চোখজুড়ানো সরিষাখেত

‘শীতকালের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য’ বিষয়ক রচনা লিখতে বললে সরিষাখেতের কথা আসবেই। তোমাকে যদি কেউ বলে ‘আমি চোখে সরষে ফুল দেখছি’, তাহলে তুমি কী ভাববে? নিশ্চয়ই ভাববে মানুষটা খুব ঝামেলার মধ্যে আছে। কারণ, চোখে সরিষা ফুল দেখা বাগ্ধারাটা অর্থ আমাদের তাই শেখায়। কিন্তু সত্যি সত্যি খেতের সামনে গিয়ে সরিষা ফুল দেখা ঝামেলা তো নয়ই, বরং দারুণ আনন্দের। একেবারে চোখ জুড়িয়ে যাবে। দূর থেকে দেখে মনে হয় যেন হলুদের মেলা। কখনো আবার সবুজ ধানখেতের মাঝে ফুটে থাকে সরিষাখেত। দেখে মনে পড়ে সহজিয়ার গানের লাইন—সবই রঙিন, সবই দারুণ!

সরিষাখেতের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয় প্রজাপতি আর মৌমাছিরা। রংবেরঙের প্রজাপতি হলুদ ফুলগুলোর ওপর বসে মধু খাচ্ছে, কী চমত্কার একটা দৃশ্য! তবে শুধু সৌন্দর্য নয়, সরিষার নানা ধরনের ঔষধি গুণও আছে। শীতকালীন এই ফসল থেকেই হয় তেল (পরীক্ষা শেষ হলে যে তেল নাকে দিয়ে আমরা আরামে ঘুমাই), তা-ও কম না। প্রতিবছর প্রায় আড়াই লাখ টন তেল পাওয়া যায় সরিষা থেকে। শহর কিংবা গ্রাম সব জায়গাতেই এই তেল দারুণ জনপ্রিয়। বাংলাদেশের খেলা দেখার সময় যখন মুড়িমাখা খাই, সরিষার তেল ছাড়া যেন জমেই না।

সেদিন এক বড় ভাইকে বলছিলাম, ‘ভাই, সরিষাখেত দেখতে খুব ভালো লাগে আমার।’ শুনে উনি ফিরে গেলেন ছোটবেলায়। বললেন, ‘কল্পনা করো একবার। শিশিরভেজা ভোর। দিগন্তজোড়া হলুদ সরিষাখেত। তার মাঝখান দিয়ে আমরা সবাই ছুটে যাচ্ছি। শিশিরে ভেজা হলুদ ফুলের পাপড়িগুলো লেগে যাচ্ছে আমাদের শরীরে। ছুটতে ছুটতে খেত পেরিয়ে এসে দেখি পুরো শরীরে যেন খুব যত্ন করে হলুদ রং করে দিয়েছে কেউ। কী যে ভালো লাগত। তোরা তো এই মজাটাই পেলি না।’

পাব না মানে? এ জন্যই তো শীত এলে প্রতিবছর ছুটে যাই গ্রামের দিকে। আয়োজন করে ‘চোখে সরিষা ফুল দেখি’। তোমরাও দেখো কিন্তু।

ছবি: জগলুল পাশা