পাখিরা তাঁর পিছু নিয়েছে। দুই বছর আগে নিয়েছিল বুলবুল দম্পতি। এবার নিয়েছে নীলটুনি ও টুনটুনি। আগেরবার বুলবুলি দম্পতি তাঁর পরিবারের সঙ্গে অদ্ভুত সখ্য গড়ে তুলেছিল। তিনিও তাদের খুব পাত্তা দিয়েছিলেন। ব্যস, তারা তাঁর বারান্দার টবের গাছে এসে একদিন বাসা বানাতে লাগল। তারপর ডিম, বাচ্চা—সবই হলো। বাচ্চারা পাখা মেলা শিখল। তারপর একদিন দুই জোড়া দুই দিকে উড়ে গেল।
পরপর এসব ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে আমিনা আনসারীর বাসায়। তিনি একজন কবি। প্রথম আলো রাজশাহী বন্ধুসভার সঙ্গে যুক্ত। তিনি ছেলে ফাগুন ও মেয়ে চৈতীকে নিয়ে ওই বাসায় থাকেন। মেয়েটি এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। ছেলেটি সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। তাকে আর পাখিদের নিয়েই তিনি নিরিবিলি বাসাটিতে থাকেন। এর ভেতরে আমিনা প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করেছেন। বারান্দার নিচে যেটুকু জায়গা খালি পেয়েছেন, তাতেই বসিয়েছেন গাছের টব। এসব গাছের ভেতর দিয়েই তাঁর বারান্দায় গিয়ে উঠতে হয়। টবে পানি দেন। তাতেও পাখিদের কিচ্ছু এসে-যায় না।
আগে থাকতেন রাজশাহী নগরের চণ্ডীপুর এলাকায়। বছর খানেক আগে বাসা বদল করেছেন। এখন আছেন লক্ষ্মীপুর এলাকায়। তবে আসার সময় গাছের টবগুলো নিতে ভোলেননি। আগের বাসার মতোই বারান্দার নিচেই রেখেছেন টবগুলো। তার একটিতে মিষ্টি করমচার গাছ। এর পাশের টবগুলোতে কাগজি লেবু, নাইটকুইন, হাসনাহেনা, কমলা, পাহাড়ি লেবু, রঙ্গন, একটি বট বনসাই, পাতাবাহার—আরও অনেক কিছু। মজার ব্যাপার, লক্ষ্মীপুরের পাখিরাও তার খোঁজ পেয়ে গেছে।
তবে এবার বুলবুলি নয়, নীলটুনি আর টুনটুনি।
নীলটুনির গায়ের রং নীলচে বেগুনির মিশ্রণে কুচকুচে কালো। পুরুষ পাখিটির ঠোঁট তিন থেকে চার সেন্টিমিটার লম্বা। একটু বাঁকানো। ঠোঁট থেকে লেজ পর্যন্ত প্রায় ১১ সেন্টিমিটার লম্বা।
মার্চের শুরুর দিকে নীলটুনি দম্পতি এসে আমিনার লেবুগাছের আশপাশে এসে ওড়াউড়ি করছিল। আর টুনটুনি দম্পতি তাঁর পাতাবাহারের একটি ছোট গাছের কাছে ঘোরাঘুরি করছিল। টুনটুনি আমাদের চেনা পাখি। শরীরের মাপ প্রায় ১৩ সেন্টিমিটার। লেজ প্রায় শরীরের সমান।
একদিন সকালে আমিনা দেখলেন, টবের লেবুগাছের সঙ্গে টুনটুনিরা বাসা বানাচ্ছে। একটি পাতার সঙ্গে আরেকটি পাতা সেলাই করে তার ভেতরে চমৎকার বাসা তৈরি করে ফেলেছে।
এর পর থেকে আমিনা সারাক্ষণ নীলটুনি আর টুনটুনিদের বাসার দিকে নজর রাখতে লাগলেন। ১৮ মার্চ তিনি নীলটুনিদের বাসায় তিনটি ডিম আবিষ্কার করলেন। এর ১২ দিনের মাথায় তিনটি ফুটফুটে বাচ্চা। আমিনার পরিবারে যেন খুশির বন্যা বয়ে গেল। নীলটুনি ঠোঁটে করে মাকড়সার ছোট বাচ্চা নিয়ে এসে বাচ্চাদের খাওয়াচ্ছে। আমিনাও শুরু করেন একই কাজ। মুখের কাছে খাবার নিয়ে গেলেই ওরা হাঁ করে থাকে। ৯ এপ্রিল আমিনা আনসারীর বাসায় গিয়ে নীলটুনির বাচ্চাদের বাসায় পাওয়া গেল। রাজশাহী বন্ধুসভার সভাপতি ফারুক হোসেন বাসার ভেতর আঙুল ঢোকালেন। তিনটি বাচ্চাই আঙুল কামড়ে দিল। তার আগের দিন রাতে আমিনা বেশ কিছু ছবি তুলে রেখেছিলেন।
আমিনা আনসারী বলেন, তিনি টুনটুনির বাসার পাশে বসে কাপড় ধোয়ার কাজ করেন। ঘোরাফেরা করেন। টুনটুনিরা তাঁকে পাত্তাই দেয় না। ১০ এপ্রিল টুনটুনিরা প্রথম ডিম দিয়েছে। গতকাল পর্যন্ত তাদের বাসায় চারটি ডিম পাওয়া গেছে।
গত বুধবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, নীলটুনিদের বাচ্চারা উড়তে শিখেছে। তারা লেবুগাছের আশপাশে এ গাছ-ও গাছ করছে। পাশেই মা-বাবা ছোটাছুটি করছে।
প্রথম আলোর রাজশাহীর আলোকচিত্রী শহীদুল ইসলাম তাদের বাদ দিয়ে টুনটুনির ডিমের ছবি তুললেন, কিন্তু বিকেল পাঁচটা থেকে সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত আটবার ক্যামেরার শাটার বাটন টেপেন। কাজ হলো না। মেয়ে টুনটুনি ফুড়ুত করে এসে বাসায় ঢুকছে আবার ফুড়ুত করেই উড়ে যাচ্ছে। তোমাদের বাসার যদি এমন পাখির বাসার দেখা মেলে তবে আমাদের ছবি তুলে পাঠাতে পারো।