জলহস্তী ও জেব্রাশাবকের কাণ্ডকীর্তি

মা আগন্তুর সঙ্গেছবি: আশরাফুল আলম

মায়ের সঙ্গ ছাড়তেই চায় না। ছোট ছোট পায়ে মা আগন্তুর পিছু পিছু ঘুরঘুর করতে থাকে জলহস্তীশাবকটি। আঠার মতো লেগে থাকে। মায়ের কাছে কখনো পাত্তা পায় না। তবে নিজের কাজ আদায়ে বেশ পটু শিশু জলহস্তী। অথচ ওর বয়স কীই-বা হয়েছে! এই তো সেদিন, ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা চিড়িয়াখানায় আগন্তুর কোলজুড়ে আসে এই জলহস্তীশাবক! দিনক্ষণের হিসাবে মাত্র এক মাসের একটু বেশি পেরিয়েছে ওর। অথচ ভীষণ চালাক। সুযোগ পেলেই মায়ের দুধ পান করে নেয়। পেট ভরলেও মন ভরে না শিশু জলহস্তীটির। আগন্তুকে শুইয়ে রাখতে কাদার মধ্যে শরীর এলিয়ে দেয়। আর দুচোখ পিটপিট করে তাকিয়ে মাকে যেন কিছু বলতে চায়।

ছেলের আবদারে একটুও বিরক্ত হয় না আগন্তু। বেশ আদর-যত্নে আগলে রেখেছে ওর বাচ্চাকে। শেডের ভেতর কাদাপানি নিয়ে সন্তানকে ঘুম পাড়িয়ে রাখছে, আবার শুকনো জায়গায় এনে হাঁটাচলা করানোর কাজ করছে মা জলহস্তী। মায়ের মমতায় এর মধ্যে ওর ওজন এক মাসে প্রায় ৩৫ কেজি বেড়েছে। জন্মের সময় যা ছিল ৪০ কেজি, এখন হয়েছে প্রায় ৭৫ কেজি।

মা আগলে রাখলেও ঝগড়া করতে পিছপা হয় না শিশু-জলহস্তীটি। শেডের ভেতরে দুই ভাই জলহস্তীকে বকাঝকা করে গলা উঁচিয়ে। কখনো মারামারিও করছে। দ্বন্দ্ব-বিবাদ বেশি হলে মিটমাট করেন ওদের তত্ত্বাবধায়ক নূরে আলম। তিনি বলেন, ‘ওদের মা আগন্তু, দাদা টিটো ও দাদি ডায়ানাকে আমিই বড় করেছি। ওরা সবাই আমার কথা শোনে। আগন্তুর নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেয়। ওরা ঝগড়া করলে আমি কথা বললে চুপ হয়ে যায়।’

জলহস্তীশাবকটির এসব কাণ্ডকীর্তি দেখতে এখন চিড়িয়াখানার দর্শকেরা যেন মুখিয়ে আছেন। মুঠোফোনে সেলফি তোলার চেষ্টা, ওদের হাঁটাচলার দৃশ্য ধারণ আরও কত্ত কী করেন তাঁরা! জলহস্তী মা ও ছেলেকে নিয়ে গবেষণা তো আছেই উত্সুক জনতার। শেডের সামনে জানতে চায়, ওরা কী খায়। কখন ঘুমোতে যায়। ওদের শরীরে এত মাংস কেন, ইত্যাদি ইত্যাদি।

এসব প্রশ্নে জলহস্তীশাবকটিও নিজেকে বড় বড় ভাবছে। কদিন ধরে আবার ঘাস চিবানোর পাঁয়তারা করছে সে। আগন্তু যখন মস্ত বড় মুখটি ‘হাঁ’ করে ঘাস খেতে এগিয়ে আসে, ঠিক সেই সময় বাচ্চা জলহস্তীও মাকে নকল করে।

জলহস্তীশাবকটির দুষ্টুমি ঢাকা চিড়িয়াখানার কর্তাব্যক্তিদের দুশ্চিন্তা বেশ কমিয়ে দিয়েছে। চিড়িয়াখানার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আনোয়ার শাহাদাৎ বলেন, জলহস্তীর বাচ্চার এই ছুটে চলার অর্থ হচ্ছে ওর পরিণত হয়ে ওঠা, ওর সুস্থ থাকা।

জলহস্তীর মতো জেব্রাশাবকটিও সুস্থ-সবল রয়েছে। ওর মা কুইন বেশ ভয়ে ভয়ে আগলে রাখে শেডের ভেতর। সম্রাট মারা যাওয়ার পর এই জেব্রাশাবকই কুইনের বেঁচে থাকার অবলম্বন। এ কারণে কুইন বেশ ভয়ে ভয়ে থাকে। মা কুইনও একই শেডে থাকা অন্য দুই সঙ্গীকেও ওর সন্তানের কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছে না। মানুষ ও সঙ্গী—সবাই যেন এখন কুইনের চরম শত্রু। জেব্রার তত্ত্বাবধানকারীরাও কুইনের সন্তানের কাছে যেতে পারছেন না।

জেব্রাশিশুটি কিন্তু বেশ চালাক। ২৯ সেপ্টেম্বর জন্ম হলেও জেব্রা শিশুটি যেন এরই মধ্যে বুঝে গেছে তার কদর। তাই কখনো লেজ নাড়াচ্ছে, কখনো দুধ খাওয়ার জন্য মায়ের শরীরের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখছে।

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনোয়ার শাহাদাৎ বলেন, জন্ম নেওয়ার তিন ঘণ্টার মধ্যে হাঁটাচলা শুরু করে জেব্রাশাবকটি। এর দুই ঘণ্টা পর মায়ের দুধ পান করে। এভাবে আরও কিছুদিন মায়ের দুধ পান করানো হবে।

(কিশোর আলোর নভেম্বর ২০১৬ সংখ্যায় প্রকাশিত)