জাহাজরহস্য!

রহস্যেভরা সমুদ্র। কেউ সম্পূর্ণভাবে জানে না কী আছে এই অতল সমুদ্রজগতে। এমনকি বিজ্ঞানীরাও শুধু ৭০ শতাংশই জানেন এই বিশাল জায়গাটি সম্পর্কে। প্রায়ই সমুদ্রের অতলে হারিয়ে যায় জাহাজ। সমুদ্রের কাছে এসব গিলে ফেলা কোনো ব্যাপারই না! ইউনেসকোর হিসাবে তিন মিলিয়ন ডুবে যাওয়া জাহাজ রয়েছে সমুদ্রগহ্বরে। যাদের অধিংকাশের শেষমেশ কী পরিণতি হয়েছিল, জানা যায়নি। কেন ডুবে গিয়েছিল বা কী ধরনের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিল, সেটিও জানা যায় না অনেক ক্ষেত্রেই। এ জন্য প্রচলিত আছে নানা আদিভৌতিক ঘটনাও। আজ তোমাদের বলব সে রকম ঘটে যাওয়া কিছু জাহাজের কথা।

দ্য ফ্লাইং ডাচম্যান এমনই এক ভৌতিক জাহাজ; যেটি কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন চলচ্চিত্র, ছবি, বই এমনকি অপেরা শো। ক্যাপ্টেন হেনড্রিক ডেকেনের নেতৃত্বে জাহাজটি হল্যান্ড থেকে যাত্রা শুরু করে। বহন করছিল সিল্ক, মসলার মতো সব পণ্য। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, জাহাজটি এক ঝড়ের কবলে পড়ে। কিন্তু ক্যাপ্টেন নাছোড়বান্দা। যেভাবেই হোক জাহাজ চালিয়ে যেতে হবে। কারও কথা না শুনে জাহাজ এগোতে থাকে। বড় বড় ঢেউ আঘাত হানতে থাকে জাহাজের ডেকে। একসময় জাহাজটি ডুবে যায়। অনেকে মনে করে, জাহাজটি ছিল অভিশপ্ত। কিন্তু আজব ব্যাপার এই যে প্রচণ্ড ঝড়ের মধ্যে নাকি এখনো ক্যাপ্টেন আর শ্রমিকদের নিয়ে জাহাজটি চলতে দেখা যায়। দ্য ফ্লাইং ডাচম্যান চলতে থাকে ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে। অনেকে মনে করে, ডাচম্যানদের সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে গেলেই তার মৃত্যু অবধারিত। অনেকে হয়তো ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান’–এর মুভিগুলো দেখেছ। সেখানেও ঘটতে থাকে এমন নানা ধরনের ভৌতিক ঘটনা। পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান: ডেড মেন টেল নো টেলস–এর ঘটনাটিও খানিকটা সে রকম।

দ্য মেরি সেলেস্টের ঘটনাটি আরও অদ্ভুত। ১৮৭২ সালে জাহাজটি পাওয়া যায় আটলান্টিক মহাসাগরে। জাহাজে কোনো প্রকার ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এমনকি জাহাজের শ্রমিকদের জিনিসপত্রও অক্ষত ছিল। শুধু পাওয়া যায়নি ক্যাপ্টেনের রেকর্ড বই আর কোনো মানুষজন। অর্থাৎ জাহাজের ক্যাপ্টেনসহ শ্রমিকদের সবাই ছিলেন নিঁখোজ। ৭ নভেম্বর জাহাজটি নিউইয়র্ক থেকে ইতালির উদ্দেশে রওনা দেয়। জাহাজে ক্যাপ্টেনের সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী, দুই বছরের মেয়ে এবং আটজন সহযোগী। জাহাজটিতে আসলে কী হয়েছিল, তা জানার জন্য সে সময়ে ফিরে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।

দ্য লেডি লাভিবন্ডের ঘটনার সঙ্গে সময়ের হিসাব রাখাটা বেশ জরুরি। ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৭৪৮, ক্যাপ্টেন সিমন রিড প্রস্তুত হচ্ছেন সমুদ্রযাত্রার জন্য। টেমস নদী থেকে বের হয়ে জাহাজ যাবে পর্তুগালের দিকে। রিড মূলত সদ্য স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার জন্যই এই ব্যাপক প্রস্তুতি নেন। যাত্রার দিন বিকেলে বলা যায় এক আনন্দের আমেজ বয়ে যাচ্ছিল জাহাজের ডেকে।

ডাল কোস্ট থেকে ছয় মাইল দূরে একটি জায়গা, গুডুইন স্যান্ডস নামে পরিচিত। যা ১০ মাইল লম্বা, ইংলিশ চ্যানেলের পৃষ্ঠের ৮ থেকে ১৫ মিটারের মধ্যে অবস্থিত। জায়গাটি জাহাজ ধ্বংসের জন্য সে বছর বেশ খ্যাত ছিল। দ্য লেডি লাভিবন্ডও সেটির স্বীকার হয়। জাহাজটি হারিয়ে যায় সমুদ্রে।

৫০ বছর পরের ঘটনা। ১৭৯৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি দুটি জাহাজের নজরে আসে দ্য লেডি লাভিমন্ড। হারিয়ে যাওয়া জাহাজ কীভাবে আবার সমুদ্রে এল? এর আরও ৫০ বছর পরে স্থানীয় সামুদ্রিক জেলেদের চোখেও পড়ে জাহাজটি। এমনকি তারা উদ্ধারকারী বোটও পাঠায়। কিন্তু ততক্ষণে তা হারিয়ে যায়। ১৯৪৮ সালে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। যদিও ১৯৯৮ সালে এমন কোনো ঘটনা কারও চোখে পড়েনি। তবু ২০৪৮ সালের অপেক্ষা করাই যেতে পারে। যদি দ্য লেডি লাভিবন্ডের সেই ভৌতিক জাহাজের দেখা আবার মেলে!

যুগে যুগে সমুদ্রে ঘটেছে এমন সব অদ্ভুত ঘটনা। অধিকাংশ ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা। ঘটনাগুলো ব্যাখ্যাহীন হওয়ায় তা আমাদের দ্বিতীয়বার ভাবতে বাধ্য করে। একটা বিষয় নিশ্চিত বলা যায়, সমুদ্রভ্রমণে তোমাদের চোখ–কান খোলা রাখা জরুরি। বলা তো যায় না, এমন কোনো ঘটনার সঙ্গে তোমারও পরিচয় হয়ে যেতে পারে!