চেহারার নানা রং

অবশেষে অ্যানাটমির গন্ডগোল থেকে মুক্তি। এবারে শুধুই গোল! আসলে কার্টুন আঁকার একটা বড় স্বস্তির জায়গা হলো এখানে আমাদের অসাধারণ আঁকতে হবে, এমন নয়। এখানে মূল ব্যাপারটা আইডিয়া। বলা হয় কার্টুনের প্রায় ৮০ শতাংশই হলো তার আইডিয়া। বাকিটুকু সেই আইডিয়াকে অন্যদের কাছে বোঝানোর মতো হলেই হবে। তাই আমরা যদি গন্ডগালের জটিল অঙ্কন-পদ্ধতি না মেনে একেবারে সাধারণ গোল দিয়েও আঁঁকি, সেখানে ভুল ধরার কেউ নেই। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি রিয়েলিস্টিক কমিকস, গ্রাফিকস নভেল ইত্যাদি আঁকতে চায় বা ক্যারিকেচারে সিদ্ধহস্ত হতে চায়, তবে ওই অ্যানাটমিক্যাল-পদ্ধতি শেখা ছাড়া উপায় নেই। যা-ই হোক, আমরা এই পর্বে একেবারে বেসিক এক্সপ্রেশন, মানে হাসি-কান্না ইত্যাদি কীভাবে আঁকা যায়, সেটা দেখি। প্রথমেই দুটি একেবারে সাধারণ স্মাইলি এঁকে নিই, যে স্মাইলির একটা আবার কান্না কান্না মুখের। মানুষের যেকোনো মুখের ভাব কিন্তু এই দুটি ধরন দিয়েই এঁকে ফেলা যায়। আমরা যদি এই দুটির নাম দিই ক্যাটাগরি ‘এ’ আর ‘বি’, তবে বলা যায়, সব মুখের ভঙ্গিই এই দুটি থেকে আঁকা যাবে। তার মানে, সব শেখার আগে আমাদের আগে শিখতে হবে এই দুই বেসিক হাসি আর কান্না। একেবারে জলবৎ তরলং। হাসি মানে একটা অর্ধেক চাঁদ, কান্না মানেও অর্ধেক চাঁদ, তবে সেটা উল্টো। ব্যস, এটুকুই। মানে এখন ক্যাটাগরি ‘এ’ বা হাসির সঙ্গে মেলে, এমন ভঙ্গিগুলো আঁকতে গেলে মুখটাকে ঠিক রকমের চাঁদ, যেটার দুই কোনা ওপরের দিকে উঠে গেছে, এমন করে আঁকতে হবে। কান্নার ব্যাপারে ঠিক উল্টো। আমরা নিচের ক্যাটাগরি ‘এ’ বা হাসির দিকের ভঙ্গিগুলো আঁকি।

ভালো হাসি, বিটকেল হাসি, অট্টহাসি, কাষ্ঠহাসি, একগাল হাসি যা-ই আঁকছি, দেখা যাচ্ছে, সেটা ওপরের ‘এ’ নামের গোল মুখের ধরনটাই ফলো করছে। এমনকি আঁকাবাঁকা করেও যদি আমি হাসি বোঝাতে চাই, তবে মুখের শেষ মাথা দুটি ওপরের দিকে একটু তুলে দিতে হবে। এটা একটা মজার খেলার মতো। এটুকু দেখার পর যত রকমের হাসি মাথায় আসে (সব মাথায় না আসলে কিছু কার্টুন বা ইলাস্ট্রেশন দেখা যেতে পারে। রুম আটকে আয়নার সামনে নিজের বিভিন্ন রকমের হাসিও দেখে নেওয়া যেতা পারে)।
একইভাবে এবার কান্নাকে বাগে আনা। আসলে হাসি পারলে সেটার উল্টোটাই কান্না। মানে সরাসরি হাসি যেভাবে আঁকতে শিখলাম সেটাকে এবারে উল্টো করে আঁকলেই চলছে।
এবারে একটা মজার টিপস। একই কান্না বা হাসির মুখটা ঠিক রেখে বিভিন্ন রকমের ভুরু আঁকলে ব্যাপারটা কী ঘটে দেখি। তখন দারুণ একটা ব্যাপার ঘটে। একই হাসি-কান্না তখন পাল্টে কখনো দুষ্টুমি হাসি বা ভিলেনি হাসি অথবা অসহায় কান্না আর রাগের কান্নায় পাল্টে যায়। এটাও একটা মজার প্রাকটিস। মানে একই রকম হাসি বা কান্নার খালি ভুরুভঙ্গি পাল্টে দেখা।

এবারে শুধু মুখের ভঙ্গি নিয়েই বলা হলো। বিস্তারিত যাওয়ার আগে এটাই সহজ-স্বাভাবিক করে বোঝাটা অনেক জরুরি। আমরা পরের পর্বে বিভিন্ন ধরনের চেহারা কীভাবে আঁকা যায় (শুধু গোল এঁকে আর কদ্দুর?), সেটা দেখব। ততক্ষণে হাসাহাসি আর কান্নাকাটি চলুক)।