জাহাজ উধাও রহস্য

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপর আমেরিকার ফিলাডেলফিয়া এলাকায় গেলে একটা অদ্ভুত পরীক্ষার কথা শোনা যেত। শোনা যায়, ইউএস সরকারের একটা অতি গোপন মডেলের জাহাজের উন্নতিসাধনের কাজে নিযুক্ত ছিলেন হাওয়ার্ড হুগস। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে কী কারণে যেন বারবার ভেসে উঠতে থাকে ফিলাডেলফিয়া এক্সপেরিমেন্টের কথা। কারও কারও সন্দেহ, ১৯৪৩ সালে ফিলাডেলফিয়া পরীক্ষার সেই ‘সিক্রেট ওয়ারশিপ’ নামে খ্যাত জাহাজটার সঙ্গে হুগসের পরামর্শে বানানো ডিপ-সি মাইনিং শিপ ‘গ্লোমার এক্সপ্লোরার’-এর সম্পর্ক আছে। আণবিক শক্তিচালিত ‘জায়ান্ট ক্ল’ বসানো আছে গ্লোমার জাহাজে। ওই ক্ল বা দাঁড়ার সাহায্যে নাকি সাগরগর্ভে নিমজ্জিত আণবিক যুদ্ধাস্ত্রসংবলিত একটা রাশিয়ান সাবমেরিন তোলার চেষ্টা করছিল ইউএস সরকার।

১৯৪৩-এর অক্টোবরে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, একটা ডেস্ট্রয়ারকে নিয়ে ফিলাডেলফিয়া নেভি ইয়ার্ডে এক আশ্চর্য পরীক্ষা চালিয়েছিল ইউএস নেভি। আইনস্টাইনের ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরির সাহায্যে, ফিলাডেলফিয়া নেভি ইয়ার্ড থেকে জন্মস্থান ভার্জিনিয়ার নরফোকে জাহাজটাকে টেলিপোর্ট করার বন্দোবস্ত করল ইউএস সরকার।

মোটামুটি সাফল্যের সঙ্গেই শেষ হলো পরীক্ষা। মুহূর্তে অজড় পদার্থে পরিণত হয়ে ফিলাডেলফিয়া ত্যাগ করল ডেস্ট্রয়ারটা, মিনিটখানেকের মধ্যেই নরফোক পৌঁছে নিজ রূপে ফিরে এল আবার। কয়েক মিনিট পর আবার ওটাকে ফিরিয়ে আনা হলো ফিলাডেলফিয়া ডকইয়ার্ডে। জড় পদার্থের ক্ষেত্রে আশ্চর্য রকম সাফল্য লাভ করলেও জীবের ব্যাপারে সফল হতে পারেননি পরীক্ষকেরা। কেউ কেউ অদৃশ্য হয়ে অদৃশ্যই থেকে গেল। কেউ আবার দেহ ধারণ করল বটে কিন্তু পাগল হয়ে গেল, কেউ দেহও ধারণ করল, পাগলও হলো না, কিন্তু মাঝে মাঝেই হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যেত।

সরকারিভাবে পরীক্ষাটার কথা কোনো দিন প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু কী করে যেন এ কান ও কান হতে হতে জনসাধারণ শুনে ফেলল কথাটা। ব্যাপারটা নিয়ে প্রবন্ধ বেরোতে শুরু করল খবরের কাগজে, বিভিন্ন ম্যাগাজিনে, বইয়ে। সবাই এর সত্যাসত্য কতটুকু জানতে চায় সরকারের কাছে

ব্যাপারটার ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিলেন অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট, অ্যাস্ট্রোনমার, ম্যাথমেটিশিয়ান, রাইটার এবং এক্সপ্লোরার মরিস কে জেসাপ। মিশিগানের ড্রেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্ট্রাকটর ছিলেন তিনি কিছুকাল। তারপর অ্যাস্ট্রোফিজিকসে পিএইচডি করে বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে মনোনিবেশ করলেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার সাউদার্ন হেমিস্ফেয়ারে একটা রিফ্রেকটিং টেলিস্কোপ বসালেন। ইতিমধ্যে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচারের তরফ থেকে দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদী উপকূলের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে এলেন বেশ কয়েক প্রকার দুষ্প্রাপ্য প্রাণী আর উদ্ভিদের সন্ধানে। তারপর ওয়াশিংটনের কার্নেগি ইনস্টিটিউটের তরফ থেকে গেলেন সেন্ট্রাল আমেরিকায় প্রত্নতত্ত্বের কাজে, অনেক অনেক দিন আগে লুপ্ত হয়ে যাওয়া মায়ান সভ্যতা সম্পর্কে তথ্যানুসন্ধান করতে।

মরিস কে জেসাপ

অনেক দেশ ঘুরে ঘুরে বিস্তর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে এলেন। ১৯৬৫ সালে নতুন এক নেশায় পেয়ে বসল তাঁকে। ইউএফও রহস্য। অনেক পরিশ্রম করে তথ্য জোগাড় করলেন তিনি, একখানি বই লিখলেন The case for the UFO। নিউইয়র্কের সিটাডেল প্রেস প্রকাশ করেছে বইটা।

এই বইয়ে জ্যোতির্বিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, আবহাওয়াবিদ্যা এবং অন্যান্য অনেক বিজ্ঞানবিষয়ক রহস্যের উল্লেখ করেছেন জেসাপ, যেগুলো সত্যি বিস্ময়কর। বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে তিনি বলেন, সীমিত মহাকর্ষ জ্ঞানের জন্যই মহাকাশবিদ্যায় বেশি দূর এগোতে পারছে না মানুষ। আইনস্টাইনের ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরি বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা নতুন যুক্তি দেখিয়েছেন, ইলেকট্রোম্যাগনেটিজম আর সাব-অ্যাটমিক পার্টিকলসরা একই সূত্রে গাথা—এই যুক্তির আরও বহুল গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করেন জেসাপ।

কার্লোস মিগুয়েল অ্যালেন্ড

জানুয়ারি ১৩, ১৯৫৬, সবে জনমনে তোলপাড় তুলতে শুরু করেছে জেসাপের বই, এই সময় কার্লোস মিগুয়েল অ্যালেন্ড নামে পাগলাটে এক ভদ্রলোকের কাছ থেকে একটা চিঠি পান তিনি। সংসারে কেউ ছিল না অ্যালেন্ডের। নাবিক হিসেবে দারুণ নাম করেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। ইউএফও সম্পর্কে আগ্রহী। ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরি নিয়ে আর বাড়াবাড়ি না করার জন্য জেসাপকে অনুরোধ জানান অ্যালেন্ড। এই থিওরি গবেষণার পরিণাম নাকি ভয়াবহ। এর সপক্ষে একটা প্রমাণ দেন অ্যালেন্ড। এই প্রমাণ আর কিছু নয়, বহুল আলোচিত ফিলাডেলফিয়া এক্সপেরিমেন্ট। পরীক্ষার প্রত্যক্ষদর্শী অ্যালেন্ড দুঃখ করে চিঠিতে লিখেছেন, ‘তেরো বছর আগেই মহাকর্ষ আর ইলেকট্রোম্যাগনেটিজম নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিল ইউএস সরকার, তার পরিণাম ছিল অত্যন্ত মর্মান্তিক।’

ফিলাডেলফিয়া এক্সপেরিমেন্টের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন অ্যালেন্ড চিঠিতে। তার খানিকটা শোনা যাক:

১৯৪৩ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। আমাদের জাহাজ তখন ফিলাডেলফিয়া নেভি ইয়ার্ডে নোঙর ফেলেছে। পরীক্ষাটা প্রত্যক্ষ করেছি আমি। একটা যুদ্ধজাহাজকে টেলিপোর্ট করা যায় কি না, পরীক্ষার জন্য কয়েকজন বিজ্ঞানীকে নিযুক্ত করল ইউএস সরকার। পরীক্ষার সময় এসএস অ্যানড্রু ফুরুসেথে ছিলাম আমি। উচ্চারণের ভুলের জন্য জাহাজটা ফুরুনসেথ বলেন কেউ কেউ। পরীক্ষার আগে জাহাজটাকে অনেক দিন মাল বহনের কাজে ব্যবহার করে ম্যারিটাইম ট্রেড ইউনিয়ন। ক্যালিফোর্নিয়ার রিচমন্ডে জন্ম ওটার। বেনামি ডেস্ট্রয়ারটার ওপর পরীক্ষা চালানোর সময় পাশে ছিল ফুরুসেথ। ডেস্ট্রয়ারটার পাহারাদার নিযুক্ত করা হয়েছে আমাদের। বাইরের কেউ যেন ইয়ার্ডে ঢুকতে না পারে সেটা দেখাও আমাদের দায়িত্ব। শুরু হলো পরীক্ষা। আমাদের চোখের সামনে লোকজনসহ নিমেষে নেই হয়ে গেল ডেস্ট্রয়ারটা, যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। এক সেকেন্ড পরই আবার যথাস্থানে দেখা গেল ওটাকে। তখনো টেলিপোর্ট করা হয়নি জাহাজটাকে, বিভিন্ন রকমে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে শুধু। এবার একটা বৃত্তের আকারে চুম্বকক্ষেত্র তৈরি করা হলো জাহাজের ওপর। এর ফলে জাহাজটার অনেকখানিই চুম্বকক্ষেত্রের প্রভাবের বাইরে থেকে গেল। এক অদ্ভুত দৃশ্য ফুটে উঠল জাহাজের মাঝখানটায়। জাহাজের গলুইয়ের কাছ থেকে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে যাচ্ছে কয়েকজন নাবিক, সেই রকমই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের। বৃত্তের মধ্যে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে অদৃশ্য হচ্ছে না সব দেহটা। প্রথমে বাড়ানো ডান পা, তারপর শরীরের সামনের অর্ধেক, সবশেষে পেছনের অংশ। আস্তে আস্তে ঢোকার সময় শরীরের যে অংশটুকু চুম্বকক্ষেত্রের মধ্যে আগে ঢুকছে, সেই টুকুই আগে অদৃশ্য হচ্ছে।

তারপর কী করে ফিলাডেলফিয়া ইয়ার্ড থেকে অজড় পদার্থে পরিণত হয়ে নরফোকে গেল ডেস্ট্রয়ারটা, আবার ফিরে এল, সেসব বর্ণনা দেওয়া হয়েছে চিঠিতে।

সবশেষে লিখেছেন অ্যালেন্ড:

পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা নাবিকদের অল্পই এখন অবশিষ্ট আছে, স্যার। বেশির ভাগ অদৃশ্য হয়ে আর ফিরে আসেনি। যারা এসেছিল তাদেরও অধিকাংশ অদৃশ্য হয়ে গেছে। আর যারা পাগল হয়নি, অদ্ভুত সব ক্ষমতা অর্জন করেছিল তারা। কিন্তু নিজের অজান্তেই বিপদে পড়ে যেত মাঝে মাঝে। প্রাণহানিও ঘটেছে দু-এক ক্ষেত্রে। আমার কোয়ার্টারের কাছাকাছি থাকত এমন একজন নাবিক। মজা দেখানোর জন্য প্রায়ই লোকজনের সামনে তার বাড়ির দেয়াল স্বচ্ছন্দে ভেদ করে চলে যেত সে, কাচের ভেতর দিয়ে আলোকরশ্মি যেভাবে ভেদ করে যায়, ঠিক তেমনিভাবে। মাঝে মাঝে অদৃশ্য হয়ে যেত কোন বেকায়দা জায়গায়, আপনাআপনিই, ইচ্ছে করে নয়। দুজন মারা গিয়েছিল হঠাৎ করে গায়ে আগুন ধরে গিয়ে, নিজেদের শরীর থেকেই জ্বলে উঠেছিল আগুন। একটা ছোট্ট কম্পাস হাতে তুলে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগুন লেগে যায় একজনের গায়ে, পরক্ষণে লাফ দিয়ে গিয়ে লাগল তার পাশের লোকটার গায়ে। দুজনই অংশ নিয়েছিল পরীক্ষায়। জড় পদার্থের ক্ষেত্রে পুরো সফল হয়েছে ফিলাডেলফিয়া এক্সপেরিমেন্ট, তেমনি বিফল হয়েছে জীবের ওপর পরীক্ষা চালাতে গিয়ে।

মানুষের ওপর বিক্রিয়া করবে হাইপার-ফিল্ড, বুঝতে পারেননি নৌবাহিনীর বিজ্ঞানীরা। পরীক্ষার পর নিজেদের ভুল বুঝলেন, কিন্তু তখন আর করার কিছু নেই। মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার প্রবল প্রতিক্রিয়া শুরু হবে জনমনে, অনুমান করে পরীক্ষার পরপর ব্যাপারটা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন নৌবাহিনীর লোকেরা। কিন্তু পারল না।

চিঠিপত্রের মাধ্যমে কোথায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারা যাবে জেসাপকে জানিয়েছিলেন অ্যালেন্ড। চিঠির মাধ্যমে আরও অনেক গুপ্ত কথার আদান-প্রদান চলছে, এই সময় জেসাপকে তাদের ওয়াশিংটন অফিসে আমন্ত্রণ করল ইউএস নেভাল রিসার্চ সেন্টার। নির্দিষ্ট দিনে গিয়ে অফিসে হাজির হলেন জেসাপ। যথারীতি কুশল বিনিময়ের পর The case for the UFO-এর একটা কপি লেখকের হাতে তুলে দিল একজন নেভাল অফিসার।

জেসাপ তো অবাক। সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে অফিসারের দিকে তাকালেন তিনি।

মৃদু হাসল অফিসার। চোখের ইঙ্গিতে জেসাপের হাতের বইটা দেখিয়ে বলল, ‘তিনজন লোক পড়ে মন্তব্য লিখেছে এর ভেতরে। দেখুন উল্টেপাল্টে।’

দ্রুত পাতা উল্টে চললেন জেসাপ। অ্যালেন্ডের চিঠি পাওয়ার আগেই ফিলাডেলফিয়া এক্সপেরিমেন্ট সম্পর্কে শুনেছিলেন তিনি, তবে এত বিশদভাবে নয়। সেই চ্যাপ্টারে এসে পাতা ওল্টানো বন্ধ করলেন। চ্যাপ্টারের প্রতিটি পাতার চারপাশের মার্জিনে তিন রঙের কালি দিয়ে অতি চিন্তাভাবনা করে মন্তব্য লেখা হয়েছে। অফিসার বলল, তিনজন লিখেছে এই মন্তব্য, কিন্তু জেসাপের মনে হলো এটা একজনেরই কাজ। লেখার স্টাইল, ভাষা কেমন যেন চেনা চেনা লাগল তাঁর। একটু ভাবতেই বুঝে ফেললেন তিনি, লেখাটা কার। নিঃসন্দেহে কার্লোস মিগুয়েল অ্যালেন্ডের।

সরল মনে অ্যালেন্ডের চিঠির কথা বললেন জেসাপ অফিসারকে। ব্যাপারটা সম্পর্কে অতি আগ্রহী মনে হলো লোকটাকে। চিঠিগুলো জেসাপের কাছে চাইল অফিসার। দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিদায় নিলেন জেসাপ।

ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফিরছেন জেসাপ। পাগলাটে এক নাবিকের প্রতি এত আগ্রহ কেন নৌবাহিনীর বুঝতে পারছেন না তিনি কিছুতেই। তবে কি অ্যালেন্ড ঠিকই বলেছে? প্রবল জনবিরোধ এড়ানোর জন্যই ফিলাডেলফিয়া এক্সপেরিমেন্টের কথা চাপা দিতে চেয়েছিলেন নৌবাহনীর লোকেরা? নিশ্চয় জেসাপের বইটা কিনেছিলেন, বইয়ের মার্জিনে নোট করেছিলেন, তারপর জেসাপ বুঝতে পারবেন মনে করে তার কাছে চিঠি লিখেছিলেন অ্যালেন্ড। কিন্তু অ্যালেন্ডের কাছ থেকে বইটা জোগাড় করলেন কী করে নৌবাহিনীর লোক?

এর কয়েক দিন পরই, এপ্রিল ২০, ১৯৫৯ সালে আচমকা মারা গেলেন জেসাপ। ফ্লোরিডার কোরাল গ্যাবলসের কাছে, ড্যাড কাউন্টি পার্কে নিজের স্টেশন ওয়াগন গাড়ির ভেতরে মরে পড়ে থাকতে দেখা গেল বিজ্ঞানীকে। জানালার সব কটি কাচ তুলে দিয়ে, একজস্ট পাইপের মুখে নল লাগিয়ে, গাড়ির ভেতর টেনে আনা হয়েছে নলের অন্য মাথা। ইঞ্জিন চালু অবস্থায়ই পাওয়া গেছে গাড়িটাকে। বুঝতে অসুবিধে হয় না, দারুণ বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসই জেসাপের মৃত্যুর কারণ। একজস্ট পাইপ থেকে নলের মধ্য দিয়ে গিয়ে গাড়ির ভেতরে ঢুকেছিল ওই গ্যাস। আপাতদৃষ্টিতে জেসাপের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলেই মনে হবে। কিন্তু লোকে বিশ্বাস করতে চায় না সে কথা। বলে, আসলে কোন কারণে খুন করা হয়েছে ভদ্রলোককে। কিন্তু কে করল খুন? কার এমন পাকা ধানে মই দিয়েছিলেন নিরীহ একজন বিজ্ঞানী?

জেসাপের মৃত্যুর কয়েক দিন আগেই রহস্যজনকভাবে নিরুদ্দেশ হয়ে যান অ্যালেন্ড। এরপর তাঁকে আর কখনো কেউ দেখেনি।

ইনভিজিবল হরাইজন-এর লেখক ভিনসেন্ট গ্যাডিস বলেছেন, অ্যালেন্ডকে খুঁজে বের করতে চেয়েছিল নাকি একজন লোক। লোকটা কে জানাননি তিনি। পেনসিলভানিয়ার নিউ কেনসিংটনে অ্যালেন্ডের বাড়িতে গিয়েছিল লোকটা, কিন্তু অ্যালেন্ডকে পায়নি। পড়শিদের কাছে জিজ্ঞেস করে জানা যায়, আরও দুজন বয়স্ক লোকের সঙ্গে বাস করতেন অ্যালেন্ড। জেসাপের মৃত্যুর কয়েক দিন আগে হঠাৎ সব মালপত্র ট্রাকে বোঝাই করে নিয়ে কোথায় চলে যায় তিনজনই। এরপর আর কখনো তাদের কাউকে দেখা যায়নি। কারণটা কী?

জেসাপের রহস্যজনক মৃত্যু আর অ্যালেন্ডের উধাও হওয়ার পর ‘ফিলাডেলফিয়া এক্সপেরিমেন্ট’ স্বাভাবিকভাবেই আরও শিকড় গেড়ে বসে লোকের মনে। এরপর থেকে ঘোর অবিশ্বাসীরাও এমন একটা পরীক্ষা সত্যিই হয়েছিল বলে ভাবতে শুরু করে।