিয়ে বেশ কিছুটা কাঁচা সোনা একটা প্যাকেটের ভেতর পাওয়া গেল। সারা জীবন চেষ্টা করেও কোনো খনি আবিষ্কার করতে পারেননি বৃদ্ধ, তবে সোনার যত গুঁড়ো পেয়েছেন, তা ওই প্যাকেটে জমিয়ে রেখেছিলেন। পরিমাণে তা অবশ্য খুব কমও নয়।
সরাইখানা আবার খুলে দেওয়া হলো। হলঘরে বসে কৌতূহলী বাসিন্দাদের কাছে সব খুলে বলল অয়ন আর জিমি।
‘ভূত বলে কিছু নেই,’ অয়ন শুরু করল। ‘এ কারণে প্রথমেই আমাদের ধারণা হলো, কেউ একজন সরাইখানাটা খালি করতে চাইছে। বুড়ো রেকটারকে এর মধ্যে টেনে আনায় বুঝে গেলাম, ওই তালামারা ঘরেই লুকিয়ে আছে সব রহস্য। তার প্রমাণও পাওয়া গেল। রেকটারের ঘরের তালা কেউ ভাঙার চেষ্টা করেছে, কপাটের পাশের আঁচড়ই তার প্রমাণ। কিন্তু ওই তালা ভাঙতে গেলে যে রকম শব্দ হবে, তাতে ধরা পড়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। কাজেই আমদানি করা হলো রেকটারের ভূত, সেই সঙ্গে একজন ভূত বিশেষজ্ঞ, যে কি না বিনা বাধায় ওই ঘরে ঢুকতে পারবে, উদ্ধার করতে পারবে লুকানো সোনা—কারও মনে সন্দেহ না জাগিয়ে। এই কাজটা করল ড্যান কলসন।’
‘সেটা তুমি বুঝতে পেরেছিলে?’ ডা. পারকার প্রশ্ন করলেন।
‘হ্যাঁ, ওর ঘরে আমি এক বান্ডিল বিশেষ রকমের তাস পেলাম, যেগুলো ম্যাজিশিয়ানেরা জাদু দেখানোর জন্য ব্যবহার করে। আর ও যদি ম্যাজিশিয়ান হয়েই থাকে, তাহলে ভেন্ট্রিলোকুইজম বা অন্য কোনো ম্যাজিকের কৌশলের মাধ্যমে গায়েবি আওয়াজ করা কোনো ব্যাপারই নয়। দুয়ে দুয়ে চার মেলাতে তেমন অসুবিধে হলো না। রেকটারের সঙ্গে তার আগে থেকেই পরিচয় ছিল। গলার স্বর নকল করায় সে মহা ওস্তাদ।’
‘কিন্তু লুকানো সোনার খবর সে পেল কীভাবে?’ পিনম্যান প্রশ্ন করল।
‘রেকটার নাকি মাঝেমধ্যে উইলো ক্রিকের বাইরে যেতেন। এভাবেই একদিন কলসনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। কলসন জবানবন্দিতে বলেছে, বুড়োই নাকি গল্পচ্ছলে তাঁর জমানো সোনার কথা বলেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর খোঁজখবর নিয়ে সে আন্দাজ করে নেয়, সোনা সরাইখানাতেই আছে। সব রকম প্রস্তুতি নিয়ে তারপরেই সে উইলো ক্রিকে আসে। গত রাতে সরাইখানা খালি হওয়ার পর সে চলে যায়নি। শহরের বাইরে গিয়ে নিজের গাড়িটা লুকিয়েছে। তারপর ছদ্মবেশ নিয়ে ফিরে এসেছে সকালে। ভুল করে স্যুটকেসটা পাল্টায়নি, অথবা হয়তো কেয়ারই করেনি; আর সেটা দেখেই আমি বুঝতে পারি, ড্যান কলসন আর ড. সামারলি একই লোক। এ ছাড়া লক্ষ করলাম...রেকটারের ভূত, ড. সামারলি আর বন্ধ কামরা—সব এক সুতোয় বাঁধা, তাই আর কোনো সন্দেহ রইল না।’
‘সেথ বেকারের ব্যাপারটা কী?’ ডা. পারকার জিজ্ঞেস করলেন। ‘সে কীভাবে জড়িত হলো?’
‘বেকার এখনো জবানবন্দি দেয়নি, তবে ব্যাপারটা অনুমান করে নেওয়া যায়। কলসনের মতো সে-ও সম্ভবত রেকটারের সঙ্গে পরিচিত হয়, আর সোনার কথা জানতে পারে। তবে বেকার মাথামোটা লোক, কলসনের মতো কূটবুদ্ধি তার নেই। দরজার তালা ভাঙার চেষ্টা করেছিল সে-ই। গায়ের জোর দিয়ে সে বহু আগেই সোনা উদ্ধার করত, যদি না কলসন এসে ভূতের ভয় ছড়ানো শুরু করত। জাদুকরকে সে চিনত আগে থেকেই, যদিও কলসন ওকে চিনত না। গায়েবি আওয়াজে তাই বেকার ভয় পায়নি, কলসনকে প্রতিদ্বন্দ্বী জেনেও বাধা দেয়নি। কেননা ব্যাপারটায় সে-ও লাভবান হচ্ছিল। বেকার শুধু অপেক্ষা করছিল সরাইখানা খালি হওয়ার জন্য। কাল রাতে সে নিশ্চয়ই রেকটারের কামরায় হানা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে, কিন্তু আমি আর জিমি পাহারা দিচ্ছিলাম বলে সরাইখানায় ঢুকতে পারেনি। সকালে যখন কলসন ভোল পাল্টে হাজির হলো, মরিয়া না হয়ে তার উপায় ছিল না।’
‘ঠিক!’ জিমি এবার বলল। ‘ওর পিছু নিয়েছিলাম আমি। দেখলাম, ব্যাটা সরাইখানার চারপাশে ঘুরঘুর করছে। শেষে পেছনের একটা জানালা খুলে পিস্তল হাতে ঢুকে পড়ল ভেতরে। বুঝলাম, অয়নরা বিপদে পড়তে চলেছে। তাই ওর পেছন পেছন আমিও ঢুকে পড়লাম। অস্ত্রশস্ত্র তো আর কিছু নেই, কিচেনে গিয়ে পেলাম মরিচের গুঁড়ো। বয়ামটা হাতে নিয়ে দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম...’
‘ভয়াবহ জিনিসটার আইডিয়া মাথায় এল কী করে?’ জস ওয়াইন প্রশ্ন করল। ‘কলসনের তো বারোটা বেজে গেছে।’
‘ওটা অয়নের নীতি,’ জিমি বলল। ‘বেকায়দা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য হাতের কাছের জিনিস ব্যবহার করা। আমি প্রয়োগ করেছি শুধু।’
সবাই হাসল।
‘যাহোক,’ আন্তরিক কণ্ঠে বললেন পিনম্যান, ‘তোমাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। তোমরা না থাকলে আমার ব্যবসা লাটে উঠে যেত।’
‘ও কিছু না,’ অয়ন বলল। ‘সোনাগুলো তো বোধ হয় এখন আপনাদেরই সম্পত্তি। কী করবেন ও দিয়ে, ভেবেছেন কিছু?’
‘না, ভাবিনি।’
‘আমি একটা বুদ্ধি দিই?’
‘দাও।’
‘শহরের উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করুন। মোবাইল ফোনের টাওয়ার বসান, ইন্টারনেটের কানেকশন আনুন। বড্ড পিছিয়ে আছেন আপনারা। এ যুগে ভূত-প্রেত বিশ্বাস করলে চলে?’
‘তা-ই হবে,’ সবাই একমত হলো।
অনেকক্ষণ ধরেই ঘড়ি দেখছিল জিমি। এবার সুযোগ পেয়ে ডা. পারকারকে বলল, ‘বাবা, সন্ধ্যা হতে এখনো বেশ দেরি আছে। চাইলে এখনো আমরা ফিশিংয়ে যেতে পারি। উইলো ক্রিকে আসাটা একেবারে ব্যর্থ হবে না তাহলে।’
‘তাই তো!’ ডা. পারকার বললেন। ‘কিন্তু টোপ?’
‘আমি নিয়ে এসেছি,’ একটা প্যাকেট তুলে দেখালেন জস ওয়াইন।
‘তাহলে দেরি কেন?’ প্যাকেটটা ছোঁ মেরে নিয়ে ছুটল অয়ন আর জিমি। ডা. পারকারও ওদের অনুসরণ করলেন।
একটু পরই চলে গেল ওরা। সরাইখানার সামনে দাঁড়িয়ে বিদায় জানাল সবাই। খানিক পরেই একটা ঝরঝরে গাড়ি এসে থামল। শহরের বাইরে গিয়েছিলেন ডাক্তার স্টুয়ার্ট। সবে ফিরেছেন। ভিড়ের সামনে এসে বোকা বোকা কণ্ঠে বললেন, ‘এখানে এত ভিড় কিসের? আমি কি কিছু মিস করেছি?’
কথাটা শুনে সবাই হাসতে শুরু করল। পিনম্যান বললেন, ‘তেমন কিছু না, ডাক্তার। ছোট্ট দুটো ছেলেই ঝামেলাটা সামাল দিয়েছে।’
‘ব্যাপারটা কী?’
‘সে এক লম্বা গল্প। বলব আপনাকে। আসুন।’
দল বেঁধে সবাই সরাইখানায় ঢুকল। টেবিল আর খালি পড়ে রইল না। বারেও খদ্দের ভিড় জমাল। মিসেস পিনম্যান কিচেনে ব্যস্ত হলেন, লিসা ব্যস্ত হলেন খাবার পরিবেশনে। আর পিনম্যান হাঁকডাক শুরু করলেন তাঁর চিরাচরিত স্বভাবে।
আবার জমে উঠেছে সরাইখানা।
অলংকরণ: সাদাত