চাইলেই তুমি হারিয়ে যাও কুড়িয়ানার পেয়ারার রাজ্যে

নৌকায় করে চলছে পেয়ারা বেচাকেনাছবি: সাইয়ান

এক সময় পয়সার হিসেব ছিল এক আনা, দুই আনা, তিন আনা...কুড়ি আনা। এখন আর কুড়ি আনার দাম নাই। কিন্তু কুড়িয়ানার পেয়ারার দাম দেশব্যাপী। দেশের দক্ষিণের তিন জেলা বরিশাল, পিরোজপুর ও ঝালকাঠির প্রায় আট বর্গ কিলোমিটার এলাকার চার হাজারেরও বেশি বাগান নিয়ে কুড়িয়ানার পেয়ারা সাম্রাজ্য। যে সাম্রাজ্যে কাঠবিড়ালিদেরও পেয়ারা খেতে খেতে মুখে অরুচি চলে এসেছে।

ইতিহাস বলে, কুড়িয়ানার এই পেয়ারা বাগানে লুকিয়ে থেকেই এই এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা পাক বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল। এ কারণে মূল্যও দিতে হয়েছে এই গ্রামের বাসিন্দাদের। হানাদার বাহিনীর সদস্যরা পুড়িয়ে দিয়েছিল পুরো গ্রাম। সেই গ্রামকেই এখন মানুষ পেয়ারা রাজ্য হিসেবেই বেশি চেনে। যদিও আশপাশের আরও কয়েকটি গ্রামে পেয়ারার চাষ হয়, তারপরও কুড়িআনার খ্যাতি একটু বেশিই।

পেয়ারার হাটে পেয়ারা বিক্রি করার জন্য বাগানের গাছ থেকে পাকা পেয়ারা পেড়ে নোয়কাতে জমা করছে একজন
ছবি: সাইয়ান

সাধারণত আষাঢ় মাস থেকে পেয়ারা বাজারে আসতে শুরু করে। মৌসুম চলতে থাকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত। শহরে পেয়ারার দাম একটু বেশি হলেও মৌসুমের শুরুতে তুমি যদি কুড়িয়ানায় যাও তবে এক কেজি পেয়ারা কিনতে পারবে মাত্র ছয় থেকে আট টাকায়। তবে চারদিকে এত এত পেয়ারা সেসব তো আর একটা দুটো করে বিক্রি হয় না। বিক্রি হয় পাইকারি ভাবে। আটঘর-কুড়িয়ানার বেশ কয়েকটি স্থানে চলে এই পাইকারি পেয়ারা কেনা-বেচার হাট। তার মধ্যে বেশিরভাগই খালের মধ্যে ভাসমান বাজারে। ডাসা ডাসা পেয়ারায় ভর্তি হয়ে প্রতিদিন শত শত নৌকা বোঝাই হয়ে আসে এখানে। স্থানীয় ভাষায় একে বলা হয় মোকাম।

এতবড় পেয়ারা বাগানের কথা শুনে অনেকেরই হয়ত সেখানে যাওয়ার কথা ভাবতেই পারো। সেটি যদি ভেবে থাকো, তাহলে শোন, বরিশাল থেকে পেয়ারা বাগানে যাওয়ার বেশ কয়েকটি পথ রয়েছে। শহর থেকে ঝালকাঠির বিনয়কাঠী হয়ে নবগ্রাম পৌঁছাতে হবে। সেখান থেকে যাওয়া যাবে ট্রলারে। আবার বরিশাল থেকে বাসে চেপে বানারীপাড়া উপজেলার দাসের হাট নেমে, টেম্পু অথবা মাহেন্দ্র নিয়েও যাওয়া যাবে পেয়ারার রাজ্যে। আর বাসে চেপে স্বরূপকাঠি পৌঁছে ট্রলার নিয়ে তো যাওয়া যায়ই। তবে পেয়ারা বাগানের সৌন্দর্য যদি তুমি তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে চাও তবে তোমাকে যেতে বলবো ইঞ্জিনচালিত নৌকা দিয়েই। নবগ্রাম অথবা স্বরূপকাঠি বন্দর থেকে ট্রলারে উঠলেই চারদিকের অপরূপ প্রকৃতি হাতছানি দিয়ে ডাকা শুরু করবে তোমায়। একটু এগুলেই খালের দুই পাড়ে দেখা মেলবে নানা জাতের ফলদ আর বনজ গাছের নার্সারী। কুড়িয়ানার দিকে যতই এগোতে থাকবে ততই খালগুলো সরু হতে থাকবে। এভাবে আধা ঘন্টা চলার পর খালের মধ্যেই ভাসতে দেখবে তুমি ছোট-বড় নানান আকারের পেয়ারা। তোমাকে পাশ কাটিয়ে যাবে পেয়ারা ভর্তি ছোট নৌকা আর ট্রলার। আথিতেয়তার নিদর্শন হিসেবে অনেকেই তোমার দিকে ছুড়ে দিবে পেয়ারা। পাশে থাকা ছোট ছোট শিশুরাও পেয়ারা দিয়ে জানাবে তোমাকে অভিবাদন।

পেয়ারা বিক্রির পর নৌকা থেকে ঝুড়ি ভর্তি করে ডাঙায় রাখা হচ্ছে
ছবি: সাইয়ান

একদম কাছ থেকে পেয়ারা বাগান দেখতে হলে কুড়িয়ানা পৌঁছে তোমাকে নিতে হবে ছোট নৌকা। তাতে চেপে ঢুকতে হবে মূল বাগানে। তবে বাগানে ঢোকার আগে অবশ্যই বাগান মালিকের অনুমতি নিয়ে নিতে হবে। আর একবার বাগানে ঢুকতে পারলে তারপর তোমাকে আর পায় কে! ডানে-বামে সামনে-পিছে এত পেয়ারা দেখে নিজেকে যদি কাঠবিড়ালি ভাবতে চাও, কে মানা করে?